গুজবে বিভ্রান্তি নয় : সত্যের পথে ঐক্যবদ্ধ হই


৮ মে ২০২৫ ১৪:৪৫

॥ ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম ॥
‘একটি মিথ্যাকে বার বার বললে তা সত্যে পরিণত হয়।’
নাৎসি ফ্যাসিস্ট শাসক হিটলারের তথ্যমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসের এ উক্তির মাঝে ইতিহাসের অন্ধকারে মিথ্যা, বিভ্রান্তি ও গুজবের ভয়াবহ কাহিনী লুকিয়ে আছে। কখনো রাষ্ট্রের উত্থানে, কখনো পতনে, কখনো যুদ্ধের সূচনায়, আবার কখনো সভ্যতার ধ্বংসে গুজব এক নীরব অথচ কার্যকর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে আছে গুজবের বিষাক্ত প্রভাব। আজকের আলোচনায় আমরা ইতিহাসের সেই মুহূর্তগুলোয় যাত্রা করব, যেখানে গুজব সভ্যতার বিরুদ্ধে নীরব যুদ্ধাস্ত্র হয়ে উঠেছিল।
হিটলারের জার্মানি : গোয়েবলসের মিথ্যার সাম্রাজ্য
১৯৩৩ সালের পর থেকে নাৎসি জার্মানি গোয়েবেলসের নেতৃত্বে প্রচারণার এক ভয়ঙ্কর যন্ত্রে পরিণত হয়। ইহুদিদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হয় গুজব তারা নাকি জার্মানির সব দুঃখের জন্য দায়ী, ব্যাংক এবং শিল্পের সবকিছু দখল করে রেখেছে। এই প্রচারণা জনমতকে বিষিয়ে তুলেছিল, যার পরিণতিতে ঘটে হলোকাস্ট ইতিহাসের এক ভয়াবহ গণহত্যা। এ প্রচারণার লক্ষ্য ছিল গণহত্যা গ্রহণযোগ্য করার মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি।
হিটলারের ‘রাইখস্ট্যাগ আগুন’ (১৯৩৩)
নাৎসিরা পরিকল্পিতভাবে জার্মান পার্লামেন্ট (রাইখস্ট্যাগ) ভবনে আগুন লাগিয়ে পরে গুজব ছড়ায়,কমিউনিস্টরা এ আগুন লাগিয়েছে। অথচ ইতিহাসবিদরা বলেন, নাৎসিরা নিজেরাই আগুন লাগিয়ে গুজব ছড়িয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, জনগণের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা এবং হিটলারের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
লিবিয়ার ধ্বংস
২০১১ সালে আরব বসন্তের উত্তাপে আরববিশ্ব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে সামাজিকমাধ্যমে ছড়ানো গুজব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। যেমন- লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়Ñ তিনি নাকি নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছেন। এ গুজবের ভিত্তিতে ন্যাটো হামলা চালায়, যার ফলে গাদ্দাফি নিহত হন। কিন্তু লিবিয়া নামক রাষ্ট্রটি টুকরো টুকরো হয়েছে এর পরিণতিতে।
ইউএসএস মেইন বিস্ফোরণ ও স্পেন-আমেরিকা যুদ্ধ (১৮৯৮)
ঘটনা: কিউবার হাভানা বন্দরে মার্কিন রণতরী ইউএসএস মেইন বিস্ফোরিত হয়।
গুজব: মার্কিন প্রেস ও রাজনীতিকরা প্রচার করে, ‘স্পেন আমাদের জাহাজ ধ্বংস করেছে।’
বাস্তবতা: তদন্তে জানা যায়, বিস্ফোরণটি জাহাজের অভ্যন্তরীণ কারিগরি ত্রুটির কারণে ঘটেছিল।
ফলাফল: আমেরিকা স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং কিউবা, পুয়ের্তো রিকো, ফিলিপাইন ও গুয়াম দখল করে।
কুয়েতে ইনকিউবেটর কাহিনী’ (১৯৯০-৯১, গালফ ওয়ার)
ঘটনা: একটি তরুণী কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেয় যে, ইরাকের সৈন্যরা কুয়েতি হাসপাতাল থেকে নবজাতকের ইনকিউবেটর থেকে বের করে হত্যা করেছে।
ফলাফল: বিশ্বব্যাপী ইরাকবিরোধী অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের কুয়েতে সামরিক হস্তক্ষেপে সহায়তা করে।
ফলাফল : পরে প্রমাণিত হয় পুরো গল্পটি সাজানো ছিল এবং তরুণীটি ছিল একটি পাবলিক রিলেশনস ফার্মের প্রশিক্ষিত সদস্য।
টঙ্কিন উপসাগর-ভিয়েতনাম যুদ্ধের সূচনা (১৯৬৪)
ঘটনা: মার্কিন সরকার দাবি করে, উত্তর ভিয়েতনামের নৌকা মার্কিন যুদ্ধজাহাজে আক্রমণ করেছে।
