অ ব লো ক ন
ইসরাইল থেকে হাত সরাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র?
মাসুম খলিলী : বাইডেনের ইসরাইলনীতির ওপর বিস্ময়করভাবে সমর্থন কমতে শুরু করেছে। ইসরাইলের গণহত্যার প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেয়ার কারণে এরই মধ্যে হোয়াটস হাউসের দুই কর্মকর্তা তাদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ৫৫ শতাংশ আমেরিকান বাইডেনের ইসরাইলনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিপরীতে তার এ নীতিকে অনুমোদন করছেন মাত্র ৩৬ শতাংশ। ডেমোক্রেট সমর্থকদের মধ্যে ইসরাইলনীতির বিরোধিতা বেড়েছে বিস্ময়করভাবে। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেয়া থেকে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যে প্রস্তাবে বাকি ১৪ সদস্য দেশ সমর্থন জানিয়েছে।
ইসরাইলের পক্ষে এ প্রথম ভেটো না দেয়ার বিষয়ে ইসরাইল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য দুই সিনিয়র ইসরাইলি মন্ত্রির যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছে। নেতানিয়াহু স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন যে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলনীতি থেকে ওয়াশিংটনের প্রস্থানের সুস্পষ্ট নমুনা। অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন বলছে, তাদের ইসরাইলনীতি আগে যা ছিল তাই রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এবং বিপুল গোলাবারুদ ইসরাইলকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। আসলেই কি বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলকে সমর্থন দেয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে?
অর্ধেক ধাপ এগিয়ে, অর্ধেক পিছিয়ে
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আনা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ওয়াশিংটনের ভোটদানে বিরত থাকা একটি আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং এটি তার অবস্থানে মৌলিক কোনো পরিবর্তন নয়। রেজ্যুলেশন পাস করতে দেয়া ইসরাইলের ধ্বংসের যুদ্ধকে সমর্থন করার অনৈতিক অবস্থান প্রত্যাহার করার বিষয়ে অর্ধেক ধাপ পিছানো হয়েছে। একই সময়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তার উগ্র চরমপন্থা এবং ‘নির্দোষ রক্তপাত’ বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়ার দিকে এটি অর্ধেক ধাপ এগিয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই আমেরিকান পদক্ষেপের দিকনির্দেশনা যাই হোক না কেন, এর ফলাফল হবে কার্যত শূন্য এবং এটি মাঠে কোনো পরিবর্তন আনবে না অথবা ইসরাইলের অপরাধ বন্ধ করতে পারবে না। ইসরাইল যে রেজ্যুলেশন মেনে চলবে না, তা ওয়াশিংটন নিশ্চিতভাবে জানত।
এটি ঠিক বাইডেন ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহুর অদম্যতা ও ঔদ্ধত্য নিয়ে হতাশ। আমেরিকান প্রশাসনের জারি করা বিবৃতি এবং ইচ্ছাকৃত ফাঁসগুলো এটিরই ইঙ্গিত করে। তবে পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে তার অক্ষমতার কারণে বাইডেনের হতাশা মূল্যহীন রয়ে গেছে। আর বিবাদমান মিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমেরিকার বিশাল প্রভাব ব্যবহার করতে তার অক্ষমতাই সামনে আসছে। তবে প্রশ্ন হলো বাইডেনের কি ইসরাইলের ওপর সত্যিকারের চাপ দেওয়ার সাহস ও ইচ্ছা আদৌ আছে?
