রাজনৈতিক ঐক্যই সংকট নিরসন করতে পারে

মতিউর রহমান আকন্দ
২৯ মে ২০২৫ ০৯:৪৩

॥ মতিউর রহমান আকন্দ॥
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংকট খুব স্বাভাবিক ঘটনা। বিরাজমান অনেক সংকটের মধ্যে রাজনৈতিক সংকটই প্রধান। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সর্বত্রই অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ, অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের সাড়ে ৯ মাসের মাথায় দেশ আরও একটি নতুন সংকটে নিপতিত হয়। সংকটের সূত্রপাত ১৩ মে থেকে টানা ১০ দিনের আন্দোলনসহ জনৈক উপদেষ্টার উসকানিমূলক বক্তব্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত একটি রিট ও সেনাপ্রধানের বক্তব্য এবং প্রধান উপদেষ্টার পরিস্থিতি সম্পর্কে অসন্তুষ্টির ক্ষোভ প্রকাশকে কেন্দ্র করে। দেশের উচ্চ আদালতে রিটের শুনানিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক কমসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচির ফলে রাজধানীতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। রায়ের দিন উচ্চ আদালতের চতুর্দিকে বিএনপির সমর্থকগণ অবস্থান গ্রহণ করে। হাইকোর্ট চত্বরে সেনাবাহিনীর গাড়ি মোতায়েন করা হয়। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে অমার্জিত ভাষায় বক্তব্য দেয়া হয়, যা চলমান পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
গত ২১ মে সেনাপ্রধান সেনা অফিসারদের সমাবেশে কিছু বক্তব্য রাখেন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, ‘মব’ মুভমেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, মানবিক করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত বিষয়ে সেনাপ্রধান বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দেশের চলমান সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, তা আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন এক অবস্থায় আছি, যেখানে আমার কোনো অভিভাবক নেই’। সেনাপ্রধানের এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। দেশের সেনাপ্রধান যখন নিজেকে অভিভাবকহীন বলে মন্তব্য করেন, তখন উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে দেশের অভিভাবক দেশের জনগণ। আর জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণই অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সমর্থন নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেন। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই দেশের অভিভাবক। কোনো অভিভাবক নেই বলে মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে মর্মে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি রাজনৈতিক সমাবেশ করে নির্বাচন কমিশন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা পরিষদের গত ২২ মে-এর বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তার দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আর দায়িত্ব পালন করবেন না বলে ঘোষণা দেন মর্মে জানা যায়। ২২ মে বিকেলে বিএনপির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানায়। অন্যথায় বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যদি পদত্যাগ করতে চান, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে। রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বে বিকল্প বেছে নেবে। এ পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়’। এসব পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণে রাজনীতিতে সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার পর পরিস্থিতি উত্তরণে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান। আমীরে জামায়াতের এ বক্তব্য মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
আমীরে জামায়াত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে প্রদত্ত স্ট্যাটাসে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।
গত ২৪ মে উপদেষ্টা পরিষদ একনেকের বৈঠকে মিলিত হয়। এ বৈঠকে ১৯ উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেননি তিনি চলে যাবেন। তিনি অবশ্যই থাকছেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে আমরা এখানে আসিনি। আমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, উনি বলেছেন, ‘আমরা যে কাজ করছি, আমাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ দায়িত্ব ছেড়ে যেতে পারবো না। এটা তো বড় দায়িত্ব- এর ওপর নির্ভর করবে দেশের ভবিষ্যৎ, দেশের বহু বছরের ভবিষ্যৎ।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমরা আহ্বান জানাবো গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সকল শক্তিকে, রাষ্ট্রীয় সকল সংস্থাকে আমাদের এ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য।
গত ২৪ মে সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে মিলিত হন বিএনপির ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ও তিন উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করেন।
রাত পৌনে ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বসেন আমীরে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আমীরে জামায়াত বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েকদিনে হঠাৎ যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা কিছুটা কমেছে। সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন বাকি সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন কবে হবে, তা স্পষ্ট করা দরকার। ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে জনগণের বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়া একটি স্বস্তিদায়ক নির্বাচন হতে পারে।
