বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই : ডা. শফিকুর রহমান
৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাঁবেদারি নয়- সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্দোলনরত ৮ দল খুলনার উদ্যোগে নগরীর ঐতিহাসিক বাবরী চত্বরে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন দুপুর ১২টায় কারী ইকরামুল কবিরের অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।
জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অরাজগতা অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষ বলতে বাধ্য হচ্ছে, আগে ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ আছি। তবে এ সময় কোনো ইসলামী দলের গায়ে চাঁদাবাজের তকমা লাগেনি বলে দাবি করেন তিনি। ৩৫ বছর ও তার নিচে যাদের বয়স, যারা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, তাদের উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমীর বলেন, এবার তোমাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে চাইলে আমরা তা হতে দেবো না। সেদিন আমারও যুবক হয়ে তোমাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবো। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তোমাদের হাতে আমার দেশটা তুলে দিতে চাই। সেজন্য নিজেদের প্রস্তুত করো। তোমরা চাকরি করবে না, চাকরি দেবে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে জনগণের লালিত স্বপ্ন অনেকাংশেই বাস্তবায়ন হয়নি। দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হলেও এটা প্রকৃত উন্নয়ন নয়। দেশ ও জাতির মধ্যে ন্যায়বিচার ও সামাজিক সুশাসন আছে কিনা, সেটা বিবেচ্য। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধারায় চলমান উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, এক ধারায় রয়েছে মাদরাসা শিক্ষা। অন্য ধারায় স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা। মাদরাসায় খুন খারাবি হয় না। অস্ত্রবাজি হয় না। জ্ঞানের চর্চা হয়। পক্ষান্তরে ৫৪ বছরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের লাশ পড়েছে। মদ-গাঁজার আসর বসেছে। মেয়েদের ইজ্জত লুট হয়েছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়েছে। সভ্য হতে হলে আমাদের দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। কিছু দল ও ব্যক্তি দফায় দফায় দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেক স্থানে আমাদের ব্যানার প্যানা পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে জনগণ এখন আর পোস্টার দেখে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা আমাদেরকে ভালোবেসে বুকের মধ্যে স্থান দিয়েছে। আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এ ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আরও একবার ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পীরসাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, অনেকে বলেন আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই। কিন্তু আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু তারাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন তাদের পায়ের তলে মাটি সরে গেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে আপনারাই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। গুণ্ডামি করে, সেন্টার দখল করে, সন্ত্রাসী চালিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন। সেদিন ভুলে যান। সে সুযোগ আর আপনারা পাবেন না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা মামুনুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। ৭২ বাকশালপন্থি আর এক ভাগ ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থি শক্তি। তিনি বলেন, রক্তের সাগর পেরিয়ে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর যেই ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আসবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থেকে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। তারা চেয়েছিল ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। ৮ দল ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ থাকবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইযহার বলেন, যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে থাকবে, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। যারা এদেশে শরিয়া আইন চায়না, তাদের লাল কার্ড দেখাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, এদেশের সংবিধান হবে আল্লাহর কুরআন। সংসদে হবে কুরআনের আইন। যেকোনো ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবিলা করব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেন, যারা বলেছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবকে খুলনায় আসতে দেবে না। তারা এসে দেখে যান বাবরী চত্বর ইসলামী দলে ভরে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচন লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫ আগস্টে জনগণ দেখেছে এদেশের জনগণ হিন্দুত্ববাদ কায়েম করতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ চাঁদাবাজি দেখতে চায় না। গণভোটের প্রশ্নে তিনি বলেন, গণভোটকে হ্যাঁ বলুন, ৮ দলের প্রতীকে সিল মারুন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিডিপির চেয়ারম্যান এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, জুলাই মানে অকাতরে সংগ্রাম করে জীবন দিতে হবে না। আমরা দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছি। এদেশের মানুষ অন্য দেশের দালালি করতে চায় না। মানুষ দালালি নয়, মুক্তি চায়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগরী সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিনের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদসহ আটদলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।