জাতীয় ঐক্য সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পূর্বশর্ত
২৯ মে ২০২৫ ১০:৩২
৩৬ জুলাই বিপ্লব আমাদের মনে একটি স্বপ্ন জাগিয়েছে। দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, ঘুষ, দখল, চাঁদাবাজি, ফ্যাসিস্ট আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে একদল তরুণ সততার আলোদীপ্তি ছড়িয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে। প্রথম স্বাধীনতার পরের ঘটনার চেয়ে এবার কিছু ব্যতিক্রম প্রত্যক্ষ করছে দেশবাসী। খান আতার ‘আবার তোরা মানুষ হ’ কিংবা মুনীর চৌধুরীর ‘নষ্ট ছেলে’দের বিজয়ের পর সারা দেশে লুটপাট, হত্যা, সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি বেড়ে গিয়েছিলো পরিণতিতে দেশকে মোকাবিলা করতে হয়েছে একটি বড় দুর্ভিক্ষ। কিন্তু ২০২৪-এর ৩৬ জুলাইয়ের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটপাটে ফোকলা হওয়া দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যও পালিয়ে গিয়েছিলো, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই সঙ্কট মোকাবিলা করেছে। ফোকলা হওয়া অর্থনীতির পরও কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততার কারণে সহনীয় মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পেরেছে। সর্বকালের সেরা ও স্বস্তির মাহে রমজান উদযাপন করেছে। বাজার সিন্ডিকেটের মোকাবিলায় সরকার ও ছাত্র-জনতার দৃঢ় অবস্থানের কারণে তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কেবলমাত্র সয়াবিন তেল ও চিনি আমদানির পরও একদল চিহ্নিত ব্যবসায়ী তা খালাস না করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছিলো। কিন্তু জনগণ সরিষার তেল, খোলা তেল ও অন্যান্য বিকল্প উপায়ে সেই সঙ্কটের সমাধান করেছে, কিন্তু তারপরও মাথানত করেনি। কিছু ব্যতিক্রম যে ঘটেনি, তা নয়। যাদের দ্বারা ওসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তারা হয়তো ‘নষ্ট ছেলে’ নয়তো ‘আবার তোরা মানুষ হ’দের নব্য সংস্করণ। তাদেরও আছে রাজনৈতিক দলের মুখোশ। টেম্পু স্ট্যান্ডের কালো ছেলে ইত্যাদি ইত্যাদি পরিচয়। আশা করা যায়, আলোকিত সন্তানদের স্পর্শে কালোও ভালো হবে, আলো ছড়াবে- যদি জাতীয় নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজ, শিল্পী, সাহিত্যিক সাংবাদিকসহ দেশের সচেতন মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিস্টদের দোসর ও আধিপত্যবাদী শক্তি ঐক্যে ফাটল ধরাতে অবহ্যাতভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের সেই ফাঁদে অনেকে জেনেবুঝেই ব্যক্তিগত লাভের লোভে পা দিচ্ছে।
৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর আমরা একটি সুযোগ পেয়েছি দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, ঘুষ, দখল, চাঁদাবাজি, ফ্যাসিস্ট আর বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে নতুন বাংলাদেশ গড়ার। এ সুযোগ অবশ্যই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। শহীদের রক্তের ম্যান্ডেটের বিনিময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু একটি চিহ্নিত মহল পতিত ফ্যাসিস্টের বয়ান ফেরি করে ইউনূস সরকারের প্রতি পদক্ষেপে বাধার সৃষ্টি করছে। ব্যক্তির চেয়ে দল দলের চেয়ে দেশ বড়- এ কথা ভুলে তারা ব্যস্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারে। দখল, চাঁদাবাজি, ঘুষ-দুর্নীতি, বাজার সিন্ডিকেট প্রতিহত করতে গেলে তাদেরকে আওয়ামী পুরনো বয়ানে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। ৩৬ জুলাইয়ের সাহসী, অকুতোভয় সততা ন্যায়ের আলোকিত বর্মে সজ্জিত কিশোর-তরুণদের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অপশক্তির বৈশিষ্ট্য হলো অসুরের শক্তি আর ভয়াবহ কুৎসিত রূপে ভয় দেখিয়ে সে সত্যের আলো নিভিয়ে দিতে চায়। সত্যের পক্ষের সৈনিকদের অনৈক্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার মসনদ ভাগানোর ধান্ধা করে। তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ৩৬ জুলাইয়ের চেতনায় বিশ্বাসীদের ঐক্য, সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য। আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি।