আলোকে তিমিরে : পথ সোজা হলেও মসৃণ নয়

মাহবুবুল হক
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

॥ মাহবুবুল হক ॥
বহু বছর পর হঠাৎ এখানে লিখতে শুরু করেছি। সবই মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা। এর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে যায়নি, অনেক উথালপাথাল হয়েছে। পাঠকের মন, মেজাজ, মনন নানা মাত্রায় বিক্ষিপ্ত হয়েছে। পাঠক যেমন বেড়েছে, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও পত্রপত্রিকার সংখ্যাও প্রচুর বেড়েছে। সাথে সাথে ইন্টারনেট-মিডিয়া এসব হরাইজন্টালভাবে বেড়েছে। পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি, স্ট্যাটিস্টিক থাকেনি। নানাভাবে মোটিভেটেড হয়েছে। পাতালে তথা গভীর অতলে যাওয়ার পাঠক সংখ্যা বহুমাত্রায় কমেছে। পড়ার অভ্যাস কমেছে। দেখার বা শোনার নবতার অভ্যাস বিপুলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সংযোজন-বিয়োজন আধুনিকতার বিষয়। অগ্রসরতার বিষয়। সময়ের অগ্রপথিকরা সেই কাজটা করে যাচ্ছেন। যাকে কেউ বলেন গতিশীলতা। আবার কেউ বলেন প্রগতিশীলতা। এ শব্দের লুকোচুরির মধ্যেও আবার ‘ইজম’ আছে। আছে আদর্শ ও মতবাদ। চিন্তার ব্যবহার, বলার ব্যবহার, লেখার ব্যবহার সবকিছু মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টাচ্ছে। পাঠক যেমন পাল্টাচ্ছে, লেখকও তেমন পাল্টাচ্ছে। সবাই এখন আমরা একই পাটাতনে।
গত দুই সপ্তাহে দুই রকম দুটি পোস্ট দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ দয়া করে প্রকাশ করেছেন। আজ একটু অভিন্ন আঙ্গিকে লেখার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছি। হয়তো আরও একটু এক্সপেরিমেন্ট আমাকে করতে হবে। বর্তমান পাঠক কোন আঙ্গিকের লেখা পছন্দ করছেন, সেটা আমাকে নির্ণয় করতে হবে। পাঠকের রুচি, স্বাদ ও ইচ্ছাকে তো আর উপেক্ষা করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে এ মুহূর্তে সম্মানিত পাঠকদের কাছ থেকে দোয়া চাচ্ছি।
এক. যাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প এবার প্রতিশোধ নিতে পারেন
নির্বাচনকালে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। যাদের নাম এ তালিকায় এসেছে, তাদের মধ্যে আছেন লিজ চেনি থেকে শুরু করে জ্যাক স্মিথ, মার্ক মিলি, হিলারি ক্লিনটন, মার্ক জাকারবার্গ; এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। আমাদের দেশীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, অনলাইন মিডিয়া পলিটিকো এ বিষয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা এসব কথা লিখেছে। প্রতিশোধ হিসেবে যে ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করবেন, তাতে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তার সমালোচক এবং মিডিয়ার সদস্যদের বিচার, তালাবদ্ধ, নির্বাসিত; এমনকি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য প্রতিহিংসামূলক বক্তৃতা দিয়েছেন এবং সামাজিক মিডিয়ায় এসব কথা বলেছেন। তালিকার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্প বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য তাকে গ্রেফতার করা উচিত। এর আগে ওবামার ক্ষেত্রেও একই কথা তিনি বলেছিলেন। ওবামার বিষয়ে তিনি এবারও বলেছেন তার জন্য পাবলিক মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা করতে।
