রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১৩তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩১ ॥ ১৪ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২১ জুন ২০২৪

॥ ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান ॥
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এক. ভালো কাজ করা ও তার ওপর দৃঢ় থাকার জন্য কোনো পীরের হাতে বাইয়াত হওয়া তথা অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত সুন্নত। দুই. তৎকালীন আরবে সন্তান হত্যা; বিশেষ করে মেয়েদের হত্যা করার ব্যাপক প্রচলন ছিলো। ইসলাম এটাকে বন্ধ করার জন্য সন্তান হত্যার বিষয়টিকে বাইয়াতের অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেন গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় বিষয়টি আলোচিত হয়।  উক্ত আয়াত থেকে তৎকালীন নারী জাতির প্রতি সহিংসতা ও ইসলাম নারীদের রক্ষায় ভূমিকা ফোটে উঠে। তিন. পুরুষের ন্যায় নারীরাও শরিয়তের বিধিবিধান মেনে আত্মশুদ্ধির জন্য পীরের কাছে বাইয়াত হতে পারবে। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায়। সহিহ বুখারীতে হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘কোনো নারী সাহাবী যখন রাসূল (সা.) এর সব শর্ত মেনে নেয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করতো, তখন রাসূল (সা.) তাকে বলতেন, আমি তোমাকে বাইয়াত করেছি। আল্লাহর কসম! রাসূল (সা.) এর হাত কোনো নারীর হাতকে বাইয়াতের সময় কখনো স্পর্শ করেনি। নারীদের তিনি কথার মাধ্যমে বাইয়াত করতেন।’ (হাদিস নম্বর-২৭১৩)।
বাইয়াত হওয়ার বিধান: ইদ্রিস কান্ধলভী (রাহ.) এ প্রসঙ্গে লেখেন, ‘কুরআনের বহু আয়াত ও রাসূল (সা.)-এর হাদিসে বাইয়াতের বিষয়টি উল্লেখ থাকায়, বাইয়াত সুন্নত, কল্যাণকর ও বরকতের বিষয় হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। রাসূল (সা.) উম্মতের শিক্ষক ও তাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধকারী ছিলেন। তেমনিভাবে তিনি ছিলেন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান। অতএব রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি যে বাইয়াত নিয়েছিলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্যও ওই বাইয়াত সুন্নত। তিনি উম্মতের অন্তরকে পরিশুদ্ধকারী হিসেবে উম্মত থেকে যে বাইয়াত নিয়েছিলেন, তার স্থলাভিষিক্ত হক্কানী রব্বানী ওলামাদের জন্য সে বাইয়াত সুন্নত। (সিরাতে মোস্তফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৯১)।
বাইয়াত আল্লাহর সঙ্গেই হয়ে থাকে: বাইয়াতের অর্থ বিক্রি করা বা অঙ্গীকার করা যাই হোকÑ এটা আল্লাহর সঙ্গেই মূলত হয়ে থাকে। তবে আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি এমন কিছু করা সম্ভব না হওয়া, নবীরা ও পরবর্তীতে তাদের উত্তরসূরি হক্কানি পীর-মাশায়েখের মাধ্যমে এটা সম্পন্ন হয়ে থাকে। আল কুরআনে এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আপনার হাতে বাইয়াত হয়, প্রকৃত অর্থে তারা আল্লাহর সঙ্গে বাইয়াত হয়। তাদের হাতের ওপর আল্লাহর হাত রয়েছে। সুতরাং যে অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, সে তা ভঙ্গ করবে নিজেরই ক্ষতির জন্য। আর যে কেউ সে বিষয় পূর্ণ করবে, যার অঙ্গীকার সে আল্লাহর সঙ্গে করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই বিশাল প্রতিদান দেবেন।’ (সূরা ফাতহ : ১০)।
