টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই!

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা : টাঙ্গাইল জেলার উত্তরাংশের ছয়টি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি কোন বিদ্যালয় নেই। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি কলেজ রয়েছে মাত্র একটি। উপজেলাগুলো হচ্ছে কালিহাতী, ঘাটাইল, ভূঞাপুর, গোপালপুর, মধুপুর ও ধনবাড়ী। এ উপজেলা গুলোতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার্থীরা সরকারি শিক্ষার েেত্র সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছয়টি উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৩০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১টি বাদে সবকটিই বেসরকারি। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ভূঞাপুরের প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ কলেজ।

জেলার শিক্ষানুরাগীদের অভিযোগ, শিক্ষার েেত্র সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে এ উপজেলাগুলোতে মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়নি। ফলে এ উপজেলাগুলোর বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে চরমভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার মান উন্নয়ন কল্পে সকল পর্যায়ে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন জেলার শিক্ষাবিদরা।

ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন মতাদর্শের সরকার গঠন হলেও শিক্ষার মান্নোয়নে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদপে গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এ জেলাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলাই মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর ফলে মানসম্মত শিক্ষায় পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ কারণে সবচেয়ে তিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। এ কারণে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণে আমাদের ছেলে মেয়েদের টাঙ্গাইলের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে হচ্ছে। ফলে জেলার সরকারি ওই  বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ও ভর্তি অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দেশে শিেিতর হার বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণগতমান এখনও বৃদ্ধি পায়নি বলে মনে করেন তিনি।

মধুপুর উপজেলার রাণী ভবানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলামিন খান বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় উপজেলার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত রয়েছে। শিতি জাতি গঠনে মাধ্যমিক পর্যায়ের  শিক্ষা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জেলা শহরগুলোতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকায় উন্নত শিক্ষা পদ্ধতি পাচ্ছে সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। এ ছয় উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় না থাকায় উন্নত শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ।

ঘাটাইল উপজেলার আনোহোলা ডিগ্রি কলেজের শিক ফজলুল করিম জানান, এ উপজেলাগুলোতে মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিদ্যালয় না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থীদের ভালো শিক্ষা গ্রহণে জেলা শহরমুখী হতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে অভিভাবকরা।

কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়ার কলেজ শিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ উপজেলাগুলোতে মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার মান্নোয়নে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় অপরিহার্য বলেই মনে করেন তিনি।

ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের অভিভাবক লিয়াকত মিয়া বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি না থাকায় শিক্ষা েেত্র আমরা সবরকম সরকারি সুবিধা বঞ্চিত। বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত উত্তর টাঙ্গাইলের ছয়টি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন সরকারি বিদ্যালয় না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।

গোপালপুর সুতী ভিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আব্দুল লতিফ জানান, শিক্ষা েেত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক পর্যায়। শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষাউপকরণ ও শিক আবশ্যক। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় উপজেলার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর পাশাপাশি পাচ্ছেনা শিক্ষা েেত্র দেয়া সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে হলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় অপরিহার্য বলেও মনে করেন তিনি। রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি মান সম্মত শিক আর মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পিছিয়ে থাকা বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান অসম্ভব বলেই মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ জানান, দেশের অধিকাংশ উপজেলাই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার প্রতিটি উপজেলায় ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি কলেজ সরকারি করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সখীপুরে বিদ্যুতের দাবিতে সড়ক অবরোধ

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী। গত ২০ এপ্রিল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘী সড়কের কচুয়া চৌরাস্তা মোড়ে ওই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী লাঠি সোটা নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে চৌরাস্তা মোড়ের চারপাশের অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া, ঘোনারচালা, জোয়াইরপাড়া, দাপনাজোরপাড়া, কামন্নাপাড়া, আড়াইপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, নয়া কচুয়া, রামখাঁ পাড়াসহ ১০ গ্রামের কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ও স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন।  

এলাকাবাসীর দাবি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চলতি বোরো মওসুমে পানির অভাবে থোর ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় তারা ২-৩ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে, বিদ্যুতের ভৌতিক বিলে ভুক্তভোগীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত সিকদার, সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম ও বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) শাহাদাত আলী অবরোধ স্থলে পৌঁছে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার ঘোষণা দিলে বিক্ষুব্ধরা অবরোধ তুলে নেন।