সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরেপড়া একটি ফুলের নাম। তিনি দেশের জন্য জীবনদানকারী একজন শহীদ। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়ায় অভিযানে গিয়ে ডাকাতদের হামলায় নিহত হয়েছেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার অন্তর্গত ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের ওপর আঘাত কোনো জাতিই সহজে মেনে নেয় না। মেনে নেয়া উচিত নয়। সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশ রক্ষা করা। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। কিন্তু গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন সেনাবাহিনীর বীর সদস্যরা। তারা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক কঠিন মুহূর্তেও ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তানজিমের শাহাদাতের ঘটনায় সৃষ্ট অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না। এর নেপথ্যে বাংলাদেশ সেনাবহিনীকে যারা দুর্বল দেখতে চায়, মনোবল ভেঙে দিতে চায়, তাদের কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা- সেই প্রশ্নও করছেন অনেকে। এমন প্রশ্ন জাগার অবশ্য কারণ আছে। লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন ডাকাতদের হাতে নিহত হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে দৈনিক ইত্তেফাক একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে ‘ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল রাখার চেষ্টা করেছে!’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত গোপনে প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশের সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে রেখেছে বলে অভিযোগ। লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশের সেনা ভারতের দিকে যাতে কোনো স্ট্র্যাটেজিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে না পারে। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছে সামরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।’ বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ যারা ভালোভাবে নিতে পারছে না, এখানে তাদের হাত আছে কিনা- তা অবশ্যই তদন্ত করে বের করতে হবে।
ফ্যাসিস্টবিরোধী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলি করে মানুষ হত্যা এবং কোনো সশস্ত্র অপরাধী দমন বা গ্রেফতারে শক্তি প্রয়োগকে এক পাল্লায় ফেলে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কথা যারা বলছেন, তারা আসলে ফ্যাসিবাদকেই পুনর্বাসনের পক্ষের বাদকদলের বাঁশিওয়ালা। অপরাধ দমন করতে গিয়ে নিহত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায়। তাই কারো জীবন হরণ না করে নিজের জীবন রক্ষার কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী হলো সবচেয়ে চৌকস ও শক্তিশালী বাহিনী। তারা যখন কোনো অভিযানে যাবে, তখন অবশ্যই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েই যেতে হবে। তাদের ওপর আঘাতকারীকেও ‘দ্রুত বিচার আইনে’ সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা করলে যারা সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে, তাদের ইচ্ছাই পূরণ হবে; যা দেশ ও জাতি এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি ডেকে আনবে।
তাই আমরা মনে করি, সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন হত্যায় জড়িত যারা গ্রেফতার হয়েছে, ‘দ্রুত বিচার আইনে’ তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কাউকে একটুও ছাড় দেয়া যাবে না। পলাতকদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র থাকলে তাও খুঁজে বের করতে হবে। নেপথ্যের খলনায়করা চিহ্নিত হলে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে আর কোনোদিন কোনো দুষ্কৃতকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের দিকে কালো হাত বাড়ানোর সাহাস না পায়।
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।