রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৫ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৬ এপ্রিল ২০২৪

॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
রাজনীতি, সরকার ও ক্ষমতা; নির্বাচন ও ভোট; রাজনৈতিক দল ও দলের তৎপরতা তথা রাজনৈতিক দলগুলোর খবরাখবর নিয়ে যারা সচেতনভাবে খোঁজখবর রাখেন, তারা একটি প্রশ্ন করছেন- দেশে কি রাজনীতি আছে নাকি নেই? সাম্প্রতিককালে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রায়ই এ প্রশ্নটা করছেন। আমরা যারা সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত; বিশেষ করে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কাজ করি, তাদের কাছে এ প্রশ্নটা বেশি আসছে। আর এ প্রশ্নটা করার কারণও আছে- কারণ এদেশের মানুষ; বিশেষ করে যাদের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব, তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানের যে চিত্র একসময় দেখেছেন, তার ছিটেফোঁটাও এখন দেখছেন না। সাধারণত রাজনীতি বলতেই বিরোধীদল ও বিরোধীদলের জনসভা, মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি বোঝায়। আমাদের দেশে প্রকাশ্য রাজনীতি মানেই হচ্ছে দেশের রাজধানী শহর থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে মিছিল-সমাবেশ ইত্যাকার রাজনৈতিক কর্মসূচি। যখন বিরোধীদলগুলো এ ধরনের কোনো মিছিল-মিটিং করে, তখন সাধারণ মানুষ সেগুলো প্রত্যক্ষ করেন। জেলা ও বিভাগীয় শহর দূরে থাক, রাজধানী ঢাকায়ই বিরোধীদলের বড় কোনো মিছিল বা জনসভা দেখা যায় না।  বিরোধীদলগুলোর মিছিলে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ না করলেও বিরোধীদলের সমাবেশ ও জনসভাগুলোয় দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সাথে সচেতন সাধারণ মানুষও যোগ দেন। এভাবে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা যেমন বাড়ে, তেমনিভাবে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ বাড়ে। রাজনীতি মানুষের একটি সহজাত গুণ- এমনটিই বলেছেন- গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। তিনি মানুষকে রাজনৈতিক জীব বলেছেন। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির দেখা মিলছে না।  
মরহুম ইবরাহিম রহমান নামে এক প্রবীণ সাংবাদিক কয়েক বছর আগে এক আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ১৯৭১-এর আগে পল্টন ময়দানে প্রায় প্রতিদিন বিকালেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের জনসভা হতো। আর এসব জনসভায় সাধারণ মানুষ যোগদান করত, সন্ধ্যার পরও এসব জনসভা চলত, একটি আনন্দঘন পরিবেশে সাধারণ মানুষ বাদাম খেতে খেতে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য শুনত। কিন্তু এখন রাজনৈতিক দলের; বিশেষ করে বিরোধীদলের জনসভা তেমন একটি হচ্ছে না। আর হলেও সন্ধ্যার আগেই শেষ করে দিতে হয় অথবা প্রশাসন থেকে বলা হয়ে থাকে বিকাল ৫টার আগেই শেষ করে দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি শর্তারোপ করা হয়ে থাকে। তাই জনসভা শুরু করতে হয় দুপুর থেকে। কোনো কোনো সময় সকাল ১০টা থেকেই শুরু করা হয়ে থাকে। কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা। আর নিরাপত্তাজনিত সমস্যাটা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক নীতিবোধ থেকে শুরু করে অসহিষ্ণু রাজনীতির কারণেই। এখন প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে একেবারেই সহ্য করতে পারছে না। অতীতে এটা বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে এতটা ছিল না।   বাংলাদেশের মানুষ শতভাগ শিক্ষিত না, কিন্তু তারপরও তাদের অধিকাংশই একসময় রাজনীতি সচেতন ছিলেন এবং দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতেন এবং করতেন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক সচেতন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত করার লোকজন কমে যাচ্ছে। তবে এটার একটি বিপরীত চিত্র আছে, তা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতার সংখ্যা বাড়ছে। তার কারণ হচ্ছে ক্ষমতা ও সুবিধাপ্রাপ্তি। বিরোধীদলগুলোয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী কমলেও ক্ষমতাসীন দলে বাড়ছে- এটা কি রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ইতিবাচক, জবাবে সবাই বলবে, অবশ্যই নয়। স্বাভাবিক রাজনীতি চললে ক্ষমতাসীন দল নয়, বিরোধীদলেরই রাজনৈতিক নেতাকর্মী বাড়ার কথা ছিল।
রাজনীতি এবং সরকারি ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দল ছাড়া আধুনিক বিশ্বে কোনো দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনার কথা চিন্তাই করা যায় না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দল রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবশ্যই আবশ্যক। ইউরোপ-আমেরিকায় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় যেমন অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে, তেমনিভাবে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন সাধারণ জনগণের ভোটে। পশ্চিমা দেশগুলোয় রাজনীতি, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন ও ভোট ব্যতীত রাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও ক্ষমতার কথা চিন্তাও করা যায় না। তাদের দেশগুলোয় রাজনীতি, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন, ভোট, নেতৃত্ব ও ক্ষমতা পরস্পরের সমার্থক।  
তবে বর্তমান বিশ্বেও রাজনৈতিক দল, নির্বাচন ও ভোট ছাড়াও কোনো কোনো দেশ চলছে। রাজনৈতিক দল নেই, কিন্তু নির্বাচন ও ভোটে প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট, এমপি ও নেতৃত্ব নির্বাচন হয়ে থাকে এমন একটি দেশ আছে, যেটা সত্যিই ব্যতিক্রম, সেটা হচ্ছে ইরান। ইরানে কোনো রাজনৈতিক দল নেই, প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে এমপি প্রার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হতে হয়, ভোট করতেও হয় ব্যক্তিগতভাবে। এমনকি তাদের যে ধর্মীয় নেতা ইমাম খামেনী, তাকেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হয়েছে। ধর্মীয় নেতাকে বিশেষজ্ঞ পরিষদ তথা অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্ট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়, আর ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে আট বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এককথায় ইরানে ভোট ও নির্বাচন ব্যতীত কোনো নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। অপরদিকে চীনে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকলেও চীনা কমিউনিস্ট পাটির সদস্যদের ভোটেই দেশটির প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট গঠিত হয়ে থাকে। চীনের সাধারণ জনগণ ভোটার নয়, তাই তাদের কোনো ভোটাধিকার নেই। অপরদিকে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে চলছে প্রত্যক্ষ ও সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন। সুইজারল্যান্ডে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রতিটি দলের অংশগ্রহণ থাকে সরকার ও পার্লামেন্টে। আর সব দলের অংশগ্রহণে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার মানেই দেশের সব মত ও দলের প্রতিনিধিত্বের পার্লামেন্ট ও সরকার।  বর্তমানে আমাদের দেশে রাজনীতি বা রাজনৈতিক তৎপরতা একেবারেই নেই, তা বলা যাবে না। বিরোধীদলগুলো সক্রিয়ভাবেই রাজনীতি ও রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে চায়, কিন্তু পারছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ তথা দমন-পীড়নের কারণেই রাজনৈতিক তৎপরতা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিরোধীদলগুলোও রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করুক- এটা জনগণও চায়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলগুলোকে রাজনৈতিক তৎপরতার স্পেস দিচ্ছে না। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার প্রশাসন দিয়ে বিরোধীদলগুলোর রাজনৈতিক তৎপরতাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, কোনো এক অদৃশ্য সুতার টানে সরকার বিরোধীদলগুলোকে কোনো ধরনের ওপেন স্পেস দিচ্ছে না। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদলকে এভাবে কোণঠাসা করে রাখা দেশের সুশাসন ও উন্নয়নের জন্য বড় প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের মতো এত বড় একটি দেশে বিরোধীদল, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ তথা কোণঠাসা করে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সুশাসন ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। যারা বাংলাদেশকে ছোট দেশ বলেন, তারা সঠিক বলছেন না। ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ কোনোভাবেই ছোট নয়, তার ৬৪টি জেলা, প্রায় পাঁচ শতাধিক উপজেলা, ছয় শতাধিক থানা, প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিয়ন ও ৭০ হাজারের অধিক গ্রাম। এত বড় একটি দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা একটি দলের দ্বারা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশকে দুর্নীতির করালগ্রাস থেকে বের করে সুশাসনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের সড়কে আনতে হলে শক্তিশালী একাধিক বিরোধীদল ও রাজনীতি প্রয়োজন। আর শক্তিশালী বিরোধীদলের বিকাশ ঘটতে পারে  রাজনৈতিক ময়দানে স্পেস দেয়ার মাধ্যমে। বিরোধীদল কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকারের শত্রু বা বৈরী শক্তি না এবং ক্ষমতাসীন দলকে এমন ভাবাও ঠিক নয়। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলগুলোকে যেমন শত্রু ভাবে তেমনিভাবে বিরোধীদলও ক্ষমতাসীন দলকে শত্রু ভাবে। এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, বরং মারাত্মক সমস্যা। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলগুলোকে এ মনস্তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে এ নেতিবাচক মনস্তত্ত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিগত ১৬ বছর ধরে অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। পরপর চারবার জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অপকৌশল ও কায়দা-কানুন করে ক্ষমতায় আছে। ইতোপূর্বে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়েই চারদলীয় জোটের প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ময়দান থেকে আউট করার অপকৌশল শুরু করে। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জামায়াতসহ সব বিরোধীদলকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়। আওয়ামী লীগ প্রথমেই অত্যাচার-নির্যাতন করে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক ময়দানে কোণঠাসা করে। তারপর বিএনপিকেও বিভিন্ন কায়দায় রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। যার কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধীদলের রাজনৈতিক তৎপরতা অনেকটা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়েছে।
একটি সরকার তার ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য জনগণকে কীভাবে তাদের পুতুল বানিয়ে, ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও তার নেতাকর্মীদের মিথ্যা অভিযোগ ও অপবাদ দিয়ে আটক করে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করে থাকে, তা নিয়ে পশ্চিমা বিশে^ বিভিন্ন ধরনের গবেষণা হয়েছে। এমন একটি গবেষণা করেছেন মার্কিন নাগরিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান রাদারফোর্ড ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও আইনজ্ঞ জন ডব্লিউ হোয়াইটহেড। তিনি গবেষণা করে দেখিয়েছেন কীভাবে সরকারগুলো ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় তিনি ১৩টি কারণ নির্ধারণ করেছেন । তিনি বলেছেন, সরকার যদি এগুলো না করে, তাহলে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে, আর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। স্বৈরাচারী সরকার তার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব কাজ করে হোয়াইটহেডের বর্ণিত পয়েন্টগুলো হচ্ছে- ১. সরকার পুুুরোপুরি দুর্নীতিবাজ হয়, ২. নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সবকিছুতে নাক গলায়, ৩. জনগণের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করে, যাতে সাধারণ মানুষ ভীত থাকে, ৪. খবরদারি, সরকারি বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি, ৫. সবাইকে অপরাধী গণ্য করে ধরপাকড়, হেনস্তা করা, ৬. রাজনীতিকে ঠাট্টার বিষয় হিসেবে পরিগণিত করা এবং সরকার কোনো বিষয়ে জবাবদিহিতায় না যাওয়া ও জনগণের সব অধিকার সীমিত করা, ৭. জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার পরিবর্তে জনগণের ওপর শাসন ও শোষণ করা, প্রতিবাদ সমালোচনার অধিকার কেড়ে নেয়া, নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, ৮. আঘাতপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্তরা যেন কোনোক্রমেই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেয়া, ৯. অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে যে কাউকে অন্তরীণ গুম বা খুন করা, ১০. জনগগণের নামে ক্ষমতাবানদের সরকারি অর্থ খরচ করা এবং কৌশলে লুট করা, ১১. সরকারি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিকভাবে জনগণের বিরক্তির চিহ্নকে প্রচার দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা, ১২. ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার ওপর নজরদারি, ১৩. সরকারের বহু অনাকাক্সিক্ষত আইন প্রণয়ন- যাতে বক্তব্যের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত এবং মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয়।  
