জনতুষ্টি নয়, প্রয়োজন কল্যাণকর উন্নয়ন কার্যক্রম
২৯ মে ২০২৫ ১০:২৩
॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
বিশাল জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। জনসংখ্যার বিশাল অংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে। বাকিদের অবস্থাও ভালো না। বলা যায়, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বিগত ৫৪ বছরেও দেশের অধিকাংশ জনগণের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি এ রাষ্ট্র ও সরকার। মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষ আছে, যাদের আর্থিক সংকট নেই। আর একটি অংশ আছে, যাদের রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়, যা কল্পনাকেও হার মানায়। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তকে বিশ্বাস করলে বা তার ওপর ভিত্তি করা হলে জনগণের আর্থিক সমস্যা বা সংকট আছে বলেই মনে হবে না। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ও উপাত্ত প্রায়ই টেবিলে বসে বানানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে পরিসংখ্যান ব্যুরো জনসংখ্যা থেকে শুরু করে মাথাপিছু আয়, জিডিপি ও আমদানি-রফতানি সবকিছুই প্রধানত ফ্যাসিস্টের নির্দেশে তৈরি করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশে পরিসংখ্যান ব্যুরো যেসব তথ্য-উপাত্ত তৈরি করেছে, তার সাথে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার কোনো মিল নেই। বিশেষ করে সাধারণ জনগণের আর্থিক সক্ষমতা, আয়, ব্যয় ও জীবনযাত্রার যে চিত্র তুলে ধরা হয়ে থাকে, তা অতিরঞ্জিত তো বটেই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তবতার সাথে কোনো মিলই নেই। এমনভাবে প্রচার প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে, যেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো অভাব-অনটন নেই বললেই চলে। এসব কারণে এখন যারা সরকারে আছেন, তারাও ফ্যাসিস্টদের তৈরি তথ্য-উপাত্ত দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে ।
তথ্য-উপাত্ত সঠিক ও যথাযথভাবে অবহিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে দেশের আপামর জনসাধারণকেও ভালো করে জানতে হবে। বিশেষ করে সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা কোন অংশের কোন মাত্রায় আছে। কত অংশ প্রকৃত অর্থেই দারিদ্র্যসীমার নিচে, হতদরিদ্র কত ভাগ, বস্তিবাসী কত ভাগ ইত্যাদি পরিসংখ্যান সরকারের কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে। তথ্য-উপাত্ত সঠিক ও যথাযথ না হওয়ায় রাষ্ট্র ও সরকারের যারা নীতিনির্ধারক, তাদের পক্ষে দেশের জন্য সঠিক নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়নে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যার কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বলেই মনে হচ্ছে।
যেমন এবারের ঈদুল আজহায় অন্তর্বর্তী সরকার দশদিন ছুটি ঘোষণা করেছে। সাধারণত ঈদুল আজহায় মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোয় একদিন থেকে তিনদিন ছুটি দেয়া হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। তিন দিন, কোনো কোনো সময় শুক্রবার ও শনিবার মিলিয়ে চার-পাঁচ দিন হয়েছে। কিন্তু কোনো সময়ই দশ দিন ছুটি দেয়ার কোনো রেকর্ড নেই। অথচ গত ৬ মে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এবার দশ দিন ছুটির এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু আগামী ৫ জুন থেকে। টানা ১০ দিন ছুটি থাকবে। অর্থাৎ ছুটি শেষ হবে ১৪ জুন। এ বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরেও ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ছিল। ঈদ উপলক্ষে আগেই পাঁচ দিন টানা ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার।
মুসলিমদের বড় দুই উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল আজহা। এটা শুধু বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য। প্রতিটি মুসলিম দেশেই দুই ঈদে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়ে থাকে। মুসলিম দেশগুলোয় মুসলিমরা এ সরকারি ছুটি পেয়ে থাকেন। অবশ্য প্রাচ্য-পাশ্চাত্য তথা ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ এবং চীন ও জাপানসহ সারা বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলোয় কিন্তু মুসলিমরা ঈদের দিন কোনো ছুটিই পাচ্ছে না। অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের কোনো দেশেই ঈদুল আজহার ছুটি দশ দিন নয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ ইরান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলোয় ঈদের ছুটি একদিন থেকে পাঁচ দিন। ইরানে ঈদুল ফিতরে দুই দিন ও