এ বিষয়ে আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা দুটি দলে বিভক্ত, যার মধ্যে একটি পক্ষ ইসরাইলের ওপর চাপের সম্ভাবনা এবং এমনকি প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত। আর অন্যরা এ ধরনের কোনো পরিমাপের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে একটি মডেল পাওয়া যায়Ñ যাতে দুটি প্রবণতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। প্রথমটি গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হয় যার শিরোনাম ছিল ‘কীভাবে বাইডেন ইসরাইলকে তার যুদ্ধ কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে পারে?’ নিবন্ধটি যে দুই লেখক লিখেছেন তাদের একজন কূটনৈতিক বিষয়ে এবং অন্যজন জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তারা বিশ্বাস করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নেতানিয়াহু তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বার্থ উপেক্ষা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকা তার প্রভাব জোর করে ব্যবহার করতে পারে। সাবেক মার্কিন শান্তি দূত মার্টিন ইন্ডিক ব্যাখ্যা করেছেন যে, বাইডেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন যাকে ইসরাইলের ওপর চাপ দিতে হয়েছে, ফোর্ড থেকে বুশ সিনিয়র পর্যন্ত চারজন পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি তা করেছেন। তারা কিছু সাহায্য ও চুক্তি আটকে রেখেছেন, হিমায়িত করেছেন বা তা করার হুমকি দিয়েছেন।
সংবাদপত্রটি সম্পর্কের ৩টি জানা ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে, যা ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো বার্ষিক ৩.৩ বিলিয়ন ডলারের বিশাল সামরিক সাহায্য, এবং বাইডেন যুদ্ধ শুরুর পরে কংগ্রেসের কাছে অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছিলেন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত আমেরিকা ইসরাইলকে প্রায় ১৫ হাজার শেল এবং ৫৭ হাজার আর্টিলারি শেল সরবরাহ করেছিল। এটি ১ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকে মার্কিন অস্ত্রের চালান ১০০টিরও বেশি ছাড়িয়েছে। এ উদার সহায়তায় আমেরিকার ইসরাইলে কণ্ঠস্বর থাকার কথা। অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ না করেও এর গতি কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরাইলের নেতাদের কাছে একটি বন্ধুত্বহীন হওয়ার বার্তা পাঠাতে পারে ওয়াশিংটন।
অন্য বৃত্তটি হলো ‘কূটনৈতিক ঢাল’ যা দিয়ে ওয়াশিংটন তার মিত্রকে নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা থেকে রক্ষা করে। এটি প্রত্যাহার করার হুমকি, যেমনটি শেষ সিদ্ধান্তে করা হয়েছিল, ইসরাইলের উদ্বেগ বাড়ায়। তৃতীয় বৃত্তটি হলো প্রত্যক্ষ নিষেধাজ্ঞা, যা তাদের ব্যাপারে ঐতিহ্যগতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে এখন কৌশলটি সীমিতভাবে অবলম্বন করার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। যার আওতায় সম্প্রতি ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পশ্চিমতীরে তাদের অপরাধের জন্য বেশ কয়েকজন বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
অন্যদিকে আমেরিকান বিশ্লেষকদের দ্বিতীয় গ্রুপ ইসরাইলের ওপর গুরুতর চাপ তৈরির ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। তাদের মতে, আংশিকভাবে ঘটলেও এটি ফল দেবে না। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টিফেন ওয়াল্ট এ মতামতটি সর্বোত্তমভাবে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি আলোচিত বই ‘ইসরাইলি লবি অ্যান্ড আমেরিকান ফরেন পলিসি’ এর লেখক। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও তার সহকর্মী জন মেয়ারশেইমারের সাথে তিনি এটি লিখেছেন। ওয়াল্ট ২১ মার্চ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যার শিরোনাম ছিল ‘ইসরাইলের ওপর আমেরিকান প্রভাব আপনার ধারণার চেয়ে কম’। এখানে তিনি বাইডেনের পক্ষ থেকে ইসরাইলের প্রতি সহায়তা বন্ধ বা হিমায়িত করার গুরুতর হুমকি অস্বীকার করেন। তিনি এ ধারণাকে উপহাস করেছেন যে, নেতানিয়াহুর কাছে বাইডেনের একটি ক্ষুব্ধ আহ্বান বিবির (নেতানিয়াহুর নিক নেম) নীতি পরিবর্তন করবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিয়মগুলো এটি নিশ্চিত করে এবং বলে যে বৃহৎ রাষ্ট্রের সাহায্য প্রদানকারীর প্রভাব ছোট রাষ্ট্রের ওপর অনেক ক্ষেত্রে হ্রাস পায়, যখন ছোট রাষ্ট্র অন্যান্য উৎস থেকে সাহায্য দিয়ে এর ক্ষতিপূরণ করে নিতে সক্ষম হয়। ইসরাইলের ক্ষেত্রে অস্ত্রের জন্য আমেরিকার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও তাদের একটি উন্নত সামরিক উৎপাদন ঘাঁটি এবং বৈশ্বিকভাবে প্রভাব বিস্তারের নিয়ন্ত্রক সূত্র রয়েছে। এর ফলে তাদের ওপর মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অসম্ভব।
বাইডেন প্রশাসন গাজায় খেলা চালিয়ে যাবে!
