সংবাদ শিরোনামঃ

আল্লাহর সান্নিধ্যে শহীদ কামারুজ্জামান ** কামারুজ্জামানের সংগ্রামী জীবন ** শহীদের প্রতিফোঁটা রক্ত ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করবে ** শহীদ কামারুজ্জামান ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’ ** বাংলাদেশে এখন বড় দুঃসময় ** মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত ** বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে লুটপাট ও সেøাগানের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে ** যাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিলো একটি কল্যাণমূলক বাংলাদেশ ** বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে কাক্সিক্ষত বিজয় আসবেই ** হাইড্রোজেন গ্যাসে গাড়ি চলবে ** কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্র ইইউসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ ** প্রশ্নবিদ্ধ দেশীয় গণমাধ্যম ** ‘ দুশমনরা এ দেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করতে চায়’ ** জামায়াতের ডাকে সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত ** বাজিতখিলায় সূর্য উঠতেই অন্যরকম দৃশ্য ** আল্লাহর পথে আহ্বান কারিণীদের প্রয়োজনীয় গুণাবলী **

ঢাকা, শুক্রবার, ৪ বৈশাখ ১৪২২, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৩৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

তালিবুল হাশেমী
বদরের যুদ্ধে (দ্বিতীয় হিজরীর রমযান মাসে) কোরেশদের অপমানজনক পরাজয়ের খবর মক্কা পৌঁছলো। এ সময় সেখানকার ঘরে ঘরে মাতম পড়ে গেল। বদবখত আবু লাহাবের অবস্থা ছিল করুণ। বেদনায় সে নীল হয়ে গিয়েছিল। হাঁটতে গিয়ে পা কাঁপছিলো। এই অবস্থায় পা ঘষতে ঘষতে যুদ্ধের খবর জানার জন্য সে সহোদর আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের গৃহে পৌঁছলো। আব্বাস মুশরিকদের সঙ্গে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গিয়েছিলেন এবং যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন। সে আব্বাস-গৃহে পৌঁছে তাঁর গোলাম আবু রাফের (রা.) নিকট বসলো। যুদ্ধে আবু রাফে (রা.) তীরন্দাজের কাজ করেন। ইত্যবসরে একজন বললো, “আবু সুফিয়ান বিন হারিছ (হুজুরের চাচাতো ভাই এবং আবু লাহাবের ভ্রাতুষ্পুত্র। তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি) বদর থেকে এখনই ফিরে এসেছেন। তার নিকট থেকে যুদ্ধের অবস্থা জানা উচিত।” আবু লাহাব তাকে ডাকলো, “ভ্রাতৃষ্পুত্র। একটু আমার কাছে এসো।” তিনি এলে আবু লাহাব জিজ্ঞেস করলো, “ভাতিজা! বলো সেখানে কি ঘটেছে?

আবু সুফিয়ান বলতে লাগলেনঃ “আল্লাহর কসম! মুসলমানদের সামনে আমরা এত অসহায় ছিলাম যেমন মুরদাহ গোসলদানকারীর নিকট অসহায় থাকে। তারা যাকে ইচ্ছা তাকেই তীর দিয়ে ধরাশায়ী করেছে এবং যাকে ইচ্ছা তাকেই গ্রেফতার করেছে। এক আশ্চর্য ধরনের দৃশ্য আমরা অবলোকন করেছি। ঘোড়ার ওপর সওয়ার সাদা পোশাকধারী মানুষেরা মেরে মেরে আমাদেরকে ভর্তা বানিয়ে দিয়েছে। তারা কারা তা জানি না।

আবু রাফে (রা.) তৎক্ষণাৎ বললেন ঃ “তারা ফেরেশতা ছিল।”

একথা শুনে আবু লাহাব অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলো এবং আবু রাফে’র (রা.) মুখের ওপর প্রচণ্ড জোরে এক থাপ্পড় কষলো। আবু রাফে’ও (রা.) নিজেকে শামলে নিয়ে তার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন দুর্বল। আবু লাহাব তাকে মাটির ওপর ফেলে দিয়ে বেধড়ক মারা শুরু করলো। নিকটেই একজন মহিলা বসেছিলেন। তিনি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলেন না। তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালেন এবং একটা মোটা ধরনের লাঠি নিয়ে এতে জোরে আবু লাহাবকে মারলেন যে, তার মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বইতে লাগলো। অতঃপর কড়া ভাষায় বললেন :

বেশরম!  তার মালিক এখানে উপস্থিত নেই। আর তুই তাকে দুর্বল মনে করে মারছিস!”

