আলোকে তিমিরে

পশ্চিমারা কার্যত ইসলামবিদ্বেষী


১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:০৩

॥ মাহবুবুল হক ॥
ছেলেবেলায় বিলেত শব্দটা অনেক শুনেছি। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে মাঝে মাঝে কিছু মানুষ হাওয়া হয়ে যেত; বিশেষ করে যারা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সাথে জড়িত ছিল এবং যারা সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি-বাকরি করত, আমদানি রপ্তানির সাথে চাকরি-বাকরি হোক অথবা ব্যবসা হোক, কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল। জেলেদের বিষয়ে ধরে নেওয়া হতো সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে তারা হারিয়ে গেছে। কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে অনেকদিন পর্যন্ত কিছু শোনা যেত না। পরে জানা যেত কেউ মালদ্বীপে, কেউ সিংহলে, কেউ করাচিতে, কেউ আফ্রিকায়, ইউরোপে, কেউ ইতালিতে, কেউ বিলেতে এবং কেউ মার্কিন মুল্লুকে চলে গেছে। কানাডার নাম তখন শোনা যেত না। কেউ ফ্যামিলি নিয়ে যেত না। একা একাই যেত। কেউ বহুদিন পর দেশে এসে বিয়ে-শাদী করত। কেউ যেখানে যেত, সেখানেই বিয়ে-শাদী করে ফেলত। যারা বিদেশে বিয়ে-শাদী করত, তাদের গ্রামের মানুষজন ভালো চোখে দেখতো না। কারণ অনেকের মধ্যে কেউ কেউ ভিন্ন ধর্মের নারীকে মুসলিম করা ছাড়াই বিয়ে-শাদী করে ফেলত। এসব নিয়ে মাঝে মাঝে সামাজিক সমস্যা দেখা দিত। তবে যারা উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য বিদেশে যেতেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ডিগ্রি নিয়ে বা না নিয়ে দেশে ফিরে আসতেন। শিক্ষিত লোকেরা সেখানে খুব কমই থেকে যেতেন। এসব কারণে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নানারকম মত ছিল। ধর্মীয় পরিবারের লোকেরা সাধারণত বিদেশে যেতেন না। বিদেশে গেলে অনেকে ধর্মীয় জীবন থেকে দূরে সরে যেত বলে অন্যরা ভয় পেত। ঈমান-আমান রক্ষা করার জন্য তারা দেশেই পড়ে থাকতেন। তখন ছিল মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র সমাজ। দরিদ্র বা হতদরিদ্রের মধ্যে কেউ বিদেশে চলে গেলে খুব বেশি একটা সমালোচনা হতো না। সমালোচনা হতো মধ্যবিত্তের কেউ বিদেশে গেলে। ধীরে ধীরে মধ্যবিত্তের মধ্যেও নানা মতের সৃষ্টি হয়, বিনা কারণে। শেষ পর্যন্ত ধর্ম বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কথায় আছে ‘নেসেসিটি নোজ নো ল।’
ষাটের দশক থেকে দুনিয়ার দেশে দেশে মসজিদ, মাদরাসা ও মক্তব গড়ে উঠতে লাগলো। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে ধর্মীয় পরিবারের লোকজনদের যাওয়া-আসার একটা পথও তৈরি হয়ে গেল। ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় সবকালেই বাংলাদেশের মানুষ কম পয়সায় চাকরি হাতিয়ে নিতে তৎপর ছিল।
পরের কথা আমি একটু আগেই বলে ফেলেছি।
লন্ডন, ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, ইউনাইটেড কিংডম, যুক্তরাজ্য- এসব শুনেছি ধীরে ধীরে, বড় হতে হতে। কলেজে উঠেই আমাদের অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়ে যেতো। তখনই মনে হয় ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ’ দিন’সহ ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে কিছু ছোট ছোট বইপুস্তিকা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। (হাসি-ঠাট্টার কথা, সিলেটের একটি থানা যে লন্ডন), সেটা তো জেনেছি আরো পরে। ১৯৮০ সালে ইস্ট লন্ডনে গিয়ে সেটা দারুণভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। তখনো দেখেছি ভালো মুসলিমরা ১২ বছর বয়সের পর তাদের ছেলেমেয়েদের লন্ডনে আর থাকতে দিচ্ছে না, দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ ‘ফর গুড’ চলে আসছে। কেউ কেউ পাঠিয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষা ও বিয়ে-শাদী