শহীদ মাওলানা নিজামীর কবর জিয়ারত অব্যাহত

শোকার্ত মানুষের ঢল

এম এ জাফর লিটন, (শাহজাদপুর ) : গত ১৩  মে  শনিবারও সকাল থেকেই পাবনার সাঁথিয়া মনমথপুর গ্রামে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর সাবেক মন্ত্রী শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর কবরে শোকার্ত জনতার ঢল লক্ষ করা গেছে। পুরুষের পাশাপাশি বোরখা পরা নারীরাও আমীরে জামায়াতের কবরে ছুটে আসছেন। সবাই নিজের স্বজনের মতোই আপনমনে মহান এ নেতার জন্য দোয়া করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ছুটে আসছেন শহীদ মাওলানার পারিবারিক কবরস্থানে। সরকার পরিকল্পিতভাবে সাজানো সাক্ষী দিয়ে মাওলানা নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করে হত্যা করলেও শোকার্ত মানুষের স্রোতকে যেন থামাতে পারছেনা। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের কোটি কোটি কর্মীদের হৃদয়স্পন্দন সাঁথিয়ার লাখো মানুষের জনপ্রিয় নেতা মাওলানা নিজামীর জন্মভূমি মনমথপুর এখন শুধুই ধন্য। এত বড় মাপের একজন নেতা এবং আল্লাহর খাস বান্দাহ শহীদ নিজামীকে বুকে পেয়ে সত্যিই গর্বিত মনমথপুরের মাটি। মনমথপুর গ্রামের মানুষ যেন জীবনে এত মানুষ দেখেনি। দেখেনি একজনের এত বড় জানাজা ,কিংবা অসংখ্য গায়েবানা জানাজা। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে শহীদ নিজামীর কারণে। যে মনমথপুর গ্রামকে ক’দিন আগেও কেউ চেনেনি সেই মনমথপুর গ্রাম এখন ইতিহাস। ইসলামী আন্দোলনের কোটি কোটি কর্মীদের প্রিয় এক স্থান। তা সব শহীদ মাওলানা নিজামীর সুবাদেই। আজ যেন ইতিহাসের নির্মমতার সাক্ষী হয়ে মনমথপুরের আকাশ বাতাস দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দিচ্ছে নিজামী আমাদের প্রাণ নিজামী আমাদের অহঙ্কার। লাশ দাফনের পর থেকেই শোকার্ত মানুষের স্রোত মনমথপুরের অভিমুখে। লাখো মানুষের স্রোত প্রমাণ দিচ্ছে নিজামী কোন অপরাধী হতে পারেনা। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মহান এই নেতাকে শহীদ করা হয়েছে। একদিন ইতিহাস কথা বলবে, কথা বলবে সাঁথিয়ার অপমার জাগ্রত বিবেক। কিন্তু এই প্রিয় নেতাকে আর পাবেনা সাঁথিয়াÑবেড়াবাসী।  নিরব নিস্তব্দ নির্বিকার মনমথপুর গ্রাম যেন সত্যিই হতভাগ্য হয়ে গেছে। তাঁর প্রিয় সন্তানকে বুকে আগলে রেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে থমকে গেছে পুরো মনমথপুরবাসী। আমরা দুজন সাংবাদিক মোটরসাইকেলযোগে গত শনিবার সকালেই পৌঁছে যাই মনমথপুর গ্রামে। পিচঢালা রাস্তার মোড়ে মোড়ে নির্বাক গ্রামবাসীকে জিজ্ঞেস করেই চলে যাই শহীদ নিজামীর পারিবারিক কবরস্থানে। প্রবেশ করতেই কাচা রাস্তা দিয়ে জিয়ারত করে ফিরে আসা একদল বোরকা পড়া ছাত্রীদের দেখতে পেলাম। তখন মোনাজাত শেষ করে সবাই চোখ মুছতে মুছতে কবরস্থান ত্যাগ করছিল। এই হলো ভালবাসা। না কোন লোক দেখানো ভালোবাসানা। প্রিয় নেতার প্রতি মায়া,মমতা। কবরস্থানের মেইন গেইটে একটি নলকূপে অজু করে সোজা নিজামীর কবরের পাশে দাঁড়ালাম। কান্না ধরে রাখতে পারলাম না। মুুহূর্তের মধ্যেই আরও কয়েকজন আমার পাশে দাঁড়ালো। আমি নিজেই মোনাজাত পরিচালনা করলাম। যে নেতাকে জীবনে অসংখ্যবার দেখেছি ,ভীরের মাঝে কত কষ্টে হাত মোসাফাহ করেছি। আজ সেই নেতার কবরের পাশে দণ্ডায়মান,পুৃিলশি কিম্বা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রটোকল নেই। কি নিয়তি। দোয়া শেষ করে কিছুক্ষণ নির্বাক দাড়িয়ে রইলাম। কথা বললাম শহীদ নিজামীর চাচাতো ভাই এক মাওলানা সাথে। তিনি বললেন, শোকার্ত জনতার স্রোত টানছেই। ভালোবাসার টানে শোকার্ত সাথীরা দেশÑবিদেশ থেকে ছুটে আসছেন। নিঃসন্দেহে মাওলানা নিজামী একজন সৎ ও খাঁটি মানুষ ছিলেন। কবরস্থান থেকে বের হয়ে মূল গেইটে মন্তব্য বই রাখা হয়েছে। আমি মন্তব্য লিখে সোজা বের হয়ে আসলাম। মূল সড়কে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম গ্রামের বিভিন্ন মেঠো পথ আর কাচা পাকা সড়ক দিয়ে শোকার্ত নারী পুরুষ কবরস্থান অভিমেিখ ছুটে আসছে। জানিনা এভাবে কতদিন ছুটে আসবে? হয়ত একদিন থমকে যাবে শোকার্ত মানুষের ঢল। কিন্তু সততা, আদর্শ দিয়ে যে কোটি মানুষের হৃদয়ে শহীদ নিজামী নাম লিখে গেলেন তা কি কোন দিন মুছে যাবে?