রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৯ মাচ ২০২৪

॥ মা সু ম  খ লি লী॥
ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আদালত থেকে একের পর এক এমন সব আলোচিত রায় আসছে- যাতে মনে হচ্ছে দেশটিতে ক্ষমতায় থাকা হিন্দুত্ববাদী শক্তির এজেন্ডার প্রতি বিচার বিভাগ ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ছে। সর্বশেষ দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মাদরাসা নিষিদ্ধের আদেশ দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। গত ২২ মার্চ শুক্রবার বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থী ও বিবেক চৌধুরী এ রায়ের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশে মাদরাসা পরিচালনাকারী ২০০৪ সালের আইন বাতিল করে দিয়েছেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে ২০০৪ সালে প্রণীত মাদরাসা শিক্ষার আইনকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত ভারতের নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে আদালতের নির্দেশে মাদরাসা শিক্ষা নিষিদ্ধ হতে চলেছে। এর মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারে মুসলিমবিরোধী যে ভাবমূর্তি ছিল, তা আরও প্রবল হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশে মাদরাসা বন্ধের রায়
রয়টার্সের এ সংক্রান্ত খবরে উত্তরপ্রদেশের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আদালতের মাদরাসা আইন বাতিলের এ আদেশের পর মাদরাসাগুলোয় দেয়া সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিপাকে পড়বেন রাজ্যের ২৫ হাজার মাদরাসার ২০ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী এবং অন্তত ১০ হাজার শিক্ষক। এ রাজ্যের ২৪ কোটি মানুষের এক-পঞ্চমাংশই মুসলমান।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা অনুসারে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন দ্বারা নিষ্পত্তি করা হয়েছে যে, উচ্চ শিক্ষা হলো এমন একটি ক্ষেত্র যা ইউনিয়নের জন্য সংরক্ষিত করেছে ভারত। অতএব রাজ্য সরকারের মাদরাসা শিক্ষা আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেই। মাদরাসা আইনের ৯ নং ধারায় এ বোর্ডকে নির্দেশাবলী, পাঠ্যপুস্তক, অন্যান্য বই এবং নির্দেশনামূলক কোর্স নির্ধারণ করা; এমনকি আন্ডার-গ্রাজুয়েট কোর্স আলিম, জুনিয়র রিসার্চ প্রোগ্রাম ফাজিল, স্নাতকোত্তর কোর্স কামিল এবং অন্যান্য কোর্সের জন্য উপাদান নির্ধারণের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এ ধারায় মাদরাসা বোর্ডকে প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের একটি কোর্স তৈরি, আলিম (স্নাতক), কামিল (স্নাতকোত্তর) এবং ফাজিল (জুনিয়র গবেষণা) প্রোগ্রাম) কোর্স পরীক্ষা পরিচালনা করা এবং বোর্ডের পরীক্ষায় পাস করা ছাত্রদের ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছে, এর মাধ্যমে ইউজিসি আইন দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে এমন সব ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে মাদারসা বোর্ডকে। আদালত তার পর্যবেক্ষণের পরে দেয়া রায়ে বলেছে, আমরা মনে করি যে, মাদরাসা আইন-২০০৪, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করে, যা ভারতের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, অনুচ্ছেদ ১৪, ২১-এর লঙ্ঘন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন-১৯৫৬ ধারা ২২ এর লঙ্ঘন। এ কারণে  মাদরাসা আইন-২০০৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো।