ফলাফল: এর অজুহাতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়। পরে প্রমাণিত হয় ঐ ‘আক্রমণ’ প্রকৃতপক্ষে অতিরঞ্জিত বা পুরোপুরি মিথ্যা ছিল।
ইরাক যুদ্ধ: ভুয়া ‘মাস ডেস্ট্রাকশন’ অস্ত্রের গল্প
২০০৩ সালে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইরাক আক্রমণ করে যুক্তি দেয়Ñ ইরাকের হাতে রয়েছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডগউ)। পরে প্রমাণিত হয়, অস্ত্রের অস্তিত্বই ছিল না। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য নির্মিত একটি গুজব, যার মাধ্যমে যুদ্ধের বৈধতা অর্জন করা হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা এবং নতুন সন্ত্রাসের উত্থান ঘটে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রভাব খর্ব করতে একশ্রেণির মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী এবং প্রতিপক্ষ সবসময় ছিল ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানতে এহেন কোনো পথ নেই, যা অবলম্বন করেনি। একবার একটা জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলো ‘রাবিতে একজন হিন্দু ছেলের চোখে মরিচ ভেঙে দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে ছাত্রশিবির’ কী ভয়ংকর খবর, যা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ইতিহাসকেও হার মানায়। ভয়ংকর ও মর্মান্তিক এ খবরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নিউজটি ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’। তোলপাড় লেগে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির নিজেরাও তদন্ত কমিটি গঠন করলো। তদন্তে দেখা গেল, যে হিন্দু ছেলেটির নামে নির্যাতনের খবরটি প্রকাশিত হলো, এ জাতীয় কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বরং যেই তারিখের বরাত দিয়ে পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, তার অনেক আগ থেকেই ছেলেটি তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে।
এছাড়া বিগত সরকারের সময় ফ্যাসিবাদীরা আমাদের বিরুদ্ধে এরকম হাজারো মিথ্যাচার করেছে আমাদের নেতৃবৃন্দ, সংগঠন এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে। তবুও এ প্রিয় কাফেলা সত্যের পথে দুর্জেয়। সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের খবরের সত্যতা যাচাইয়ে ব্যাপারে ইসলামের রীতি অনুসরণ করতে হবে। এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর নির্যাতনের প্লাটফরম তৈরি করার জন্য গুজব ও ভিত্তিহীন খবর প্রচারের। যা হয়েছে পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের তত্ত্বাবধানে।
কুরআনের দৃষ্টিতে গুজব-
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা ও গুজব ছড়ানো থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
১. সূরা হুজুরাত (৪৯:৬)
‘হে ঈমানদারগণ। যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করে নাও, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত না করো এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হয়।’
২. সূরা আন-নূর (২৪:১৫)
‘তোমরা যখন তা মুখে মুখে বলছিলে এবং নিজেরা যা জানো না, তা বর্ণনা করছিলে এবং ভাবছিলে এটি তুচ্ছ, অথচ তা আল্লাহর দৃষ্টিতে গুরুতর।’
হাদিসের আলোকে গুজব-
রাসূল (সা.) গুজব এবং মিথ্যা প্রচার করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। একটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’
