সারা দেশে হাট বসবে সাড়ে ৩ সহস্রাধিক

কুরবানির জন্য প্রস্তুত ১ কোটি ২৪ লাখ পশু


২৯ মে ২০২৫ ১০:২৫

॥ সাইদুর রহমান রুমী॥
ভারতীয় গরু চোরাচালান প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে এবার জমে উঠছে সারা দেশে কুরবানির জন্য পশু কেনাবেচা। আইনশৃঙ্খলার কড়াকড়ির মধ্যে সারা দেশে হাট বসবে সাড়ে ৩ সহস্রাধিক। এ বছর পশুর চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি করায় ১ লাখ কোটিরও বেশি বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীতে পশুর হাটে আরো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। জনস্বার্থকে সামনে রেখে এবার কোথাও হাটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। আবার কোথাও বাড়ানো হয়েছে। স্টেরয়েড, হরমোনমুক্ত গরু নিশ্চিতের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়ছে। চোরাই ভারতীয় পশু যাতে পশু হাটে না ঢুকে সেজন্য নেয়া হয়ছে আগামী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
আসন্ন কুরবানির জন্য এবার ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ সহস্রাধিক পশু প্রস্তুত। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৩টি বেশি। সারা দেশের সাড়ে ৩ সহস্রাধিক পশুর হাটকে ঘিরে এবার ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্যের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর পশুর চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি এবং গরু মোটাতাজাকরণ অর্থনীতিতে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। ভারতীয় গরু চোরাচালান প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই হবে বর্তমানে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এক লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য
বাংলাদেশে সারা বছর যত পশু জবাই হয়, তার প্রায় অর্ধেক জবাই হয় কুরবানির ঈদে। গত ২০২৪ সালের কুরবানির ঈদে জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি পশু। এর মধ্যে ছিল ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৯টি গরু, ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৮টি মহিষ, ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৯টি ছাগল, ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৪৯ ভেড়া এবং ১ হাজার ২৭৩টি অন্যান্য পশু। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কুরবানিকৃত পশুর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৬টি বা ৩.৬৬ শতাংশ বেশি। এ বছর কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া, ৫ হাজার ৫১২টি অন্য প্রজাতির পশু। এ বছর ৫ শতাংশ হারে চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা ধরে নিয়ে পশুর চাহিদা হতে পারে ১ কোটি ৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৬৪টি পশু। তাতে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৩টি পশু। সব মিলিয়ে সারা দেশে পশুর হাট এবং সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যে মোট ১ লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীতে ২০টিসহ সারা দেশে বসবে সাড়ে ৩ হাজার হাট
সারা দেশে এবার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হাট বসবে। এর মাঝে রাজধানীতে এবার কুরবানির পশুর হাট বসবে ২০টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০টি এবং উত্তর সিটির ১০টি। স্থান নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে দরপত্র সম্পন্ন করা হয়েছে। ঈদের আগের তিনদিনসহ ৫ দিন চলবে পশু বেচাকেনা। থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। হাট পরিচালনায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় এবার হাটের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে আফতাবনগর এবং মেরাদিয়া পশুর হাট। গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট এবং বছিলা, মিরপুর, খিলক্ষেত, বাড্ডাসহ উত্তর সিটিতে হাট বসবে ১০টি। অন্যদিকে উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের খালি জায়গাসহ দক্ষিণ সিটিতে ১০টি হাট বসবে। সব মিলিয়ে কুরবানির ঈদের আগে রাজধানীতে পশুর হাটকেন্দ্রিক একটি উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু ও ছাগলসহ নানা পশু রাজধানীর হাটগুলোয় বিক্রির জন্য তোলা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে পশুর হাটগুলো। দক্ষিণের ১০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে আছে উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তাগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গাবতলী স্থায়ী হাট ছাড়াও এবার আরও ৯টি অস্থায়ী হাট বসাবে সংস্থাটি। এগুলো হলো ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা (ভাটারা সুতিভোলা), কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউউট সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া বেপারীপাড়া রহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের জায়গা এবং খিলক্ষেত থানার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পাড়ার খালি জায়গা।
স্টেরয়েড ও হরমোনমুক্ত গরু নিশ্চিতের দাবি
গরু মোটাতাজাকরণে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড, এন্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক ব্যবহার করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোয় সাধারণ মানুষের সচেতনতায় তা আর তেমন দেখা যায় না কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এ বছর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম তৎপর থাকায় গো-খাদ্যে এসব ক্ষতিকর উপকরণ মেশানো অনেকটা অসম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ৩ হাজার ৬৭৮টি কুরবানি পশুর হাটে ১৯ হাজার ৯৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে বলে নিশ্চিত করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের পাশাপাশি স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধ করার জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইলকোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ গবাদিপশু সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন জানান, কুরবানিকেন্দ্রিক গবাদিপশু সরবরাহ ও বিক্রয় আমাদের জাতীয় অর্থনীতির এক ‘ইতিবাচক দিক’। কুরবানির ঈদে সবার লক্ষ্য সুদর্শন, দৃষ্টিনন্দন সুস্থ গরু কেনা। তবে অনেক সময় ভেজাল ও রুগ্ণ গরুর ফাঁদে