দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন
৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া॥
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ স্থিতিশীল। তেমন কোনো রাজনৈতিক হানাহানি বা অস্থিরতা নেই। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দলের উদ্যোগ ও আয়োজনে সভা, সমাবেশ, সম্মেলন করছে। বিগত ৫৩ বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন স্থিতিশীল পরিবেশ দেখা যায়নি। দেশ ও জাতির জন্য এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ। তবে রাজনৈতিক ময়দানে প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখা গেলেও নীরব ও অঘোষিত সন্দেহ-সংশয় এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কানাঘুষা চলছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে নয়া আঁতাত, নতুন সমীকরণ তথা ফ্যাসিস্টদের সাথে গোপন সমঝোতার মতো ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে ক্ষমতার জন্য ষড়যন্ত্র করার অতীত ইতিহাস রয়েছে। এ ধরনের গোপন আঁতাত ও ষড়যন্ত্র ভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দল ও আদর্শের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়েও ভয়ঙ্কর। অপরদিকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রকাশ্যেই একটি বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে। আর তা হচ্ছে ঐক্য; বিশেষ করে ফ্যাসিস্টবিরোধী ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ঐক্য। রাজনৈতিক নেতারাও বক্তৃতা-বিবৃতিতে ঐক্যের কথা বলছেন। গণমাধ্যমেও এ ঐক্য নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। এ ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে কেন, তার মানে ফ্যাসিবাদবিরোধী দল ও দেশপ্রেমিক শক্তির মধ্যে অনৈক্যের কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে। তাই ফ্যাসিবাদী শক্তি গণমাধ্যম; বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করেছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ ছিল তাই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি হচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রনেতৃবৃন্দ, মধ্যমপন্থি ও বাম রাজনৈতিক দলসমূহ, ইসলামী দলগুলোসহ আপামর সাধারণ জনগণ। ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন ঐক্যের প্রধান আর একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি। উল্লেখিত রাজনৈতিক ও আদর্শিক দল এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি বিষয়ে একমত যে, তারা বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদী শাসন ও ফ্যাসিস্ট ফিরে আসুক- এটা চায় না। তারপরও কেন তাদের মধ্যে একটা অনৈক্যের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এ অনৈক্যের সুরের পেছনে একটি ষড়যন্ত্র ও সন্দেহ কাজ করছে। দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব কাজে লাগবে না। আর এ ঐক্য থাকতে হবে অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসন, ছাত্রনেতা, বিএনপি ও জামায়াত এবং আপামর জনগণের মধ্যে।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতিকে এগিয়ে নিতে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য লাগবে। এ বিষয়ে সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের দূরত্ব কাম্য নয়। তাই বিরোধের কোনো কারণ নেই। সবাইকে বরং বুঝতে হবে ঐক্যের বিকল্প নেই।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বৈঠকে আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন-সার্বভৌম টেকসই গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, বিএনপি ও ছাত্রনেতারা নির্বাচনকেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার বিষয়েও অনাগ্রহী নন। বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের অথবা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় । তিনি বলেছেন, ‘এটি গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাদের দোসরদের কতটা উৎসাহিত ও বেপরোয়া করে তুলতে পারে, তার কিছুটা প্রমাণ আমরা গত কয়েক দিনে পেয়েছি।’
আসিফ নজরুল গত ২৬ জানুয়ারি রোববার ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘তিনি যতটুকু জানেন আর বিশ্বাস করেন, তার মধ্যে একটি হলো, বিএনপি ও ছাত্রনেতারা নির্বাচনকেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার বিষয়েও অনাগ্রহী নন। এর ধরন ও ফর্মুলা আলোচনাসাপেক্ষ।’
আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘গত দুদিন ফেসবুক ছেয়ে গিয়েছিল অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা ও ছাত্রনেতাদের পলায়নের গুজবে। এ গুজবের উন্মত্ততায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নাশকতা করার চেষ্টা করেছে, এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আতঙ্কিত হয়ে আমার কাছে দু-একজন ফোন করেছেন ঘটনা কী জানার জন্য।’