ঈদুল আজহায় এক দিন ছুটি দেয়া হয়ে থাকে। তেহরান রেডিওর সাংবাদিক আশরাফুর রহমান তেহরান থেকে সোনার বাংলার সাথে আলাপে বলেছেন, ঈদ যেমন খুশির দিন, তেমনি এটি ইবাদতেরও দিন। পাকিস্তানেও এবার ঈদুল আজহায় পাঁচ দিন ছুটি দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়ও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় দুই দিন ছুটি দেয়া হয়ে থাকে। মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করেন বাংলাদেশি নাগরিক ওয়াহেদ ফারুকী কুয়ালালামপুর থেকে সোনার বাংলার সাথে আলাপকালে বাংলাদেশে ঈদুল আজহায় দশ দিন ছুটির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, আপনারা তো ধনী দেশ, তাই এতদিন ছুটি কাটাবেন। তিনি বলেছেন, এতে করে রেমিট্যান্স পাঠাতে তো সমস্যা হবে।
সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজে গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গত ঈদুল ফিতরে সরকার চার দিন ছুটি ঘোষণা করেছিল।
সেখানে অবশ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটির কথা উল্লেখ নেই। সৌদি গেজেটের গত বছরের ১৬ জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সৌদি মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই ঈদে চার দিন ছুটি দেওয়া যাবে। প্রয়োজনে এক দিন বাড়ানো যেতে পারে।
গালফ নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুয়েতে গত ঈদুল ফিতরে বাহরাইনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল তিন দিন।
সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, অতীতে কোনো সরকারের আমলে এত বেশি ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে তার জানা নেই। বেশি ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য খুশির খবর। দীর্ঘ ছুটি যদি রাষ্ট্রের উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে, তাহলে সেটা ভালো খবর হবে না।
কোনো মহল থেকে দাবিও করা হয়নি যে, আমাদের ঈদে দশ দিন ছুটি দিতে হবে। কিন্তু কেন কী কারণে উপদেষ্টা পরিষদ একটি লম্বা ছুটি দিয়েছে, তার কোনো যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এ ছুটি কাদের সুবিধার জন্য এবং এ সুবিধাভোগীরা দেশের মোট জনসংখ্যার কত ভাগ, তা কি উপদেষ্টা পরিষদ অবহিত। শুধুমাত্র সরকারি চাকরি করে তাদের জন্যই এ দশ দিন ছুটি দেয়া হয়েছে? তারাই কি দেশের একমাত্র জনগণ। অবশ্য তাদের সাথে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বীমা এ ছুটি দেবে, বলা যায় দিতে বাধ্য হবে। সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে যখন বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ থাকবে, তখন ব্যাংকগুলো খোলা রাখার কোনো সুযোগ নেই। এ দশ দিন ছুটির কারণে দেশের বেসরকারি অফিসগুলো ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের উৎপাদনমুখী কারখানাগুলোও দশ দিন ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ তখন শ্রমিক কর্মচারীরা বলবে সরকার ঈদে দশ দিন ছুটি দিয়েছে আমাদের ছুটি দেয়া হবে না কেন? তখন বাধ্য হয়ে রফতানিমুখী উৎপাদন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও দশ দিন ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছে।
কিন্তু উৎপাদনমুখী; বিশেষ করে যারা রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দশ দিন বন্ধ থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দেশের রফতানি কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে- এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা চিন্তা করছেন। তাদের কাছে কোনো সমীক্ষা আছে কি দুই ঈদে উনিশ দিন ছুটির কারণে দেশের উৎপাদন, রফতানি থেকে শুরু করে দেশের মোট জিডিপির কী পরিমাণ ঘাটতি পড়বে বা কমবে।
সরকারের কি খেয়াল আছে দেশের শিল্পকারখানাগুলো কী অবস্থা। আমরা একটি পত্রিকার একটি রিপোর্ট থেকেই একটি চিত্র দেখতে পারি। দৈনিক কালের কণ্ঠের ২৭ মে প্রথম পৃষ্ঠার প্রধান শিরোনাম ‘মৃত্যুমুখী শিল্প, বেকারত্ব চরমে’। খবরে বলা হয়, “সংকটে পুরো অর্থনীতি। মন্দায় ব্যবসা-বাণিজ্য। অস্তিত্ব সংকটে শিল্প-কারখানা। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা, ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে চরম চাপে ব্যবসা।
এমন বহুমুখী চাপে নাস্তানাবুদ দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, ৬০ শতাংশের বেশি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে না। ব্যাংকে সুদ বেড়েছে, গ্যাস নেই, আইনশৃঙ্খলার অবনতিÑ সব মিলিয়ে শিল্প বন্ধ হওয়ার পথে। সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎ ঠিকমতো দিতে পারছে না।
