॥ সাইদুর রহমান রুমী॥
উজানের দেশে নদীতে বাঁধ, দূষণ-দখল-দুঃশাসন আর ক্ষমতার গ্রাসে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে দেশ স্মরণকালের ভয়াবহ তাপদাহে পুড়ছে শহর-গ্রামসহ সারা দেশ। আগুনের লু হাওয়ায় অস্থির প্রাণিকুল। বছরের পর বছর দেশজুড়ে চলা চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের শোধ নিচ্ছে যেন প্রকৃতি। দিন যেয়ে রাতেও যেন নেই স্বস্তি। আগুনের হলকার মতো শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। তেষ্টায় শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। বিশেষ করে শ্রমজীবী-কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে অসহনীয়। হিটস্ট্রোকে সারা দেশে ইতোমধ্যে ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় বিভিন্ন অঞ্চলের হাসপাতালগুলোয়ও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশজুড়ে অবাধে গাছপালা নিধন, খাল-বিল-নদী-নালা ভরাটের বিপর্যয়ে সুপেয় পানির স্তরও নিচে নেমে যাওয়ায় চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ। গ্রীষ্মের শুরুতেই ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের তাপদাহে শিক্ষা-অর্থনীতিসহ দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় এক চরম ভীতিকর উদ্বেগজনক অবস্থার তৈরি হয়েছে।
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় : কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
আবহাওয়া ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশজুড়ে বর্তমানে যেন বইছে মরুভূমির লু হাওয়া। তাপপ্রবাহ বইছে ৪৮ জেলায়। গরমে অসুস্থ হয়ে ইতোমধ্যে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সহসা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় তাপদাহ থেকে এখনই নিস্তার মিলছে না। দ্বিতীয় দফায় আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট চলছে সারা দেশে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদী অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে খোলা রোদে সতর্কভাবে বের হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের তাপদাহে পুড়ছে দেশ। অসহনীয় গরমে রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষের কাহিল অবস্থা। প্রতিদিন গরমের মাত্রা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদ ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। চলমান তাপমাত্রা আরো বাড়বে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এপ্রিলকে উষ্ণতম মাস হিসেবে বিবেচনা করা হলেও মূলত পরিবেশ বিপর্যয়, অবাধে গাছপালা ধ্বংস, নদী, পুকুর, খাল, বিল ও জলাশয় ভরাটসহ বৈশি^ক, আঞ্চলিক নানা কারণে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার এবং সাধারণ মানুষ যদি সহসা পরিবেশ রক্ষায় সচেতন না হয় তবে বিপজ্জনক এ তাপমাত্রা থেকে সহজে কারোরই রেহাই মিলবে না। এর জন্য প্রয়োজন গাছপালা, নদনদী খাল-বিল, জলাশয়সহ প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করা।
এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক রিপোর্টে দেশের প্রায় ২২টি জেলা খরার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে খুবই উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে ছয় জেলা। এডিবির ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক অ্যাটলাস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের খরাপ্রবণ জেলাগুলোয় মোট জমি রয়েছে প্রায় ৫৪ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। খরাপ্রবণ এসব এলাকা মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এ অবস্থা চলতে থাকলে আরো নতুন নতুন জেলা খরার ঝুঁকির তালিকায় যুক্ত হবে। বর্তমানে খরার ঝুঁকিতে থাকা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এছাড়া খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা এবং ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলাও রয়েছে খরার ঝুঁকিতে। এছাড়া খরার সঙ্গে সঙ্গে অকাল বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাও।
তাপপ্রবাহে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
