সংবাদ শিরোনামঃ

বাকশালের পদধ্বনি ** গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ** গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা : কার্যকর পদক্ষেপ নেই বিশ্বসম্প্রদায়ের ** গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাংবাদিকদের সংগ্রাম চলবেই ** সর্বনাশা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে ** সংসদ এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলবে ** গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে বিশ্বকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে ** ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ শেখানোর হাস্যকর চেষ্টা ** আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা ও স্বাস্থ্য ** কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ** গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি নিষ্ঠুরতা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে ** ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে খানাখন্দ ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪২১, ১৯ রমজান ১৪৩৫, ১৮ জুলাই ২০১৪

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমেরিকা : গোটা বিশ্বের পাওয়ার হাউস বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখানে আছে প্রায় ৭০ লাখ মুসলমান। বেশির ভাগ মুসলমান বাস করেন ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ইলিনয়েস, ইস্তিয়ানো, মিসিগান. টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড রাজ্যগুলোতে। রামাদান মাসে এশিয়ান মুসলিমগণ যারা এখানে বসবাস করেন তারা তাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে পায়জামা, পাঞ্জাবী, কাবুলি সেট কোর্তা পরিধান করেন এবং মহিলারা ও শিশুরা মেহেদি দিয়ে হাত রং করেন। অন্যদিকে আফ্রিকান মুসলিমগণ যারা এখানে থাকেন তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে থাকেন। সিয়ামকে কেন্দ্র করে আমেরিকার বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন বিশেষ কর্মসূচি পালন করে। যেমন, আমেরিকানা মুসলিম এলিমান্স, আমেরিকানা আরব এন্টি ডিসক্রিমিনাশন, আমেরিকান মুসিলম কাউন্সিল, মুসলিম পাবলিক এফিয়ারস কাউন্সিল, কাউন্সিল অফ আমেরিকান ইসলামিক রেলাশন, এ সমস্ত সংগঠন সিয়ামের সময়সূচি ও তাৎপর্য, ফোন, ই-মেইল, লেকচার, সেমিনার, স্থানীয় মিডিয়া ইত্যাদিতে প্রচার করে থাকে। আমেরিকাতে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে খেজুর, খোরমা, সালাদ, পনির, রুটি, ডিম, গোশত, ইয়াগার্ট, হট বিনস, সুপ, চা ইত্যাদি থাকে। আমেরিকায় ২০০২ সালে প্রথম বারের মতো রামাদান ও ঈদ উপলক্ষে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে। গত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারের সন্ত্রাসী ঘটনার পরে আমেরিকার মুসলমানদের উপর শুরু হয় মারাত্মক ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব। রামাদান মাসে হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টি প্রথম শুরু করছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন। এটা বর্তমানে একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর প্রেসিডেন্ট রামাদান মাসে হোয়াইট হাউসে ৫৩টি দেশের মুসলিম প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ করে ইফতার পার্টি আয়োজন করেন। অনেক অমুসলিম এই মহাপবিত্র বরকতময় মাসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হচ্ছেন। এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর অনুগ্রহে ক্রমশই আমেরিকানগণ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বর্তমানে মুসলমানদের অবস্থান আমেরিকাতে তৃতীয় স্থান। অনেক গবেষক মনে করেন অচিরেই তা দ্বিতীয় স্থান দখল করবে ইনশাআল্লাহ।

কানাডা : উত্তর আমেরিকার সম্পদশালী দেশ কানাডায় উল্লেখযোগ্য মুসলমান বসবাস করেন। বিগত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য এদেশের মুসলমানদেরকেও সহ্য করতে হয়েছে বর্ণ বৈষম্য। রাজধানী অটোরায় সর্বাধিক মুসলমান বসবাস করে, সংখ্যা প্রায় ষাট হাজার। অটোয়া ছাড়াও সাসকেচুয়ান, অল্টারিও, সিনেটোবা, টরেন্টো, কুইবেক রাজ্যগুলোতে মুসলমানগণ বসবাস করেন। রামাদানে ইফতার পার্টির আয়োজন চলে মহাসমারোহে এবং প্রতি শনিবার অটোয়া ইসলামিক সেন্টারের ইফতার পার্টিতে দেশ বিদেশের অসংখ্য মুসলমান হাজির হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘দ্যা মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইফতার পার্টির আয়োজন করে। ইফতারীতে খেজুর, খোরমা, পনির, সালাদ, ফল, সুপ, জুস, রুটি, ডিম, গোশত, চা-কফি ইত্যাদি থাকে।

ইতালী : ইউরোপ মহাদেশের শেষ প্রান্তে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের কিনারায় অবস্থিত ইতালী দেশটির শিক্ষিতের হার ৯৮%। দেশটির অধিকাংশ অধিবাসী ক্যাথলিক খৃষ্টান, তাছাড়া বৌদ্ধ ও ইহুদি আছে। সমগ্র জনসংখ্যার ১% হলো মুসলমান। এই অল্পসংখ্যক মুসলমান রামাদানকে ঘটা করে স্বাগত জানায়। ইফতারীতে তারা বার্গার জাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল যেমন- মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর, বিভিন্ন ফলের রস খান। সেহরীতে বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে থাকে। ইতালীর রাজধানী রোম। পবিত্র কুরআনে সূরা রোম নামে ৩০ নম্বরে একটি স্বতন্ত্র ৬০ আয়াত বিশিষ্ট সূরা নাজিল হয়েছে। রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনে রোমক ও পারসিকদের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধের কাহিনী উক্ত সূরায় বর্ণিত হয়েছে। বর্তমানে রোমকে বলা হয় নীরব শহর, শান্তির শহর, সাত পাহাড়ের শহর এবং পোপের শহর।

