আ’লীগকে প্রক্রিয়ায় আনতে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির ধরনা

নির্বাচন ঘিরে ছায়াযুদ্ধ


৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:১৮

॥ ফারাহ মাসুম ॥
বাংলাদেশের ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ায় এক নীরব কিন্তু তীব্র শক্তি-প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। নির্বাচনটি দেশের রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বার্থ এবং কৌশলগত অবস্থানকেও পুনর্গঠন করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের ভোট শুধু অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার পালাবদলের প্রশ্ন নয়- এটি হয়ে উঠেছে এক বহুজাতিক কূটনৈতিক গোলটেবিল, যেখানে নেপথ্যে চলছে প্রভাব বিস্তারের অঘোষিত প্রতিযোগিতা।
গত বছর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ এক ধরনের ভঙ্গুর শূন্যতার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো অবস্থান নির্ধারণে ব্যস্ত; নির্বাচন হবে কখন, কীভাবে এবং কোন রাজনৈতিক বিন্যাসে- তা এখন শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আলোচনা নয়, বরং আঞ্চলিক শক্তি-সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দু।
রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাস ও বিরোধের জটিলতা
বাংলাদেশের ভেতরে এখন তিনটি বড় বাধার একটি হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সঙ্কট। দলগুলো এখনো নির্বাচনী পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে বিভক্ত। দ্বিতীয়ত, ইউনূস-নেতৃত্বাধীন প্রশাসন নির্বাচনের জন্য কাঠামো তৈরি করছে, কিন্তু রাজনৈতিক টানাপড়েন তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুনর্গঠনের পরও দলগুলো কমিশনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এ প্রশ্ন বিদেশি শক্তিগুলোও নজরে রাখছে।
নির্বাচন নতুন আঞ্চলিক শক্তি-সমীকরণের সূচনা
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বিশ্বের চার শক্তির কাছে চার রকম অর্থ বহন করে। ভারতের কাছে এটি সীমান্ত ও নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এটি পরিকল্পিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির একটি স্তম্ভ। চীনের কাছে এটি বাণিজ্য ও বন্দর নিয়ন্ত্রণের প্রবেশদ্বার। পাকিস্তানের কাছে এটি দক্ষিণ এশিয়ার পুরনো ভারসাম্যের প্রতীকী যুদ্ধ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ দুটি- নিজস্ব সার্বভৌম অবস্থান বজায় রেখে নির্বাচনকে স্বীকৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা। চার শক্তির প্রতিযোগিতাকে এমনভাবে সামলানো; যাতে দেশ দীর্ঘমেয়াদে কোনো একক অক্ষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।
বাংলাদেশের নির্বাচন তাই শুধু একটি রাজনৈতিক ইভেন্ট নয়- এটি পরবর্তী দশকের জন্য দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, বিদেশনীতি, বন্দর-অবকাঠামো কৌশল; এমনকি অর্থনীতির শ্রেণিকাঠামোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এ কারণেই চার পরাশক্তি আজ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ঢাকা হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী যুদ্ধক্ষেত্র’।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটা, কোথায় বাধা?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। রমজানের আগে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ স্তরে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রশ্ন উঠছে- ফেব্রুয়ারি কি এখনো বাস্তবসম্মত? নাকি রাজনৈতিক, আইনগত ও কূটনৈতিক জটিলতা নির্বাচনকে কয়েক ধাপ পিছিয়ে দিতে পারে?
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুরু থেকেই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘রমজানের আগে নির্বাচন’- যার অর্থ ফেব্রুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে ভোট আয়োজন। সরকারি নীতিনির্ধারক ও নির্বাচন কমিশনও একই সময়রেখার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন দীর্ঘ বিলম্বকে ঝুঁকিপূর্ণ দেখছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে। ভারত চায় অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা এড়াতে। ইইউ বাজেট সাপোর্ট ও বাণিজ্য-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাচনের অপেক্ষায়।
নতুন ভোটার তালিকা, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ব্যালট-ইভিএম মডেলের সমন্বয়, পর্যবেক্ষক কাঠামো প্রণয়ন- এসবই ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনার সঙ্গে বেশ সঙ্গতিপূর্ণ। গত এক বছরে সরকারের কাঠামোগত পুনর্গঠন, দলবদল, আইনগত পরিবর্তন, তদন্ত কমিশন- সব মিলিয়ে জনগণের মাঝে দ্রুত স্থিতিশীল সরকার দেখার চাপ তৈরি হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দাবি ক্রমেই জনমতের মূল স্রোতে পরিণত হয়েছে।
বাধাগুলো কোথায়?
অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির আলোচিত শব্দ। কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী বাধা হলো আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঘোষণা করেনি। কূটনৈতিক মহলের কেউ কেউ মনে করেন, আ’লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে। ভারত চাইছে দলটিকে রাজনীতির মূলধারায় ফেরানো হোক। যুক্তরাষ্ট্র পরিশোধিত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অন্তর্ভুক্তির বিষয় বিবেচনা করতে পারে।
এছাড়া নির্বাচন রিফর্ম প্যাকেজের কাজ পুরো শেষ হয়নি। যে চারটি বড় সংস্কার নির্বাচনের আগে জরুরি, তা হলো- নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন আইন, দল নিবন্ধন নীতি, প্রার্থী ব্যয়ের নতুন সীমা ও স্বচ্ছ মনিটরিং কাঠামো। এগুলো আংশিক প্রস্তুত, পুরো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
বিরোধী জোটগুলোর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাও একটি ফ্যাক্টর। বিএনপি, জামায়াত, ধর্মভিত্তিক দল, গণতান্ত্রিক জোট, কয়েকটি বাম দল- সবগুলোর মধ্যেই মনোনয়ন ও জোট কাঠামো নিয়ে বিরোধ রয়েছে। জাতীয় ঐক্য তৈরির চেষ্টা থাকলেও তালিকা চূড়ান্ত, আসন সমঝোতা এবং একটি সমন্বিত রাজনৈতিক ম্যাসেজ তৈরি- এসব এখনো শেষ হয়নি।
নির্বাচন-পরবর্তী শৃঙ্খলা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় হিসাব হলো- নির্বাচনের ফলাফল সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে না পারলে সহিংসতা দেখা দিতে পারে। তাই নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও পোস্ট-ইলেকশন সিচুয়েশনের প্রস্তুতি গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি নির্বাচন প্রস্তুতির সময় বাড়াতে পারে।
কিছু দলের নিবন্ধন সংকট পরিষ্কার না হলে নির্বাচন বৈধতার প্রশ্ন উঠবে। ইসি চাইছে আইনি জট কাটিয়ে সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে, যা সময়সাপেক্ষ।
ফেব্রুয়ারিতে না হলে বিকল্প সম্ভাব্য সময়সীমা
মার্চ ২০২৬- সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ব্যাকআপ : রিফর্ম প্যাকেজ সম্পূর্ণ করা এবং সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করতে অতিরিক্ত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। রাজনৈতিক অভিঘাতও কম। এর সম্ভাবনা স্কোর : ৮/১০।
এপ্রিল ২০২৬ সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য ডেডলাইন : এপ্রিলের পর নির্বাচন হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এপ্রিল হলো রাজনৈতিক সিস্টেমের শেষ অনুমোদিত সময়সীমা। সম্ভাবনা স্কোর : ৫/১০।
জুন ২০২৬-এর পরে আর সময় বাড়বে না : জুন পার হলে ক্ষমতার শূন্যতা, জরুরি পরিস্থিতির ঝুঁকি, বৈদেশিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা, অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দেবে। এ কারণে সরকারও চায় না সময়সীমা জুনের পরে যাক। সম্ভাবনা স্কোর : ৩/১০।
কূটনৈতিক সমীকরণ : কে কী চায়?
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান : মানবাধিকার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবি অব্যাহত, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বেশি দীর্ঘ হোক- এমন আগ্রহ নেই। ফেব্রুয়ারি বা মার্চ- এ দুই সময়ই গ্রহণযোগ্য।
ভারতের অবস্থান : সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে ২০২৪-এর উত্থানের পর অতিরিক্ত বিলম্ব চায় না। আ’লীগকে নির্বাচনে ফেরানোই তাদের প্রধান কূটনৈতিক লক্ষ্য।
ইইউর অবস্থান : বাজেট সাপোর্ট পুনরায় চালু করতে নির্বাচনের প্রয়োজন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ সময়সীমা সবচেয়ে উপযোগী
জনগণ কী ভাবছে?
