ইতিহাসকেও দাঁড়াতে হয় ফ্যাসিবাদের কাঠগড়ায়
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫৯
॥ সরদার আবদুর রহমান ॥
পদত্যাগী ও পলাতক ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার তার দেড় দশকের শাসনামলে তাদের ‘অপছন্দের’ ইতিহাসকেও কাঠগড়ায় তুলেছিল। খ্যাতিমান লেখকের উপন্যাসও সেই ফ্যাসিবাদী শাসকের ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। এরকম বহু ঘটনা সেই দেড় দশককে কলঙ্কিত করে রেখেছে। আলোচিত কিংবা অনালোচিত সেসব ঘটনাবলির কিছু নমুনা এখানে উদ্ধৃত করা হলো।
কাঠগড়ায় হুমায়ূন আহমেদের
‘দেয়াল’ উপন্যাস
২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘দেয়াল’ নামের একটি উপন্যাস সংশোধন না করে তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাইকোর্ট। এ উপন্যাসে দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার বিবরণে তথ্যগত ভুল রয়েছে- এমন অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের নজরে আনেন। আদালত উপন্যাসটি সংশোধনের নির্দেশ দেয়ার প্রশ্নে কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করেন। তবে আদালত এই মর্মে আশা প্রকাশও করেন যে, ওই ‘ভুল’ সংশোধন করে বইটি প্রকাশ করা হবে। ‘দেয়াল’ নামের উপন্যাসটি তখনো বই আকারে প্রকাশিত হয়নি। এর অংশবিশেষ দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ১১ মে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাসের অংশের ভিত্তিতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাইকোর্টের নজরে আনেন যে, উপন্যাসটিতে ইতিহাসের একটি ঘটনা তুলে ধরার ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল রয়েছে। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। কিন্তু ঘটনার বর্ণনায় শেখ মুজিবের ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে হত্যার বর্ণনা সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে খন্দকার মোশতাক আহমেদ জড়িত ছিলেন বলে মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে উঠে এসেছে। কিন্তু মোশতাক আহমেদ কিছুই জানতেন না, এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে ঐ উপন্যাসে।’ মাহবুবে আলম বলেন, সে কারণেই তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছেন। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ উপন্যাসটির তথ্য সংশোধন করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, সেই মর্মে তথ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, উপন্যাসে তথ্যগত ‘ভুল’ সংশোধন না করা পর্যন্ত তা প্রকাশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে এবং শেখ মুজিব হত্যা মামলার বিচারের পেপারবুকসহ সব কাগজপত্র তাঁকে দেয়ার জন্যও নির্দেশ দেন আদালত। মাহবুবে আলম বলেন, “শেখ রাসেল সে সময় ছিল শেখ মুজিবের পিএ বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মহিতুল ইসলামের কাছে বাড়ির নিচে। শেখ রাসেল মায়ের জন্য কান্নাকাটি করলে তাকে বাড়ির উপরতলায় নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তার আগেই বাড়ির অন্যদের হত্যা করেছিল ঘাতকরা।” কিন্তু উপন্যাসটিতে লেখা হয়েছে, বাড়ির মেয়েদের সাথে থেকে শেখ রাসেল আলনার পাশে লুকালে, সেখান থেকে তাকে বের করে এনে ঘাতকরা হত্যা করে। এটি সঠিক তথ্য নয় বলে অ্যাটর্নি জেনারেল উল্লেখ করেন। এভাবে ‘অপছন্দের’ বিবরণ প্রকাশ করতে বাধা দেয়া হয় আদালতকে ব্যবহার করে।
এ কে খন্দকারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ
মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এ কে খন্দকারের বিরুদ্ধে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ‘অবমাননাকর’ বই লেখার অভিযোগ আনা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি আদালতে এ বিষয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিব বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক ও সাবেক যুগ্ম সচিব এম ইসহাক ভূইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সানজিদা আফরিন দিবার আদালতে এ অভিযোগ দায়ের করেন। আরজিতে বলা হয়, এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১ : ভেতর বাইরে’ বইটির একটি অংশে ‘মুজিব বাহিনীর কিছু সদস্য যুদ্ধের সময় লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছেন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে দেখা যায়নি। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান এ কে খন্দকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গত মহাজোট সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। বইয়ে তিনি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে।
বিচারক আইনজীবীর বক্তব্য শুনে মামলাটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে আদেশের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী তানভীর ভূইয়া বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বইয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ায় দণ্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ ধারায় এ কে খন্দকারের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।” ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ প্রকাশের পর এ নিয়ে দলের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। বইটি নিষিদ্ধ করারও দাবি ওঠে জাতীয় সংসদে। মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকারকে এখন আর মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন সাবেক সেনাপ্রধান ও সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামের পরবর্তী সভাপতি কে এম সফিউল্লাহ। তাঁর মতে, এ কে খন্দকার ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ বই লিখে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃতি করেছেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস রচনা করতে পারেন তিনি আর মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেন না। সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামের এক সভায় সফিউল্লাহ এমন মন্তব্য করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত কার্যকরের দাবিতে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ কে খন্দকারকে উদ্দেশ করে কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন- এটা কখনো শুনিনি। উনি কীভাবে জানলেন? আমার জীবদ্দশায় কখনো ‘জয় পাকিস্তান’ শুনিনি। হয়তো ‘জয় বা জিন্দাবাদ’ও বলতে পারতেন। কিন্তু সেটা তো এ কে খন্দকার সাহেব লেখেননি।” এরপর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন বই ও দলিলপত্র তুলে ধরেন। সফিউল্লাহ বলেন, “এ কে খন্দকার বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের নাকি কোনো রাজনৈতিক প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু সিদ্দিক সালিক তাঁর ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ের ৭৫ পৃষ্ঠায় বলেছেন ২৫ মার্চের রাতে ফার্মগেটে পাকিস্তানি বাহিনী বাধার সম্মুখীন হন।” তিনি বলেন, “এ কে খন্দকার স্বাধীনতা যুদ্ধে যাননি। তিনি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কলকাতায় যান। আমরা যুদ্ধে গেছি মার্চ মাসে। আর উনি গেলেন মে মাসে। গিয়ে সোজা উঠলেন হেডকোয়ার্টারে। বাকি সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন? আবার ইতিহাস বিকৃতি করে বই লিখেছেন। এখন তাঁকে আর মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না।” এভাবে একজন শীর্ষ মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করা হয় ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’ হিসেবে। তবে এ ঘটনার জন্য একে খন্দকার পরবর্তীকালে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।
‘আমার ফাঁসি চাই’ নিষিদ্ধ
শেখ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টুর লেখা বই ‘আমার ফাঁসি চাই’ নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় রেন্টু রচিত বইটি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত বইটিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করা হয়েছে। ‘ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়ানো’র অভিযোগে শেখ হাসিনা কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি মতিউর রহমান রেন্টু এবং তাঁর স্ত্রীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। রেন্টু দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ছিলেন মতিউর রহমান রেন্টু। সে সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে লেখা এ বইয়ে হাসিনা ও তার দলের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন লেখক। এ নিয়ে আদালতে মামলার কথাও জানা যায়। সরকারবিরোধী বই ‘আমার ফাঁসি চাই’ ছাপানোর অভিযোগে বর্ণমালা ছাপাখানার মালিক ফয়সাল আহমেদকে গ্রেফতার এবং জুবেল আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘আমার ফাঁসি চাই’ বই ছাপানোর অভিযোগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে এক আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে ৮ আগস্ট মামলা করায় ১২ আগস্ট ফয়সাল আহামদকে গ্রেফতার করা হয়।
আমার দেশ বন্ধ
২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক ‘আমার দেশ’। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে পত্রিকাটি। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল বন্ধ করে দেয়া হয় আমার দেশের প্রকাশনা। এর আগে ২০১০ সালের জুনেও ১০ দিনের জন্য পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কেবল পত্রিকা বন্ধ নয়- গ্রেপ্তার হন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি লন্ডনে চলে যান। সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত চব্বিশের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। এর মধ্যে পত্রিকাটির সম্পদ লুণ্ঠনও করা হয়। কোনো আইনি পদক্ষেপ নয়- স্রেফ ক্ষমতাবলে প্রশাসনিক আদেশে এটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। বিকল্প হিসেবে দৈনিক সংগ্রামের প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপানোর কারণে দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক প্রবীণ বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। আমার দেশের মতো একই পরিণতি হয় দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি প্রভৃতি গণমাধ্যমের। এক্ষেত্রে আইনের কোনো তোয়াক্কাই করা হয়নি।
আক্রান্ত দৈনিক সংগ্রাম
২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ও সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাড়িতে ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলা করে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। এদিন রাত সোয়া ১১টার দিকে বড় মগবাজারের আল-ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস ও দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ের ফটকে দুর্বৃত্তরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় এবং একটি পেট্রলবোমা ভেতরে ছুড়ে মারে। এ সময় সাত-আটটি মোটরসাইকেলে কিছু লোক এসে প্রথমে বন্ধ থাকা লোহার ফটকের সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। একই সময়ে তাঁরা কয়েকটি পেট্রলবোমাও ভেতরে ছুড়ে মারে। সংগ্রামের কর্মচারীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ ঘটনার পরপরই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ইস্কাটন গার্ডেন রোডে সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসার সীমানার ভেতরে পরপর চারটি পেট্রলবোমা হামলা চালায়। এতে সেখানে আগুন ধরে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তা নিভিয়ে ফেলেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকার মগবাজারে দৈনিক সংগ্রামে হামলা চালায়। এ সময় পত্রিকাটির দফতরের আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে তারা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বয়োবৃদ্ধ আবুল আসাদকে অফিস থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায় এবং শারীরিক হেনস্তার পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে সম্পাদক আবুল আসাদকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এছাড়া ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর সাংবাদিক নেতা ও দৈনিক সংগ্রামের তৎকালীন প্রধান প্রতিবেদক রুহুল আমিন গাজীকে মগবাজারে দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী এ আদেশ দেন। রুহুল আমিন গাজী ছিলেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফউজের নির্বাচিত সভাপতি।
অতীতে দেখা গেছে, সাধারণত ‘অশ্লীলতা’ ছড়ানো কিংবা ‘দেশদ্রোহমূলক’ লেখার জন্য কোনো বই বা পত্রিকা নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ এখানে কাজ করেছে নিজেদের ‘অপছন্দের’ তথ্য। আওয়ামী সরকার গত দেড় দশকে নিজেদের পছন্দমত ‘ইতিহাস’ রচনা করে গেছে, তেমনই ইতিহাস বিকৃত করার দিকও ছিল তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রকাশ। এক ব্যক্তি আর একদলের গুণগান করে রচিত ইতিহাসের নামে একতরফা গুণকীর্তন জোর করে জাতির কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। একশ্রেণির লেখক-বুদ্ধিজীবী তৈরি করা হয় এ কাজের জন্য। যারা পরিচিতি পান ‘চাটুকার’ হিসেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদ উল্টে গেলে সেই চাটুকাররা আর কোনো কাজে আসেনি।