এই মহিলাকে মুকাবিলা করার মতো সাহস আবু লাহাবের ছিলো না এবং সে কানের ওপর হাত দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

এই মর্যাদাবান এবং বাহাদুর মহিলা, যিনি আবু লাহাবের মত ইসলামের এবং খোদার শত্রুকে চরমভাবে অপমানিত করেছিলেন, তিনি ছিলেন আব্বাসের (রা.) স্ত্রী (এবং আবু লাহাবের ভাবী) হযরত লুবাবাতুল কুবরা (রা.)। কতিপয় রাওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, এ ঘটনা যমযম ভূপের চার প্রাচীরের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়েছিলো। এই কাছেই হযরত আব্বাসের (রা.) গৃহ ছিলো।

হযরত লুবাবাহ (রা.) বিনতে হারিস সাধারণত “উম্মুল ফজল” কুনিয়তে মশহুর ছিলেন। তিনি অন্যতম জালিলুল কদর মহিলা সাহাবীতে পরিগণিত হয়ে থাকেন। কুবরা ছিলো তাঁর লকব। এজন্য ঐতিহাসিকরা তাঁর নাম লুবাবাতুল কুবরাও লিখেছেন। তিনি বনু হেলালের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন।

তাঁর নসবনামা হলো ঃ উম্মুল ফজল লুবাবাহ বিনতে হারিস বিন হাযান বিন বুজায়ের বিনুল হারাম বিন রাওবিয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন হিলাল বিন আমের বিন ছায়ছায়াহ। মার নাম ছিলো হিন্দ (অথবা খাওলাহ) বিনতে আওফ। তিনি বনু কিনানাহ অথবা হুমায়ের গোত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন।

রাসূলের (সা.) পিতৃব্য আব্বাস (রা.) বিন আব্দুল মুত্তালিবের সঙ্গে হযরত উম্মুল ফজল লুবাবাহর (রা.) বিয়ে হয়েছিলো। এ সম্পর্কে তিনি হুজুরের (রা.) চাচী ছিলেন। তাঁর সহোদরা হযরত মাইমুনা (রা.) বিনতে হারিস উম্মুল মু’মিনীন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। এভাবে হযরত উম্মুল ফজল (রা.) হুজুরের (সা.) শ্যালিকাও হন।

হযরত উম্মুল ফজলের (রা.) এক সৎ বোন হযরত আসমা (রা.) বিনতে উমায়েসের বিয়ে হযরত জাফর (তাইয়ার) বিন আবি তালিবের (হুজুরের চাচাতো ভাই) সঙ্গে হয়েছিলো। তৃতীয় আরেক বোন সালমার বিয়ে হয়েছিলো হুজুরের (সা.) অন্য চাচা হযরত হামযাহ (রা.) বিন আবদুল মুতালিবের সঙ্গে। লোকজন হযরত উম্মুল ফজলের মাতা হিন্দ বিনতে আওফকে ঈর্ষা করতো।

মহিলাদের মধ্যে রাসূলের (সা.) ওপর সর্বপ্রথম ঈমান এনেছিলেন হযরত খাদিজাতুল কুবরা। বিশ্বস্ত রাওয়ায়েত অনুযায়ী তাঁর পর হযরত উম্মুল ফজল লুবাবা (রা.) এ সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। এদিক থেকে তিনি আসসাবিকুনাল আউয়ালুনের মধ্যে উঁচু মর্যাদার অধিকারিণী। স্বামী হযরত আব্বাসের (রা.) প্রকাশ্য ইসলাম গ্রহণের পর হযরত উম্মুল ফজল (রা.) মদীনায় হিজরত করেন। মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে এ হিজরত সংঘটিত হয়।

হযরত উম্মুল ফজল (রা.) অত্যন্ত বাহাদুর এবং মর্যাদাসম্পন্ন মহিলা ছিলেন। বন্তুত একবার তিনি লাঠি দিয়ে আবু লাহাবের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। রাসূলে আকরামকে (সা.) তিনি সীমাহীন ভালোবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন। হুজুরও (সা.) তাঁকে খুবই ভালো জানতেন। প্রায়ই তিনি তাঁর গৃহে গমন করতেন। দ্বিপ্রহরের সময় হলে সেখানেই আরাম করতেন। হযরত উম্মুল ফজল (রা.) হুজুরের (সাঃ) পবিত্র মাথা কোলের ওপর রেখে চুল থেকে ময়লা দূর করে দিতেন এবং চিরুনি করতেন।