ভোটার মনস্তত্ত্বে এখন তিনটি বড় সেন্টিমেন্ট দেখা যাচ্ছে- নির্বাচন হোক দ্রুত; যাতে রয়েছে স্থিতিশীলতা ফেরানোর আকাক্সক্ষা। যথাসম্ভব সব দলকে আনতে হবে- এটি জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা-সংক্রান্ত উদ্বেগ। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার আশঙ্কা প্রবল যেন না হয়, তেমন একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করে মানুষ, যাতে নিরাপত্তাও একই সাথে নিশ্চিত থাকে।
বাংলাদেশ একটি জটিল রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে চলছে। রিফর্ম, দলীয় পুনর্গঠন, বিচারিক প্রক্রিয়া এবং কূটনৈতিক সমীকরণ সবকিছু মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন এখনো সম্ভাবনা ধরে রেখেছে। কিন্তু মূল প্রশ্ন একটাই- সব ধরনের রাজনৈতিক শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা যাবে কি না।
সার্বিকভাবে চাপ রয়েছে, বাড়ছে সময়ের সংকট। পরবর্তী চার থেকে ছয় সপ্তাহই নির্ধারণ করবে- নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারিতে, নাকি রাজনৈতিক বাস্তবতা তাকে মার্চে বা আরো পরে ঠেলে দেবে।
কেন বড় শক্তিগুলোর জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিচ ইনস্টিটিউট ও দ্য ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণ অনুসারে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভৌগোলিক দিক থেকে এবং বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সমুদ্রপথ, বন্দর, সামরিক-ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিক রুটের দিক থেকে ব্যাপক গুরুত্ব রাখে। নির্বাচন সফল, সুষ্ঠু ও স্বীকৃত হলে সেটা নতুন সরকারকে বৈধতা দেবে এবং সেই সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা চুক্তি, বন্দর প্রজেক্ট ইত্যাদির পথ খুলে যাবে, যা শক্তিগুলোর দৃষ্টিতে ‘শুদ্ধ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সুযোগ’।
আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার শূন্যতা বা বিতর্কিত ফলাফল হলে সেটা পুরো অঞ্চলে সংকট, অভিবাসন, নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক ভাঙন তৈরি করতে পারে, যা কারো স্বার্থ নয়। তাই ‘নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিরতা’ প্রত্যেক পক্ষের জন্য একটি ভাগ করা কিন্তু বিতর্কিত স্বার্থ।
নির্বাচনকেন্দ্রিক স্বার্থ সমীকরণ
ভারতের জন্য বাংলাদেশ ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক সংযোগ দেশ। ভারত- বাংলাদেশের বাণিজ্য, বড় বাজার এবং বন্দর/পরিবহন রুট সবই মেনে চলে।
বাংলাদেশ তার পূর্ব সীমান্ত, উপকূল ও বঙ্গোপসাগরের দিকে ভারতের ‘পূর্ব নিরাপত্তা বাফার’ হিসেবে কাজ করে। একটি প্রভাবশালী, বন্ধুত্বপূর্ণ ও অনুগত বাংলাদেশ ভারতকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা-ক্যাটালগ হিসেবে প্রয়োজন বলে ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।
ভারত সাধারণত বাংলাদেশের জন্য এমন সরকার পছন্দ করে, যা ভারতকে সহযোগিতা দেবে; বিশেষ করে বন্দর, ট্রানজিট, সীমানা নিরাপত্তা, অর্থায়ন, রাস্তা-রেল সংযোগে। একটি নির্বাচিত, স্বীকৃত, রাজনৈতিকভাবে স্থির সরকার এসব সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য উপযোগী।
দিল্লির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো, যদি নির্বাচন হয় এবং ভারত-সহযোগী পন্থা নির্বাচনত্তর সরকার গঠন করে, সেটি দেশটির জন্য বড় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জয়ে পরিণত হবে।
