গাজা এখন এক অবরুদ্ধ জনপদের নাম। যায়নবাদী উগ্র ইহুদি সম্প্রদায় মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফিলিস্তিনের স্বাধীন জমিন দখল করে গঠন করেছে ইসরাইল নামের এক অবৈধ রাষ্ট্র। মানবসভ্যতার বিকাশে ফিলিস্তিনের অবদান ইতিহাস স্বীকৃত। অসংখ্য নবী ও রাসূল সা.-এর স্মৃতিধন্য এ পবিত্র ভূমি। এখানে অবস্থিত মুসলমানদের প্রথম কিবলা পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস। কিন্তু আজ যায়নবাদীদের আগ্রাসনে গোটা ফিলিস্তিন বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের বৈধ অধিবাসী ভূমিপুত্র মুসলমানদের উৎখাত করে একের পর এক এলাকা দখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সম্প্রসারণ অব্যাহত আছে। তারা নিরীহ-নিরস্ত্র মুসলমান নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক তরুণদের হত্যা করছে, বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৮১ নম্বর প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করে ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের পর থেকেই চলছে গোটা ফিলিস্তিনকে গ্রাস করার নীলনকশার বাস্তবায়ন। আরবজাহানের বুকে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে তারা ইসরাইল নামের বিষফোড়াকে ব্যবহার করছে। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিরতি দিয়ে দিয়ে চলছে যুদ্ধ এবং প্রতিনিয়ত চলছে অত্যাচার-নির্যাতন।
বিশেষ করে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে নতুন করে হওয়া অসম যুদ্ধে এ পর্যন্ত গাজায় ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৩০০ জন মানুষ। এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, অঞ্চলটিতে সাংবাদিকদের নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৬-এ দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলের হামলায় এ অঞ্চলের বেশিরভাগ জনসংখ্যাই অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে ৬০ শতাংশ। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে আছে গাজাবাসী।
জাতিসংঘ এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, উদ্বেগজনক খাদ্য সংকট, ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি এবং রোগের ব্যাপক বিস্তার গাজায় শিশুমৃত্যুর একটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের বিশ সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছিল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য এবং নিরাপদ পানি ‘অবিশ্বাস্যভাবে দুষ্প্রাপ্য’ হয়ে পড়েছে এবং সকল ছোট বাচ্চারা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের মানবিক কর্মকাণ্ডের ডেপুটি হেড টেড চাইবান বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় এখন শিশুমৃত্যুর প্রতিরোধযোগ্য একটি বিস্ফোরণ প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে। এটি ইতোমধ্যেই শিশুমৃত্যুর অসহনীয় মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।’ শিশুদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর যৌথ মূল্যায়ন অনুসারে গাজার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর অন্তত ৯০ শতাংশ এক বা একাধিক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। মূল্যায়নের দুই সপ্তাহ আগে ৭০ শতাংশের ডায়রিয়া রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ২০২২ তুলনায় ২৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিতাড়িত হয়ে পশ্চিমা মদদে যেসব ইহুদি ফিলিস্তিদের বৈধ ভূমি দখল করেছে, তারা অবৈধ দখলদার। ন্যায়-ইনসাফ ও মানবাধিকারের কোনো মানদণ্ডেই তারা এ ভূমিতে রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। এ সত্যের বাস্তবায়নে মানবাধিকারের পক্ষের বিশ^মানবতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অবরুদ্ধ গাজাবাসী এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে আরবজাহান ও মুসলিম বিশে^র সম্মিলিত উদ্যোগ এ মুহূর্তের অপরিহার্য দাবি।
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।