বর্তমানে তাপপ্রবাহ দেশের অধিকাংশ এলাকার ওপর দিয়েই বইছে; বিশেষ করে ৪৮টি জেলায় বেশি। এতে প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরা হলো মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বনগ্রাম এলাকায় হিটস্ট্রোকে আজগর আলী ব্যাপারী (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে নিজের ক্ষেতে কাজ করার সময় তীব্র রোদে ও গরমে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। চুয়াডাঙ্গায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন নারী মারা গেছেন। তারা দুজনই আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের বেগুয়ারখাল গ্রামের বাসিন্দা। সকাল সাড়ে ৯টায় স্বামীর জন্য মাঠে ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় আশুরা খাতুন (২৫) প্রাণ হারান। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় আয়েশা বেগম (৭০) নামে আরও একজন মারা যান। অন্যদিকে রাজশাহীর বাগমারায় ভুট্টাক্ষেতে কাজের সময় দুপুরে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মন্টু হোসেন (৪৫)। তিনি উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোশলেম আলীর ছেলে। রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তায় আব্দুল আউয়াল (৪৫) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওই রিকশাচালককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রচণ্ড তাপদাহে তালগাছ থেকে পড়ে এক গাছির মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ওই গাছির নাম মো. আমজাদ হোসেন শেখ (৫৭)। তিনি সদর উপজেলার ভট্টপ্রতাপ গ্রামের মৃত আজহার আলী শেখের ছেলে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে হিটস্ট্রোকে রজব আলী (৫৫) নামে এক কলেজশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। গত ২১ এপ্রিল রোববার বিকেলে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে তিনি অসুস্থতাবোধ করার পর রাতে তিনি মারা যান। এছাড়া প্রচণ্ড গরমে সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় সর্দি-কাশি, কফসহ বিভিন্ন জটিলতায় প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য ভিড় করছেন।
এদিকে সহসা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় তাপদাহ থেকে এখনই নিস্তার মিলছে না বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ইতোমধ্যে দুই দফায় তিন দিন করে মোট ছয় দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রথম দফায় ১৯ এপ্রিল জারি করা হয় এ সতর্কতা। দ্বিতীয় দফায় আবারো তা বাড়িয়ে ২২ এপ্রিল এ সতর্কতা বর্ধিত করে আবহাওয়া অধিদফতর। এ ঘোষণার পরপরই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফি বছর বাড়ছে তাপমাত্রা
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, গত ২০ এপ্রিল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদীতে ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষের শরীরে অস্বস্তিবোধ বেশি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা গেছে, দেশের ৪৪টি পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ১২টিতেই ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ছিল। তাপমাত্রা ৪০-৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই তা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে তা অতি তীব্র তাপদাহ বলা হয়। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ ক্রমাগত বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, এপ্রিলে সাধারণত তাপমাত্রা বেশিই থাকে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল, যা আগের ৯ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে বছরের ১৬ এপ্রিল আগের ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি চরমে
সারাদিনের পাশাপাশি রাতেও যেন কমছে না গরম। ফলে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষসহ কর্মজীবী মানুষ রাতেও ঠিকমতো প্রশান্তিতে ঘুমাতে পারছেন না। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি কনজ্যুমার কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন মো. শরীফ। তিনি জানান, অর্ডার সংগ্রহের জন্য আমাদের দোকান এবং বাজারে ঘুরতে হয়। প্রচণ্ড এ গরমে আমাদের অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য কাজ আমাদের ঠিকই শেষ করতে হয়। সারা দিনের গরমের পর বাসায় যেয়েও ঠিকমতো ঘুমানোর জো নেই। রাতে বিছানা-বালিশ যেন আরো গরম হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ ভাই। রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতে বিভিন্ন স্টেশনারিসামগ্রী বিক্রি করেন বজলু মিয়া। চলমান তাপদাহে তার ব্যবসার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমে বেচাকেনা অনেকটা নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষ না পারতে এখন ফুটপাত দিয়ে হাঁটে। কিন্তু আমরা পেটের তাগিদে এসেছি রাস্তায়। আমাদের দেখার কেউ নেই ভাই। মতিঝিল এলাকায় রাস্তায় কাঠের চৌকি নিয়ে কাপড় বিক্রি করেন মো. ইউনুস। রোদের তাপ বেশি থাকাতে সারা দিনে কাস্টমারের দেখা নেই বলে জানান। মানুষ কাপড়-চোপড় কিনবে কী, গরমেই অস্থির হওয়ার জোগাড়। রোদ-বৃষ্টি যাই থাকুক আমাদের আসতেই হবে। যদি কোনো কাস্টমার পাই এ আশায় আসতে হবে। কারণ আমাদের ক্ষুধা তো মেটাতে হবে। এমনভাবেই বলছিলেন মো. ইউনুস নামে ফুটপাতের এ পোশাক বিক্রেতা।