চীন অবকাঠামোগত বিনিয়োগ ও বন্দর-প্রকল্পকে গুরুত্ব দেয়। চীন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বহু বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেÑ বিদ্যুৎ, বন্দর, শিল্প জোন, পোর্ট ইত্যাদি। ডিপ্লোমেট ও ইউএস পিচ ইনস্টিটিউট এর মতে, চীন চায় বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপথে প্রভাব রাখতে, বন্দর নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করতে। এ কারণে চীনের রয়েছে, রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের ‘অল-পার্টি’ কৌশল। চীন শুধু সরকার নয়, বিরোধীদল, বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ছেÑ যাতে যেকোনো সরকারে তার প্রভাব বজায় থাকে। অর্থাৎ চীন চায় যেকোনো সরকারই আসুক, সেটা নির্বাচন বা অন্য যেভাবেই আসুক- কিন্তু তাদের বাণিজ্য, বন্দর, শিল্প, সামরিক অংশীদারিত্বের বিঘ্ন যেন না ঘটে।
যুক্তরাষ্টের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও ইন্দো-ফ্যাসিফিক কৌশল। যুক্তরাষ্ট্র চায় বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে এবং চীনের বৃদ্ধি ঠেকাতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো, সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাণিজ্য, রপ্তানি (বিশেষ করে গার্মেন্টস ইত্যাদি) ও বাণিজ্যিক যুক্তিসঙ্গততা এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় রপ্তানিমূলক দেশ; রাজনৈতিক স্থিরতা ও স্বচ্ছতা হলে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ানো সহজ।
গণতান্ত্রিক ইমেজ, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত নির্বাচন, মানবাধিকার ও স্বচ্ছতার সমন্বয় চায়। তাদের কাছে বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া নয়, কূটনৈতিক ও ন্যায্যতার প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি ‘স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, বৈধ’ নির্বাচন- যাতে নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, নিরাপত্তা, জলবায়ু ও উন্নয়ন সহযোগিতা সুসংগঠিত হয়।
পাকিস্তানের সরাসরি অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব নানা কারণে সীমিত। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বা ঐতিহাসিক পূর্ব সম্পর্ক রয়েছে। চীন ও পাকিস্তান একসঙ্গে ভারতবিরোধী সমন্বয় গড়ার চেষ্টা করে, যেখানে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত অংশ হতে পারে। কিছু প্রতিবেদন বলছে, চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান কো-অর্ডিনেশন বাড়ছে।
পাকিস্তানের সরাসরি বাণিজ্যিক আগ্রহ কম, তবে ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক কনটেক্সটে; বিশেষ করে চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ‘ত্রিকোণ’ বা ‘মাল্টি-অলোয়েন্স’ গঠনের চেষ্টা তাদের কাছে স্বার্থকর হতে পারে।
কৌশলগত প্রতিযোগিতার গভীর ঝুঁকি
বিদেশি শক্তি যদি রাজনৈতিক দল, নির্বাচন প্রক্রিয়া বা জনমত তৈরিতে সরাসরি বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ করে, তাহলে দেশজুড়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য তা বড় হুমকি হতে পারে। এতে গভীর রাজনৈতিক ভাঙনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। যেহেতু প্রতিটি শক্তি বিভিন্ন দিক থেকে লেনদেন, চুক্তি ও রাজনৈতিক পছন্দে নিয়োজিত- এর ফলে দেশে রাজনৈতিক টানাপড়েন, অংশীদারি বিভাজন বা লুটপাট, জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তন হতে পারে।
অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা ও ঋণফাঁদ তৈরির আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। বিশেষত চীনের সঙ্গে বর্ধিত বিনিয়োগ ও ঋণের ফলে বাংলাদেশ ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে ন্যূনতম স্বাধীন নীতি গ্রহণকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। সামরিক অংশীদারিত্ব, সমুদ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিত প্রবেশাধিকারÑ এসব জটিলতা দেশকে নিরাপত্তা সংকটের দিকে ধাবিত করতে পারে।
নির্বাচন নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতা হচ্ছে?