জার্মানী : অর্থনৈতিক ভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত দেশ জার্মানী। এখানে প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান যাদের বেশিরভাগ শ্রমিক এবং তারা বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে এসেছে। বর্তমানে এদেশে দু’হাজার মসজিদ আছে। শীত মওসুমে এখানে সূর্য উঠে সকাল ৮টায় এবং সূর্য ডুবে বিকাল ৪টায়। তাই কাজের মধ্যেই ইফতারীর সময় হয়ে যায়। বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহে মুসলমান শ্রমিকদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। রামাদান মাসে এখানকার মুসলমানদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। একদিকে বাড়তি শিফটের কাজ অন্যদিকে ইফতারী ও সেহরীর আয়োজন এবং ইবাদত বন্দেগী করা।

সুদান :আফ্রিকা মহাদেশের বড় একটি মুসলিম দেশ হলো সুদান, যার রাজধানীর নাম হচ্ছে খার্তুম। এখানে ইফতারী সাধারণত: খেজুর দিয়ে শুরু করা হয়, এটা অবশ্য রাসূল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। তাছাড়া ‘হামড়া’ ‘লাহমা’ নামক গোশত দিয়ে তৈরি খাদ্য খেয়ে থাকে। চালের তৈরী ‘আছিদা’ এক ধরনের পিঠা তারা খায়। গোশত ও সস দিয়ে তৈরি ‘মুলাহ’ নামক খাদ্যও ইফতারীতে খায় এবং এসঙ্গে ‘গাওয়া’ নামক চা জাতীয় পানীয় তারা পান করেন। সুদানীরা ‘শোরবা’ নামক সুপ, মাংস দিয়ে তৈরি ‘মুহাম্মার’ নামক  খাবার, দুধ ভাত দিয়ে তৈরি ‘রুসবিল হালিব’ সালাদ দিয়ে খায়। তদুপরি পায়েশ, খির, ফিরনী এগুলো তৃপ্তির সাথে খেয়ে থাকেন। রামাদান শেষে সরকারিভাবে সুদানে ঈদ পালন করা হয়।

মিসর : আফ্রিকার মুসলি প্রধান তুর পর্বত ও পিরামিডের দেশ হচ্ছে মিসর। বিশ্বের প্রাচীনতম আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ৯৭৩ সালে এখানে প্রতিষ্টিত হয়। রামাদান মাস এলে অফিসের কর্মঘণ্টা কমানো হয় যাতে সিয়াম পালনকারীগণ মসজিদে ইবাদতে পর্যাপ্ত সময় পান। দলবেধে তারা মসজিদের দিকে ছুটে এবং আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে চারদিক প্রকল্পিত করে। দিনের কাজকর্ম করে তারা রাতে কিয়ামুল লাইল, তারাবী এবং কুরআন তিলাওয়াত করে কাটিয়ে দেন। জোহরের সালাতের পর থেকে ‘বাজারের শহর’ নামে খ্যাত রাজধানী কায়রো শহরের অলিগলিতে ঢাকার চকবাজারের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে হরেক রকম ইফতারের আয়োজন।

ইফতারে ঐত্যিবাহী পানীয় ‘শরবত কামার আল দীন’ সব বয়সীরা পান করে থাকে। মরুভূমির এই দেশে ইফতারীতে খেয়ে থাকে ‘কানাফা’ নামক পিঠা যা আটা, বাদাম, মধু, কিসমিস ও চিনি দিয় তৈরি করা হয়। আরেক ধরনের গোলাকার ছোট পিঠা ‘তায়েফ’ তাতে বাদাম ও কিসমিস বেশি থাকে তাও খেয়ে থাকেন। মিসরীয় শিশুদের কাছে রামাদান মাসটি সবচেয়ে বেশি আনন্দময়। তারা এ সময় আমাদের দেশের বাচ্চাদের মতো পিতামাতার কাছে সিয়াম রাখার জন্য দাবি জানায়। মিসরের মুসলমানগণ ইফতার করেন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায়। ফলে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়ে উঠে।

তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই ইফতার করেন ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, হোটেল প্রভৃতিতে। তাই রামাদান মাসে পাঁচতারা হোটেল ও অন্যান্য রেস্তোরাঁগুলোতে অ্যারাবিয়ান ডেকোরেশনে তাবু সাজিয়ে ঐতিহ্যবাহী ইফতারী পরিবেশন হয়। মিসরে কিছুসংখ্যক খৃষ্টান বসবাস করেন। তারা রামাদান মাসের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে প্রকাশ্যে ধূমপান ও খাদ্য গ্রহণ করেন না। অনেক উদারপন্থী খৃষ্টান জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে এ মাসে উপবাস করেন।

আলজেরিয়া : উত্তর আফ্রিকার একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হলো আলজেরিয়া। রৌপ্যের শহর নামে খ্যাত আলজিয়ার্স হচ্ছে এর রাজধানী। দেশটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মেডিটারিয়ানের তীরে অবস্থিত। এখানে বয়স্কদের মাঝে বেশি ধর্মীয় মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ইফতারীতে এরা শাকসবজি ও মুরগীর গোশত দিয়ে তৈরি পিজা ‘সোয়ারবা’ সবজির রোলস, আলু ও সবজির তৈরি ‘দোলমা’ খেয়ে থাকে। আলজেরিয়ার মুসলমানগণ কিয়ামুল লাইল তারাবীহ সালাতের পর ‘সিগার’ নামক কাঁচা কাঠ বাদামের তৈরি শরবত পান করে থাকেন। সেহরীতে এরা হালকা খাবার যেমন ফলের রস, দুধ, কফি ইত্যাদি খান। এদেশে রামাদান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ পূর্বে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।                     (চলবে)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।