সহীহ বুখারীতে এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোনো কথা শোনামাত্র তা যাচাই না করে প্রচার করে।’ (সহীহ বুখারী)।
গুজবের সামাজিক প্রভাব
গুজব ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে না শুধু, বরং সমাজের সার্বিক শান্তি ও ঐক্যকে ভেঙে দেয়। কুরআন ও হাদিসে গুজবের বিরুদ্ধে যে সতর্কতা প্রদান করা হয়েছে, তা সামাজিক বিভ্রান্তি, অবিশ্বাস ও সহিংসতার সম্ভাবনা রোধ করতে কার্যকর। তাই মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে এ নির্দেশনা অনুসরণ করার বিকল্প নেই।
সমালোচনার পদ্ধতি
সমালোচনার পদ্ধতি সংগঠনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে। অর্থাৎ ত্রুটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে বলতে হবে। তাছাড়া সাধারণ ও নাগালের বাইরের কেউ হলেও ফোন, ইমেইল, ম্যাসেজের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। এটাই ইসলামের নিয়ম। তাছাড়া যদি তার দোষটিকে আপনি প্রকাশ করে দেন, তাহলে এটি একটি অপরাধ, যা শহীদি আন্দোলনের পরিবেশকে বিনষ্ট করে। আর যদি ওই ব্যক্তির মধ্যে সত্যিই ঐ ত্রুটি না থাকে, তাহলে এটি একটি জঘন্য অপরাধ এবং মিথ্যাচারের শামিল তার জন্য ইসলামের বিধান অনেক কঠোর। তাই অসংখ্য ভাইয়ের জীবন অনেক ত্যাগ এবং কুরবানির বিনিময়ে গড়া শহীদি সংগঠনের পরিবেশ নষ্ট হওয়া যে কোনো কর্ম থেকেই আমাদের বিরত থাকা উচিত। যে কোনো খবরে বিচলিত না হয়ে যথাযথ দায়িত্বশীলের মাধ্যমেই তার সত্যতা যাচাই করা আমাদের কর্তব্য। ধারণার বশবর্তী হয়ে কোনো বিষয় সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় তর্ক-বিতর্ক সমালোচনা এগুলো আমাদের সংগঠনের সুন্দর পরিবেশকে বিনষ্ট করে। আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ সম্পর্কেও কোনো মিথ্যাচার অসত্য জিনিস বর্ণনা করা ইসলামে নীতিবিরুদ্ধ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এমন কোনো খবর ও রচনা করা যাবে না।
এক্ষেত্রে কুরআনের বিধান হচ্ছে, তোমরা খারাপের মোকাবিলা করো ভালো দিয়ে।
গীবতের ব্যাপারে ইসলামের বিধিনিষেধ অত্যন্ত পরিষ্কার- এটিকে আপন ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমতুল্য হিসেবে তুলনা করা হয়। ধারণার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, ‘শোনা কথা বলা আর মিথ্যা কথা বলার সমতুল্য’। তাছাড়া ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের এ সংগঠনের নেতৃত্ব ও তাদের ফোরামের ব্যাপারে অবশ্যই আস্থাশীল থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নেতৃবৃন্দ স্বেচ্ছায় অথবা সম্মিলিত কোনো ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। তবুও মানুষের এ সংগঠনে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটিরও সমালোচনা সংশোধনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে মনজিলের দিকে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের নেতৃবৃন্দের শাহাদাত এবং পাড়াহসম জুলুমাতের পথ পাড়ি দিয়ে এ আন্দোলনের জনপ্রিয়তা-অপ্রতিরোধ্যতা যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, সেটিকে নষ্ট করার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং অনেকেই শুভাকাক্সক্ষী বেশে আমাদের ক্ষতি করার জন্য তাদের মিশন কিন্তু বন্ধ নেই। তাছাড়া আমাদের এ আন্দোলন নেতৃত্বকে আবর্তন করে গড়ে ওঠে। সে নেতৃত্বকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করা যায়, তাহলে আন্দোলনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমরা অনেক সময় কল্যাণের কথা চিন্তা করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা-সমালোচনার নামে সংশোধনের নিয়তে মতামত দিয়ে থাকি। এটি বেশিরভাগ সময় কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ বয়ে আনে। তাছাড়া বিতর্কের ভাষা, শব্দচয়ন প্রতিপক্ষের লোকজন পুঁজি করে আন্দোলনের ওপর আঘাত করতে সুযোগ পায়। আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির মাধ্যমে পরকালীন সফলতা অর্জন করা। লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কোনো তৎপরতা যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে শয়তানের পরিকল্পনাই সফল হবে। আমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংস হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বিভক্তি। ব্রিটিশদের ডিভাইডেড এন্ড রোলের তত্ত্বটি গোটা দুনিয়ায় বিরাজমান। এ তত্ত্বই ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে বিনষ্ট করে।
অথচ আল্লাহর নির্দেশনা হচ্ছে, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়েও না’। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।
গুজবের বিরুদ্ধে ইসলামী উপদেশ :
 তথ্য যাচাই করা।
 বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য গ্রহণ করা।
 সত্যের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।
গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদেরও সচেতন করা।
উপসংহার
গুজবের ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়- সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো কখনো সহজ ছিল না, এখনো নয়। রাষ্ট্র, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী অথবা রাজনৈতিক শক্তি যখন মিথ্যার মোহ তৈরি করে, তখন ব্যক্তিগত বিবেকই হয় মুক্তির আলোকবর্তিকা। গুজবের অন্ধকারের বিপরীতে আলোর পথে হাঁটতে হলে আমাদের প্রতিটি তথ্য ও প্রচারণাকে প্রশ্নের ছুরিতে পরখ করতে হবে। ইতিহাস বলছেÑ যে জাতি প্রশ্ন করতে জানে, সত্যের জন্য লড়তে জানে, তার বিজয় অবশ্যম্ভাবী। ইসলামও আমাদের শিখিয়েছে, শোনামাত্র প্রচার না করা, বরং সত্য যাচাই করে নেওয়া।
আমাদের হাজারো শহীদের রক্ত, অসংখ্য ভাই-বোনের ত্যাগ এবং কুরবানির পাহাড়ের ওপরে এ আন্দোলনের যে ইমারত গড়ে উঠেছে, যে কাজে তার ওপরে সামান্য আঁচড় লাগে, সে কাজটি আমরা করতে পারি না। এ আন্দোলনের শুরু থেকে জুলাই বিপ্লব এবং আজ অবধি অনেক শহীদের মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান গভীর রাতে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করছে চোখের পানি ফেলে, একটা ইনসাফভিত্তিক কুরআনের রাষ্ট্র কায়েমের জন্য পথ খুঁজছে। সেই পথে আমাদের কোনো তৎপরতা যদি সামান্যতম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, কিয়ামতের দিন আমরা কেউকি সেই দায় এড়াতে পারবো?
আপনি যে জনপদের বাসিন্দা, সেখানেও অসংখ্য শহীদের রক্তের দাগ এখনো জ্বলন্ত। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আগ্রাসী শক্তি একটি প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় সদা তৎপর আমাদের অগ্রযাত্রা স্তব্দ করে দিবে। তা সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছে আমাদের বিরুদ্ধে। তার তুলনায় আমাদের কর্মতৎপরতা অতি নগণ্য। অল্প সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিভেদ অনেক তুঙ্গে। তাই আসুন, গুজবে কান নয়, সত্যের পথ অনুসরণে ঐক্যবদ্ধ হই। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে সত্যের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দিন।