এভাবে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটেশিয়া, জেমস কেমি, মার্ক কুমেরান্তজ, মাইকেল বার্ডসহ বহু বিখ্যাত লোকের নাম উল্লেখ করা যায়। এদিকে খবর বেরিয়েছে যে, ট্রাম্পের বিজয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগবোধ করছে। নির্বাচনের সময় এবং তারপর আমাদের পাঠকরা জানেন যে, ট্রাম্পের বিষয়ে দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ একইভাবে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছিল। তবে তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করেন, এ নির্বাচনের আগে পূর্ববর্তী নির্বাচনের সময়ও ট্রাম্প এ ধরনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম চার বছর সময়কালে বাস্তবে কোনো ধরনের হিংস্রতা দেখা যায়নি। এবারও হয়তো তিনি পূর্বের মতো আচরণই করবেন। তারপরও কথা থেকে যায়।
যারা নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, মানবতা ও গণতন্ত্রের ধারক, বাহক ও পৃষ্ঠপোষক বলে হরদম গণনা করছেন, তাদের সবচেয়ে বড় মোড়লের মুখে এ ধরনের নিকৃষ্ট কথা বা আচরণ কি মানায়? পাশ্চাত্য ছাড়া দুনিয়ার প্রায় বাকি অংশকে তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তৃতীয় বিশ্ব বলে সম্বোধন করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেসব দেশের মানুষকে আনসিভিলাইজড বলে। সেই সিভিলাইজড্ তালিকাভুক্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মতো এ ক্ষুদ্র দেশটিও পড়ে যায়। নির্বাচন নয়, একটা রক্তাক্ত বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকারের প্রধান এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি প্রধান ইসলামিক দলের প্রধান বিপ্লবোত্তর তিন মাসেরও অধিক সময়ে একটি বারের জন্য সিভিলাইজড্ নেশনের সবচেয়ে বড় মোড়ল যে ধরনের প্রতিশোধ গ্রহণের কথা বলে গেছেন, তা তারা ভুলেও উচ্চারণ করেননি। উভয়ে স্বস্তি, শান্তি, ঐক্য এবং শৃঙ্খলার কথা বলেছেন। উভয়ে বলেছেন, এখন দলের কথা নয় ভাবতে হবে দেশের কথা, দশের কথা। অত্যাচারিত, নিপীড়িত, বুভুক্ষু মানুষের কথা। হতাহতদের দুঃসহ ও দুর্বহ প্রত্যাহিত জীবনের কথা। তবে উভয়ই একই সুরে বলেছেন, যারা মানবতার বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে, তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে দূর অতীত থেকে এখন পর্যন্ত আমরাই সভ্য ছিলাম এবং এখনো আমরা আল্লাহর রহমতে সভ্য। দেশ ও বিশ্বের জন্য তথাকথিত এ তৃতীয় বিশ্বের মানুষের দায়দায়িত্ব অনেক বেশি। মধ্যযুগে পাশ্চাত্য এ তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী মানুষের কাছেই সভ্যতা-সংস্কৃতির শিক্ষা ও দীক্ষা নিয়েছিল। পুনরায় তাদের এ বিশ্বের এদিকে তাকাতে হবে। সে কারণেই বর্তমান সরকারের প্রধান বলেছেন, আমরা আর এখন বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকবো না। বিশ্ব এখন আমাদের দিকে তাকাবে।
দুই. বর্তমানের সবল বনাম দুর্বল
বর্তমানে যারা অপেক্ষাকৃত সবল এবং তাদের মধ্যে যারা রাজনীতি ও সরকারে আছেন, দৃশ্যত তাদের অনেকেই বিপ্লবোত্তর সংকট সময়ে প্রকাশ্যে বার বার জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকসহ যারা এখন দুর্বল অবস্থানে আছেন, তাদের ওপর যেন কোনোরকম অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন, হুমকি, ধমকি, মব ট্রায়াল বা মব জাস্টিস বা ফতোয়াবাজি করা না হয়। সবাই যেন নিজ নিজ অবস্থানে নিরুপদ্রবভাবে স্বস্তিময় জীবনযাপন করতে পারে। বহুদলীয় রাজনীতির এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ রাজনৈতিক সম্প্রীতি যেন বজায় থাকে। রাজনৈতিকভাবে বিপক্ষ দলের নেতা ও কর্মীরা যেন কোনোভাবেই অন্যায় আচরণের সম্মুখীন না হয়। দেশব্যাপী সকল শ্রেণির মানুষও যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পায়।
