ঈদ মোবারক- আমাদের সম্মানিত পাঠক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের ঈদুল আজহার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এ আনন্দবার্তার সাথে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এক অন্যরকম ঈদ উদযাপন করছি। গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ঈদের আনন্দবঞ্চিত থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলের কয়েকজন শীর্ষনেতাসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মী প্রতি বছর পরিবার-পরিজন ও স্বজনদের বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশে সহনশীল ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে এমনটি হতো না। গণমানুষের অধিকার আদায়ের প্রথম সারির নেতা-কর্মীদের সান্নিধ্য ধন্য করত তাদের সমর্থকদের। দরিদ্র জনগণকে সাথে নিয়ে তারা পশু কুরবানির সুযোগ পেতেন। বছরের এ দিনটিতেই সেই সুবিধাবঞ্চিতরা তৃপ্তির সাথে গোশত-ভাত খাওয়ার সুযোগ পেতেন, যারা আকাশছোঁয়া দামের কারণে সারা বছর এ স্বাদ পাওয়ার সাধ পূরণে ব্যর্থ সাধ্য নেই বলে।
দেশের ওপর দিয়ে মাত্র কিছুদিন আগে বয়ে গেল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রেমাল। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বিধ্বস্ত বাড়িঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে দেশের উপকূল অঞ্চল এবং উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম এবং যমুনা, মেঘনা ও পদ্মার চরাঞ্চলের নদীসিকস্তি অসংখ্য মানুষ অনেক স্বপ্ন, আশা, মায়া-মমতায় গড়া বসতভিটা হারিয়ে বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছেন। এমন এক প্রেক্ষাপটে পশ্চিম আকাশে উদিত হয়েছে পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ। ঈদুল আজহা সমাগত। ত্যাগের শিক্ষায় বিশ্বমানবতাকে জয় করার গুরুদায়িত্বপ্রাপ্ত আল্লাহর এ জমিনে তাঁর খলিফা মুমিনদের জন্য এক বিশাল পরীক্ষা এবারের ঈদুল আজহা। বন্যাদুর্গত ও নদীসিকস্তি অসহায় মানুষ যেন কিছুতেই ঈদুল আজহার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, আমাদের আন্তরিকতার সাথে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ইসলামের ইনসাফ, মৈত্রী আর শান্তির বাণীর আলোকে আলোকিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলে বঞ্চিত মানুষকে কারো কাছে হাত পাততে হয় না। আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের দায়িত্ব বিপন্ন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সচ্ছল সামর্থ্যবান নাগরিকদের সাথে নিয়ে সংকট মোকাবিলা করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের নাগরিকরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকার কিছু রুটিন ত্রাণতৎপরতা পরিচালনা করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাই ঈমানদার নাগরিকদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তাদের কাজ সরকারকে তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং সামর্থ্য অনুসারে নিজেদের পক্ষ থেকে সাহায্য অব্যাহত রাখা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার পূর্বেই, যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সূরা আল-বাকারা : ২৫৪) । রাসূল সা. বলেন, ‘হাশরের ময়দানে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দানশীল লোকেরা তাদের দানের ছায়ার নিচে অবস্থান করবে।’ পবিত্র ঈদুল আজহার দিন অবশ্যই দুর্গত এলাকায় ঈদুল আজহার নামায ও কুরবানির ব্যবস্থা করতে হবে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্গত এলাকায় চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ঈদুল আজহার দিন ঐসব এলাকায় কুরবানি ও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব এলাকা এখনো পানির নিচে তাদের কাছে কুরবানির পশুর গোশত দিয়ে রান্না করা খাবার পৌঁছাতে হবে।
আমরা জানি, ঈদ অর্থ আনন্দ, কুরবানি অর্থ নৈকট্য, আত্মত্যাগ। কুরবানির ঈদ অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। পরিভাষায় কুরবানি ঈদ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট জবেহ করে আনন্দ উদযাপন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সকল সম্প্রদায়ের জন্য আমি কুরবানির বিধান দিয়েছি, তিনি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সূরা-হজ : ৩৪)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আল্লাহর নিকট ওদের গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা-হজ : ৩৭)। এই তাকওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলে আমাদের ঈদ ও কুরবানি কিছুই পরকালে কোনো কাজে আসবে না। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে এ আনন্দের দিনে আমরা যেন ফিলিস্তিনের গাজা, চীনের উইঘুর, ভারতের কাশ্মীর, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের কথা ভুলে না যাই।
আল্লাহর দুর্দশাগ্রস্ত বান্দাদের সাহায্যে তাঁর নিদের্শিত পন্থায় আমাদের হাত বাড়াতে হবে। এবারের ঈদুল আজহায় আমরা যেন বঞ্চিত-নির্যাতিতদের কথা ভুলে না যাই। আমাদের ঈদের আনন্দে তাদের শরিক করতে সবাই মিলে যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের সব নেক আমল কবুল করুন। আমীন।
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।