এ পর্যায়ে আসিফ নজরুল যতটুকু জানেন আর বিশ্বাস করেন, এমন চারটি বিষয় লিখেছেন। সেগুলো হলো ক. বিএনপি ষড়যন্ত্র বা ১/১১ ধরনের কিছুতে আগ্রহী নয়। খ. ছাত্রনেতারা সরকারে থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না বা এতে যোগ দিতে যাচ্ছেন না। গ. জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি রাজনৈতিক দলিল এবং এটি প্রণয়নে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মতামত আন্তরিকভাবে প্রতিফলনের ইচ্ছা ছাত্রনেতাদের রয়েছে। ঘ. বিএনপি ও ছাত্রনেতারা নির্বাচনকেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার বিষয়েও অনাগ্রহী নন। এর ধরন ও ফর্মুলা আলোচনাসাপেক্ষ।
আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘তাই বিরোধের কোনো কারণ নেই। সবাইকে বরং বুঝতে হবে ঐক্য ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। গণহত্যাকারীদের দল আওয়ামী লীগের হাতে রয়েছে লুটের লাখ লাখ কোটি টাকা, অনেক অন্ধ স্তাবক ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক, তাদের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাশালী ভিন্ন রাষ্ট্র। এদের রুখতে হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে মনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ ‘আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে। কিন্তু তা বাংলাদেশের শত্রুদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে ওঠার পর্যায়ে যেন না যায়,’ লিখেছেন আইন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল তার ফেসবুকে যে চারটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, তন্মধ্যে দুটিই হচ্ছে ষড়যন্ত্র ও সন্দেহ-সংশয়। একটি হচ্ছে বিএনপির ষড়যন্ত্র বা ১/১১ ধরনের একটি সরকার। আসিফ নজরুল এ বিষয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিএনপি এ ধরনের কিছুতে আগ্রহী নয়। অপরটি হচ্ছে ছাত্রনেতাদের সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করা নিয়ে। এ বিষয়েও তিনি তার ফেসবুকে স্পষ্ট করেই বলেছেন, সরকারে থেকে ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না বা এতে যোগ দিচ্ছেন না। কিন্তু রাজনৈতিক ময়দানে দেশপ্রেমিক এ দুটি শক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার করে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ সংশয় তৈরি করে জনমনেও একটি অনাস্থা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চলছেই বলে মনে হচ্ছে। আর এসব করা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দোসরদের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। জাতি সামনে এগোতে চায়। জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য লাগবে।’ তিনি গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুড়িগ্রাম জেলা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলামগীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমীর রেজাউল করীম এক বৈঠকে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো পরস্পর আঘাত করে কথা না বলাসহ ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছেন ।
রাজনৈতিক ময়দানে যখন দেশপ্রেমিক শক্তির মধ্যে অনৈক্যের সুর বাজছে, তখন ফ্যাসিবাদী শক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ছোবল দেয়ার সাহস দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তি সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার সাহস দেখাচ্ছে। অপরদিকে বিদেশি গণমাধ্যমে খুবই নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা শুরু করেছে। জাপানি একটি পত্রিকায় একটি মতামত নিবন্ধে লেখা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পতন ঘটানোর চেষ্টা করছে।
‘নিক্কেই এশিয়া’ নামের জাপানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘ঢাকায় ভারতীয় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে কাজ করা একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেছেন, অন্তর্নিহিত স্বার্থ ও মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে এ সরকার অনিবার্যভাবে ব্যর্থ হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল এ সরকারের বিরোধিতা করছে এবং এটিকে পতনের চেষ্টা করছে।
ঢাকায় একটি বড় আন্তর্জাতিক ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল সমস্যা হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। পুলিশ পুরোপুরি কার্যকর নয়, প্রশাসন বা বিচার বিভাগও নয়। অন্তর্র্বর্তী সরকার আগের শাসনামলে যাদের স্বার্থ ছিল তাদের সবাইকে সরাতেও পারছে না।