রায়ে বলা হয়, যেহেতু মাদরাসা ও মাদরাসা ছাত্রদের সংখ্যা ইউপি রাজ্যে বেশি তাই রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে স্বীকৃত নিয়মিত বিদ্যালয়ে এ মাদরাসার ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর স্কুলের অধীনে স্বীকৃত উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাইস্কুল ও ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা পর্ষদ উল্লিখিত উদ্দেশ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্তসংখ্যক অতিরিক্ত আসন তৈরি করবে এবং প্রয়োজন হলে আরও পর্যাপ্তসংখ্যক নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করবে।
উত্তরপ্রদেশে মাদরাসা বোর্ডের সাংবিধানিকতার বৈধতা নিয়ে অংশুমান সিং রাঠোর নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে রায়টি এমন এক সময় দেয়া হলো, যার পরের মাস এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাত দফায় শুরু হতে যাচ্ছে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে। বিজেপি এসব পদক্ষেপের ব্যাপারে বলছে, সরকার ঐতিহাসিক ভুলগুলো সংশোধন করছে। তারই সূত্র ধরে ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে হিন্দু রামমন্দির উদ্বোধন করেছেন মোদি। এলাহাবাদ হাইকোর্টের এ রায়ের পরেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার নির্বাচনী এলাকায় ঐতিহাসিক জ্ঞানবাপী মসজিদসংলগ্ন কাশি মন্দির থেকে ত্রিশূল নিয়ে তার নির্বাচন প্রচার শুরু করেছেন। এটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, হিন্দুত্ববাদী  এজেন্ডা  নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির প্রধান নির্বাচনী প্রচারণার বিষয় হতে যাচ্ছে।
টার্গেট দেওবন্দ মাদরাসাও
২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসা নিয়ে এক ইস্যু তৈরি করা হয়েছিল। ভারতের যে সাহানপুর শহরে বিশ্বখ্যাত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দারুল-উলুম রয়েছে, সেখানে উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাস দমন স্কোয়াডের একটি কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা শলভ মনি ত্রিপাঠি এ তথ্য জানিয়ে যে টুইট করেছেন, তাতে তিনি ‘তালেবানি বর্বরতা’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। মনি ত্রিপাঠির টুইটের শুরুটাই ছিল এরকম, ‘তালেবানি বর্বরতার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে একটি সংবাদ। দেওবন্দে কমান্ডো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যোগীজি।’ ত্রিপাঠি উল্লেখ করেন, ‘এ কেন্দ্রটি যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মতো করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কমান্ডো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য সারা রাজ্য থেকে সন্ত্রাস দমন শাখা বা এ টি এসের বাছাই করা বেশ কিছু অফিসারকে নিয়ে আসা হবে।’
মুসলিম নেতৃবৃন্দ মনে করেন, ‘তালেবানি বর্বরতা’ এবং ‘দেওবন্দে এ টি এস কেন্দ্র খোলা’Ñ এ দুটি শব্দ-বন্ধ একই টুইটে থাকার অর্থ নজরদারি হবে দারুল উলুমের ওপরেই। অল ইন্ডিয়া মুসলিম উইমেনস্ পার্সোনাল ল বোর্ডের চেয়ারপারসন শাহিস্তা আম্বার বলেন, এর মাধ্যমে একটা সম্মানজনক সংস্থাকে অপমান করা হচ্ছে। কী কারণে ওখানে এ টি এস কেন্দ্র খোলা হচ্ছে? এতদিনেও তো ওখানকার কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে পারে নি সরকার! এটা এক অর্থে স্বাধীনতার ওপরে হস্তক্ষেপ। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় সিদ্ধান্ত।’
উত্তরপ্রদেশের সাহারাণপুরের দেওবন্দে দারুল উলুম গড়ে তুলেছিল ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন ‘লাল রুমাল আন্দোলন’। ১৯১৩ সাল থেকে ১৯২০ অবধি চলা এ তেহরিক-এ রেশমি রুমাল আন্দোলন শুরু করেন শায়খ উল হিন্দ মৌলানা মাহমুদ হাসান। সিল্কের রুমালে লিখে অন্য দেওবন্দি নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ রাখা হতো ব্রিটিশবিরোধী এ আন্দোলনের সময়ে।
বাবরির পর জ্ঞানবাপী মসজিদ
