অপরাধীদের বিচারে সেনাবাহিনীর ইমেজ বাড়বে
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫৭
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণের জান-মাল ও সম্মান রক্ষার অতন্দ্রপ্রহরী আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের সীমানার বাইরে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে মানবাধিকার রক্ষায় তাদের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। তাদের ইতিবাচক কাজের কারণে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো সারা বিশ্বে জ¦ল জ¦ল করছে। বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির দুঃশাসনের অবসানে বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এবং একদলীয় বাকশালের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক ভূমিকায় সেনাবাহিনীর সাফল্যের মুকুটের শোভা বাড়িয়েছে।
আমরা জানি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর বা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (সংক্ষেপে ডিজিএফআই) কর্মকর্তা ও কর্মীরা সেনাবাহিনীর সদস্য। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত। কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ফ্যাসিস্ট রাজত্বের দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটির দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা ছিলেন হাসিনা। তার অন্যায় নির্দেশনা বাস্তবায়নে তিনি তার বিশ্বস্ত কিছু ব্যক্তিকে বাছাই করে বড় বড় পদে বসিয়েছিলেন তারা তার অন্যায়। নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খুন, গুম ও টর্চার সেল আয়নাঘর প্রতিষ্ঠার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এ অপরাধের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং ডিজিএফআইয়ের ১২ হাজার সদস্যের সবাই জড়িত নয়। গুম-সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে করা দুটি মামলায় ৩০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এর মধ্যে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে গত শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দৃঢ় অবস্থানের বার্তা পেয়েছে বিশ্ববাসী। দেশে সর্বস্তরের জনগণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ সাহসী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বিএনপিসহ প্রত্যেক রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীর এ ভূমিকার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্ররোচনায় প্রতিপক্ষ নিধনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন অন্ধ সহযোগী। ফলে গুম এবং খুনের মতো ভীতিকর পরিবেশ দেশে সৃষ্টি হয়েছিল, যা একটি জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। তবে সুনির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির অপরাধের কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কিত হতে দেওয়া যায় না। অপরাধের দায় কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপরই বর্তাবে।
যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাদের মনে রাখা উচিত, গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভিহিত থাকায় এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর কোনো ক্ষতি হবে না, বরং মানবাধিকার রক্ষায় সেনাবাহিনীর এ কঠোর অবস্থানের কারণে তাদের মর্যাদা বাড়বে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ অতীতের উদাহরণ পর্যালোচনা করে তিনিও মনে করেন সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়া ট্রাইব্যুনালে অগ্রসর হতে বাধা নেই।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আব্দুর রব খান মনে করেন, এ ঘটনায় বাহিনীকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না, বরং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সংক্রান্ত বিচারে সহযোগিতা করে সেনাবাহিনী প্রশংসা কুড়াবে। এটা পুরো বিচার প্রক্রিয়ার অংশ। একে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই এবং এতে পুরো জাতি জড়িত। আমি মনে করি, যেভাবে এগোচ্ছে সেটি যথাযথ। এটাকে ম্যাটার অব ফ্যাক্টস হিসেবে নেয়াই উত্তম। এর সাথে পুরো প্রতিষ্ঠানকে টানা ঠিক হবে না।’
আমরাও মনে করি, কিছু ব্যক্তি ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই বহন করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক ইমেজ আরও বাড়বে।