লুৎফে সিদ্দিকী ইউবিএস-এর লন্ডন অফিসে একজন ব্যাংকার ছিলেন। এখন তিনি দেশে ফিরে মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ডিপ স্টেট বাস্তব। আগের শাসনামল থেকে সর্বত্র রাজনৈতিক ইমপ্লান্ট রয়েছে। তারা কেবল পোশাক পরিবর্তন করেছে। আমলারা সবকিছু ধীর করার চেষ্টা করছে। তবুও আমরা কর্তৃত্ববাদী হতে পারি না।
২০২৫ সালের জন্য অর্থনীতিবিদরা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। একদিকে দুর্বল হচ্ছে মুদ্রা; অন্যদিকে কমছে রিজার্ভ। চাপ রয়েছে মূল্যস্ফীতির।
তিনি বলেন, ‘অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশ থেকে নতুন করে বিনিয়োগও আসছে না। অতীতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে তেল ও গ্যাসশিল্প থেকে। দীর্ঘমেয়াদি যে পরিপ্রেক্ষিতের প্রয়োজন তা খুঁজে পাওয়া কঠিন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সহজ কোনো উত্তর নেই।’
বাংলাদেশের জাগোনিউজসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ায় ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে। নিক্কেই এশিয়া এটা কত তারিখ প্রকাশ করেছে তা জাগোনিউজে বলা হয়নি। সোনার বাংলায় ঐ প্রতিবেদনটির মাত্র পাঁচটি প্যারা প্রকাশ করা হয়েছে। নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য মেসেজ রয়েছে। এখানে প্রকাশিত প্রথম প্যারাটিতেই নাম প্রকাশ না করা এক সাংবাদিকের একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। ঐ সাংবাদিককে স্থানীয় বলা হয়েছে এবং তার একটি পরিচয় আংশিক প্রকাশ করা হয়েছে, তা হচ্ছে তিনি একটি ভারতীয় মিডিয়া হাউসে কাজ করেন। ঐ সাংবাদিকের দেয়া তথ্যগুলো কি সঠিক। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ও তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া আর কোনো দল বর্তমান সরকারের পতনের জন্য কোনো চিন্তা বা আন্দোলন করছে না। অথচ নিক্কেই এশিয়া একজন নাম প্রকাশ ছাড়া এক সাংবাদিকের এমন একটি মন্তব্য প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যম বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মন্তব্য হচ্ছে, নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনটির মধ্যে সত্যতার লেশমাত্র নেই এবং এটা বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন নয়।
একটি রাষ্ট্রে যখন সরকার, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হয়, তখন দেশবিরোধী শক্তি তার সুযোগ নেয়। তারই প্রতিফলন বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও বিদেশি গণমাধ্যমে সরকারের পতন নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ।
এমনি একটি পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রথমত, অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। আর রাজনীতিতে সমঝোতা করে একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছা রাজনীতিতে ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। আধুনিক রাজনীতিতে একটি কৌশল আছে, তা হচ্ছে আর্ট অব কম্প্রোমাইজ (Art of Compromise)। এ আর্ট অব কম্প্রোমাইজ হচ্ছে কোনো বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্ব্ওে সমঝোতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা। দ্বিতীয়ত, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সমঝোতা করেই কাজ করতে হবে। বিশেষ করে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার কার্যক্রম করার চিন্তা করা হচ্ছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সংস্কার নির্বাচনের আগে না পরে- এ বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকার ও ছাত্রনেতৃবৃন্দের যে মতদ্বৈধতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তা নিয়েও একটি সমঝোতায় পৌঁছা দরকার। সর্বোপরি ছোট-খাটো বিরোধ ও দ্বিমত থাকলেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি-জামায়াত ইসলামপন্থি দল ও মধ্যপন্থি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ দেশ প্রেমিক শক্তির মধ্যে যদি কোনোরকম ফাটল ধরে, তাহলে ফ্যাসিস্ট ও দেশবিরোধী শক্তি তার সুযোগ নেবে। রাজনৈতিক অনৈক্য বাড়লে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হবে না। তাই দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থেকেই ফ্যাসিস্ট শক্তির সকল অপকর্ম চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই দেশবিরোধী অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এককথায় দেশকে এগিয়ে নিতে হলে পরস্পরকে সন্দেহ সংশয় থেকে দূরে ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলেই বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।