সোনার বাংলার সাথে সম্পর্ক ও সৌন্দর্য


২২ মে ২০২৫ ১৭:২৭

Sonarbangla

॥ জাকির আবু জাফর ॥
‘সোনার বাংলা’র সাথে আমার পরিচয় কয়েক যুগের। প্রথম দেখাতে নামটিই আকর্ষণ করেছে আমাকে। না, রাজনৈতিক খরতাপে ব্যবহৃত সোনার বাংলার জন্য নয়। যখন এ সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাথে আমার পরিচয় ঘটে, তখন রাজনৈতিক সোনার বাংলা ততটা উল্লেখ্য ছিল না। একটি সাপ্তাহিকের নাম ‘সোনার বাংলা’। এটিই প্রথম আকর্ষণ করেছিল আমাকে। তিন যুগ আগের কথা বলছি। সেই সময়টিতে রাজনীতির বিভাজন রেখাটি ততটা তীব্র হয়ে ওঠেনি। প্রথম সোনার বাংলা হাতে পেয়ে এক ধরনের পুলক অনুভব করলাম। অবশ্য পত্রিকাটির অঙ্গসৌষ্ঠবের আনন্দে নয়। বরং পত্রিকার পৃষ্ঠাজুড়ে চিত্রিত লেখাজোখার সৌরভে মুখরিত হলাম। একরকম গোগ্রাসে গিলেছি বেশ কটি লেখা। বলে নেয়া ভালো- একটি পত্রিকার একটি সংখ্যার সব লেখা উন্নত হবে- এটি আশা করা যায় না। ভাবাও যায় না। কারণ তো আছেই, আমাদের লেখক সমাজে লেখকের সংখ্যা বেশ। কিন্তু উন্নতমানের লেখক সংখ্যায় নেহাতই কম। কম তো কমই। বলতে গেলে হাতেগোনা কজন। যারা ভালো লেখেন চাইলেই তারা লেখা দিতে সমর্থ হন না। এমন লেখকদের কিছুটা খেয়াল খুশি থাকে। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। ফলে মন চাইলে লিখবেন, নয়তো লিখবেন না। এ মাপের লেখকদের লেখার জন্য বাধ্য করা যায় না, কিংবা তারা বাধ্য হন না। ফলে একটি সংখ্যায় সব যোগ্য লেখকের উপস্থিতি সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই দু-চারটি ভালো লেখার সঙ্গে সম্পাদকবৃন্দ অপেক্ষাকৃত কম মানসম্পন্ন লেখা ছাপেন। মানে ছাপতে বাধ্য হন। এমন লেখাও ছাপতে হয়, যে লেখাগুলো এডিট করা ছাড়া সরাসরি ছাপাও যায় না। পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা যা-ই হোক, সকল লেখা প্রথম বিবেচনায় ছাপানো সম্ভব হয় না এ কারণে।
তো বলছিলাম আমার হাতে পৌঁছা প্রথম সোনার বাংলার কপিটির কথা। সে সংখ্যার সবগুলো লেখা ভালো লেগেছে, এ কথা বলার জো নেই। তবে বেশকিছু লেখা মনে ধরেছিল। মনে হলো লেখাগুলো কোথাও ব্যতিক্রম। কোথাও জানি আলাদা। পড়তে পড়তে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠল। বহমান সমাজধারার বাইরে বিশেষ দৃষ্টিতে ছিল লেখাগুলো। ছিল রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে নতুন স্বরের। সেই থেকে সোনার বাংলার সাথে আমার সম্পর্কের সেতু। তারপরের কাহিনী তো আরও চমকপ্রদ! আরও উচ্ছ্বাস এবং উল্লাসের- সোনার বাংলায় শুরু হলো আমার লেখালেখি। শুরু হলো লেখা ছাপানোর নতুন পর্ব। কখনো কম, কখনো বেশি, কখনো মাঝে মাঝেÑ এমন করে আমার লেখা ছাপা হতে থাকল সোনার বাংলায়। একজন লেখকের সাথে একটি পত্রিকার সম্পর্ক মজবুত হয় তার লেখালেখির মাধ্যমে। আমার সাথে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পর্কটিও মজবুত হয়েছে এ তরিকায়। ফলে পত্রিকাটি আমার নিজের হয়ে উঠল।