১৯৭১ সালের পর আমাদের দেশে এমন একটা বিপর্যয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে কেউ কেউ সেই কঠিন অবস্থাকে গৃহযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছিলেন। সে সময়ে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যে মূল ভূখণ্ড ও চর এলাকায় জমিজমা, বাড়িঘর নিয়ে যত মামলা-মোকদ্দমা ছিল সেসব সামনে চলে আসে। সালিশ-দরবার, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-কাটাকাটি, খুন-হত্যা সবকিছুই চলে। রাজনৈতিক কারণ ব্যাখ্যার মাধ্যমে সেসব দিকে এখন যাচ্ছি না। ১৯৭২ সালের চিত্র ছিল অনেকটা মুক্তিযোদ্ধা বনাম অমুক্তিযোদ্ধা সংঘর্ষ। দুর্বলের ওপরে সবলের নানা ধরনের অত্যাচার ও অবিচার। এসব কারণে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান একটি বিশেষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যার নাম ছিল ‘আবার তোরা মানুষ হ’। নাট্যকাররা এগিয়ে এসে দারুণ সব নাটক তৈরি করলেন, ‘সুবচন নির্বাসনে’। পরবর্তীতে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। এসব ছিল বড় বড় কাজ। গৃহযুদ্ধের আবহ সৃষ্টি হয়েছিল বলেই দেশ প্রেমিকদের নানা কাজ করতে হয়েছিল।
এবারকার বিপ্লব এবং অভ্যুত্থানকেও অনেকে ২০২৪-এর স্বাধীনতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে সবসময় কেউ না কেউ থাকেন। সবাই সহজে সবকিছু গ্রহণ করতে পারে না। পরস্পরকে মেনে নিতে পারে না। সে কারণে নানা বিপত্তির সৃষ্টি হয়। এবারও স্বাভাবিকভাবে সে বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণ ও রাজনৈতিক দল এ বিষয়গুলো অনেক সুন্দরভাবে এড্রেস করেছেন। ফলে বিপ্লবের অব্যহিত পর ভারত সৃষ্ট বন্যা এবং পরবর্তীতে সনাতন ধর্মের পূজা-পার্বণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি ম্যানেজ করায় বিপ্লবোত্তর প্রথম ধাক্কাটি ভালোভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। বড় কোনো ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ও পরাজিত শক্তির অপরিণামদর্শী উসকানিতে ধীরে ধীরে স্বস্তিময় আবহটি স্থায়ী হতে পারেনি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিজিত শক্তির ওপর বিজয়ী শক্তি নানাভাবে বিরক্ত করা শুরু করে। ১৯৭২-এ যে ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ব্যাপকভাবে, সে ধরনের বড় কিছু না হলেও কম কিছু ঘটছে না। থানা-পুলিশ অকার্যকর, বিজয়ীপক্ষের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাজধানীতে অবস্থান করায় তাদের পক্ষের স্বার্থপর লোকজন ইতোমধ্যে নানা ছোট-বড় ঘটনার সূত্রপাত করেছে। পূর্ব থেকে সামাজিক ঐক্য শৃঙ্খলা বজায় না থাকায় লুটপাট ও দখল-বেদখল সম্পন্ন হচ্ছে। কে এসব ঠেকাবে? ঐক্য এবং শৃঙ্খলার অনুষঙ্গগুলো সামাজিকভাবে অনুপস্থিত। সুতরাং সম্মুখভাবে বৃহত্তর আবহে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালু না থাকলেও অন্তরালে দুর্বৃত্তদের সর্বনাশা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মিডিয়া ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে খোঁজখবর নিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বলাই বাহুল্য প্রতিবেশীদের উসকানি যেমন দিন দিন বাড়ছে, ঠিক তেমনি পরাজিত শক্তিদেরও আস্ফালন শুরু হয়েছে। প্রথমদিকে তারা পরাজিত হওয়ার কারণে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেছে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা তাদের তেমন একটা পরিদৃষ্ট হয়নি। ওপর মহলের ন্যায়-নীতিগত চাপ অব্যাহত ছিল বলে বিষয়টি মাথা তুলতে পারেনি। বিজিত শক্তি স্থানে স্থানে মাথা তুলতে থাকায় তাদের দমানোর জন্য বিজয়ী শক্তির একটি অংশ নানা ধরনের সামাজিক অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। এখনই এর প্রতিকার প্রয়োজন। না হলে নির্বাচনের পূর্বে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অসুবিধা হতে পারে। পর্যবেক্ষক মহলের আস্থা ও বিশ্বাস বর্তমান সরকার ও বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো প্রাথমিক ঝড়-ঝাঁপটা যে কৌশলে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের সামগ্রিক রাজনীতি ও সুস্থ সামাজিক পরিবেশ অব্যাহত রাখার জন্য সব ধরনের বিধি ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
আমরা সবাই জানি, প্রথম ধাক্কা সামলাতে পারলে পরবর্তী ধাক্কাগুলো সামলানো যায়। এক্ষেত্রে যেহেতু আমরা প্রথম ধাক্কা সামলাতে পেরেছি, সেহেতু কিছু সামষ্টিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে পরবর্তী ধাক্কাগুলো আমরা সামলাতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ইতোমধ্যে থানা-পুলিশ অনেকটা শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। বাকিটা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হলেই দুর্বৃত্তরা দুর্বল হয়ে পড়বে।
তিন. ঐক্য এবং সংহতি
গত কয়েকদিন পূর্বে তাবলিগ জামাত ও কওমিপন্থীদের বিশাল জনসমাবেশ হয়ে গেল। তাও আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ময়দানে। তাবলিগরাও কওমিপন্থী, কিন্তু কওমিপন্থীরা সবাই আবার তাবলিগপন্থী নয়। আমরা সবাই জানি, এসব সংগঠন সম্পূর্ণ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তবে কওমিরা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সম্পৃক্ত আছেন, কিন্তু তাবলিগরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বর্তমানে পরাভূত শক্তি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত রয়েছে। অন্তত তাবলিগের ভোট বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের পকেটে যায়- এটাই মানুষের বিশ্বাস। কিন্তু হঠাৎ করে কওমিরা তাবলিগের সাথে একটা জনসমাগম করলো- এ নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে। তবে সরকারের ধারণা ছিল স্পষ্ট। তারা জানত এ সমাবেশ করে তারা কি বলবেন। বোঝা যায়, আল্লাহর রহমতে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগগুলো কিছুটা হলেও ঢেলে সাজানো হয়েছে। অন্তত ডিজিএফআই ও এনএসআই কণ্টকমুক্ত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সরকার এবং সরকারের গোয়েন্দা এজেন্সি ছাড়া অন্তত তাবলিগের ব্যাপারে ওরা হয়তো ঘুরেফিরে মুসলমানদের ঐক্য এবং সংহতির কথা বলবে (পরাভূত শক্তির পক্ষে)। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তাবলিগরা ঐক্য ও সংহতির বিপরীতে অনৈক্য ও অসংহতির কথা বললো। বেশ কয়েক বছর পূর্বে তাবলিগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ফলে তাবলিগের ইজতেমা অর্থাৎ বিশ্ব-ইজতেমা কয়েক বছর ধরে বিভক্তভাবে সম্পন্ন হতে থাকে।
