জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন চাই
২ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৪৩
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল উপস্থিতি বিশ্বদরবারে আমাদের মর্যাদা বাড়িয়েছে। সাথে সাথে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিশ্বের বিবেকবান মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, নিন্দা জানিয়েছেন।
পতিত ফ্যাসিস্টদের দোসররা সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী আচরণ এবং গণহত্যাকারী দল হিসেবে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। কিন্তু আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশে প্রবাসী ফ্যাসিস্টরা প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে, যা রীতিমতো আতঙ্কজনক ও লজ্জার। সহযোগী মিডিয়ার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িত বাংলাদেশের নিউইয়র্ক মিশনে কর্মরত ফ্যাসিস্টদের দোসর কয়েকজন কর্মকর্তা। যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। বিচার ও সংশোধনের আগে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত দলের সাবেক নেতা-কর্মীদের কর্মস্থল থেকে দূরের কথা, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো থেকে সরিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পর্যন্ত দেয়া হয়নি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, তাদের এ আচরণের সাথে ২০২৪ বিপ্লবের আগে হাসিনার বিদেশ সফরের সময় গণতন্ত্রহত্যা ও খুন-গুমের প্রতিবাদে প্রবাসীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের তুলনা করেছেন কেউ কেউ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সত্য অস্বীকারকারী ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের উসকানি প্রতিরোধ এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সতর্ক করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, জার্মানি ও ইতালিতে নাৎসি-ফ্যাসিস্টদের এত বছর পরও সামান্যতম স্পেস দেয়া হয় না। শুধু নিজ নিজ দেশে নয়, ইউরোপ-আমেরিকার কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই দেয়া হয় না।
জাতিসংঘের অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ বরাবরের মতো এবারও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তবে এবাবের ভাষণের তিনটি বিষয় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আর্কষণ করেছেÑ ১. বাংলাদেশের ২০২৪ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি ভারতের ভালো লাগেনি। তাই হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে বিচারের জন্য তুলে দিচ্ছে না। ২. ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের অব্যাহত আগ্রাসন বন্ধে বিশ্ববাসীর ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নেয়ার কোনো বিকল্প নেইÑ এ সত্য তিনি বলিষ্ঠতার সাথে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরেছেন। ৩. ইসলামফোবিয়ার দিন শেষ। ইসলামী ভীতি এবং ঘৃণা থেকে বিশ্ববাসীর সরে আসতে হবে। ধর্মে ধর্মে সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি শান্তির পৃথিবীর বার্তা দিয়েছেন তিনি।
আমরা মনে করি, জাতিসংঘকে আরো সক্রিয় হতে হবে। আর জাতিসংঘের সক্রিয় ভূমিকার জন্য বিশ্বনেতাদের আন্তরিকভাবেই মানবিক হতে হবে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার সৎ সাহস ছাড়া তা সম্ভব নয়। আমরা আশা করি, বিশ্বনেতারা এ সত্য উপলব্ধি করবেন। মানবাধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামফোবিয়া মুক্তির শপথের বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবেন। ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদিনা সনদ’ যাকে ভিত্তি করে রচিত হয়েছে, আধুনিক সর্বজননীয় মানবাধিকার দলিল তার আলোকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পৃথিবী গড়ায় আত্মনিয়োগ করবেন। তবেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে। আমরা এ অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।