সোনার বাংলায় লেখা ছাপা হলেই উড়ে আসে পাঠক-প্রতিক্রিয়া। কাছের পাঠক তো বটেই, দূরের পাঠক; এমনকি দূরদেশ থেকেও ভেসে আসে পাঠকের আনন্দ। কোনো কোনো পাঠকের তৃষ্ণা খানিকটা তীব্র- প্রতি সংখ্যায় কেন লেখি না, এমন অভিযোগও করেন। বিনয়ের সাথে বলি, প্রতি সংখ্যায় লেখা সহজ নয়। তাছাড়া কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার বিষয়টিও রয়েছে। সুযোগ-সুবিধার বিষয়ও রয়েছে। তারপরও অনুরোধের স্রোত বইতে থাকে- প্লিজ প্রতি সংখ্যায় লেখা চাই। কোমল কণ্ঠে বলতে হয়, দোয়া করবেন। কথাগুলো বলছি, কারণ সোনার বাংলার বেশিরভাগ পাঠক সিরিয়াস পাঠক বলেই মনে হয়েছে আমার। তারা নিয়মিত পত্রিকা সংগ্রহ করেন। পাঠ করেন। বিশ্লেষণ করেন। একইসাথে প্রতিক্রিয়াও জানান। অর্থাৎ তারা নিষ্ক্রিয় পাঠক নন। একদমই সক্রিয় পাঠক। হ্যাঁ, সকল পাঠক সক্রিয় হবেন, এটি আশা করা যায় না। কেননা একটি লেখা পড়ে তা অনুধাবন করা খুব সহজ নয়। আবার সেই অনুধাবিত বিষয়টি লেখকের সাথে শেয়ার করা আরও কঠিন। এটি পারেন অগ্রসর পাঠকগণ। সবাই তো অগ্রসর পাঠক নন, কিংবা সবাই অগ্রসর পাঠক হতেও পারেন না। গড়পড়তা পাঠকের সংখ্যাই বেশি। এটিও মন্দ কিছু নয়। অন্তত যারা পড়েন না, তাদের চেয়ে ঢের উত্তম।
পাঠকদের কেউ কেউ অবশ্য পত্রিকাটির গেটআপ-মেকআপ নিয়ে কথা বলেন। বলেন, এটির অঙ্গসৌষ্ঠব আরও নান্দনিক হতে পারতো। আধুনিক হতে পারতো। পাঠকের তরফে এটি যৌক্তিক। আসলেও গেটআপ-মেকআপ আরও শৈল্পিক হওয়া জরুরি। হতে হবে এটিই আশা করি আমরা। আশা করি, কারণ আধুনিক প্রযুক্তির যুগে রাজধানী থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার চেহারা অবশ্যই আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া উচিত। হতে হবে শিল্প সম্পন্ন। খাবার প্রস্তুত করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পরিবেশন করাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাস্তব উপমা নিতে পারি এ খাবার থেকেই। একই চা একটি সাধারণ হোটেলে বিশ টাকা। অথচ সেই চা-টিই একটি ফাইভ স্টার হোটেলে দু’শ টাকা। দরের এমন তারতম্য হওয়ার কারণ কিন্তু পরিবেশন তারতম্যের আয়োজনে। সে যা-ই হোক, সোনার বাংলা তার চলার গতি বলিষ্ঠ করবে- এটি আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকা খুব এক প্রকাশিত হয় না। হলেও প্রায় অনিয়মিত। এক সপ্তাহে বের হয়, তো পরের সপ্তাহে বন্ধ। দুই সপ্তাহ প্রকাশ হলে প্রকাশ হয় না তিন সপ্তাহ। কারণে তো বটে, অকারণেও কখনো কখনো বন্ধ থাকে পত্রিকার প্রকাশনা। হয়তো এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সে কারণগুলোও হয়তো যৌক্তিক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণটি অর্থনৈতিক। অর্থ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চাকা। একটি পত্রিকারও তাই। অর্থ ছাড়া পত্রিকার প্রেসের চাকা ঘোরে না। ঘুরবে না। অর্থ সমস্যা ছাড়াও আরও সমস্যা থাকে, এটিও মানি। তবে অর্থ সমস্যা যে বাংলাদেশে পত্রপত্রিকার প্রথম ও প্রধান সমস্যা- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য সরকারি নানাবিধ বিধি এবং নিয়মের ব্যতিক্রমের ঘটনায়ও পত্রিকা বন্ধ হয়। অনেক সময় পত্রিকার পরিচালনা সংক্রান্ত জটিলতায়ও বন্ধ হতে পারে পত্রিকা। স্বার্থের দৃষ্টিকোণ এবং প্রভাব বিস্তার করার মানসিকতা জেগে উঠলে বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকা অফিসের দরোজা। এসব দিক থেকে সোনার বাংলা অনেক সমস্যা মাথায় নিয়েও প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে। বন্ধ হয়নি পত্রিকাটি। চলছে এবং চলবে আশা করি।
বাংলাদেশের বিশ্বাসী মানুষের মনে স্বপ্নজাগানিয়া আয়োজন করবে সোনার বাংলা এ স্বপ্ন তো দেখাই যায়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সোনার বাংলার সর্বময় সাফল্য কামনা করছি।