বাইডেন প্রশাসন গাজায় তার খেলা চালিয়ে যাবে আকাশ ও সমুদ্র থেকে মানবিক সহায়তা নামিয়ে দেবে এবং বেসামরিক মানুষকে হত্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরাইলে প্রাণঘাতী ২ হাজার পাউন্ড বোমাও পাঠাবে! ওয়াশিংটন পোস্ট ইসরাইলে ওয়াশিংটন কর্তৃক অনুমোদিত অস্ত্রের চালানের বিষয়ে গত ৩০ মার্চের প্রতিবেদনে (২০২৪) যা জানিয়েছে, তা নির্দেশ করে যে, এটি আসন্ন রাফা অপারেশনের প্রস্তুতির একটি অংশ। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন থেকে বলা হয় যে, অপারেশনটি একটি ‘লাল রেখা’ এবং বাইডেন বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার পরিকল্পনা ছাড়া এ আক্রমণে সম্মত হবেন না।
কীভাবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট দেড় মিলিয়নেরও বেশি মানুষের ওপর আক্রমণ এবং গাজা উপত্যকার শেষ শহরটিকে ব্যাপক সামরিক হামলা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবেন, যেখানে ইসরাইলি বাহিনী এখনো প্রবেশ করেনি, যদিও ইসরাইলি বিমানগুলো তাদের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ শহর ও এর আশপাশে প্রতিদিন ডজন ডজন হত্যা এবং ভবন ও মসজিদ ধ্বংস হচ্ছে।
প্রশ্ন হলো গাজায় ক্ষুধা নিবারণের সাথে বোমার সমীকরণ কীভাবে মিলানো হবে। আমেরিকান ট্যাঙ্ক ও বোমার আঘাতে যে কেউ যেখানে নিহত হয়, সেখানে তার জন্য অতিরঞ্জিত আমেরিকান উদারতার প্রয়োজন নেই। গাজাবাসীরা আমেরিকান খাবারের প্যাকেজ খোঁজার চেষ্টা করে সমুদ্রে ডুবে যায় অথচ আকাশ থেকে পাইলটরা বেল এবং খাবার বোঝাই প্যারাসুটকে গাজার মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যেতে পারেনি। ফিলিস্তিনিরা স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে মারা যায় এবং তারা চোখে দেখে যে কীভাবে আমেরিকা তাদের হত্যা করে এবং তারপর দাবি করে যে, তারা তাকে বাঁচাতে চায়।
গাজা যুদ্ধের এ একই আমেরিকান খেলা ভিয়েতনামেও দেখা গিয়েছিল। আমেরিকানরা ইসরাইলি যুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে পুরোপুরি না জড়ালেও এর সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আসলে বোমা ও ক্ষুধার অস্ত্রের মধ্যে কোনো বৈপরিত্য নেই কারণ এসব ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই একই জিনিস, যা এখন গাজায় আমেরিকানদের তৈরি।
ওয়াশিংটন পোস্ট ইসরাইলের কাছে আমেরিকান অস্ত্রের চুক্তির কথা একাধিকবার প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে (৩০ মার্চ ২০২৪) সংবাদপত্রটি ১,২০০ এমকে-৮৪ বোমার উল্লেখ করেছে, যা একটি সম্পূর্ণ আবাসিক কমপ্লেক্স ধ্বংস করতে পারে এবং বিশাল টানেলের ভেতরটা ধ্বংস করতে পারে। যুদ্ধের শুরু থেকে এটি প্রকাশ করা হয়েছে যে, এই এমকে-৮৪ এবং এমকে-৮২ বোমাগুলো গাজায় চলমান যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বলে অস্ত্রের এ চালান সরবরাহের ন্যায্যতা প্রমাণ করে যে, গত বছর এটির অনুমোদন ও সরবরাহ করা হয়েছিল।
বাইডেন প্রশাসন তার ডেলিভারি বিলম্বিত করতে পারত এটি জেনে যে, বোমাগুলো লিহি আইন লঙ্ঘন করে বেসামরিক লোকদের হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা হবে। কিন্তু ইসরাইলের জন্য পরিস্থিতি সবসময় বিপরীত। সব ক্ষেত্রেই ইসরাইলে অস্ত্র পাঠানো হয় এবং তারপর স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা শুরু করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক কর্মকর্তা জোশ পল একটি সাক্ষাৎকারে এটি উল্লেখ করেছেন।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গেম
অক্টোবরে যুদ্ধের শুরু থেকে ওয়াশিংটন একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গেম খেলছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে হামাসের বিরুদ্ধে তার বিজয়ের লক্ষ্য অর্জন করতে এবং ছাড় ছাড়াই তার ইসরাইলি বন্দীদের মুক্ত করতে সময় দিয়েছে। বাইডেন হতাশার কথা বলছেন, কিন্তু তিনি তার প্রভাব ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছেন।
