সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী
গত ১৫ জুলাই  রাতের আঁধারে তস্করের মতো ভ্রষ্ট কিছু সেনা কর্মকর্তার নির্দেশে ভারি অস্ত্রসহ যুদ্ধ সাজে হঠাৎ করেই রাস্তায় নেমে আসে পৃথীবির অষ্টম শক্তিধর তুরস্কের সেনাবাহিনীর তিনটি ইউনিটের সেনা সদস্যগণ। অল্প সময়ের ব্যবধানে দখল করে নেয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থান ও স্থাপনা। বোমা ফেলা হয় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অবকাশকালীন দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন কেন্দ্র মারমারসির অবস্থান স্থল লক্ষ্য করে। কিন্তু তার পূর্বেই প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বিমান বন্দরগুলো। প্রচার করতে থাকে সেনা অভ্যুত্থানের কথা। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এরদোগান সরকারের পতনের খবর! মুসলিম বিশ্বের কিংবদন্তী নেতার বুদ্ধিমত্তা ও সাহসী সিদ্ধান্তে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে লাখো জনতা ছুটে আসে রাজপথে। অবশেষে সশস্ত্র  বিদ্রোহী সেনারা পরাস্ত হলো তুরস্কের দেশ প্রেমিক নিরস্ত্র গণতন্ত্রমনা তৌহিদী বীর জনতার কাছে।

কি ঘটেছিল সে রাতে : ১৫ জুলাই শুক্রবার রাতের কথা, তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা করে। ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থান ও স্থাপনা দখল করে নেয়। দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে। এরদোগান সরকারের পতন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেশের ক্ষমতা গ্রহণের কথাও ঘোষণা দেয়া হয়। তুরস্কবাসী কিংকর্তবিমূঢ় হয়ে পরে। তারা তখনো কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না, তাদের কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান অবকাশ যাপনের জন্য তখন রাজধানী থেকে বহুদূরে দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন কেন্দ্র মারমারসির একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে হঠাৎ করেই তুরস্কবাসীর অবিসংবাদিত নেতা প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার মোবাইল ফোনের ভিডিও বার্তায় টিভি চ্যানেল সিএনএন তুর্ক এর মাধ্যমে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। যেই কথা সেই কাজ, মুহূর্তের মধ্যেই মধ্যরাতে লাখ লাখ জনতা নেমে আসে রাস্তায়। ফজরের সালাতের অনেক আগেই প্রায় মধ্যরাতে মসজিদের মাইক থেকে দেয়া হয় আজান। জাগিয়ে তোলা হয় ঘুমন্ত জনগণকে। গতিরোধ করা হয় যুদ্ধ সাজে নেমে আসা সেনাবাহিনীর ট্যাংক, সাঁজোয়া যানসহ সকল পথ। জনগণ দখল করে নেয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক সাঁজোয়া যান আর অস্ত্রগুলো। বিদ্রোহী সেনাদের তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে।

জনতার উদ্দেশ্যে এরদোগান যা বলেছিলেন : এরদোগান তার স্মার্ট ফোন থেকে ভিডিও কলে বলেছিলেন, ‘আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন। ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হবে, দেশের জনগণ যাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন, তিনিই দায়িত্বে আছেন। আমরা যখন সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারবো তখন তারা সফল হতে পারবে না’। এরদোগানের এমন আহ্বান শোনার সাথে সাথে লাখ লাখ গণতন্ত্রমনা দেশপ্রেমিক তৌহিদী বীর জনতা রাস্তায় নেমে আসে। মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় তুরস্কের দৃশ্যপট। তুরস্কের নিরস্ত্র বীর জনতা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে শুয়ে পড়ে ট্যাংকের সামনে, রুখে দেয় সশস্ত্র বিদ্রোহী সেনাদের গতি পথ। জনগণ দখল করে নেয় সেনাদের ট্যাংক, কেড়ে নেয় অস্ত্র, বিদ্রোহীদের তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে। এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন কেন্দ্র মারমারসি থেকে ইস্তাম্বুলে বিশেষ বিমানে করে ফিরে আসেন তুরস্কের কিংবদন্তী নেতা এরদোগান। জনগণের প্রতিরোধ আর প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাহসী পদক্ষেপের কারণে চতুর্থ বারের মতো রচিত হলো তুরস্কের নতুন এক ইতিহাস।

শুক্রবার রাতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি ভ্রষ্ট অংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেয়ার দাবি করেছিল, যা দেশটির টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছিল। তারা ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও সামরিক হেলিকপ্টার নিয়ে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। রাজধানী আঙ্কারা ও বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে অবস্থান নিয়েছিল ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বসানো হয়েছিল সেনা প্রহরা। ইস্তাম্বুলের বসফোরাস ও সুলতান মেহমুদ সেতুর ওপর অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এর আগে আঙ্কারায় সেনা সদর দফতরে জিম্মি করা হয়েছিল সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারকে।