শেষ করে আবার লন্ডনে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কারণ ইংল্যান্ড বা ইউরোপে আয় বেশি। আমি ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ করেছি, জামায়াতে ইসলামী ও তাবলিগ জামাতের লোকজন সবসময় এসব বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান থাকেন। ছেলে-মেয়েদের দীনের পথে রাখার জন্য তাঁরা শুধু চিন্তা করেন না, শুধু উৎকণ্ঠায় থাকেন না, শুধু পেরেশান থাকেন না, তারা নিজেদের একটা শক্ত বলয় তৈরির জন্য চাইনিজদের মতো নানা ব্যবস্থা গড়ে তোলারও চেষ্টা করেন। অবশ্য চায়না টাউন এখন অনেক দেশ থেকে উঠে গেছে। চাইনিজরা আগের মতো আর নিজেদের এরিনায় বসবাস করে না। আগের মতো তারা আর কনজারভেটিভ নেই। তারা লিবারেল হয়ে গেছে। মডারেট হয়ে গেছে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির মধ্যে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে। কয়েক বছর আগে একটা আনন্দের খবর পেয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক জায়গায় চাইনিজরা তাদের ‘চায়না টাউন’ নামক নিজস্ব এরিয়া বাংলাদেশি মুসলমানদের কাছে বিক্রি করেছে। খবরটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। নিজস্ব বলয়ে মুসলিমরা মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কালচারাল সেন্টার, ছেলেদের খেলার মাঠ, পৃথকভাবে মেয়েদের খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, পৃথক পৃথক সুইমিংপুল ইত্যাদি তৈরি করবে। করেছে কিনা, জানি না। সফল হয়েছে কিনা, তাও জানি না। তবে আমি পাঁচটি উন্নত দেশে মুসলিমদের ধর্মীয়ভাবে জীবনযাপন করার তৎপরতা আনন্দের সাথে প্রত্যক্ষ করেছি। তবে এসব হলো নিজেকে নিজে বোঝানো। এক ধরনের তৃপ্তি, এক ধরনের সন্তুষ্টি, সহাবস্থানের জন্য একটা মডারেট আবহাওয়া তৈরি করা। এর মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ কেউ কেউ ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছেন। কেউ কেউ পারেননি। পূর্বে বিশ্বময় বৃদ্ধ জন জীবনের শেষ দিকে দেশে ফিরে যেতে চাইতেন। অন্তত মৃত্যুর আগে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করে কবরে যেতে চাইতেন। এখনো চান। কেউ বিদেশে মরতে চায় না। এখন মুসলিমদের জন্য আলাদা কবরস্থান তৈরি হচ্ছে। তবুও মুসলিম কোনো বৃদ্ধজন শেষ বয়সে ওল্ড হোমে আনন্দের সাথে বসবাস করতে চান না। দেশে ফিরে যেতে চান। বিদেশের রিচ ফুড অনেক খেয়েছেন আর খেতে চান না। দু’বেলা মাছ-ভাত বা ডাল-ভাত খেয়ে পাড়ার মসজিদে নামাজ পড়ে কবরবাসী হতে চান। এসব তর্ক-বিতর্কের মধ্যে অনেকবার আমি অংশগ্রহণ করেছি। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছি, বলেছি না নিজের দেশেই থাকতে হবে। নিজের দেশেই কাজ করতে হবে। আল্লাহ যদি চান নিজের দেশেই মরতে হবে। শিক্ষা ও কর্মের ব্যাপারে বিদেশে যেতে হতে পারে, অবস্থান করতে হতে পারে, কিন্তু সেখানে চিরস্থায়ী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি না করাই ভালো। বলা তো যায় না, আমাদের উত্তরাধিকারদের কী অবস্থা হবে। এসব কথা বললে পাল্টা জবাব আসে গত ৫৩ বছরে ইসলাম বা মুসলিমের কী উন্নতি হয়েছে? কোন দিকে, কোন বিষয়ে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে? এখানে যেসব হারাম জিনিস চলে, দেশেও তো তা চলছে। এখানকার মানুষ যত পাপ ও অপরাধ করে, বাংলাদেশের মানুষ সেসব বিষয়ে অবারিতভাবে তাই করছে। বিদেশে যদি ৫% দুর্নীতি হয়, তাহলে আমাদের দেশে দুর্নীতি হয় শতকরা ৯৫%।
এখানে লাখ লাখ মসজিদ আছে, লাখ লাখ উলামা আছে, মাদরাসা আছে, মক্তব আছে, ডজন ডজন ইসলামী দল আছে, হাজার হাজার মাজার আছে, তাবলিগ জামায়াতের লাখ লাখ মুসল্লি আছে, খানকা আছে, দরবার শরীফ আছে, প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ হজে যাচ্ছে, ওমরাহ করতে যাচ্ছে, লাখ লাখ কুরআন প্রকাশিত হচ্ছে, হাদিস ছাপা হচ্ছে, হাজার হাজার ইসলামী বই ছাপা হচ্ছে, কই এতসব আয়োজনের কোনো ইফেক্ট সমাজে তেমনভাবে দেখা যায় না ।
