আলোকে তিমিরে

‘ক্লিন ইমেজের একদল দেশজ কর্মবীর দরকার’

মাহবুবুল হক
২২ মে ২০২৫ ১৭:০৯

লেখক : মাহবুবুল হক,  সিনিয়র সাংবাদিক,কথাসাহিত্যিক ও  কবি।

॥ মাহবুবুল হক ॥
আমাদের আরবান লাইফে ‘ক্লিন ইমেজ’ বলে একটা কথা চালু আছে। ইদানীং এ শব্দ দুটি বেশ চালু হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মহলে। ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে, প্রশাসনে ‘ক্লিন ইমেজের’ মানুষ নেই। ব্যবসার ক্ষেত্রেও কথাটি পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। এ নিয়ে আলাপ করতে গেলে দেখা যায়, ক্লিন ইমেজের মানুষ পূর্বের মতো এখন আর নেই। বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞজন বলেন, আমাদের সমাজে একটা কথা চাউর হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ কোনো যাচাই-বাছাই না করে ঐ কথাটি বিশ্বাস করে এবং যাপিত জীবনের সকল স্তরের আলোচনায় তা উপস্থাপন করেন। পরে সেটা সমাজের মধ্যে সঞ্চারিত হতে থাকে। এটা একদিক থেকে নেগেটিভ; অন্যদিক থেকে অনৈতিকও। আইনে যে বলা আছে অভিযোগ উত্থাপন করলেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ স্বচ্ছভাবে শনাক্ত না হয়। কিন্তু দেখা যায়, নানা কারণে ব্যক্তির বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা স্বার্থের কারণে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মিথ্যা অভিযোগ তুলতে পিছপা হয় না। যে দেশে নিজের ছেলে-মেয়েকে হত্যা করে আপন ভাই, আত্মীয় বা বিপরীত পক্ষকে আসামি করা হয়, সে দেশে এর চেয়ে নমনীয় অপরাধ হরদম হওয়ার কথা, হচ্ছেও তাই। পূর্বের সমাজ যখন আরও একটু শৃঙ্খলার মধ্যে ছিল, তখনো বড় বড় অন্যায় সংঘটিত হয়েছে। সেটা এখনকার মতো ফলাও হতো না, কারণ অনেক। সেসব আমরা সবাই জানি। ডিজিটালের যুগ, মুহূর্তেই সব খবর সব জায়গায় পৌঁছে যায়। আর মজার বিষয় হলো, খারাপ খবরটা দ্রুতবেগে সর্বাগ্রে সঞ্চারিত হয়। আমাদের দেশের কথা যদি বলি, তাহলে এটা তো বলতেই হয়, খবর মানে দুঃখবর। সংবাদ মানে দুঃসংবাদ। আর সমাজের কথা যদি বলি, ‘কে কার মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে’ সেটা সাথে সাথে চাউর হয়ে যায়। কিন্তু গ্রামের একটি ছেলে দেশে বা বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে, সেই শুভ খবরটি দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ে না। প্রথমেই সন্দেহ শুরু হয়, ‘আরে রাখ এসব, আমরা কত শুনেছি, কত দেখেছি। ভালো করে খবর নাও। এত হইচই করার কী আছে’- একজন মোড়ল গোছের ব্যক্তি হয়তো প্রথমেই এমন কথা বলে দিলেন, আর যায় কোথায়, শুভ সংবাদটি ছুটলো না, দৌড়ালো না, সংবাদটি হাঁটতে লাগলো। এই হয়েছে আমাদের সামাজিক অবস্থা ও ব্যবস্থা। এর মধ্যে ক্লিন ইমেজের কোনো ব্যক্তি যদি খবরটি প্রসারিত করার জন্য উদ্যোগ নেন, তাহলে হয়তো সেটা ছড়িয়ে পড়তে পারে, এটা ব্যতিক্রম। আজকাল দেখা যায়, মাঝে মাঝে এ ধরনের উদ্যোগ তরুণরাও গ্রহণ করে। কিন্তু সেখানেও যিনি সংবাদটি ছড়াচ্ছেন, সমাজে তার ইমেজ কী ধরনের বা প্রকৃতির, সেটার ওপর নির্ভর করে।
খ্যাতিমান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের জন্য স্বনামধন্য হেড মাস্টার দরকার হয়। ভালো ইমেজের শিক্ষিত ও সৎ মানুষের প্রয়োজন হয়। অল্প শিক্ষিত মানুষও চাইবেন না, তাদের ঐতিহ্যবাহী স্কুলে একজন সাধারণ শিক্ষিত অনালোচিত ব্যক্তি তাদের স্কুলে হেড মাস্টার হবেন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বলবেন, যার এক্ষেত্রে নামডাক আছে, ভালো মানুষ হিসেবে প্রসিদ্ধি আছে, তেমন লোকই আমরা চাই। এই যে চাওয়া, এটা যে খুব বুঝেশুনে বা চিন্তা করে চাওয়া, তাও নয়। এর মধ্যে স্থানীয় স্বার্থ আছে, প্রতিযোগিতা আছে, আছে আরো নানান কিছু। ‘আমাদের প্রজন্মকে উচ্চশিক্ষিত করতে হবে, নৈতিক মানুষ বানাতে হবে, রাষ্ট্রের সুনাগরিক হতে হবে’- এমন ধরনের মহৎ চিন্তা বা যথাযথ চিন্তা খুব কমই থাকে। মূল বিষয়টা হলো, এখানে হিংসা, প্রতিহিংসা, মাৎসর্য ও পরশ্রীকাতরতা। আমরা এখনো এসবের ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। এটা একটা উদাহরণ মাত্র।