তারা দখল করে নিয়েছিল সরকারি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন। সিএনএন-তুর্ক টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছিল বিদ্রোহী সেনারা। এরদোগানের দল একে পার্টির ইস্তাম্বুলের সদরদফতরেও হানা দিয়েছিল বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সব অংশের সমর্থন না থাকায় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তৎপরতায় জনগণ রাস্তায় নেমে আসায় বিদ্রোহী সেনাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনতা রাজপথে নেমে আসে, অপরদিকে পুলিশ বিদ্রোহী সেনাদের গ্রেফতার করতে শুরু করে। এ অভ্যুত্থান চেষ্টাকে ‘তুরস্কের গণতন্ত্রে কালো দাগ’ বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম।

গণমাধ্যমে যা প্রচার করা হয়েছিল : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাজধানী আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ হয় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন। আঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।  সেখানে বিদ্রোহী সেনারা ট্যাংক থেকে গোলা বর্ষণের পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পার্লামেন্ট ভবনে আশ্রয় নেয়া এক বিরোধী নেতা রয়টার্সকে বলেন, অন্তত তিনবার গোলাবর্ষণ করা হয় এবং তাতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এরপর স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে রাষ্ট্রীয় টিভিতে খবর আসে ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের খবরে পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং সান্ধ্য আইন ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। মারমারসিতে থাকা এরদোগান অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই তার স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেয়া ভাষণে জনগণকে তা প্রতিরোধের আহ্বান জানান।

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের দায় কার : তুরস্কের বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদারকে উদ্ধৃত করে রয়টাসের্র খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী সৈন্যরা এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়েছিল। গুলেন সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ অভ্যুত্থানের সঙ্গে তাকে জড়ানোয় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গুলেন। অভ্যুত্থান চেষ্টার নেতৃত্বে কারা ছিলেন কিংবা তাদের পেছনে কারও সমর্থন ছিল কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে দুই শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এই অভ্যুত্থানচেষ্টার মূল নায়ক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা হলেন থার্ড আর্মির কমান্ডার জেনারেল আকিন এরদাল ওজতুর্ক এবং সেকেন্ড আর্মির কমান্ডার জেনারেল আদেম হুদুতি। তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনাকারী সন্দেহভাজন জেনারেল আকিন ওজতুর্ক ইহুদিবাদী ইসরাইলে সামরিক অ্যাটাচি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তুর্কি বিমান বাহিনীর সাবেক কমান্ডার জেনারেল ওজতুর্কসহ অন্তত: ছয় সন্দেহভাজন জেনারেলকে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠিত সেক্যুলার তুরস্কে গত এক যুগের ডানপন্থ’ী সরকারের শাসনে সেনাবাহিনীর বহু সেক্যুলারপন্থী সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে সামরিক বাহিনীতে ক্ষোভ রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ অবৈধ ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান। তাৎক্ষণিকভাবে তুরস্কের ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জেনারেল উমিত দানদার বলেন, ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় নিহতদের মধ্যে ৪১ জন পুলিশ কর্মকর্তা, দুই সেনা সদস্য, ১৯৬ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১০৪ জন বিদ্রোহী রয়েছেন। এসংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।’

গণতন্ত্র রক্ষায় প্রশংসিত তুরস্কবাসী : গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে তুরস্কের জনগণ আরো তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। পিষ্ট হয়েছে সেক্যুলার ও সামরিক স্বৈরশাসনের যাতাকলে। চতুর্থবারে এসে ইসলাম প্রিয় গণতন্ত্রমনা তৌহিদী জনতা তাদের যোগ্য নেতা এরদোগানের যোগ্য নেতৃত্বে রুখে দিল ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলারপন্থী সামরিক জান্তাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের সকল ষড়যন্ত্র ও অভিপ্রায়। তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান ঘটনার চেষ্টার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তুরস্কের গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে সামিল জনগণের প্রতি জোড়ালো সমর্থন ব্যক্ত করেছে। তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্র রক্ষায় তুরস্কের জনগণের সাহসী ভূমিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, জোড়ালো সমর্থন ও সংহতি জানানো হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার আন্দোলনে সহযোগী হওয়ার।

হুমকির মুখে তুরস্ক : তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান থামানো গেলেও এখনও সরকার হুমকিতে রয়েছে বলে মনে করেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিকরি আইসিক। গত ১৮ জুলাই সোমবার সকালে ইস্তাম্বুলে দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বাড়ির সামনে জড়ো হন সেনা অভ্যুত্থানে বিপক্ষে অংশ নেয়া হাজার হাজার তৌহিদী জনতা। সেখানে উপস্থিত জনতার সামনে এমনই আশঙ্কার কথা বলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, আজ আমরা সেনা অভ্যুত্থান থামাতে পেরেছি। কিন্তু সরকারের উপর থেকে হুমকি কেটে গেছে বলে আমরা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। মন্ত্রী উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা প্রেসিডেন্টের প্রতিটি বিবৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তিনি যখন আপনাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলবেন তখনই ফিরে যাবেন। তার আগ পর্যন্ত আপনারা রাস্তায় অবস্থান করুন।