হযরত উম্মুল ফজল অত্যন্ত পরহেজগার এবং ইবাদাত গুজার ছিলেন। কতিপয় রাওয়ায়েতে আছে যে, তিনি প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার আবশ্যিকভাবে রোযা রাখতেন। আল্লামা ইবনে আব্দুল বার (রা.) “ইসতিয়াব”-এ  লিখেছেন, হুজুর (সা.) বলতেন, উম্মুল ফজল (রা.), মাইমুনা (রা.), সালমা (রা.) এবং আসমা (রা.) চারজন মুমিনাহ বোন।

একবার হযরত উম্মুল ফজল (রা.) স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূলে আকরামের (সা.) পবিত্র শরীরের কোনো অংশ তাঁর ঘরে রয়েছে। তিনি এ স্বপ্নের কথা হুজুরের (সা.) কাছে বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন : “এর তাবির এই মনে হয় যে, আল্লাহ পাক আমার কলিজার টুকরা ফাতেমাকে (রা.) পুত্র দান করবেন। আর তুমি তাকে নিজের দুধ পান করাবে।”

কিছুদিন পর হযরত ফাতিমাতুজ জোহরার (রা.) পুত্র হযরত হোসাইন (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত উম্মুল ফজল (রা.) তাঁকে নিজের দুধ পান করান এবং তাঁর জামিন হয়ে যান। এ জন্য নবীর (সা.) খান্দান হযরত উম্মুল ফজলকে (রা.) অত্যন্ত সম্মান করতেন। একদিন হযরত উম্মুল ফজল (রা.) হযরত হোসাইনকে (রা.) কোলে নিয়ে হুজুরের (সা.) খেদমতে হাজির হলেন। তিনি প্রিয় নাতিকে তাঁর কোল থেকে নিলেন এবং আদর করতে লাগলেন। শিশু হোসাইন (রা.) হুজুরের (সা.) কোলে পেশাব করে দিলেন। হযরত উম্মুল ফজল (রা.) তক্ষণাৎ তাঁকে হুজুরের (সা.) কোল থেকে নিয়ে নিলেন এবং ধমক দিয়ে বললেন : “আরে এটা তুমি কি করলে! রাসূলের (সা.) কোলে পেশাব করে দিলে!” রাসূলে কারীম (সা.) উম্মুল ফজলের (রা.) এ ধমকও সহ্য করতে পারেন না। তিনি বললেন :

“উম্মুল ফজল! তুমি হোসাইনকে যে ধমক দিয়েছো তাতে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। এরপর তিনি পানি আনিয়ে পবিত্র পোশাকের পেশাব লাগা অংশ ধুলে ফেলেন।

বিদায় হজ্বের সময় হযরত উম্মুল ফজল (রা.) প্রিয় নবীর সফর সঙ্গী ছিলেন। সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত আছে, আরাফাতের দিন কতিপয় লোক ধারণা করলো যে, হুজুর (সা.) রোযা আছেন। হযরত উম্মুল ফজল (রা.) একথা জানতে পেরে এক পেয়ালা দুধ হুজুরের (সা.) খেদমতে প্রেরণ করলেন। তিনি সেই দুধ পান করলেন। এতে লোকদের সন্দেহ দূর হলো।

হযরত উম্মুল ফজল (রা.) হযরত ওসমান জুন্নুরাইনের (রা.) খেলাফতকালে স্বামী হযরত আব্বাসের (রা.) সামনেই ওফাত পান। হযরত ওসমান (রা.) তাঁর নামাযে জানাযা পড়ান।

হযরত উম্মুল ফজলের গর্ভে হযরত আব্বাসের (রা.) সাতটি সন্তান জন্ম নিয়েছিলো। তাঁদের মধ্যে ৬টি ছিলো পুত্র এবং ১টি কন্যা। পুত্ররা হলেন, ফজল (রা.), আব্দুল্লাহ (রা.), উবায়েদুল্লাহ (রা.), মাবাদ (রা.), কাসাম (রা.) এবং আব্দুর রহমান (রা.) কন্যার নাম ছিলো উম্মে হাবিবাহ। নেতৃস্থানীয় চরিতকাররা লিখেছেন, এসব সন্তান অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) এবং হযরত উবায়েদুল্লাহ (রা.) ইলম ও ফজলের দিক থেকে এত উঁচু মর্যাদা লাভ করেছিলেন যে, তাঁরা উম্মাহর স্তম্ভ হিসেবে পরিগণিত হতেন।

হযরত উম্মুল ফজল (রা.) থেকে ৩০টি হাদীস বর্ণিত আছে। এসব হাদীসের রাবীদের  মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ এবং হযরত আব্বাসের (রা.) অন্যান্য পুত্র ও হযরত আনাস (রা.) বিন মালিকের মত জালিলুল কদর সাহাবীও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

অনুবাদ : আবদুল কাদের

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।