এসব তর্ক-বিতর্ক চলছে এবং ইংল্যান্ডসহ ইউরোপে ইমিগ্রেশনও চলছে। গত ১৫-১৬ বছরে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণেও বহু মানুষ উপায়ন্তর না দেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ধর্ম ও সংস্কৃতির কারণে যেসব মানুষ ইউরোপে যেতে চায় না, তারাও বাধ্য হয়ে না গিয়ে পারেনি।
এদিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের অর্থনৈতিক কারণ তো রয়েছে। বৈধভাবে যত মানুষ ইউরোপে আসছে, তার চেয়ে ঢের বেশি আসছে অবৈধভাবে। সেসব খবর সবার জানা। এভাবে আসতে গিয়ে কত মানুষ যে সমুদ্রসহ কত ঘাটে জীবন হারাচ্ছে, তার সঠিক হিসাব কোনো পক্ষের কাছে নেই।
আমরা গত জুনে যখন লন্ডনে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করি, তখন বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা কড়া ইসলামপন্থী, তাঁরা অনুরোধ করে বলেছেন, এখন তো আর স্বৈরাচারী সরকার নেই, আল্লাহর রহমতে জীবনের নিরাপত্তা তো এখন রয়েছে, সুতরাং এখন এমন কিছু লিখুন, বলুন বা কাজ করুন, যাতে এখন আর নতুন করে ইউরোপে কেউ যেন না যায়। কারণ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় সংস্কৃতির কারণে এক্স মুসলিম নতুন করে বাড়ছে। বরং ধর্ম ও সংস্কৃতির কারণে যারা দেশে ফিরে আসতে চায়, তাদের উপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে সাহস জোগানের ব্যবস্থা করুন। সেক্যুলার ও সাধারণ মানুষ অনুরোধ করেছেন, কীভাবে বিদেশে পাড়ি জমানো যায়, তার পথ-ঘাট একটু জেনে জানাবেন। আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজন। আপনাদের বন্ধুদের মধ্যে যারা এসব কাজ করছেন, তাদের টেলিফোন নম্বরটা একটু দেয়ার চেষ্টা করবেন, যাতে আমরা স্বস্তির সাথে এ বিষয়ে একটু কাজ করতে পারি।
আমি আমার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে এ বিষয়ে কোনো জবাব দিইনি। শুধু বলেছি, আমার বয়স হয়েছে এবং আমি অসুস্থ। এবার আমার খুব বেশি দৌড়াদৌড়ি করার পরিকল্পনা নেই। ঘরে বসে আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনলাইনের কাজ কিছু করব আর অবকাশযাপনের চেষ্টা করব।
এখানে এসে বেশ কয়েকজন প্রবীণ বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে কথা বলে যা জানলাম, তার সারমর্ম হলো, ব্রিটিশরা পূর্বের মতোই রয়েছে। কোনো নড়চড় হয়নি। তাদের পূর্বেকার divide & rule সেভাবেই আছে। তারা মূলত ইসলামবিদ্বেষী। মুসলিমবিদ্বেষী। কিন্তু মুখে তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে। ইকুয়ালিটির পক্ষে কথা বলবে। মানবাধিকারের কথা উচ্চকিত করবে। রুল অব লয়ের কথা বলবে। রেসিজমের বিরুদ্ধে গলা ফাটাবে। কিন্তু কার্যত তারা ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী। যেকোনো দলের সামনের কাতারের ব্যক্তিগণ কখনো প্রকাশ্যে কারো বিরুদ্ধে কথা বলবে না। কিন্তু গোপনে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী যত কাজ আছে, সেসব করার জন্য তরুণদের উসকানি দেবে। যে পাড়ায় মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে, মসজিদ গড়ে উঠছে, ইসলামিক সেন্টার গড়ে উঠছে, মাদরাসা ও মক্তব গড়ে উঠছে, সে পাড়া থেকে তারা সরে পড়ছে। স্থানীয়দের বোঝাতে চাচ্ছে, ইমিগ্র্যান্টদের জীবনযাপন পদ্ধতি আলাদা। ধর্ম আলাদা। জীবনের বাস্তবতা আলাদা। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটা দুঃসহ ও দুর্বহ। তাই আমরা সরে পড়ছি। অন্যদিকে বাস্তবতা হলো সামান্য কারণে রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজায় আফ্রিকান ও এশিয়ানরা। স্থানীয়রা বলতে গেলে একদম বাজায় না। আফ্রিকান ও এশিয়ান যেখানে সংখ্যায় বেশি, সেখানকার আবাসিক এলাকার নিচতলায় ছোট ছোট বিপণিবিতান সৃষ্টি হচ্ছে। বলতে গেলে কলকাতার মতো নিচে দোকান ওপরে বাসা, সেই সিস্টেম শুরু হয়ে গেছে। এসব স্থানীয়রা একদম পছন্দ করে না।