অথচ নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এদিকে গত এক বছরে বেকার বেড়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
মূলধন ঘাটতির কারণে বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
টেক্সটাইল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল গত ২৫ মে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘২০২৫ সালে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটাকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি। শিল্প বাঁচাতে না পারলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে।
শিল্পবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিল্প-কারখানার গলাটিপে মেরে ফেলা হচ্ছে। গ্যাস সংকটে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চলতি মূলধন সংকুচিত হয়েছে। আগামী ঈদে কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিতে পারবে কি না, সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের কারখানা লে-অফ হচ্ছে। কিছুদিন পর মানুষ রাস্তায় নামবে। আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে, যদি আপনি শিল্পকে বাঁচাতে না পারেন। আর দেশি উদ্যোক্তাদের জিন্দা লাশ বানিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এনে কর্মসংস্থান করার চিন্তা করা হচ্ছে’।”
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান একটি সংবাদপত্রকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। এ দেশে টানা ১০ দিন ছুটি থাকলে সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। সরকারকে বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আবুল কাসেম খান আরও বলেন, ছুটির ১০ দিন যদি ব্যাংক বন্ধ থাকে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সেটা হলে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।
অপরদিকে সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত, কল-কারখানা মিলিয়ে কত কোটি লোক চাকরি করে আর কত কোটি লোক নো-ওয়ার্ক নো-ইনকাম অর্থাৎ কাজ না করলে আয় নেই এ ধরনের কাজ করে তার কি কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে রয়েছে। সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে কত কোটি লোক ও পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে যাবে- এটার কি কোনো সমীক্ষা করা হয়েছে। যেমন রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রতিটি বড় শহর, জেলা ও উপজেলা শহরে লাখকোটি মানুষ আছে, যারা ঠেলাগাড়িতে করে সাধারণ নিত্যপণ্য বিক্রি করে। একদল আছে- যারা হকারি করেন। একদল রাস্তার পাশে দোকান করে মালামাল বিক্রি করে। আর একদল আছে রিকশা চালান, আর এক গ্রুপ আছে সিটি বাস সার্ভিসে চালক ও সহকারীর কাজ করেন। এ সংখ্যাটা কত কোটি তার কি কোনো তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে আছে? অফিস-আদালতগুলো বন্ধ থাকলে তাদের আয় রোজগার শূন্যে নেমে আসে। সরকারের কাছে যদি দিনে আনে দিনে খায়Ñ এমন লোকদের সঠিক তথ্য-উপাত্ত থেকে থাকে, তাহলে তাদের বিষয়টি চিন্তা করে নোটিশ নেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু দশ দিন ছুটি দিতে গিয়ে সরকার এ বিষয়টি চিন্তাভাবনা করেছে বলে মনে হয়নি। আমাদের মনে হয়েছে, এ যেন এক তুঘলকী কারবার, একটা প্রস্তাব এলো আর তা পাস করে দশ দিন ছুটি ঘোষণা করে দেয়া হলো। অথচ বাংলাদেশে খেটে খাওয়া মানুষ; বিশেষ করে যাদের একদিন কাজ না করলে পরের দিন খাওয়া জোটে না, তাদের ব্যাপারে কোনো চিন্তাই করা হয়নি বলে মনে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এত বড় ছুটি যৌক্তিক নয়। সরকারের এটি একটি জনতুষ্টিমূলক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে। মুসলিমপ্রধান অন্য দেশগুলোয় এত বড় ছুটি নেই।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা বড় ছুটি কাটাবেন, বেসরকারি খাতে কম ছুটি থাকবে- এটাও এক ধরনের বৈষম্য।
জনতুষ্টিমূলক সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ আপাত খুশি হতে পারে, কিন্তু আখেরে দেশ, জাতি ও জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সার্বিক অবস্থা ও বিষয়াদি চিন্তা করেই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়ভারটা আর একটু বেশি, কারণ তারা কিন্তু সাধারণ জনগণের অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তাদের সাধারণ জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট তথা দায়বোধটা আরও বেশি। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দিনগুলোয় দেশের বাস্তবতাকে চিন্তা করে উন্নয়নমুখী কল্যাণকর কর্মসূচি, রাজনীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।