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে উভয় দেশ মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাদের আলোচনায় বাংলাদেশে শিগগিরই একটি বৈধ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ‘দেশের স্থিতিশীলতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। একই সঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, তারা ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ চায় এবং ভোট শেষে যেকোনো সরকারকে স্বীকৃতি দেবে।
এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ‘ট্রায়াঙ্গল’ গঠনে প্রচেষ্টা রয়েছে। ভারতও নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে আগ্রহী। অর্থাৎ ন্যূনতমভাবে উভয় দেশ মনে করে, বাংলাদেশে একটি সুসংগঠিত, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং রাজনৈতিক স্থিরতা, যা তাদের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের সঙ্গে মিলে।
তবে সার্বিকভাবে নিশ্চিত বলা যায় না যে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতা’ হয়েছে।
যদিও দুই দেশের কিছু সভায় ‘বাংলাদেশের নির্বাচন’ প্রসঙ্গ এসেছে। তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক বা অফিসিয়াল বিবৃতিতে কখনো স্পষ্ট নয় যে, তারা দুদেশ মিলে বাংলাদেশে কি ‘অভিন্ন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন বা এজন্য চুক্তি করবে। উদ্দেশ্য হিসেবে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ বলা হলেও সূচনাকালে; বিশেষত আগের নির্বাচনে কেন ভারত সেভাবে নির্দেশ দেয়নি, সেই প্রসঙ্গও উঠে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসেছে।
আরও স্পষ্টভাবে কিছু বিশ্লেষক ও মিডিয়া মন্তব্য করছে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ শব্দ ব্যবহারের পেছনে শুধু ভোটের স্বচ্ছতা নয়, ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ (নিরাপত্তা, অর্থনীতি, প্রভাব) কাজ করছে। অর্থাৎ ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ নয়, ‘ভারতের স্বার্থ’ জীবন্ত রেখে নির্বাচনী রাজনীতিতে পুনরায় প্রভাব স্থাপন করতে চায় ভারত এমন আশঙ্কাও আছে।
আর এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও কূটনৈতিক পর্যায়ে, এখনো সময়, প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, আইন ও ন্যায়- এসব বিষয় নিয়ে অস্বচ্ছতা রয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল ও সমাজ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ শব্দকে শুধু ‘সব শ্রেণির মানুষ ভোট দেবে’ হিসেবে নিচ্ছে, কিন্তু দল থেকে দলে অংশগ্রহণ এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতার বিষয় স্পষ্ট নয়।
ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রতি সবচেয়ে স্পষ্ট আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। দিল্লির কাছে ঢাকা শুধু প্রতিবেশী নয়, এটি একটি কৌশলগত বাফার চীনের বন্দর-উপস্থিতি, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক প্রতিযোগিতার প্রাথমিক লাইন অব ডিফেন্স বিবেচনায় বাংলাদেশকে দেখছে।
ভারত যে স্থিতিশীলতা চায়, তা মূলত তিনটি কারণে- প্রথমত, ভারত উত্তর-পূর্ব সংযোগ প্রকল্প, ট্রানজিট রুট, বিদ্যুৎ ও বন্দর ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সহযোগিতা অপরিহার্য মনে করে। বাংলাদেশে একটি অনিশ্চিত বা প্রতিকূল সরকার দিল্লির এ কৌশলগত পরিকল্পনা ব্যাহত করতে পারে। দ্বিতীয়ত,সীমান্তহীন রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সমান্তরাল নেতৃত্ব ভারতকে উদ্বেগে ফেলে। দিল্লি চায় নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত স্থিতিশীল সরকার গঠন। তৃতীয়ত, চীনা প্রভাবের প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশের উপকূল ও অবকাঠামোয় চীনের বিস্তার ভারতের সবচেয়ে বড় কৌশলগত আতঙ্ক। নির্বাচনের পর যদি চীনা-ঘেঁষা কোনো সরকার গঠিত হয়। তবে শিলচর-আগরতলা-সিলেট করিডোর থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দরের অ্যাক্সেস- সবই ভারতের জন্য হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভারতের একাধিক গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি ঢাকায় গোপন বৈঠক করেছে, যার লক্ষ্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করানো এবং নির্বাচনের টাইমলাইন ত্বরান্বিত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্টত গণতন্ত্রের ভাষ্য রয়েছে, কিন্তু এর কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু হলো ইন্দো-প্যাসিফিক। ওয়াশিংটনও নির্বাচনের প্রতি সমান তৎপর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ভারতের মতো সরাসরি রাজনৈতিক নয়, বরং দুটি স্তরে সাজানো। প্রথমত, চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে দক্ষিণ এশিয়া ও বঙ্গোপসাগরকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি-অক্ষের মধ্যে রাখতে হবে। আর সেই অক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ নোড বাংলাদেশ। এ কারণেই ওয়াশিংটন চায় নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক, স্বীকৃত ও বৈধ সরকার ক্ষমতায় আসুক, যার সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করা যায়।
দ্বিতীয়ত, মানবাধিকার-গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের এক কূটনৈতিক হাতিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে গণতন্ত্রের ‘টাইপোলজি’ নির্ধারণ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় তাদের জন্য লাভজনক। মানবাধিকার ও স্বচ্ছতার ভাষ্য ব্যবহার করে ওয়াশিংটন মূলত চায় বাংলাদেশ যেন চীনা ব্লকের দিকে পুরোপুরি ঢলে না পড়ে।
ওয়াশিংটন নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ থাকলেও তারা স্পষ্টভাবে বলছে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।’ এর আভাস হলো, যদি নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে বৈধ না হয়, তবে ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে।
চীন বন্দর, বাণিজ্য ও নীরব প্রভাবের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের অবকাঠামোর হৃৎপিণ্ডে। পায়রা সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি উন্নয়ন, কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পাঞ্চল সবই চীনের কৌশলগত অর্থনৈতিক রুটম্যাপের অংশ।
চীনের স্বার্থ তিনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়- প্রথমত, ভারত মহাসাগরের রুটে চীনের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে তারা একটি সম্ভাব্য ‘লজিস্টিক নোড’ হিসেবে দেখে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী অর্থনৈতিক উপস্থিতি বজায় রেখে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা কারখানা ও বিনিয়োগ চক্রকে সুরক্ষিত রাখা। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ চীনা সামরিক সরঞ্জামের অন্যতম বড় ক্রেতা। পরিবর্তিত সরকার বা নীতি যদি এ প্রবাহ ব্যাহত করে চীনের অবস্থান দুর্বল হবে।
চীনের রাজনৈতিক অবস্থান সবসময় একটি, ‘যে সরকারই আসুক, স্থিতিশীলতা থাকলে চীনের স্বার্থ চলবে।’ তাই তারা নির্বাচনের সময় বা প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। কিন্তু তাদের বার্তা, অর্থনীতি থামানো চলবে না।
পাকিস্তানের সরাসরি অর্থনৈতিক প্রভাব নেই। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তারা দেখে, বাংলাদেশ ভারতের একটি শক্তিশালী অংশীদার হতে থাকলে আঞ্চলিক ভারসাম্য পুরোপুরি দিল্লির দিকে ঝুঁকে যাবে। তাই পাকিস্তান চায়, বাংলাদেশ যেন ভারতনির্ভর কোনো ব্লকে আটকে না পড়ে।
তাদের কৌশল তিনটি- প্রথমত, আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রশ্নে ‘ভারতীয় প্রভাব’ হাইলাইট করা। দ্বিতীয়ত, চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ সমন্বয়কে কূটনৈতিক বয়ান হিসেবে ব্যবহার করা। তৃতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম রাজনৈতিক পরিচয়ের ঐতিহাসিক সংযোগ পুনরুজ্জীবিত করা। পাকিস্তানের প্রভাব সীমাবদ্ধ হলেও এটি ‘আঞ্চলিক প্রতীকযুদ্ধের’ একটি অংশ।
তারিখ নিয়ে চার দেশের আলাদা অবস্থান
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলোচনা এখনো ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২৬ সময়সীমা নিয়ে ঝুঁলে আছে। বিভিন্ন দেশের আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি নির্বাচনকে আরও জটিল করছে। ভারত চায় দ্রুত নির্বাচন। নতুন সরকার গঠন করে কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য প্রকল্পগুলোয় পুনর্গতি আনতে। চীন একইভাবে চায় দ্রুত স্থিতিশীলতা। কারণ তাদের প্রকল্পগুলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় আটকে আছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ‘সময়সীমা নয়, স্বচ্ছতা’। অর্থাৎ বৈধতা ছাড়া দ্রুত নির্বাচন হলে তারা অসন্তুষ্ট হতে পারে। পাকিস্তান নমনীয়। তারা মূলত লাভবান যদি নির্বাচনকে ঘিরে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা উত্তপ্ত হয়।