ইংল্যান্ডে প্রকাশ্যে চুরি, ডাকাতি ও হাইজ্যাকিং নেই। এ অবস্থাটা সবাই জানে বলে এশিয়ান মহিলারা অনেক অনেক দামি গহনা-গাটি পরে বাইরে বেরোয়। প্রকাশ্যেই এসব দৃষ্টিগোচর হয়। কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে গভীর রাতে এশিয়ান পাড়ায় ডাকাতি হচ্ছে। পুলিশ আসার পূর্বেই ডাকাতরা চলে যায়। তারা শুধু অলংকার সংগ্রহ করে। অন্য কিছু নয়। ডাকাতরা এমন মুখোশ পরে আসে, তাদের চেনাই যায় না, তারা সাদা, কালো, না ব্রাউন। অনেকেই সন্দেহ করছেন, রেসিস্ট ও ইমিগ্র্যান্টবিরোধী চরমপন্থীরা এসব করছে। তারা এমন অস্বস্তি ও অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, যাতে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ এদেশে আর না আসে। যারা এখানে শিকড় গেড়েছে, তারাও যেন ভয়ে ও শঙ্কিত হয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়।
বর্ণবাদ ইংল্যান্ডসহ গোটা ইউরোপে সবসময় ছিল। কখনো বাড়ে। কখনো একটু কমে। এখন আবার নতুন করে তারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে।
এ মাসের ৪ তারিখে টমি রবিনসনের জাতীয়তাবাদীও ইসলামবিরোধী দল-(ইডিএল) লন্ডনে বিশাল সমাবেশ করেছে। লন্ডনের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বলছে এক লাখ দশ থেকে এক লাখ কুড়ি হাজার ক্ষুব্ধ মানুষ সমবেত হয়েছে। তারা পুলিশের সাথে মারামারি করেছে এতে অন্তত ২৬ জন পুলিশ আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। অকুস্থল থেকে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেক্রেটারি অব স্টেট শাবানা মাহমুদ এ বিষয়ে খুব কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা এ সংঘর্ষের আয়োজন করেছেন, তারা হলো চিহ্নিত বর্ণবাদী এবং চরম ডানপন্থী। এদের ছাড় দেওয়া যাবে না। তারা ‘ইউনাইটেড দ্য কিংডম’ বলে ডিসট্রাকশনে নেমেছে।
টমি রবিনসন ইতোপূর্বেও বিভিন্ন কাউন্টিসহ লন্ডনে ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বড় বড় সভা করেছেন। তবে এবারকার সমাবেশটি ছিল সবচেয়ে বড় সবচেয়ে বিশাল। ইতোপূর্বেও তিনি অ্যারেস্ট হয়েছিলেন এবং জামিনে ছাড়াও পেয়েছেন। সারা শহরে তারা ইউনাইটেড কিংডমের পতাকা উড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পের পক্ষে কথা বলেছেন। ট্রাম্পের ‘তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠাও’- স্লোগান উচ্চকিত করেছেন।
এই ইমিগ্র্যান্টবিরোধী সমাবেশের আগে লন্ডনে সব দল ও মতের মানুষদের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ শিরোনামে যে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে, তা ছিল আরো বিশাল। তারপরই কেন এ সমাবেশের আয়োজন, তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা চলছে।
ঠিক মনে পড়ছে না, মনে হয় আল জাজিরা বলেছে, সমাবেশে ছিল এক লাখ পঞ্চাশ হাজার ক্ষুব্ধ মানুষ, যারা বিদেশিদের ইংল্যান্ড থেকে হটাতে চায়।
স্থানীয় একটি পত্রিকা লিখেছে, এ মুহূর্তে যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, তাহলে এ চরম ডানপন্থী দলটি সবচেয়ে বড় দল হিসেবে প্রতিভাত হবে। সমাবেশে বক্তা হিসেবে যারা ছিলেন, তারা বলেছেন, এটা ‘কালচারাল রিভলিউশন’ এ আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। শক্তিশালী করতে হবে। আমরা আমাদের দেশে অন্য কালচার ঢুকতে দেবো না। আমাদের কালচারকে আমরা সমুজ্জ্বল করব।
যাহোক, আমরা ভাবছি আমাদের কালচার গেল গেল। আবার একইভাবে ওরাও ভাবছে ওদের কালচার গেল গেল।
উপর্যুক্ত সমাবেশের পরপরই রেসিজমবিরোধী ও ইমিগ্র্যান্টদের পক্ষে পাল্টা একটি সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। সেটাও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।