মি. হোয়াইটহেড একটি দেশের রাজনীতি, জনগণ, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করার যেসব পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার সবক’টিই প্রয়োগ করছেন ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে। এসব অপকৌশল ও শক্তি প্রয়োগ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলেও জনসমর্থন নেই। বিরোধীদল ও সাধারণ জনগণ ক্ষমতাসীনদের এসব অপকৌশলকে ভালোভাবে নিচ্ছে না এবং শক্তি প্রয়োগ আখেরে ক্ষমতাসীনদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও রাষ্টবিজ্ঞানী মানকুর ওলসন তার ‘পাওয়ার অ্যান্ড প্রসপারিটি’ বইয়ে  সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেছেন, ‘প্রায়ই সরকারগুলো দখলদারদের ব্যবহার করছে। এমন সরকারকে তিনি অনড় ডাকাত স্ট্যাশনারি ব্যান্ডিট বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। তবে ওলসন বলেছেন, এ দখলদার সরকারগুলোকে শুধু শক্তি ব্যবহার করতে দেখা যায়, যার পরিণতিতে তাদের সর্বনাশ করে। কেননা জনগণ তাদের মানতে বাধ্য হলেও, শ্রদ্ধা করে না এবং তাদের গ্রহণ করে না। ফলে ইতিহাসে এদের বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও করুণ পরিণতিই দেখা যায়।’  
জনগণের প্রত্যাশা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিরোধীদল যথাযথ রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে ক্ষমতাসীনদের অপকৌশল প্রতিহত করুক। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিমরোলারের সামনে বিরোধীদল যথাযথ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আসতে চাইলেও পারছে না। তাই বাংলাদেশে জনসমর্থিত বিরোধী রাজনৈতিক দল থাকলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যে ধরনের জোরালো কর্মসূচি গ্রহণ করে মাঠে আসার দরকার সে ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা নেই এবং দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই।  
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এত বড় একটি দেশে কয়েক ডজন সক্রিয় রাজনৈতিক দল থাকার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিরোধীদলের বিকাশ হওয়ার কথা ছিল। নতুন রাজনৈতিক দল বিকাশ হওয়া দূরের কথা, বড় দুটি বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকেই বিভিন্ন অপকৌশল এবং অত্যাচার-নির্যাতন করে ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে। যার কারণে বড় রাজনৈতিক দলগুলোও কোনো বড় জনসভার আয়োজন বা গণমিছিলের মতো কোনো গণসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিতে পারছে না। সুযোগ থাকলে এ রাজনৈতিক দলের প্রতি মাসেই এক-দুটি জনসভা করত, সাধারণ জনগণ এসব জনসভায় যোগ দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার কী করছে, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, তা জানতে পারত, রাজনীতিবিদরা জনসভায় সরকারের ভুলগুলো তুলে ধরতেন তার সমালোচনাা করতেন, পত্রপত্রিকায় এসব খবর প্রকাশিত হতো, তৃণমূলের জনগণ পত্রপত্রিকা পড়ে এসব জানতে পারতো। এটাই হওয়ার কথা ছিল বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশের চিত্র। কিন্তু এদেশের জনগণের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটের দাবিতে কয়েক দশকের আন্দোলন-সংগ্রাম করার পরও বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না, সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, জনগণ ভোট দিতে পারছে না। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কায়দা-কানুন অপকৌশল ও শক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচন ও ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মাধ্যমে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে আছে। অপরদিকে বিভিন্ন কায়দায় বিরোধীদলের রাজনৈতিক তৎপরতাকে কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। এভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকে দমন করা আখেরে দেশ ও জাতি তথা ক্ষমতাসীন দল কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের দেশ  এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এ পরিস্থিতির উত্তরণ না হলেও চূড়ান্ত পরিণতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ দেশ ও জাতি সবাইকে সমূহ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ক্ষমতাসীন দলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক- এ প্রত্যাশা দেশের সব শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিকদের।
লেখক : সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ও কলামিস্ট।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।