গ্রাম্য জীবনে একসময় এসব খুব ভালো করে অনুভব করা যেত। তিনজন সনাতন ধর্মের কবিরাজ থাকলে যিনি তরুণ ও শিক্ষিত, তাকেই যে মানুষ আগ্রহভরে ডাকতেন, তা কিন্তু নয়। যিনি প্রবীণ, যার যশ-খ্যাতি বেশি, সবাই যাকে দীর্ঘকাল ধরে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, যার একটা ইমেজ গড়ে উঠেছে, তার কাছেই মানুষ শুধু চিকিৎসার জন্য যেত না, পারিবারিক কলহ-বিবাদ, সাংসারিক দুঃখ-দৈন্য, ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা- এ ধরনের বিষয়গুলোর সমাধানের জন্য অর্থাৎ পরামর্শ ও উপদেশের জন্য তার কাছে ছুটে যেত, এটাই হলো ‘ক্লিন ইমেজ’। দেখা যেত, এ মানুষটির সার্টিফিকেট নেই। তার বাপ-দাদা হয়তো ভালো মানুষ ছিলেন। সে কারণেই হয়তো অতীতকাল থেকেই একটা ‘ভালো ইমেজ’ এখানে গড়ে উঠেছে। হঠাৎ করে কোনো ইমেজ গড়ে ওঠে না। ইমেজ গড়ে উঠতে সময় লাগে। পরম্পরা লাগে, অতীত লাগে, লাগে ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, কৃষ্টি, মনন, যাপিত জীবন, শিক্ষা-দীক্ষা, আখিরাত চিন্তা, আরও বহুকিছু।
হঠাৎ বহু জমি কিনে এবং চারপাশে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে যেমন জমিদার হওয়া যায় না, তেমনি হঠাৎ রাজনীতি করে ‘ক্লিন ইমেজ’ তৈরি করা যায় না। বলা ভালো নয়, গত ৬০-৭০ বছরে আমাদের এ ব-দ্বীপে ‘ক্লিন ইমেজে’র লোক কয়জন তৈরি হয়েছে? শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমউদ্দিন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, খান-এ সবুর খান, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবুল মনসুর আহমদ, মাওলানা আকরম খাঁ, হাজী দানেশ, রণদা প্রসাদ সাহা, অধ্যাপক গোলাম আযম, আবুল হাশিম, মনি সিং, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ, জেনারেল এমএজি ওসমানী, আতাউর রহমান খান, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা প্রমুখ। সর্বোচ্চ খ্যাতিমানদের সবার নাম হয়তো এখানে আসেনি। আচ্ছা বলুন তো, এদের মধ্যে কয়জন আছেন ‘ক্লিন ইমেজে’র লোক। আসুন আমরা যার যার মতো গবেষণা করতে থাকি। সেই গবেষণা থেকে পিউরিটান দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব বেশি নাম হয়তো পাওয়া যাবে না। অধিকাংশের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো অভিযোগ আছে। অভিযোগের পরম্পরায় অনেকের বিরুদ্ধে হয়তো মামলা-মোকদ্দমা হয়নি। হলেও সেসব মামলা হয়তো পরবর্তীতে ডিসমিস হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও তো কোনো না কোনো মহান ব্যক্তির কথা মনে হলে আমাদের মনে সেসব অভিযোগের কথা ছবির মতো উদ্ভাসিত হয়। মনে সন্দেহের রেশ থেকে যায় তখন আফসোস হয়, হায় এ মহান মানুষটি যদি ঐটুকু দোষ বা ত্রুটি না করতেন, তাহলে কতই না ভালো হতো। নিশ্চয়ই এখানে বর্ণিত ব্যক্তিদের মধ্যে আপনার-আমার সবার কেউ না কেউ শ্রদ্ধাভাজন আছেন। যাকে আপনি অনুকরণ করেন, অনুসরণ করেন, যাকে আপনি আপনার জন্য মডেল মনে করেন। জনশ্রুতিতে বা কিংবদন্তিতে যা কিছু থাকে, সেটা কখনো মুছে যায় না। দুনিয়ার বড় বড় মানুষের ত্রুটি বের করে নানান রঙে-ঢঙে প্রকাশ করার সিলসিলা চলে আসছে। হাজার হাজার ডলার এ কারণে ব্যয় করা হচ্ছে এবং যতদূর জানা যায়, কুরআন ও বাইবেলের পরে সেসব বই সর্বোচ্চ পরিমাণে নানা ভাষায় বিক্রি হচ্ছে। দুনিয়ায় এক ধরনের তথাকথিত ইতিহাসবিদ আছেন, যারা মানুষের ভালোটা নয়, কোনো বাদশাহীর, কোনো রাজত্বের, কোনো খেলাফতের ভালো দিকগুলো নিয়ে তারা কাজ করে না। তাদের নির্দিষ্ট কাজ হলো নবী-রাসূল, ধর্ম প্রচারক, বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতার স্থপতি, রাষ্ট্রনায়ক, সেনাদক্ষ, শিক্ষাবিদ, আবিষ্কারক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, শিল্পী, চলচ্চিত্রজন, নাট্যকার, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, পার্লামেন্টারিয়ান, সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক, সমাজসেবক প্রমুখের ব্যক্তিগত জীবনের ছবি তৈরি করে এবং তা নানাভাবে বর্ণাঢ্য করে প্রকাশ করে। এটা একটা বিরাট ও বিশাল ব্যবসা। আর এখন তো আমরা সবাই জানি, দুনিয়াব্যাপী ব্যবসা হলো জীবনের মূল চাবিকাঠি। এ চাবিকাঠি যার কাছে আছে, সেই তো এখন দুনিয়ার রাজা।
এখন ভাবুন। একজন ‘ক্লিন ইমেজের’ মহামনীষীর ইন্তেকালে শত শত বছর ধরে যদি তার সত্য অথবা অসত্য কাহিনী বা গল্প মানুষ পড়ে, তাহলে তার ইমেজ কোথায় গিয়ে ঠেকে। ‘ডার্টি ইমেজে’র ব্যক্তিগণ সত্যমিথ্যা মিশ্রিত অজস্র জীবনী প্রকাশ করে আসছে। সেসব নিয়ে আমরা কথা বলছি না। খারাপ মানুষ মন্দ কাজ করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। আবার ভালো মানুষ জীবনে কিছু খারাপ কাজ করে ফেলবে বা খারাপ মানুষ জীবনে কিছু ভালো কাজ করবে- এটাও তো স্বাভাবিক। এসব আলোচনায় আমরা যাচ্ছি না। আমরা একটু এলোমেলোভাবে যে কথাটা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাচ্ছি, তাহলো, আমরা আসলেই দুর্ভাগা। গত ৬০-৭০ বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের জন্য আমরা মাত্র অল্পসংখ্যক ‘ক্লিন ইমেজে’র লোক পেয়েছি। সাধারণত আমরা এসব বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করি, এখানে আমরা তাও করবো না। আমাদের শুধু দুঃখ, কেন আমরা ‘ভালো ইমেজে’র, সুষম ইমেজের, ব্যালান্স ইমেজের, সমন্বিত ইমেজের, সপ্রশংস ইমেজের অভিভাবক পেলাম না। মহান আল্লাহ এক আরব পেনিনসুলায় (উপদ্বীপ) কত শত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন, এ নিয়েও নানা পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সবচেয়ে উন্নত পর্যবেক্ষণ হলো, সে সময় আরব অববাহিকায় মানুষ ভীষণভাবে শিরক করতো, অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষই ছিল কাফির ও মুশরিক। সে কারণে পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তায়ালা সেসব অঞ্চলে তখন একসাথে অনেক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন এবং গবেষণায় এটাও এসেছেন, যেখানে মুশরিকের সংখ্যা কম, সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা কম নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। বিষয়টা খুবই উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। এসব কারণেই ইতিহাসবিদদের একটি অংশ উল্লেখ করেন যে, গত ৫-৬ হাজার বছর পূর্বে এ ব-দ্বীপের মানুষ অনেকাংশে শিরকমুক্ত ছিল। মুশরিক বিচ্ছিন্নভাবে অল্পসংখ্যক ছিল। আমরা ধীরে ধীরে অনেকাংশে মুসলিম হওয়ার মূল কারণ কিন্তু এখানে। আরব অববাহিকা থেকে এ ব-দ্বীপে ইসলাম প্রচার করার জন্য যারা এসেছিলন, তাদের সব জায়গায় যুদ্ধ করতে হয়নি, জোর করে কাউকে ধর্মান্তরিত করতে হয়নি। তাদের কথা, লেবাস, ইবাদত, বন্দেগী, চাল-চলন, ওঠাবসা, দরদ, আন্তরিকতা, মায়া-মমতা, পরিচ্ছন্ন যাপিত জীবন, বডি ল্যাংগুয়েজ, সহজ-সরল লাইফস্টাইল এসব দেখেই এ ব-দ্বীপের তেমন ধরনের মানুষই মুসলিম হয়েছে, যাদের আমরা এখন ভূমিপুত্র বলি বা প্রকৃতির সন্তান বলি, তারা ইসলামকে লুফে নিয়েছিল। মহান আল্লাহর পরিকল্পনায় ন্যায্যতাই আমরা দেখি। কোথায় আরব আর কোথায় ইন্দোনেশিয়া। সেই ইন্দোনেশিয়ার মানুষও আমাদের মতো ইসলামী বিধানে বিপুলভাবে সংযুক্ত হয়েছিল। এখন সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া। তারপরই আমাদের স্থান।
তাহলে দেখা যায়, আমরা অতীতে ভালো ছিলাম, ক্লিন ছিলাম, ধীরে ধীরে আমরা খারাপ হয়েছি, মন্দ হয়েছি। এখন মন্দ হতে হতে এমন পর্যায়ে আমরা পৌঁছে গেছি যে, ভালো-মন্দের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটাও আমরা অনেক সময় অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারি না। আমাদের যারা ঔপনিবেশের দাস বানিয়েছে, কুশাসন করেছে, অশিক্ষিত রেখেছে এবং সমুদ্র দিয়ে ভেসে আসা যত লুটপাটকারী এখানে এসে বসবাস করেছে বা ব্যবসা করেছে, আমরা তাদের অনুবর্তী হয়ে গেলাম। আমরা নিজেদের দিকে তাকাই না। আমরা সবসময় অপরের দিকে তাকাই। একটা কথা আছে না…
‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস
ওপারে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।’
যারা আমাদের উপনিবেশ বানিয়েছে এবং যারা বিভিন্নভাবে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আমাদের সম্পদ লুট করেছে, তারা কিন্তু আমাদের পিছু ছাড়েনি, আমাদের সমুদ্রের কাছাকাছি তারা অবস্থান করে। আমাদের শাসকদের উঁচুমানের নানা সবক দেয়। “আরে সমুদ্র যে কী জিনিস, তোমরা তো তা বুঝ না। তোমাদের লোকেরা তো সমুদ্র দেখতেও আসে না। এটা এভাবে ফেলে রেখে তোমাদের তো লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। এটা শুধু তোমাদের সম্পদ নয়; বিশ্ব মানুষের সম্পদ। তোমাদের সমুদ্রের একটা অংশ আমাদের কাছে বর্গা দাও, তাহলে দেখবে উন্নতি কাকে বলে! তোমাদের গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, প্রোটিনসহ যেসব অভাব এখনো রয়েছে তার সব তোমরা আমাদের কাছে পাবে। ভারতকে তোমরা সমুদ্রের অংশীদারিত্ব দিয়েছ, আমাদের দাওনি। আরে আমরা তো ‘নাসরা’ (খ্রিস্টান) তোমাদের নিকটতম বন্ধু ও ভাই। বিশ্বাস না হয় কুরআন ও বাইবেল দেখ।”
এসব কথা তারা ’৪৭ সাল থেকে বলে আসছে। এতদিন তারা তাদের মনমতো লোক পায়নি। হয়তো আংশিকভাবে পেয়েছে, পুরোপুরিভাবে পায়নি। পাওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করছে। যদি আল্লাহ না করুন পেয়ে যায়, তাহলে তো আমাদের সর্বনাশ হবে। যদিও আমরা অনেক সময় ভাবি সমুদ্রে তাদের অংশীদারিত্ব দেয়ার ফলে যদি ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়, তাহলে সেটাই হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। এ ভাবনাটা মোটেই ঠিক নয়। এ এলাকায় একটা নাসারা (খ্রিস্টান) রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা বহু পূর্বের। যারা এসব পরিকল্পনা করে, তাদের পরিকল্পনা থাকে শুরু থেকেই সুদূর প্রসারি এবং কোনো পরিকল্পনা থেকেই তারা সরে আসে না। তবে একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাই ষড়যন্ত্রকারীদের কূটপরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে পারেন। সে কারণে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের দিন-রাত শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে। এই বলে প্রার্থনা যে, এ দুর্ভাগা দেশের জন্য একদল ‘ক্লিন ইমেজে’র মহান মানুষ যেন তিনি আমাদের মধ্য থেকে বাছাই করে দেন।
লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।