উপদেষ্টা পরিষদের একটি বিবৃতি জাতীয় দৈনিকে প্রচারিত হয়। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে, ‘শত বাধার মধ্যেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’ ২৪ মে ইস্যুকৃত বিবৃতিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বরাত দিয়ে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।
গত ২৪ মে ও ২৫ মে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা বড় যুদ্ধাবস্থায় আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য যতরকম পারে চেষ্টা চলছে। এখন থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের ১ তারিখেও যাবে না। ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে আরও বলেন, বিভাজন থেকে আমাদের উদ্ধার পেতে হবে। ঐকমত্য থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু দাঁড়াতে পেরেছি, এটি যেন সামনের দিকে যায়। অভ্যুত্থানের কারণে মহাসুযোগ পেয়েছি ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশকে টেনে আনার। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশের ভেতর এবং বাইরেÑ আমরা যাতে এগোতে না পারি। যাতে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। আবার যাতে গোলামিতে ফেরত যাই। তিনি বলেন, সবাই একসাথে বসায় সাহস পেলাম। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে আমি অপরাধবোধ করবো। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি যতদিন আছি, দেশের কোনো অনিষ্ট হবেÑ এমন কোনো কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। নিশ্চিত থাকেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জনগণের মাঝে নতুন করে আস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে এবং প্রধান উপদেষ্টার অসন্তুষ্টির বিষয়ে জনগণের মধ্যে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল তা অনেকটাই উপশম হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ভারসাম্যপূর্ণ ও সংকট নিরসনে আন্তরিক ভূমিকা, রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকা জনগণের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়-
১. স্বৈরাচারী ব্যবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করার জন্য সংস্কারের কাজ ব্যতিরেকে নির্বাচনের উদ্যোগ জাতির জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। সংস্কার সম্পর্কে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। বিএনপি সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই নির্বাচন ও সংস্কার একসাথে হতে পারে বলে মন্তব্য করে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জোর দাবি জানায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন হতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যেই। হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে হলেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে হতে হবে সোচ্চার। অথচ প্রধান উপদেষ্টা বার বার ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে আসছেন। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে আস্থা না রেখে নিজেদের ঘোষণা মোতাবেক নির্বাচনের দাবি করায় রাজনীতিতে সংকটের অবতারণা হয়।
২. সেনাপ্রধান নির্বাচন, সংস্কার ও মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অন্তর্নিহিতভাবে প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে যায় বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
৩. গণহত্যার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্নের জন্য এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন ছিল তা বিনষ্ট হওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
৪. প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিষয়ে উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচারিত হওয়ায় বাংলাদেশের পরিবেশ উত্তপ্ত রূপ ধারণ করে।
৫. এরই মধ্যে ভারতের পুশইন ও সীমান্তবর্তী এলাকায় হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
৬. বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা ও রেজিস্ট্রেশন স্থগিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের লুকিয়ে থাকা অপশক্তি দেশে অস্থিরতা তৈরির ইন্ধন জোগাতে থাকে।
৭. করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে জনগণের মধ্যে দেশের নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর এ বিষয়ে ‘নো’ বলেছেন।
৮. দেশের কিছু কিছু গণমাধ্যম সেনাপ্রধানের বক্তব্যের আংশিক ফলাও করে প্রচার করায় সেনাপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন বলে ধারণা তৈরি হয়।
উল্লেখিত কারণে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের মাঝে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক সংকটকে প্রশমিত করে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের চাইতে কেউ কেউ উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ভূমিকা রাখেন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সময়োচিত ও বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ায় জনগণ আশ্বস্ত হয়েছে যে, ইসলামপন্থী দলসহ ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর। ফলে পর্দার আড়ালে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাদের চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
জনগণ, ছাত্রসমাজ ও দেশপ্রেমিক শক্তি এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব বলে আবারও প্রমাণ হলো।