বাবরি মসজিদের স্থলে রামমন্দিরের উদ্বোধনের সাথে সাথে গত ৩১ জানুয়ারি, উত্তরপ্রদেশের একটি জেলা আদালত হিন্দুদের ১৭ শতকের জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি এলাকায় দেবতাদের পূজা করার অধিকার প্রদান করে রায় আসে আদালত থেকে। এ রায়ের পর ভারতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ক্রমাগতভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিশ্লেষক পি কে নিয়াজ মিডল ইস্ট মনিটর সাময়িকীতে লিখেছেন, মুসলিমরা আবারও দেশের বিচার বিভাগের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে, যা হিন্দুদের একটি ঐতিহাসিক মসজিদের অংশ দখল করতে দিয়েছে।
৩১ জানুয়ারি বিচারক অজয় কৃষ্ণ বিশ্বেশা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বেসমেন্টটি দখল করতে এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে পূজা শুরু করা নিশ্চিত করতে বলেছেন। তবে হিন্দুরা জেলা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় গ্রিল ভেঙে মধ্যরাতে মসজিদের বেসমেন্টে মূর্তি স্থাপন করে পূজা শুরু করে। মুসলিম নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, জ্ঞানবাপী মসজিদে বাবরি মসজিদ কাহিনীর পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
ছয়টি বিশিষ্ট মুসলিম সংস্থার নেতারা সংবাদ সম্মেলনে, ‘১৯৯১ সালের উপাসনা স্থান (বিশেষ বিধান) আইন’ সমর্থন করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য বিভিন্ন নিম্ন স্তরের আদালতের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন।  ১৯৯১ সালের আইনে বলা হয়েছে যে উপাসনালয়গুলোর ধর্মীয় চরিত্র বজায় রাখা উচিত যেমনটি ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হবার দিন ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখে ছিল। ইতোমধ্যেই মামলার বিষয় ছিল বলে আইনটিতে বাবরি মসজিদকে তার আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। জামায়াত-ই-ইসলামী হিন্দের ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক মোহতাসিম খান বলেন যে, ১৯৯১ সালের উপাসনা আইন এবং ‘প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের গতি’ আদালতের নির্দেশ পালনে বিচার বিভাগের অক্ষমতার কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের শ্বাসরোধ বোধ করছে। অলইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সভাপতি খালিদ সাইফুল্লাহ রেহমানি বলেন, ‘আজ মসজিদ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে কোনো মন্দির ছিল না। ইসলাম মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্য উপাসনালয় ধ্বংস করার অনুমতি দেয় না। আজ আমরা যা দেখছি, তা হলো মন্দির মসজিদের নামে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। বহু শতাব্দী ধরে এখানে হিন্দু মন্দিরগুলো দাঁড়িয়ে আছে। তারা মুসলিম শাসকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’
জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) রিপোর্ট প্রকাশের ছয় দিন পরে হিন্দুদের পক্ষে আদালতের আদেশ আসে। এএসআই, বারানসি জেলা আদালত কর্তৃক মসজিদটি ‘একটি হিন্দু মন্দিরের প্রাক-বিদ্যমান কাঠামোর ওপর নির্মিত হয়েছিল’ কিনা, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি এ উপসংহারে পৌঁছেন যে ‘একটি মন্দির মোগলদের রাজত্বকালে ১৭ শতকে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে’। ১৫ শতকের বাবরি মসজিদ যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেই জমিতে নির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ পরে এ রায়টি, মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে মসজিদের ধর্মীয় তাৎপর্যকে কেবল উপেক্ষা করে না বরং এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর অন্য ধর্মের অগ্রাধিকারের জন্য একটি সমস্যাজনক নজিরও স্থাপন করে।
কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের পাশেই রয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো প্রচার চালিয়েছে যে ষষ্ঠ মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬৯ সালে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। জ্ঞানবাপী মসজিদ তিনটি ঐতিহাসিক মসজিদের মধ্যে একটি, যা হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিরা অযোধ্যার বাবরি মসজিদ এবং মথুরার শাহী ইদগাহসহ ‘মুক্ত’ করতে চেয়েছিল, সমগ্র উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে মোদির বিজেপি শাসিত, যা সংঘ পরিবারের অংশ।
২০২১ সালের আগস্টে পাঁচজন মহিলা স্থানীয় আদালতে আবেদন করেছিলেন যে তাদের জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে প্রতিদিনের আচার অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া উচিত, মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে ‘দেবতার একটি মূর্তির অস্তিত্ব’ দাবি করে। আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিডিওগ্রাফি জরিপের সময় একটি শিবলিঙ্গ (দেবতা শিবের প্রতীক) পাওয়া গেছে, যা মসজিদ কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিতর্কিত ছিল, যারা বলেছিলেন যে বস্তুটি অজু ট্যাঙ্কের একটি পাথরের ফোয়ারার অংশ ছিল।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে কাশি বিশ্বনাথ করিডোর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য মোদি বারানসিতে যাওয়ার কয়েকদিন আগে, নন্দীর একটি ছোট মূর্তি সমাধিস্থ করার চেষ্টা করার সময় কয়েকজন হিন্দু কর্মী ধরা পড়েন, একটি ষাঁড়ের রূপ যা প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ঘোষণা করা হয়েছে যে, এটি প্রবেশকে রক্ষা করে। হিন্দু দেবতা শিবের আবাস জ্ঞানবাপী মসজিদের কাছে। কর্মগুলো ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদ বিবাদের শুরুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যখন মধ্যরাতে মসজিদের ভেতরে রামের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। হিন্দু চরমপন্থীদের পক্ষে আদালতের পক্ষপাত তাদের জন্য আরও মসজিদ বাজেয়াপ্ত করার রাস্তা সহজ করে দিয়েছে।
নতুন উন্নয়ন ঘটে যখন রাজধানী দিল্লির কর্তৃপক্ষ ১৩ শতকের একটি মসজিদ ভেঙে দেয়। দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) এজন্য যুক্তি দেয় যে, আখুঞ্জি মসজিদ একটি অবৈধ কাঠামো যা সংরক্ষিত বনভূমিতে দাঁড়িয়ে ছিল। দ্য প্রিন্ট রিপোর্ট করেছে যে, ধৌলা কুয়ানের শাহি মসজিদসহ নতুন দিল্লিজুড়ে অন্তত চারটি মসজিদ, ‘অননুমোদিত’ হওয়ার কারণে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন ডিডিএ এবং নিউদিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এনডিএমসি) দ্বারা ভেঙে ফেলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বারানসির ষোড়শ শতাব্দীর জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদের দাবি হল আরএসএসের নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী হিন্দু চরমপন্থী সংঘ পরিবারের নতুন লক্ষ্য।
মুসলিম যুগের নিদর্শন
বর্তমান ভারতের অধিকাংশ স্মৃতিস্তম্ভ মুসলিম শাসকদের; বিশেষ করে মোগলদের অবদান। তাজমহল, জামা মসজিদ, লালকেল্লা, আগ্রা ফোর্ট, ফতেহপুর সিক্রি, হুমায়ুনের সমাধি, আকবরের সমাধি এবং শালিমারবাগ হলো এমন কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানÑ যেখানে হাজার হাজার পর্যটক এ সৃষ্টির মহিমা এবং জাঁকজমককে ক্যাপচার করতে যান। মোগলদের পাশাপাশি অন্যান্য মুসলিম শাসকরাও তাদের আমলে ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে কুতুবমিনার, দিল্লির প্রথম মুসলিম শাসক কুতুবউদ্দিন আইবেকের আমলে ১১৯৩ সালে নির্মিত একটি ৭৩ মিটার উচ্চ টাওয়ার এবং চারমিনার, দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদের প্রথম ভবন, মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ, একজন রাজা দ্বারা নির্মিত। কুতুব শাহী রাজবংশের চারমিনার তার জটিল স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, এটিকে ভারতের সবচেয়ে স্বীকৃত কাঠামোগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে। চারমিনারের উপরের তলায় ৪০০ বছরের পুরনো মসজিদটি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