পড়ে কুরবানির মহৎ উদ্দেশ্য যেন ম্লান না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এ বছর আমরা মন্ত্রণালয় থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। এবার বিষয়টির ওপর সর্বোচ্চ নজর রাখছে সরকার। সচিব জানান, কুরবানিযোগ্য গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্টেরয়েড ও হরমোনমুক্ত হৃষ্টপুষ্ট সুস্থ গরু সরবরাহে খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক ছাড়াও প্রায় তিন লাখ লিফলেট এবং পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে। তিনি জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইলকোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড ও হরমোনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। এজন্য কুরবানির আগে থেকেই সরকার সুস্থ গবাদিপশু সরবরাহের জন্য কঠোর হচ্ছে। ফলে খামারিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য স্টেরয়েড যেমন- ডেক্সামিথাসন, পেরিয়্যাকটিন ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বা হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের শাস্তি সম্পর্কে খামারিদের অবগত করা হয়েছে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ও পোলট্রি বিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, গরুকে নিয়মমাফিক স্বীকৃত ফর্মুলা অনুসারে খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে তার গোশত মানবশরীরে ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু স্টেরয়েড দিয়ে মোটা করা গরুর গোশত মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। স্টেরয়েড মূলত হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ জাতীয় ওষুধ, যেমন ডেক্সামিথাসন বা ডেকাসন, বেটামিথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর গোশতে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়। এসব গরুর গোশত খেলে ক্ষতিকর হরমোন পরোক্ষভাবে শরীরে ঢুকলে তা মানবশরীরে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে খামারি এবং সাধারণ মানুষের গণসচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি সরকারি নজরদারি প্রয়োজন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির প্রশাসকরা জানান, স্টেরয়েড হরমোনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খামারিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কুরবানির হাটে সুস্থ গবাদিপশু চেনার জন্য বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৯টি পশুর হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ৫টি কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২টি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
আগামী বছর থেকে হাসিল হবে ৩ শতাংশ
এ বছর সময়ের অভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভবপর না হওয়ায় পশুর হাটের হাসিল কমানো সম্ভব হয়নি। তাই আগামী বছর থেকে কুরবানির পশুর হাটে হাসিল দামের ৩ শতাংশ করে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ বছর কুরবানির পশুর হাট থেকে ৫ শতাংশ হাসিল আদায় হবে। তবে আগামী বছর থেকে ৩ শতাংশের বেশি হাসিল নেওয়া হবে না। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ৫ শতাংশ হাসিল অনেক বেশি। তবে এবার হাসিল কমানো সম্ভব নয়। আগামী বছর থেকে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হবে।
গতবারের চেয়ে বর্গফুটে ৫ টাকা বাড়লো পশুর চামড়ার দাম
এবার কুরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তাতে গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা বেড়েছে আর ছাগলের চামড়ার দাম বেড়েছে ২ টাকা। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন, গত বছর এ দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ টাকা ৬০ টাকা, গত বছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, “এ বছর প্রতি বর্গফুটে চামড়ার দামের পাশাপাশি ছোট গরুর আয়তন হিসেবে সর্বনিম্ন দাম ও নির্ধারণ করে দিয়েছি। এ বছর গরুর লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ দাম ঢাকায় হবে ১৩৫০ টাকা। তিনি বলেন, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে ঈদের পর অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত কাঁচা চামড়া স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণ, হাট-বাজার ব্যবস্থাপনাসহ তিন মাসের জন্য কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানির শর্ত শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় দশ দিনের আগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।”
৯৯৯-এ পাওয়া যাবে হাট-চামড়া বিশৃঙ্খলার সহায়তা
এবার কুরবানির ঈদে সুষ্ঠু চামড়া ব্যবস্থাপনা ও পশু পরিবহনে সার্বিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের হেল্পলাইন-৯৯৯ থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও বিশেষ কন্ট্রোল সেল এর ব্যবস্থা করা হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চোরাই ভারতীয় পশু ঢোকার আতঙ্কে খামারিরা
কুরবানির জন্য পর্যাপ্ত দেশীয় পশু থাকার পরও স্থানীয় দলীয় প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু ঢুকার আতঙ্কে রয়েছেন খামারিরা। বিশেষ করে দেশের কুমিল্লা, দিনাজপুর, সিলেট, বান্দরবান, পঞ্চগড়, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টগুলোয় অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ব্যাংক ঋণ সংকট # বিপাকে ব্যবসায়ীরা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক লুটপাটের কারণে এবার খামারিরা এবং চামড়া ব্যবসায়ীরা ব্যাংক হতে তেমন একটি সহায়তা পাচ্ছেন না। সরকারি ঋণ সহায়তা কাগজে কলমে থাকলেও সত্যিকার অর্থে হাতেগোনা ব্যবসায়ীরা এ সহায়তা পান বলে জানান। ফলে চামড়া খাতের জন্য তেমন একটা বিশেষ ঋণ দিচ্ছে না বিভিন্ন ব্যাংক। ফলে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া নষ্ট কিংবা কোনোভাবে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘চামড়া পচনশীল পণ্য হওয়ায় দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে নগদ টাকা প্রয়োজন হয়। এজন্য ঈদ মৌসুমে খণ্ডকালীন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আড়তদাররা। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের নিজস্ব মূলধন দিয়ে সারা বছর ব্যবসা করলেও কুরবানির সময় বেশি বাড়তি নগদ অর্থের জন্য বিশেষ ঋণ প্রয়োজন।’