প্রসঙ্গত শুক্রবার রাতে তুরস্কের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে দেশটির সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র অংশ। তারা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের ক্ষমতা দখলের দাবিও করেছিল। সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সেনা সদস্যদের অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেয়। এরদোগান সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয় দেশটির সর্বস্তরের জনগণ। তারা সেনা সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নেয় ও পিটিয়ে পুলিশে তুলে দেয় সাধারণ মানুষ। সেনাদের ট্যাঙ্ক দখলে নিয়ে তার মাথায় দেশের পতাকা লাগিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়।

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের দেয়া তথ্য মতে, ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টায় নিহত হয়েছেন ২৯০ জন। এর মধ্যে অভ্যুত্থানকারী বিদ্রোহী সেনা সদস্য রয়েছেন ১০৪ জন। আর অভ্যুত্থান প্রতিরোধকারী সামরিক-বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন। ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অন্তত: ২৭২ প্রসিকিউটর ও বিচারককে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হিজমত আন্দোলনের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় বসবাসরত ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গে সরকার উৎখাত পরিকল্পনায় জড়িত। ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটর কার্যালয় ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে বলেও জানা গেছে। ব্যর্থ এ অভ্যুত্থানের নেপথ্যের ভিলেন হিসেবে গুলেনকে দায়ী করেছে তুর্কি সরকার। এর আগে ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগে শনিবার ২ হাজার ৭৪৫ জন বিচারককে বরখাস্ত করা হয় এবং তাদের ওপর দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।

বিশ্বের দেশে দেশে এরদোগানের পক্ষে সমাবেশ : আমেরিকার শিকাগো শহরে তুর্কি দূতাবাসের সামনে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সমর্থনে তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে জনতা সমাবেশ করেছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে এরদোগানের পক্ষে জোরালো সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশ করেছে সে দেশের জনগণ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির হাউজ অব লর্ডসের সামনে তুরস্কের পতাকা হাতে জনতার অবস্থান, এ সময় তারা অভ্যুত্থান চেষ্টায় মদদ দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত (যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত) ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবি করে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে সে দেশের জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে এরদোগানের পক্ষে ও ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তুরস্কের সঙ্গে সংহতির স্মারক হিসেবে আরবিতে ‘তুর্কি’ লিখে ফিলিস্তিনের জেরুসালেমের স্কুল ছাত্রদের  প্রদর্শনী তুরস্কের সঙ্গে সংহতির একটি স্মারক : গাজা, ফিলিস্তিন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে এরদোগানের সমর্থনে জনতার ঢল নামে। জার্মানির বিভিন্ন শহরে তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে এরদোগানের পক্ষে অবস্থান নেয় জনতা। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে সেদেশের সাধারণ জনতা সমাবেশ করেছে। হাঙ্গেরীর তুর্কি দূতাবাসের সামনে তুরস্ক এবং হাঙ্গেরীর জাতীয় পতাকা হাতে জনতা সমাবেশ করেছে। তিউনিসিয়ার তুরস্ক দূতাবাসের সামনে তিউনিসিয়া ও তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে এরদোগানের প্রতি সমর্থন জানায় সে দেশের সাধারণ নাগরিকগণ।

জাতীয় ক্রান্ত্রিকালে বিরল জাতীয় ঐক্য : প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ডাকে গভীর রাতে সশস্ত্র সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় নিরস্ত্র জনগণ যেমনি রাস্তায় নেমে আসে, তেমনি সকল দলের পার্লামেন্ট মেম্বারগণও ছুটে আসেন পার্লামেন্ট ভবনে। রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে পার্লামেন্টে আসা সকল পার্লামেন্ট মেম্বারকে সেখানে অবস্থান করার জন্য ধন্যবাদ জানান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ইলদিরিম। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। তুরস্কের প্রধান চার রাজনৈতিক দলের যৌথ বিবৃতিও পার্লামেন্টে পড়ে শোনানো হয়। এতে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়। অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করতে গিয়ে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি জানানো হয় সমবেদনা।

অপশক্তি রোধে জাতীয় ঐক্য : যে কোন অপশক্তিরোধে, গণতন্ত্র রক্ষায় বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, জাতীয় উন্নয়ন আর স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় ও যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তুরস্কের শাসক দল আর জনগণ তারই প্রমাণ দিলেন গত ১৫ জুলাইয়ের ঐক্যবদ্ধ ভাবে সেনা অভ্যুত্থান প্রতিহত করে। তুরস্ক থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের যাতে, অপশক্তির বিরুদ্ধে হতে হবে সরকার বিরোধী দল আর জনগণ একাকার, অপশক্তির বিরুদ্ধে থাকবে না কোন বিভেদ।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।