কওমিদের সাথে তাবলিগের যে পক্ষটি এসেছিল, তারা নিজেদের বাঙালি বা বাংলাদেশি বলে পরিচয় দেয় এবং অন্য পক্ষ মাওলানা সাদ গ্রুপকে ভারতীয় গ্রুপ বা দিল্লি গ্রুপ। যদিও তাবলিগের কেন্দ্র বা উৎস হলো দিল্লি। তাবলিগরা পূর্বে দিল্লির সংগঠন বলে পরিচয় দিয়ে গর্ব অনুভব করতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিষয়গুলোর পটপরিবর্তন হয় গেছে। যাই হোক, আমরা এসব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করতে চাই না। আমাদের বিষয় হলো দীন, দেশ ও জনগণ। তাবলিগ দীন তথা ধর্মের জন্য কাজ করছে বলে সাধারণের বিবেচনা। সেই নিয়েও আমরা এখানে কথা বলবো না। আমাদের দুঃখ এবং কষ্ট হলো, মাত্রই একটি বড় ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমরা পরাভূত করে ঈমান, আমল, ঐক্য ও শৃঙ্খলার জন্য কাজ করছি। ঠিক সেই মুহূর্তে তাবলিগ জামাতের একটি পক্ষ কেন অপরিণামর্শীভাবে অসহিষ্ণু হয়ে উঠলো? সহিংসতার কথা বললো? ফ্যাসিস্টদের অন্ধ অনুকরণ করলো? যে মুহূর্তে দেশের মানুষ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং ঈমান-ঐক্য-শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করছে, সেই মুহূর্তে তারা বলছে তাবলিগের সাদ গ্রুপকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাদের স্লোগান, বক্তব্য ইত্যাদি থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দ্বিধা করছেন না। অথচ এ সময় কেন? মহান আল্লাহ তো কুরআন পাকে মুসলিম জাতির ঐক্যের কথা বলেছেন এবং অনৈক্যকে ভাঙতে বলেছেন অথবা অনৈক্য থেকে দূরে থাকতে বলেছেন এবং সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য গড়ে তুলতে বলেছেন। অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাবলিগের এ গ্রুপ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে ১৫ নভেম্বরে আমরা কাকরাইল মসজিদ দখল করবো। বিষয়টি কোনো সময়ের জন্যই গ্রহণযোগ্য নয়; বিশেষ করে দেশবাসী যখন ঈমান-ঐক্য-শৃঙ্খলা নিয়ে দিনরাত কাজ করছে, তথ্যাভিজ্ঞ মহল অবগত আছেন যে, তাবলিগের অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার কারণে কিছু অতীতে কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নিহত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, হ্যাঁ দেশের বিভিন্ন অংশে মাঝে মাঝে অসহিষ্ণুতা প্রবল হয়ে ওঠে। এতে তাবলিগের মধ্যকার কর্মীগণ আহত হন মুসলিমদের মধ্যে বা মুসলিম সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রকাশ্যে ফ্যাসিজম কাজ করবে, সেটা মুসলিমদের কাম্য হতে পারে না। বিষয়টি খুবই দুঃখ ও নিন্দাজনক। এর আশু দমন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
একটি বিষয় উল্লেখ করলে আমরা হয়তো সম্বিত ফিরে পাবো। তা হলো আপনি যেকোনো ধরনের মুসলিম হোন না কেন, যদি হজ বা ওমরাহ করতে চান তাহলে খুব সহজে ভিসা পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনি সৌদি আরবে যাবার জন্য ভিসার আবেদন করেন, তাহলে দেখা যাবে আপনি ভিসা সহজে হয়তো পাবেন না। এর অনেক বোধগম্য কারণ আছে। আপনি পৃথিবীর যেকোনো অংশে ক্রাইম করেন না কেন, সেটা ভিসার ব্যাপারে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হবে। এর অর্থ হলো মসজিদে হারামে মুসলিমদের নিয়ে অনৈক্য নেই, বড় আকারের সংহতি রয়েছে। এটাই আমাদের কাম্য।