হাদিসেও পাওয়া যায় যে, রাসূল (সা.) নির্দিষ্ট কিছু আমল করার অঙ্গীকার চেয়ে বলেছেন, তা যদি কেউ পূর্ণ করে তাহলে তার জান্নাতের ব্যাপারে আমি জিম্মাদারি নেবো। অর্থাৎ এখানে মূলত আল্লাহর তরফ থেকে কেমন যেন তিনি ওকিল হয়ে এ অঙ্গীকারগুলো নিচ্ছেন। তবে অঙ্গীকার পূর্ণ হওয়া না-হওয়ার ওপর তার ফলাফল নির্ভর করবে। বাইয়াতে যেসব বিষয়ে অঙ্গীকার নেয়া হয়, তা সাধারণত দীনদারি পালনের বিষয় হয়ে থাকে। তাই তা মেনে চললে, এর অসিলায় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন, ইনশাল্লাহ! কিন্তু অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে, শুধু বাইয়াত দ্বারা কোনো উপকার পাওয়া যাবে না।
নারীদের জন্য বিশেষ বাইয়াত
‘ওহে প্রিয়নবী সা. ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভালো কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের শপথ গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। সূরা মুমতাহিনা : ১২।
 ‘‘শানে নুযুল’’: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের দিন যেসব নারীগণ বিশ্ব নবীর সা. দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করলেন প্রিয়নবীজি তাঁদেরকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহের ওপরে বাইয়াত বা শপথ করালেন। ইসলামের ইতিহাসে তা ‘নারীদের শপথ’ বলে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পরবর্তীতে যে সব নরীরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করতেন মহানবী সা.তাঁদেরও নিম্নোক্ত  কয়েটি বিষয়ে শপথ করাতেন।
১. আল্লাহ সাথে কোনো কিছুর শরিক করবে না. ২. চুরি করবে না, ৩. জেনা করবে না, ৪. সন্তান হত্যা করবে না, ৫. অপবাদ দেবে না, ৬. নাফরমানি করবে না, ৭. আলোচ্য বিষয়সমূহের ওপর সর্বাবস্থায় অটল ও অবিচল থাকবে। এ সকল বিষয়ের ওপর ‘শপথ’ নেয়ার জন্যই আল্লাহ তায়ালা আলোচ্য আয়াতখানা নাজিল করেন এবং যিনি এ সকল শর্তে শপথ করতেন নবীজি তাঁদের মৌখিকভাবে শপথবাক্য পাঠ করাতেন।  আল্লাহর কসম এ শপথ করার সময়ে নবীজি কোনো নারীর হাত র্স্পশ করেননি। (সহীহ বুখারী-৪৮৯১), আহম্মদ ৬/৩৫৭, তিরমিযী ১৫৯৭, নাসায়ী ৭/১৪৯, ইবনে মাজহা ২৮৭৪।
অন্য বর্ণনায় আসছে, আমাদের কোনো নারীর হাত নবীজির হাতে স্পর্শ করেনি। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৫৭)।
নবীজি সা. কর্তৃক নারীদের বাইয়াত ও বিভিন্ন বাইয়াতসমূহের মৌলিক ধারাসমূহ:
বাইয়াতুন্নিসা বা নারীদের শপথ সংক্রান্ত হাদিসসমূহের বর্ণনাসমূহ একত্রিত করলে নিম্নোক্ত সার সংক্ষেপ বের হয়।
১. আল্লাহর সাথে কিছু শরিক করবে না,  ২. চুরি করবে না, ৩, জেনা করবে না, ৪. সন্তান হত্যা করবে না, ৫. অপবাদ দেবে না, ৬. নাফরমানি করবে না, ৭. সুসময়ে দুঃসময়ে সর্বাবস্থায় শোনা ও মানা বা আনুগত্য করা, ৮. অযথা ঝগড়াঝাঁটি না করা, ৯. সর্বাবস্থায় হক কথা বলা,  ১০. আল্লাহর রাস্তায় কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা, ১১. সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ প্রদান।  রাসূলের সা. সহযোগিতা করা ও সঙ্গী হওয়া, ১২. নিজের জান-মাল, স্ত্রী পরিবারের ন্যায় বিশ্ব নবীর সা. প্রতি দায়িত্ববান থাকা। স্বামীর খিয়ানত না করা, ১৩. মৃত ব্যক্তিদের জন্য বিলাপ করবে না।  ১৪. মাহরেম ব্যতীত কোনো নারী নির্জন স্থানে যাবে না।  (বুখারী-১৭৯৯, সিরাতুন নবী ১/৫৬০, লু’লু মাকনুন ১/৫৬০, ৫৬৬)।
* উল্লেখ্য যে, নবীজি সা. কর্তৃক নারীদের এ বাইয়াত বা শপথের পূর্বে ৬২১ খ্রি. বাইয়াতের আকাবা উলা বা আকাবার প্রথম শপথ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।  উবাদাহ ইবনে সামিতের নেতৃর্ত্বে ১২ জন বিশিষ্ট সাহাবী পবিত্র মীনার নিকটে আকাবা নামক স্থান উক্ত শর্তসমূহ মেনে নিয়ে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করেন।  (ফতহুল বারী শারহে বুখারী ১/৬৬)।
* নারীদের বাইয়াতের প্রেক্ষাপট
মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী সা. সফা পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন তখন উমর রা. সেখানে পাহাড়ের নিচে অবস্থান করছিলেন। তখন দলে দলে মা-বোনেরা এসে নবীজির সা. হাতে আলোচ্য শর্তসমূহ মেনে নিয়ে শপথ প্রহণ করেন।  এটাকে ‘বাইয়াতুন নিসা’ও বলা হয়। (বুখারী, মুসলিম)।
মহিলা সাহবীগণের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে শপথ অনুষ্ঠান চলছিলো।  একে একে তারা শপথবাক্যসমূহ পাঠ করেছিলেন। কোনো কোনো মহিলা সাহাবী আবেগবশত শপথের জন্য তাঁর হাত এগিয়ে দিলে বিশ্বনবী সা. স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন ‘আমি কোনো নারীর হাত স্পর্শ করি না’ এরপর একে একে শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
* মক্কা বিজয়ের দিন প্রথমে পুরুষদের শপথ পড়ানো হয়। পুরুষদের দুটি শর্ত ছিলÑ ১. পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়া, ২. জিহাদ করা।
* হিন্দার রা. ইসলাম গ্রহণ: একে একে নারীদের শপথ অনুষ্ঠান চলছে এমন সময় হিন্দা রা. বিনতে উতবাহ (আবু সুফিয়ানের স্ত্রী) মুখ ঢেকে ঘোমটা পরে ইসলাম গ্রহণের জন্য হাজির হলেন। শপথবাক্য পাঠের সময় নবীজি সা. যখন বললেন বলুন যে, আমি আর কখনো শিরক করবো না। তখন হিন্দা মুখ ঢেকে চিৎকার করে বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম আপনি পুরুষদের যে দুটি বিষয়ে শপথ করিয়েছেন আমাদের ও তাই করান।  (১. ইসলাম, ২. জিহাদ) এরপর নবীজি বললেন বলুন চুরি করব না। হিন্দা বললেন আমার স্বামী আবু সুফিয়ান অনেক বেশি কৃপন, তাই আমি তার সম্পদ গোপনে নিয়ে একটা বড় ফান্ড তৈরি করেছি। সাথে সাথে আবু সুফিয়ান রা. বলে উঠলেন, যা গোপনে নিয়েছ সে মালসমূহ তোমারই। তখনই নবী সা. মুচকি হাসলেন এবং বললেন আপনি কি হিন্দা? কারণ নবীজির চাচা হামজার রা. সাথে উহুদ যুদ্ধকালীন সময়ে হিন্দার আচরণের কারণে হিন্দা ঐ সময় ঘোমটা দিয়েছিলেন  এবং বললেন, আমি যা করেছি তা আল্লাহ তায়ালাই মাফ করবেন।  এরপর প্রিয় নবীজি সা. বললেন তারা ব্যভিচার করবে না। হিন্দা বললেন, কোনো স্বাধীন নারী কি কখনো ব্যভিচার করে?
 (বুখারী : ৭০৫৫, ৭১০০, মুসলিম : ১৭০৯, ৪২)।
কোনো কোনো বিবরণে আকাবার প্রথম শপথ অনুষ্ঠিত হয় ৬২১ হি. হিজরতের একবছর পূর্বে ১২ জিলহজ্জ।  তাদের সাথে মহানবী সা. তাদের মুয়াল্লিম হিসেবে মুসয়ার ইবনে ওমরকে মদিনায় পাঠিয়ে ছিলেন।
আলোচ্য আয়াতের তাফসিরের প্রাচীনকালের মুফাসসিরগণ থেকে নারীদের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ব্যাপরে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না। অথচ বাইয়াতুন্নিসা নারীদের শপথ নবী কর্তৃক স্বাব্যস্ত। আর বর্তমানে নারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সংক্রান্ত বিষয় দুটি নিয়ে সমন্বয় সাধন হওয়া দরকার বিধায় বর্তমান সময়ের কতিপয় বিদগ্ধ  ইসলামী মনীষী কতিপয় দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেছেন।
১. নারীদের শপথ : এটি কুরআনিক পরিভাষা এবং কুরআন মাজীদে এটি মাত্র একবার উল্লেখিত হয়েছে।
২. এটি একটি সুক্ষ বিষয় হলেও ইহা নারী অধিকারের পক্ষে একটি উজ্জ্বল আসমানী বার্তা।
৩. বাইয়াতুন্নিসার ঘটনা দ্বারা নারী জাতির সামাজিক, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান ফুটে উঠেছে।
৪. বাইয়াতুন্নিসার ভিত্তিতে আকাবার শপথসমূহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
 নবী সা. এর বাইয়াত এর ধারাবিবরণী
১. আকাবার প্রথম শপথ হিজরতের এক বছর পূর্বে মীনার কাছে আকাবা নামক স্থানে, ১২ জন প্রতিনিধির শপথ নবীজির হাতে। তাদের দলপতি ছিলেন উবাদাহ ইবনুস সানমতি রা.
২. আকাবার ২য় শপথ পরের বছর হিজরতের প্রাককালে আত্তস ও খাজরাজ গোত্রের ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী নবীজির হাতে এসে ঐ শর্তসমূহের ওপর বাইয়াত করেন।
৩. বাইয়াতে রেদওয়ান ৬ষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সময়ে ওসমান রা.-এর হত্যার সংবাদের ভিত্তিতে নবীজির সা .সাহরীদের নিয়ে যে বাইয়াত বা শপথ করায়েছিলেন এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সন্তষ্টি প্রকাশ করে বলেন, অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহ তায়লা ঈমাদাদের গাছের নিছে আপনার হাতে শপথ গ্রহণকে পছন্দ করেছেন তখনকার সংখ্যা ছিল ১৫০০।
এ শপথে চারজন নারী সাহাবী অংশ নেন।
১. ফারিয়া বিনতি মালেক
২. উম্মে মুনজির সিলমি বিনতি কায়েস।
৩. উম্মে জিশান, ৪. নবীজির এক খালা।
৪. মক্কা বিজয়ের দিন বাইয়াতে নিসা অনুষ্ঠিত হয়।
৫. খিলাফতের বাইয়াত, যা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের বা খলিফার আনুগত্যের শপথ হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে। যখন ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা নিয়োগ করা হয়, তখন এ বাইয়াত গ্রহণ করা হয়।
৬. বাইয়াতে ইসলাম, তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য বাইয়াত নেয়া।
৭. বাইয়াতে তাসাওউফ, তাকওয়া পরহেজগারিতে অগ্রগামী হওয়ার এবং নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার শপথ। কোনো পীর বা ধর্মীয় ব্যক্তির পক্ষ থেকে এই বাইয়াত নেওয়া হয়ে থাকে।
৮. বাইয়াতে হিজরত, দারুল কুফর বা কাফেরদের জুলুমি রাষ্ট্র ছেড়ে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রে চলে যাওয়ার জন্য কারো হাতে হাত রেখে যে শপথ গ্রহণ করা হয়।
৫. বাইয়াতে জিহাদ, জিহাদের ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত। যদি কখনো জিহাদের ময়দানে ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন আমীরে জিহাদের হাতে সকল মুজাহিদ বাহিনী দৃঢ়তার বাইয়াত গ্রহণ করে। এছাড়া সাধারণ অবস্থাতেও আমীরে জিহাদের হাতে মুজাহিদ বাহিনী জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করে থাকে।
৬. আলমে আরওয়াহ, তথা রূহজগতে যে বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ সকল বনি আদম নিয়ে এসেছেন আমৃত্যু সে বাইয়াতের ওপরে টিকে থাকতে হবে, অন্যথায় পরিপূর্ণ মুসলিম হয়া যায় না।  মূলত বাইয়াত ব্যক্তি বিশেষের নিকট নয়, ইহা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান, ইসলামী সংগঠনের নিকট, অথবা ইসলামী বুজুর্গদের হাতেও দীনি কাজের আনুগত্যের শপথ নেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলের মাধ্যমে ইসলামী সংগঠনের নিকট বাইয়াত হতে হয়, যা বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনে চালু রয়েছে। ইসলামী বিধিবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে বাইয়াত ও আনুগত্যের শপথ করা হয়, তা অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। কবির ভাষায় :
বাইয়াতের অর্থ হলো রবের নিকট শপথ করা,
শরীরের রক্ত দিয়েও সেই সে শপথ আঁকড়ে ধরার
যদি তুমি বাইয়াত নিয়েও কাটাও তোমার সুখের জীবন,
তাহলে, বন্ধু তোমার বাইয়াত নেওয়ার কি প্রয়োজন?
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাইয়াতে জিন্দেগী তথা দীন ইসলামের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : প্রবন্ধকার, লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

এ পাতার অন্যান্য খবর

এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।