হিন্দু চরমপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, আধুনিকতার সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবে পরিচিত তাজমহল একটি হিন্দু মন্দিরের ওপরে নির্মিত হয়েছিল। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে আগ্রায় সাদা মার্বেল সমাধিটি ১৭ শতকে মোগল রাজা শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে তৈরি করেছিলেন। দিয়া কুমারী, একজন বিজেপি সংসদ সদস্য এবং জয়পুরের সাবেক রাজপরিবারের সদস্য, দাবি করেছিলেন যে, তাজমহল যেই জমিতে দাঁড়িয়ে আছে তা তার পূর্বপুরুষদের। তার দল তাজমহলের ইতিহাসের তদন্ত এবং ‘সত্য’ প্রকাশের জন্য এর ২২টি কক্ষ পুনরায় খোলার দাবিতে হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছে।
যাই হোক, তাজমহলের নথি থেকে জানা যায় যে, রাজপরিবার তাদের হস্তান্তর করা জমির জন্য উদার ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল এবং তারা তাজমহল তৈরি করা মার্বেল সরবরাহে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। হিন্দু উগ্রপন্থীরা আরও দাবি করে যে, দিল্লির আইকনিক কুতুবমিনার তৈরির আগে ওই স্থানে একটি মন্দির ছিল। একটি আদালত সম্প্রতি আদেশ জারি করেছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কুতুব মিনার কমপ্লেক্স থেকে হিন্দু মূর্তি অপসারণ করা উচিত নয়।
স্মৃতিস্তম্ভগুলো নিয়ে বিতর্ক উত্তপ্ত হওয়ার সাথে সাথে, হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো এ স্থাপনাগুলোর উৎস সম্পর্কে বেপরোয়া দাবি করেছে। তাদের মধ্যে একটি হলো এএসআই-এর সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ধরমবীর শর্মার মন্তব্য যে, কুতুবউদ্দিন আইবেক নয়, রাজা বিক্রমাদিত্য সূর্যের গতিপথ অধ্যয়নের জন্য কুতুবমিনার তৈরি করেছিলেন। হায়দরাবাদের চারমিনার, একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মসজিদে ভাঙার চেষ্টা সম্প্রতি খবরে এসেছে। ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল এবং পরে চারমিনার সম্পত্তি দখল করা হয়েছিল। চারমিনার পরিচালনাকারী এএসআই মন্দিরটিকে একটি অননুমোদিত কাঠামো ঘোষণা করেছে এবং হায়দরাবাদ হাইকোর্ট আরও সম্প্রসারণ বন্ধ করেছে।
মন্দিরের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মূর্তিটি ১৯৯০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল। এ মন্দিরে বিজেপি-আরএসএস নেতাদের ঘন ঘন পরিদর্শন, যার অনুষ্ঠান হলো চারমিনার প্রাচীরটিকে একটি সাধারণ পেছনের প্রাচীর হিসেবে ব্যবহার করে, শহরে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া : বেশিরভাগ মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো প্রকাশ্যে ভারতের মুসলিমবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি, যাকে হিন্দুত্ববাদী শাসনব্যবস্থার ক্রিয়াকলাপের অনুমোদন হিসেবে দেখা হয়। এটি ভারত এবং উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক থেকে স্পষ্ট, যেমনটি ঘন ঘন উচ্চপর্যায়ের সফর এবং মোদিকে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রদানের দ্বারা প্রদর্শিত হয়। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার আবাসস্থল হওয়া সত্ত্বেও ভারতে মুসলমানদের প্রতি আচরণের বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে নিঃশব্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০ কোটি মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ভারত প্রায় ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ।

এ পাতার অন্যান্য খবর

এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।