টাইম ম্যাগাজিন উল্লেখ করেছে (২১ মার্চ ২০২৪), নেতানিয়াহুর প্রতি তার অব্যাহত সমর্থনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বাইডেন সচেতন। বাইডেনের প্রচারকার্যে সমর্থনের জন্য বারাক ওবামা সাবেক রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের সাথে ২৫ মিলিয়ন সংগ্রহে একটি তহবিল সংগ্রহ পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। আমেরিকান নির্বাচনগুলো সেই প্রার্থীকে ঘিরে আবর্তিত হয় যিনি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোয় বিজ্ঞাপনের স্থান কিনতে সক্ষম হন। নির্বাচনে বাইডেনের নির্বাচনী তহবিল এমন সময়ে এসেছিল যখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী, ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালত এবং মানহানি ও অন্যান্য মামলায় জরিমানার অর্থ প্রদানে একটি আর্থিক সংকটে ভুগছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হল যে বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারে গাজায় চাপিয়ে দেওয়া সমস্যার তীব্রতা স্বীকার করেছেন। তিনি যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক’ এবং কয়েকদিন আগেও বলেছিলেন যে, তিনি আরব আমেরিকানদের ব্যথা অনুভব করেছেন, যাদের বেশিরভাগই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি সরে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে তাদের ভোট দেবেন না। ‘বাইডেন ও গণহত্যা’ শব্দটি বিস্তৃত আমেরিকান প্রতিবাদ আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাইডেনের তার দ্বৈত খেলার ধারাবাহিকতা তার পুনর্নির্বাচনের প্রচারণা বা আমেরিকার বৈশ্বিক অবস্থানে কাজ করবে না। কেবল প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে রমযান মাসে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবের জন্য একটি কাউন্সিলে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা ছিল।
ওয়াশিংটন জানে যে, ইসরাইল নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে না। বাস্তবে সেটিই ঘটেছিল, যখন নেতানিয়াহু প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং যথারীতি ইসরাইলের পাশে না থাকার জন্য আমেরিকাকে দোষারোপ করেছিলেন। একই সাথে রাফায় হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন সফরে যাওয়া একটি ইসরাইলি প্রতিনিধি দলকে বাধা দিয়েছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব প্রতীকী ক্রিয়া এবং হতাশা ও ক্রোধের প্রকাশগুলো অকেজো হয়ে যায়, যদি সেগুলো ইসরাইলের ওপর বাস্তব চাপ এবং এর ওপর প্রতিক্রিয়া আরোপের সাথে মিলিত না হয়। বাইডেন প্রশাসন এটি করেনি। প্রকৃতপক্ষে যতবারই বাইডেন ইসরাইলের সমালোচনামূলক বিবৃতি দিয়ে এসেছেন বা নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলে এসেছেন যে, কিছুই চলমান নীতির পরিবর্তন করবে না। গাজায় ইসরাইলের লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ হামাসকে ধ্বংস করা এবং বন্দীদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে আমেরিকান নীতিতে পরিবর্তন হয়েছে এমন লক্ষণ দেখা যায় না।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল উল্লেখ করেছে (২৮ মার্চ ২০২৪), ইসরাইলিরা কীভাবে এ দুটি লক্ষ্যের পুনর্মিলন করতে হবে তা নিয়ে বিভক্ত। টাইমস পত্রিকা (২৯ মার্চ ২০২৪) বলেছে, গাজার যুদ্ধে হামাস বা ইসরাইল কেউ বিজয়ী হবে না। প্রথম পত্রিকাটি এমন এক সময়ে দাবি করে যে, এটি অন্তত একটি কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে জিতেছে, কিন্তু পরেরটি তার বিজয়কে হামাস নেতাদের হত্যার সাথে যুক্ত করে, যেমন ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং মুহাম্মাদ আল-দেইফ এবং তাদের কাউকে হত্যা না করে, ইসরাইল তার লক্ষ্যে ব্যর্থ হয়েছে।
তাই ইসরাইল রাফাতে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগ্রহী, এ অজুহাতে যে, তারা শহর থেকে সরে আসা অবশিষ্ট হামাস যোদ্ধাদের হত্যা করতে চায়, কিন্তু হামাস যোদ্ধারা উত্তর গাজায় উপস্থিত হয়েছিল, যেখানে ইসরাইলি বাহিনী এখনো বৃহত্তম মেডিকেল কমপ্লেক্স দখল করে আছে। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে শিফা হাসপাতাল দখল করে আছে। দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (২৭ মার্চ ২০২৪) সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা তামির হাইম্যানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এটি শেষ হবে না এবং একটি নিষ্পত্তিমূলক অপারেশন হবে না এবং এটি একটি ধারাবাহিকতার অংশ, যা নিতে হবে হামাস শেষ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হওয়া পর্যন্ত কয়েক মাস।’ তবে সামরিক অভিযানের সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যেÑ শিফা অভিযান হামাসের পূর্বে ইসরাইলি সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় টিকে থাকার ক্ষমতা দেখায়।