মারাত্মক ঝুঁকিতে রাজধানী
পরিবেশবিদরা বলছেন, ভয়াবহ এ পরিবেশ বিপর্যয় একদিনে হয়নি। দিনের পর দিন গাছপালা নিধন, পুকুর-খাল-বিল, নদী দখল, অবাধ প্লাস্টিক-পলিধিনের ব্যবহারসহ পরিবেশ নষ্টের সব আয়োজন সম্পন্ন করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আরো ভয়াবহ বিপর্যয় সামনে আসছে, যা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। কিছুদিন আগেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি এলাকায় শতবর্ষী পুরনো গাছগুলো রাস্তা সম্প্রসারণের নামে সব অবাধে কেটে ফেলা হয়েছে। কমলাপুর এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস সম্প্রসারণের নামে বহু গাছ রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবেই চলছে এ ধ্বংসযজ্ঞ। যার ফলে রাজধানী ঢাকার বাতাস বর্তমানে বিশ্বের দূষিত নগরীগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফলে ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে পাঁচ ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। নগরীর ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে এসব গ্যাস। এসব গ্যাস শহরের বায়ুমণ্ডলে ১০ থেকে ৪০০ বছর ঘুরে বেড়ায়। তাপপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এসব ক্ষতিকর গ্যাসের কারণে রাজধানীর আবহাওয়া দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এবং আমেরিকার একদল বিজ্ঞানীর দুটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দীর্ঘমেয়াদি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, ঢাকার বাতাসে পাঁচ ধরনের গ্যাস জমা হচ্ছে, যা শহরবাসীর নানা রোগ-বালাই এবং সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বাতাসকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। এ গ্যাসগুলো হচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড ও ওজোন। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী অ্যাটমসফেয়ারিক কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত গবেষণায় ঢাকার বাতাসের এ ভয়াবহ তথ্য চিত্র উঠে এসেছে, যা গত ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত হয়।
কী বলছেন নীতিনির্ধারক
বিপর্যয়কর এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের সম্ভাব্য উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে আমরা গাছ লাগিয়েছি। তবে এগুলো বড় হতে সময় লাগবে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ২০ হাজার রিকশাওয়ালাকে ছাতা ও পানির বোতল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য দরিদ্র পেশাজীবীদেরও এ ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’ পরিবেশবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে তাপদাহ দেখা যাচ্ছে সেটি দীর্ঘদিনের পরিবেশ ধ্বংসেরই একটি সাধারণ নমুনা। দ্রুত সতর্ক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। দেশের এবং বৈশ্বিক কারণে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি হচ্ছে এবং বাতাস দূষিত হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে প্রয়োজনীয় বনভূমির যৎসামান্যই বর্তমানে আছে। অন্যদিকে কংক্রিট তাপ ধরে রাখে এবং গরমের অনুভূতি প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঢাকা শহরে একদিকে কংক্রিট বাড়ছে; অন্যদিকে গাছপালা ও জলাভূমি কমছে। এতে গরমে মানুষের কষ্টের মাত্রা বাড়ছে। অসহ্য গরম থেকে রক্ষায় ছাদবাগান থেকে শুরু করে কোথাও গাছ লাগানোর জায়গা থাকলে ঢাকাবাসীকে তা করতে হবে। সেই সঙ্গে গাছ লাগানো ও জলাশয় উদ্ধারের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- ভারতকে তেতুলিয়া করিডোর!
- ঢাকা-দোহা ১০ চুক্তি সই
- বিপদে-আপদে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে : শফিকুর রহমান
- বাড়ছে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব
- বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের
- আদালত চত্বর থেকে রাজশাহী নগর জামায়াতের সেক্রেটারিসহ আটক ১০
- সারা দেশে ইসতিস্কার নামায
- ঈদের পর ফের অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার