সংবাদ শিরোনামঃ

বাকশালের পদধ্বনি ** গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ** গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা : কার্যকর পদক্ষেপ নেই বিশ্বসম্প্রদায়ের ** গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাংবাদিকদের সংগ্রাম চলবেই ** সর্বনাশা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে ** সংসদ এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলবে ** গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে বিশ্বকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে ** ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ শেখানোর হাস্যকর চেষ্টা ** আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা ও স্বাস্থ্য ** কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ** গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি নিষ্ঠুরতা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে ** ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে খানাখন্দ ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪২১, ১৯ রমজান ১৪৩৫, ১৮ জুলাই ২০১৪

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা ও স্বাস্থ্য

॥ অধ্যাপক রুহুল কুদ্দুস॥
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাই এতে স্বাস্থ্যনীতিও রয়েছে। দেহকে অযথা কষ্ট দেয়া ইসলামের বিধি নয়। রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। সকল সক্ষম ঈমানদারদের উপর আল্লাহ রমজানের এক মাস রোজা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহদের নিছক কষ্ট দেয়ার জন্যে ইহা ফরজ করেননি। তিনি এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “ওয়া আনতা সুউমু খাইরুল লাকুম ইনকুনতুম তা’লামুন” অর্থাৎ তোমরা যদি রোজা রাখো তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, তোমরা যদি সেটা উপলব্ধি করতে পারো।” (সূরা বাকারাহ-১৮৪)।

বস্তুত এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রোজা পালনের নানাবিধ কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে উপরোক্ত আয়াতের সত্যতা প্রমাণ করেছেন। রোজার সকল হুকুম আহকাম স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখেই করা হয়েছে। যেমন-শিশু ও অতিবৃদ্ধের জন্যে রোজা ফরজ নয়। সফরে ও অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। ুধা  ও তৃষ্ণায় বেশি কষ্ট না পাওয়ার জন্যে সেহরির ব্যবস্থা ইত্যাদি।

ইউরোপের ঘরে ঘরে ইদানিং রোজা রাখার হিড়িক পড়েছে। সবার মুখে এক কথা শরীরটাকে ভালো রাখতে চাও তো রোজা রাখো। এ ধরনের চেতনা সৃষ্টির পিছনে সত্তর দশকে প্রকাশিত একটি বই বিশেষতঃ দায়ী। বইটি হচ্ছে প্রখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ ড. হেলমুট লুটজানার-এর  The secret of successful fasting. অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য বইটিতে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ করে নিরোগ, দীর্ঘজীবী  কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কতিপয় দিন উপবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড. লুটজানারের মতে, “খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়।” উল্লেখ্য যে, ‘রমজান’ শব্দটি আরবীর ‘রমজ’ ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ও পুঁড়িয়ে ফেলা। এভাবে ধ্বংস না হলে, ঐসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরের রক্তচাপ, একজিমা, অন্ত্র ও পেটের পীড়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির জন্ম দেয়। এছাড়াও উপবাসে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি ও মনে সজীবতার অনুভূতি এনে দেয়।

রোজা পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোনো ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত Scince for Fasting গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, The power and  endurance of the boby under fasting Conditions are remarkable; After a fast properly taken the boby is literally bom afresh. অর্থাৎ “রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য: সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।”

রোজা একই সাথে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজাব্রত পালনের ফলে দেহে রোগ জীবাণুবর্ধক জীর্ণ অস্ত্রগুলো ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বাঁধা প্রাপ্ত হয়। দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। রোজাদারের শরীরের পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না।

আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার  ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করেই জার্মান, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ব্যবস্থপত্রে প্রতিবিধান হিসেবে এর উল্লেখ করা হচ্ছে।

* ডা. জুয়েলস এম. ডি বলেছেন, ‘‘যখনই একবেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।”

* ডক্টর ডিউই বলেছেন, “রোগজীর্ণ এবং রোগকিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেলো, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।”

* তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।

জার্মানির এক স্বাস্থ্য কিনিকের গেইটে লেখা আছে, “রোজা রাখো স্বাস্থ্যবান  হবে।” এর নিচে লেখা আছে “মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ।” খৃস্টান জার্মানিসহ অন্যান্য খৃস্টান চিকিৎসকেরা রোজার  উপকারিতার বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশে রোজার মাধ্যমে “চিকিৎসা কিনিক” খোলা হয়েছে। এর মধ্যে  বেশি প্রসিদ্ধ হলো জার্মানির ড. হেজিগ রাহমান কিনিক, ড. ব্রাশরাযজ ও ড. ওয়ালারের কিনিক।

রোজা কম খাওয়ার প্রশিক্ষণ। কিন্তু রোজা ছাড়াও ইসলাম কম খাওয়াকে উৎসাহিত করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “পেট ভর্তি করে খাওয়া অপেক্ষা মানুষের জন্য মন্দ দ্বিতীয় কোনো কাজ নেই। আদম সন্তানের বেঁচে থাকার জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট। যদি তা না  করে (অর্থাৎ বেশি খেতে চায়) তাহলে পেটের এক তৃতীয় অংশ খাবার, এক তৃতীয় অংশ পানি এবং অপর তৃতীয় অংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা দরকার। (আহমদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম)

মিসর সম্রাট মুকাউকাস মুসলমানদের চিকিৎসার জন্য একজন চিকিৎসক পাঠান। নবী (সা.) এই বলে চিকিৎসককে ফেরত পাঠান, (কেউ কেউ বলেন, এটা কোনো সাহাবী বা তাবেঈর বক্তব্য):

“আমরা এমন এক জাতি, যারা ুধা না লাগলে খাই না, আর খেলেও ুধা বাকী থাকতে খাওয়া ত্যাগ করি। তাই আমাদের চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই।” এ বর্ণনা থেকে দেখা যায়, বাঁচার জন্য যেমন খাবার দরকার, আবার বেশি খাদ্য রোগের ভাণ্ডার (সীরাতে হালাবীয়াতে বর্ণিত)।

রমজান মাসে অন্য মাসের তুলনায় কম খাওয়া হয় এবং এই কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘজীবন লাভের জন্যে খাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয়। কম ও পরিমিত খাওয়াই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি। বছরে এক মাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশ্রাম ঘটে। ইহা অনেকটা শিল্প-কারখানায় মেশিনকে সময়মতো বিশ্রাম দেয়ার মতো। ইহাতে মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়ে। মানবদেহের যন্ত্রপাতিরও এভাবে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়।

* ডা. আলেক্স হেইগ বলেছেন, “রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি ও এবং বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়।  স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়।” প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রানশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। ইহা খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন এবং বিশুদ্ধি  সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে। যারা রুগ্ন তাদেরকেও আমি রোজা পালন করতে বলি।”

* বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়ড বলেন, ‘‘রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল  করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনি এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।”

* প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী Macfadden সাহেব মনের প্রগাঢ়তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে রোজার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, “রোজার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে কি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা হলো তার উপর বুদ্ধিবৃত্তির কর্মক্ষমতা নির্ভর করে না। বরং কতিপয় বাধ্যবাধকতার উপরই তা নির্ভরশীল। একজন ব্যক্তি যত রোজা রাখে তার বুদ্ধি তত প্রখর হয়।”

* ডা. এ এম গ্রিমী বলেন, “রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠে।

* ডা. আর ক্যাম ফোর্ডের মতে, “রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।”

* ডা. বেন কিম তাঁর Fasting for health প্রবন্ধে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র‌্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহজনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ (Repair) এবং সুগঠিত হতে পর্যন্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষতঃ খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার দেহে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণতঃ দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্থপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দুরারোগ্য (Auto, une disease) সব ব্যাধির সৃষ্টি করে।

ডা. বেন কিম আরো বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন উপবাসে কিভাবে দেহের সবতন্ত্রে (system) স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।

* প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জন ফরম্যান Fasting and eating for helth প্রবন্ধে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উপবাস এবং খাবার গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে উপবাসের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় রমজানের রোজা রাখার সুফল পাওয়া যায় না মূলত খাদ্যাভ্যাস ও রুচির জন্য।

* প্রফেসর বি এন নিকেটন দীর্ঘায়ু লাভের এক গবেষণা রিপোর্টে ৩টি কাজের কথা বলেন। এগুলো হলো (ক) পরিশ্রম করা, (খ) নিয়মিত ব্যায়াম করা, (গ) প্রতি মাসে কমপক্ষে একদিন রোজা বা উপবাস থাকা।

* ডা. এম. কাইভ বলেন, “রোজা রাখলে শ্লেষ্মা ও কফজনিত রোগ দূরীভূত হয়।”

* ডা. আব্রাহাম জে. হেনরি বলেছেন, “রোজা হলো পরম হিত সাধনকারী ঔষুধ।”

* ডা. অ্যাডওয়ার্ড নিক্সন বলেছেন, “রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং অনেক রোগের কবল থেকে দেহকে রক্ষা করে।”

* ডা. ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, “রোজা স্বাস্থ্যের জন্য  খুব উপকারী; তবে ইফতারিতে বেশি খাওয়া ক্ষতিকর।”

* ডা. লিউ থার্ট বলেছেন, “দেহের রোজা অত্যন্ত হিতকর টনিক। রোজাদাররা অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকেন।”

* ডা. লুইস ফ্রন্ট বলেছেন, “রোজা পালনে মানবদেহ যথেষ্ট পুষ্ট এবং বলিষ্ঠ হয়ে থাকে। মুসলমানরা নিশ্চয়ই রোজার মাসকে সুস্বাস্থ্যের মাস হিসেবে গণ্য করে থাকেন। রোজা বা উপবাস মেধাশক্তিকেও বৃদ্ধি করে থাকে।