এ অর্থে আমেরিকান অবস্থান বেশিরভাগই রাফাকে কেন্দ্র করে এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার দিকে তারা মনোযোগ দেয়নি, যেখান থেকে ডাক্তার ও নার্সদের অনাহারে এক রুমে আটকে রাখা এবং ইসরাইলি বাহিনীর কারণে অনেক রোগীর মৃত্যুর ভয়ঙ্কর সাক্ষ্য বেরিয়ে আসে। হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। হামাস যোদ্ধারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছে বলে অজুহাতে আর কাজ করতে সক্ষম নয় এমন মেডিকেল কমপ্লেক্সে ইসরাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘পলিটিকো’ ম্যাগাজিন অনুসারে (২৮ মার্চ ২০২৪), একই সময়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং গাজা পরিচালনায় জাতীয় কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণ সম্পর্কে প্রস্তাবগুলোর বিবেচনাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যার মধ্যে একটি বহুজাতিক বাহিনী বা ফিলিস্তিনিদের অর্থায়নে পেন্টাগনের জন্য একটি প্রস্তাবসহ শান্তিরক্ষা দলের প্রস্তাব রয়েছে। জেরুসালেম পোস্ট পত্রিকা (২৯ মার্চ ২০২৪) ব্যাখ্যা করেছে যে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোটের সময় ওয়াশিংটনে থাকা ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় আইনশৃঙ্খলা আরোপ করবে এমন আরব বাহিনী গঠনে আমেরিকান সমর্থন পেয়েছিলেন। একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসের পরিবর্তে এ অঞ্চলে একটি শাসকগোষ্ঠী গড়ে তুলবে এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সমস্যার সমাধান করবে।’ ইসরাইল এটাই চায়: একটি পক্ষ গাজার সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের সাথে নিরাপত্তা বজায় রাখার পরিবর্তে যারা বর্জ্য সংগ্রহ এবং নিরাপত্তা সমন্বয়ের জন্য দায়ী থাকবে। যেমনটি নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলের হাতে নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে। এ কারণে পলিটিকো ম্যাগাজিনের (২৯ মার্চ ২০২৪) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফা অপারেশন ঘটবে, যেখানে ইসরাইল রাফা আক্রমণ করলে মিশর তার সীমানা রক্ষা করার জন্য সরঞ্জাম এবং তহবিল দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। পত্রিকাটি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলেছে যে, মিশরীয় এবং আমেরিকানরা বিশ্বাস করে যে, রাফা আক্রমণ শেষ পর্যন্ত ঘটবে।
ইসরাইলি পথে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে ওয়াশিংটন
এটি এ ইঙ্গিত দেয় যে, আমেরিকা প্রতিবাদ ও ক্ষোভের আওয়াজ তুললেও গাজায় ইসরাইলি দাবির সাথে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। অতএব ভোটদানে তার বিরত থাকা, যখন নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো নাড়িয়ে একাধিকবার তার হাত তুলে তখন এর আসলে কোনো অর্থ নেই। এ কারণে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ বলেছে (২৬ মার্চ ২০২৪), মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জোরালো সুর পরবর্তী পদক্ষেপের ইঙ্গিত নয়, এটি নেতানিয়াহুর প্রতি তার হতাশার প্রকাশ মাত্র।
ভোটদান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরত থাকা একটি প্রতীকী মুহূর্ত এবং এটি তার নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না করা পর্যন্ত পরিস্থিতি সামান্যই পাল্টাবে। ওয়াশিংটন পোস্টে (২৬ মার্চ ২০২৪) এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা নেতানিয়াহু যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করছে তা নিয়ে বাইডেনের ‘হতাশার’ প্রকাশ, তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। আর কিরবি বলেছিলেন, আমেরিকান অবস্থানে ‘কিছুই পরিবর্তিত হয়নি’। এসব করা হচ্ছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকান নাগরিক এবং বিশ্বের মধ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্যতা সংকটে ভুগছে। ওয়াশিংটন পোস্টের অন্য একটি প্রতিবেদনে (২৭ মার্চ ২০২৪) বলা হয়েছে যে, আমেরিকা এবং ইসরাইল বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, এ মাসের শুরুর দিকে একটি উত্তপ্ত সংলাপের সময় একজন সিনিয়র আমেরিকান কর্মকর্তা তার ইসরাইলি প্রতিপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, গাজায় চলমান যুদ্ধের ফলে তাদের খ্যাতি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
আমেরিকান কর্মকর্তারা নিজেদের গাজা নিয়ে এখন একটি অস্বস্তিকর দ্বিধায় পড়েছেন। বিশ্ব মঞ্চে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্ন এবং অজনপ্রিয় ইসরাইলি সরকারের পক্ষে তারা কাজ করছেন। আমেরিকান জনমত জরিপের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমেরিকান সংখ্যাগরিষ্ঠরা আর গাজায় ইসরাইলি পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত (২৭ মার্চ ২০২৪) গ্যালাপ ইনস্টিটিউটের জনমত জরিপ অনুসারে, ইসরাইলি অভিযানের প্রতি সমর্থন নভেম্বরের ৫০ শতাংশ থেকে মার্চ মাসে ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে যে, ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দলীয় অধিভুক্তির ওপর ভিত্তি করে আরো বেশি হ্রাস পেয়েছে। রিপাবলিকান যারা এখনো গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, তাদের মধ্যে নভেম্বরে ৭১ শতাংশ মার্চ মাসে ৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ডেমোক্রেটদের মধ্যে ধস আরো ব্যাপক।
এত কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত ‘দি হিল’ ওয়েবসাইটে (২৭ মার্চ ২০২৪) এডরিয়েল কাসুন্টার বক্তব্যটি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। তিনি এক নিবন্ধে বলেছেন, ফিলিস্তিন এবং গাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তিনি নিরাপত্তা পরিষদে ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়টিকে ‘প্রতারণার সর্বোচ্চ স্তরের কূটনৈতিক কৌশল’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, নিরর্থক অঙ্গভঙ্গি গাজায় উদ্ভূত জরুরি মানবিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। কৌশলটি একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিত্যাগ এবং তার ভূমিকার বিশ্বাসঘাতকতার একটি চিত্র। আর ইসরাইলি আলোচনার মানগুলোর সাথে এর ব্যবহারিক চুক্তির প্রকাশ যেখানে হামাসের হাতে বন্দীদের মুক্তির সাথে যুদ্ধবিরতিকে যুক্ত করা হয়েছিল। বাইডেন তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হিসাবের সাথে সর্বশেষ কৌশলটিকে যুক্ত করেছেন।
লেখক বলেছেন যে, এ কৌশলের পেছনে উদ্দেশ্যগুলো স্পষ্টভাবে স্পষ্ট এবং প্রচেষ্টাগুলোকে শান্তির দিকে আন্তরিক অগ্রগতি নয়, বরং স্থানীয় রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে একটি হিসাবি পদক্ষেপ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচার শুরুর সময়ে, যারা উদ্বিগ্ন আর শান্তি কামনা করে তাদের শান্ত করার চেষ্টাই করেছে বাইডেন প্রশাসন। এ জনমত জরিপ অনুভূতির পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে, যেখানে আমেরিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ একটি যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলের জন্য নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য তাদের সমর্থন হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে।
পরিবর্তনটি শুধুমাত্র ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, রিপাবলিকান পক্ষ এবং এমনকি খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের মধ্যেও লক্ষণীয় যারা ইসরাইলকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু উত্তেজনা কমাতে চান। লেখক সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, নেতানিয়াহু রাফার বিরুদ্ধে তার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যুদ্ধে আমেরিকান জড়িত হওয়ার মূল্য স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সুতরাং ইসরাইলের প্রতি অন্ধ আমেরিকান সমর্থন দীর্ঘমেয়াদে একটি সম্পদ নয়, দায় হবে। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তায় ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে। গাজার রক্তাক্ত বালি শুধুমাত্র একটি বাইডেন প্রেসিডেন্সির কবরস্থান হবে না বরং পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কবরস্থানও হতে পারে, যেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিন্দা এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, আমেরিকান জটিলতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবেÑ এটি ইতিহাসের কোন দিকে থাকতে চায়, গাজার স্বার্থে নাকি ইসরাইলের স্বার্থে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, মানবতার স্বার্থে নাকি কেবল তার ‘অশুভ আত্মার’ জন্য?