চৌগাছায় নজিরবিহীন লোডশেডিং

মহাবিপাকে শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ

এমএ রহিম চৌগাছা (যশোর) থেকে : যশোরের চৌগাছায় নজির বিহীন লোডশেডিং ও অসহনীয় গরমে মহাবিপাকে কোমলমতি শিক্ষার্থী ব্যবসায়-বাণিজ্য ও কর্মজীবী সাধারণ মানুষ। লোডশেডিংয়ের ফলে কলে-কারখানায় ও মুরগি খামারে বিপর্যয় নেমেছে। অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে নানাবিধ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। জানা যায়, বর্তমানে চৌগাছা গ্রীডে বিদ্যুতের চাহিদা ৮/৯ মেগাওয়াট। কিন্তু সেখানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর মধ্যে আবার ৩ মেগাওয়াট বিশেষ এলাকার জন্য বরাদ্দ থাকে। বাকী বিদ্যুৎ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১’শ ৫৯ গ্রাম এবং পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বিদ্যুতের ২১ হাজার ৩’শ ৬৪ জন গ্রাহককে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক হচ্ছে ১৭ হাজার ৪’শ ৩২, আর বাণিজ্যিক গ্রাহক হচ্ছে ২ হাজার ৪’শ ৩৭, সেচ ৭০৯ টি, শিল্প ৩২০ টি, আর অন্যান্য মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা, প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা, ক্ষুদ্র শিল্প ও সেচ প্রকল্পে রয়েছে ৪শ’৫৭ টি। এ উপজেলার বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যুতের এই ভেলকি বাজিতে নাকাল চৌগাছা উপজেলাবাসী। আওয়ামী লীগ সরকার বারবার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র উদ্বোধন করলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। চাহিদার তুলনার ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণের  চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রবিবার সরেজমিন পল্লীবিদ্যুতের চৌগাছা জোনাল অফিস, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও পৌর শহরঘুরে দেখা যায়, পল্লীবিদ্যুতের চৌগাছা জোনাল অফিসে ইঞ্জিন চালিত জেনেরেটর চলছে। অফিসের জরুরি ফাইলপত্রাদি প্রস্তুত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। বিদ্যুতের অভাবে কর্মবিমুখ হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী শতশত মানুষ। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। বিদ্যুৎ ঠিকমত না থাকায় প্রচণ্ড গরমে প্রসূতি মা, শিশু, বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্রয়লার খামারগুলোতে অনেক ব্রয়লার হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। ফলে মাইকিং করে কমদামে বিক্রি করা হচ্ছে। ডিমের খামারে উৎপাদন থাকলেও বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারছে না। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্রয়লার খামার মালিকরা। অন্যদিকে লেয়ার খামারেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলার অনেক খামারী জানান, প্রচণ্ড গরমে ডিম উৎপাদন অনেক কমে গেছে। প্রচণ্ড গরমে ডিম পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণেই সম্ভাবনাময় এ সমস্ত শিল্পগুলোতে ধস নেমেছে। গরু ও ছাগল মোটা-তাজাকরণ খামারীদেরও সমস্যার অন্ত নেই। ব্যবসায়ীরা জানান বিদ্যুৎ না থাকার ফলে ব্যবসায় দারুণমন্দা যাচ্ছে কারণ দোকান-পাটে বসে মাছি মারছি বেচা-বিক্রি নেই। সব মিলিয়ে তাদের অভিযোগ চৌগাছাতে এখন আর বিদ্যুৎ যাচ্ছেনা মাঝে মাঝে আসছে। এমনিতেই ভাদ্রের প্রচণ্ড খরতাপ ও অনাবৃষ্টিতে উপজেলাবাসী নাকাল। তারপর বিদ্যুতের লোডশেডিং আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। দিন রাত্রের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ লোডশেডিং হওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলাবাসী। বিকল হয়ে যাচ্ছে টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটারসহ বিদ্যুৎ চালিত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী। সংবাদ কর্মীরা সময়মত তাদের সংবাদ পাঠাতে পারছে না। নজির বিহীন লোডশেডিং আর প্রচণ্ড তাপে গর্ভবতী মা, শিশুসহ সাধারণ মানুষ ডাইরিয়াসহ নানা ধারণের চর্ম রোর্গে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়েই তার প্রমাণ মিলেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৩ দিনে হাতপাতালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪শ’ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসারত বৃদ্ধ আবুল কাশেম জানান, ‘প্রচণ্ড গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। রাতেও অসহ্য গরম পড়ছে। ফ্যান থাকলেও বিদ্যুতের অভাবে তা ঘুরছেনা।’’ দিনে রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম। এতে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ছে এলাকাবাসীর জীবন। বৃষ্টিতো নেয়-ই বরং তাপদাহ প্রতিদিন বেড়েই চলছে। তীব্র গরমে মানুষের পাশাপাশি জীবকুলের জীবন অসহনীয় হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে চৌগাছা পল্লীবিদ্যুৎ ডিজিএম আব্দুর রশিদ জানান হঠাৎ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে সেটাও বলা মুশকিল।