ডা. নিধন চন্দ্র রায় বলেছেন, “রোজাকে সুন্দর একটি পবিত্র ঔষুধ বললে ভুল হবে না।”

* ভারতের নেহেরু গান্ধী গোটা জীবন রোজায় অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি তার অনুসারীদেরকে বলেন, “রোজার মাধ্যমে আত্মসংযম বাড়ে এবং মানবাত্মা পবিত্রতা অর্জন করে।”

* বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম বলেছেন, “রোজা মানুষের দেহে কোনো ক্ষতি করে  না। ইসলামের এমন কোনো বিধান নেই, যা মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর। গ্যাস্ট্রিক ও আলসার-এর রোগীদের রোজা নিয়ে যে ভীতি আছে তা ঠিক নয়। কারণ রোজায় এসব রোগের কোনো ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। রমজান মানুষকে সংযমী ও নিয়মবদ্ধভাবে গড়ে তুলে।”

* ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডা. গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক “মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব” সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোজার দ্বারা মানব শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না, কেবল ওজন সামান্য কমে। তাও উল্লেখযোগ্য কিছু নহে, বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এরূপ রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (Dietcontrol) অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। ১৯৬০ সালে তাঁর গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্তই অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা  বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোজদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা খুম কম রোজার ফলে তাদের এ উভয় দোষই নিরাময় হয়েছে। এ গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা রক্তের পটাসিয়াম কমে যায় এবং তাতে শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এ ধারণাও অমূলক। কারণ পটাসিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া প্রথমে দেখা যায় হৃদপিণ্ডের উপর অথচ ১১ জন রোজদারের হৃদপিণ্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোজার পূর্বে ও রোজা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোজা দ্বারা তাদের হৃদপিণ্ডের ক্রিয়ার কোনোই ব্যতিক্রম ঘটে নাই।

সুতরাং বুঝা গেল যে, রোজার দ্বারা রক্তের যে পটাসিয়াম কমে তা অতিসামান্য এবং স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে রেজা দ্বারা কোনো কোনো মানুৃষ কিছুটা খিটখিটে মেজাজী হয়। এর কারণ সামান্য রক্ত শর্করা কমে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নয়। অন্যকোন সময় ক্ষিদে পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।

৬. রোজা থেকে শারীরিক ফায়দা লাভের উপায়

রোজা থেকে শারীরিক ফায়দা লাভের জন্যে রোজাদারদের প্রতি ডা. আমীর আই, আহমদ আনকাহর কতিপয় মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো নিচে দেয়া হলো :

১. যদি আপনি বিত্তবান হোন তবে অধিক ভোজন ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করে চলুন। “রোজা রেখে সুস্থ থাকুন” এ প্রতীক গ্রহণ করুন।

২. সহায় সম্বলহীন আপন ভাইকে সাহায্য করুন।

৩. রমজান মাস সম্পদশালীদের জন্যে নিরোশ আর গরিবদের জন্য ভালো খাবার মাস মনে করুন।

৪. দিনের বেলা ুৎপিপাসার তাড়না থেকে ম্ুিক্ত পেতে হলে রাতে অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন।

৫. খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে খান।

৬. খাবার ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধুমাত্র দুধের উপর নির্ভর করতে পারেন।

৭. যথাসম্ভব ইফতার তাড়াতাড়ি আর সেহরী দেরীতে খাওয়া ভালো।

৮. সেহরী খেয়ে সটান না হয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করুন। তাতে খাদ্য ঠিকমত হজম হয়।

৯. ইফতারের পর চটপটি জাতীয় এবং ঠাণ্ডা জিনিস অধিক পরিমাণে গ্রহণ করবেন না। কেননা, তাতে হজমে বিঘœ ঘটে।

১০. সারাদিন কাজে লিপ্ত থাকুন, ুৎপিপাসা ভুলতে চেষ্টা করবেন না।

১১. রমজান মাসে নেক কাজ ও ত্যাগ তিতিক্ষার যে অভ্যাস আপনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, তা সবসময় চালু রাখুন।

১২. জীবনের চড়াই-উৎরাই সবসময় রোজার দাবিকে সমুন্নত রাখুন।

১৩. কু-চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থাকুন। কুচিন্তা বিষ সদৃশ্য যা আপনার স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়। কুচিন্তা ও কুধারণার উপশম না ঔষধে হয়, না খাদ্যে।

১৪. মুসলমানগণ নিজেদের জীবনে স্বল্পতুষ্টি তাওয়াককুল, শান্তি ও মনের সন্তুষ্টির মতো বৈশিষ্ট্যসমূহ করার মধ্যদিয়ে রমজানের বরকতে পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যেই সাহসের বিস্তৃতি ও মনের শান্তি এবং এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের আরোগ্যলাভের গুপ্ত রহস্য।

১৫. রমজানের সিয়াম সাধনায় মুসলমান হবে স্বাস্থ্যবান এবং পুন্য ও পবিত্র আত্মার অধিকারী।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।