৫ মে শাপলা চত্বরের শাহাদাত : আধ্যাত্মিক চেতনার উদ্বোধন
৮ মে ২০২৫ ১৪:১২
॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকালের ভয়াবহ নির্মমতা ও বর্বরতার অন্যতম সাক্ষী রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বর। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতের আঁধারে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার। এ গণহত্যার শিকার হন দেশের নিরীহ আলেম-ওলামা, হাফেজিয়া, কওমি মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। নিহতের তালিকায় আছেন কয়েক সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ফেরিওয়ালা ও সাধারণ মানুষ। সঠিক নিহতের সংখ্যা লুকাতে সরকার রাতের আঁধারে আলামত নষ্ট করে ফেলে। তারপরও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় একশত নিরীহ মানুষ এ নির্মমতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার অন্য একটি প্রতিবেদনে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শাপলা চত্বরের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা ফিরে গেছেন দার্শনিক রবার্ট পল উলফ, সমাজবিজ্ঞানী ব্যারিংটন মুর জুনিয়র এবং দার্শনিক হারবার্ট মার্কুসের ১৯৬৫ সালে লেখা একটি বইয়ের পাতায়। বইটির নাম ‘আ ক্রিটিক অফ পিওর টলারেন্স’। যার বাংলা অর্থ, বিশুদ্ধ সহনশীলতার সমালোচনা। এতে তারা মন্তব্য করেছেন, ‘ভবিষ্যৎ (নাৎসি) নেতারা গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যখন তাদের আন্দোলন শুরু করে, তখন যদি তাদের প্রতি গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা প্রত্যাহার করা হতো, তাহলে মানবজাতি গণহত্যা (হলোকাস্ট) এবং একটি বিশ্বযুদ্ধ থেকে রক্ষা পেত।’ মৃত বাকশালের প্রেতাত্মাকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সহিষ্ণুতায় আবার আওয়ামী লীগ নামে পুনর্গঠনের সুযোগ না দিলে এ জাতিকে হয়তো শাপলা হত্যাকাণ্ডের মতো ১৯৭৫-পরবর্তী অনেক রাজনৈতিক নির্মম ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হতো না। রাজনৈতিক-নির্মমতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টই সিলগালা হয়ে যেত। কিন্তু ভারতের বর্ণবাদী আগ্রাসী অপশক্তি এবং তাদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত পশ্চিমাশক্তিকে খুশি করতে উদার গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেন সঙ্কটকালে ক্ষমতায় আসা শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ফ্যাসিস্ট অপশক্তির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, প্রথমেই তাকে খতম করা, যার উদারতায় সে পুনর্জীবন লাভ করে। এক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণ এর প্রমাণ। এ হত্যাকাণ্ডের পরই ধীরে ধীরে মনস্টার রূপে ফিরে এসেছে বাকশালী খোলস বদল করা আওয়ামী লীগ।
মনস্টার রূপে ফিরে আসা
এ কথা কারো অজানা নয়, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কফিন দাফনের পর বাকশাল গঠন করা হয়। তারা আওয়ামী লীগের প্রকৃত ফ্যাসিস্ট রূপ বাকশালে প্রত্যক্ষ করেন। বিরোধীদলের ৩০ হাজার নেতাকর্মীর রক্তঋণ এবং রক্ষীবাহিনী, লালবাহিনী, নীলবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী না করে বাকশালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে এক সফল সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় দেয়। এরপর অনেক ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদার ও সহিষ্ণুতার সুযোগে কফিন ফেটে বের হয় আওয়ামী লীগ। কথায় আছে অপঘাতে নিহত হওয়া অতৃপ্ত আত্মা প্রেত বা ভূত হয়ে ফিরে আসে, আওয়ামী লীগের বেলায়ও হয়তো তেমন ঘটনাই ঘটেছিল। তাদের এ ফিরে আসা এবং উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশের সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিবাদী মনস্টার রূপে ক্ষমতার মসনদ দখল বিশ্লেষণ করে এমন মন্তব্যই করেছেন বিশ্লেষকরা। এরপর দীর্ঘ সতেরো বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের সময় তারা শুধু শাপলা চত্বর হত্যা নয়; জেল-জুলুম, গুম, খুন, হত্যা-নির্যাতন, জুডিশিয়াল কিলিং, দখল, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অর্থ পাচারসহ হেন অপকর্ম নেই যা করেনি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার শাসনকালেই কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা সংঘটিত করেছে। এ গণহত্যার প্রথমটি পিলখানা, এতে আমরা দেশেপ্রেমিক সেনাবহিনীর ৫৭ চৌকস সেনা অফিসারকে হারিয়েছি। দ্বিতীয়টি ৫ মে হেফাজতের সমাবেশ ও সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা সংঘটিত করেছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের মাধ্যমে অগণিত মানুষ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা ফিরে এসেছে। অসংখ্য মানুষকে এক যুগ ধরে তাদের কর্মস্থল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে।’ ফ্যাসিবাদী অপশক্তি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদারতার সুযোগ নিয়ে বেড়ে ওঠে, তারপর সুযোগমতো গণতন্ত্রকেই হত্যা করে। তারপর ভয় দেখিয়ে দুঃশাসনের আয়োজন করে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আয়োজন ছিল সেই দুঃশাসেনর বিরুদ্ধে এক দুর্বার প্রতিবাদ।
ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিবাদ
বাকশালী খোলস বদলে আওয়ামী লীগ নামে নবরূপে ফ্যাসিজম কায়েম করে শেখ হাসিনা ভারতের অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করতে সবার আগে নীলনকশা আঁকে দেশ থেকে ইসলামী রাজনৈতিক প্রভাব এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ধ্বংসের। এর প্রথম টার্গেট হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করতে সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, তৎকালীন আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে ভিত্তিহীন সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে। তাদের গ্রেফতারের পর মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ তাওহীদি জনতার ক্ষোভ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে হাসিনা তরুণদের টার্গেট করে। জার্মানির হ্যামিলন শহরের বাঁশিওয়ালা যেমন জাদুর বাঁশির মোহসৃষ্টি করে ইঁদুরের মরণফাঁদ তৈরি করেছিল। একই কায়দায় হাসিনা ইমরান এইচ সরকার নামে বিভ্রান্ত তরুণ ডাক্তারকে বাছাই করে ভারতীয় শেখানো মিথ্যা চেতনার বয়ান তৈরি করে। সেই বয়ানের মোহে কোমলমতি তরুণ-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ফাঁদে পা দিয়ে সমবেত হয় রাজধানীর শাহবাগে। এর মাধ্যমে তারা এক ঢিলে দ্ইু পাখি শিকারের ষড়যন্ত্র করে। তরুণদের এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণের সুমহান আদর্শ ইসলামবিমুখ করা এবং তাদের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে ভারতের সেবাদাস বানানো। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থান নেয়। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সেবাকাজের ব্যাঘাত এবং রাজপথ বন্ধ করে রাখে। সবই চলে জনগণের নিকট থেকে লুট করা সরকারি ফান্ডের টাকায়।
দেশের শীর্ষ ইসলামী নেতৃত্বের জীবন ও জাতিবিধ্বংসী এ অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে জেগে ওঠেন এদেশের আলেমসমাজ। তারা গঠন করেন হেফাজতে ইসলাম নামের একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। সরকারের প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতায় নাস্তিকদের এ বাগাড়ম্বরের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামকে অতিদ্রুত আপন করে নেয় এদেশের সর্বস্তরের জনতা।
১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছিল। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে। ফলে লংমার্চ প্রতিহত করতে সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্র করতে থাকে। সকল রুটের সকল বাস-ট্রেন-লঞ্চ-স্টিমার বন্ধ করা হয়। এমনকি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নামসর্বস্ব একটি দলকে দিয়ে ৫ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ৬ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশব্যাপী ডাকা হয় হরতাল। উদ্দেশ্য, যেন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে কেউ ঢাকায় আসতে না পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারের ডাকে এমন হরতাল নজিরবিহীন। কিন্তু মুসলমানদের ঈমানী চেতনার সামনে কোনো বাধাই টেকেনি। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে বা রিকশা-ভ্যানে করে লংমার্চে অংশগ্রহণ করে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মতিঝিলের শাপলা চত্বর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। পশ্চিমে দৈনিক বাংলা, উত্তরে ফকিরাপুল ও দক্ষিণে দৈনিক ইনকিলাব পর্যন্ত শুধুই মানুষের ঢল। জিয়াউর রহমানের জানাযার পর ঢাকায় এতবড় জনসমুদ্রের দৃষ্টান্ত আর পাওয়া যায় না।
অতঃপর পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ৫ মে ঢাকা অবরোধ ও মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগীয় সম্মেলনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে লংমার্চ ও সমাবেশ শেষ করা হয়। উল্লেখ্য যে, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের মুখে শাহবাগীদের আস্ফালন ক্রমশ স্তিমিত হতে থাকে।
মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন জেলায় অত্যন্ত সফল কর্মসূচি পালনের পর ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কওমি মাদরাসার ছাত্রসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ লাখো জনতা ঢাকায় এসে উপস্থিত হন। ঢাকার ছয়টি পয়েন্টে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ শুরু হয় সকাল থেকেই। সড়কপথে রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। দুপুরের দিকে সরকার হেফাজতকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দিলে হেফাজত কর্মীরা অবরোধ ছেড়ে দলে দলে মতিঝিল অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু বিপত্তি বাধে পল্টন এবং গুলিস্তান এলাকায়। এখানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা মতিঝিলমুখী মিছিলসমূহকে বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ৪-৫ জন। রাত ৮টার দিকে হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশ মঞ্চের দিকে অগ্রসর হওয়ার কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তার অজুহাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এরপরই হেফাজত নেতারা শাপলা চত্বরে সকাল পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগের দিন একই স্থানে সমাবেশ করে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন ও হেফাজতের পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণা করেন এবং ৫ মে সন্ধ্যায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি মারফত দলীয় কর্মীদের হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এতে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ে। রাত ১০টায় হেফাজতকে শাপলা চত্বর ত্যাগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু হেফাজত নেতারা তাতে সাড়া না দিলে সরকার পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সাড়ে সাত হাজার সদস্য মোতায়েন ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে সকল মিডিয়াকে সরিয়ে দিয়ে রাত আড়াইটার দিকে চালানো হয় পৈশাচিক আক্রমণ ‘অপারেশন ফ্লাশআউট’। শাপলা চত্বরকে ৩ দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং একদিক খোলা রেখে হাসিনা সরকার ঘুমন্ত, ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত জনতার ওপর বর্বরোচিতভাবে হামলা চালায়। মুহুর্মুহু গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও গরম পানির তোপের মুখে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে শাপলা চত্বরে পরিণত হয় বাংলাদেশের কারবালায়।
আধ্যাত্মিক চেতনার উদ্বোধন
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার সমাবেশ ঘটেছিল। দল-মতের ছোট-খাটো মতপাথর্ক্য ভুলে তারা সমবেত হয়েছিলেন এক কাতারে। হেফাজতের তৎকালীন আমীর মুফতি শাহ আহমদ শফীর সাথে সেই সময় কথা হয়েছিল এ প্রতিবেদকের। তিনি একটি স্বপ্নের কথা তাকে জানিয়েছিলেন। তিনি হাসিনার কারাগারে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা এবং আলেমদের বন্দি থাকার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখি, রাসূল সা. আমাকে বলছেন, এখনো তোমরা কেন প্রতিবাদ করছো না। ইসলামের খাদেমরা কারাগারে, তারপরও তোমরা চুপ করে আছো। আদালতে আখিরাতে তোমরা কী উত্তর দেবে?’ তিনি হেফাজতে ইসলামের এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের সকল দল-মতের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদের পথ দেখিয়ে গেছেন। তার পরবর্তী কিছু কাজ নিয়ে অনেকে বিতর্ক তুললেও বাস্তবতা হলো, তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। তাকে ব্যবহার করে তার আশপাশের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য তাকে এমন বিতর্কে জড়িয়েছিল বলে এ প্রতিবেদক মনে করেন। কারণ সেই সময় মোবাইলে তার সাথে কথা বলে প্রতিবেদকের এমনটাই মনে হয়েছে।
শাপলার রক্ত বৃথা যায়নি। শহীদের রক্ত কোনোদিন বৃথা যায় না। ২০২৪-এর ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবের অন্যতম পাটাতন তৈরি হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে। মাওলানা মোহাম্মাদ আলী জওহারের ভাষায়, ‘কাতলে হুসাইন আসল মে মারগে ইয়াজিদ হ্যায়, ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালা কে বাদ।’ হুসাইনের শাহাদাতবরণের ঘটনা আসলে ইয়াজিদেরই মৃত্যু, ইসলাম প্রতিটি কারবালার পর পুনরুজ্জীবিত হয়। সত্যি, ২০২৪-এর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এ সত্যেরই প্রতিফলন।