সংবাদ শিরোনামঃ

আগাম নির্বাচন দিতে চায় সরকার ** খালেদা জিয়ার সাথে জামায়াত নেতাদের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ** সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী’র মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল ** আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন বেগম জিয়ার প্রত্যাখ্যান ** দেশের স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে : শিবির সভাপতি ** বাড়ছে কোটিপতি বাড়ছে বৈষম্য ** সকল ক্ষেত্রে একটি বন্ধ্যাত্ব পরিস্থিতি বিরাজ করছে ** নৈতিক অবক্ষয় প্রধান কারণ ** শুরুর কথা শুনুন ** ফাঁসির মঞ্চে মর্দে মুমিন যুগে যুগে ** ফেলানী হত্যার বিচার না মেগাসিরিয়াল! ** ধেয়ে আসছে বন্যা॥ পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ ** সরকারি গাছ কেটে কর্মকর্তার শখের ফুল বাগান **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪২২, ১৪ শাওয়াল ১৪৩৬, ৩১ জুলাই ২০১৫

পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ গণকবর

মো. আবুল হাসান ও খনরঞ্জন রায়
সাগরে ভাসছে হাজার হাজার মানুষ। কোনো একটা দেশে তারা নামতে চায়। তাদের নৌযানে পানি নেই খাবার নেই। তারা মারা যাচ্ছে, উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর সভ্যতার ধ্বজাধারীরা হেলিকপ্টার থেকে সমুদ্রের জলে ফেলছে খাবার কিংবা পানির পাত্র, ওই মানুষগুলো জাহাজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে উত্তাল সমুদ্রে, একটুখানি খাবারের আশায়, পানির আশায়। কিন্তু নির্দেশ কড়া, একটা মানুষও যেন সীমানায় পা রাখতে না পারে। মরলে মরুক। এরই প্রেেিত যখন থাইল্যান্ডের দণিাঞ্চলে উপকূলীয় জঙ্গলে ডজন ডজন গণকবরের সন্ধান বিশ্বকে ‘চমকে’ দিয়েছে। এরপরই মিলল মালয়েশিয়া সীমান্তে ১৩৯ গণকবরের সন্ধান। থাইল্যান্ড সীমান্ত-সংলগ্ন মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পারলিস প্রদেশে আবিস্কৃত এসব কবর ও বন্দীশিবিরের ব্যাপারে সরকার স্পষ্ট বলেছে এখানে প্রতিটি কবরে একাধিক মৃতদেহ বিদ্যমান।

স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া। একবার যেতে পারলেই ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে। এরকম আশা বেকার যুবকরা করতেই পারে। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাগ্যের দুয়ার খোলা এটাও তো কম ঝুঁকি নয়। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে দালালদের প্রস্তাবে রাজি হয়। পরিশেষে অধিকাংশের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ, কষ্ট, নির্যাতন আবার কখনো মৃত্যু। আবার অনেকে থাইল্যান্ডের কারাগারে বন্দী জীবন শেষে অর্থের বিনিময়ে হয়তো যেতে পারে মালয়েশিয়া।

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় প্রতিবছর বৈধভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছে হাজার হাজার তরুণ যুবা। কিন্তু জেনে-শুনেই একটু সুখের আশায় এ দেশের বেকার যুবকরা জীবনের ঝঁুঁকি নিতে গিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। পাচারকারীরা অতিলোভ দেখিয়ে বা ছলে, বলে কৌশলে তাদের নিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ওঠে। তারপর তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করে। আবার অনেককে আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। জাতিসংঘের এক হিসেবে দেখা গেছে অভিবাসী শ্রমিক বাদেই গত ৩০ বছরে এদেশের ১০ লাখেরও বেশি পুরুষ, নারী, শিশু পাচার হয়ে গেছে বিভিন্ন দেশে। মানব পাচারকারীরা খুবই কৌশলী ও শক্তিধর। অবৈধভাবে বিদেশ যেতে প্রতিবছরই নৌকা কিংবা ট্রলার ডুবে শত শত বাংলাদেশীর সলিল সমাধি ঘটছে। ইহকাল থেকে পরকালে যাওয়ার মতো, তারা প্রবেশ করে অন্য এক জগতে। ইঞ্জিন ও নৌকা অত থাকলেও যারা ুধা-পিপাসায় টিকতে পারে না; যারা দীর্ঘ সমুদ্র ভ্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ে; তাদেরও অনেক সময় সাগরে ফেলে দিয়ে ‘বোঝা’ কমানো হয়। এভাবে সাগরে ও ডাঙায় মিলে চট্টগ্রাম থেকে জাকার্তা পর্যন্ত পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি উপকূলরেখা যেন পরিণত হয়েছে দীর্ঘ গণকবরে। যে কোনো এলাকার বায়ুতেই মিশে আছে হতভাগ্যদের শেষ নিঃশ্বাস।

‘অভিবাসন’ নিয়ে কাজ করছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। গত মাসে প্রকাশিত তাদের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কেবল ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি নাগরিক ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানব পাচারের শিকার হয়েছে। হতভাগ্যের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে! ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে তিন বছরে সাগরপথে পাচার হওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যাই প্রায় দেড় লাখ। এই পাচার হওয়ার মানে কিন্তু জীবিত পাচার হওয়া নাও হতে পারে। অবৈধ পথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যারা পৌঁছেন, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তিন শতাধিক ব্যক্তি মারা গেছেন। এই নাগরিকদের এক অর্থে প্রতীকী কবর রচিত হয়। তারা আর ফেরে না, ফিরতে পারে না। এরপরও ‘ভয়াবহ সমুদ্রযাত্রায় যোগ দিতে লোকজন চড়া সুদে ধার করা বা স্বর্ণালঙ্কার কিংবা মূল্যবান জমিজমা পর্যন্ত বেচে দিচ্ছেন।’ শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবরে শেষ আশ্রয় নিতে হচ্ছে। একটি বিরাট কর্মহীন যুব শ্রেণি অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় সাগরে গিয়ে ঝাঁপ দিচ্ছে এবং অনেকে প্রিয়জনহীন পরবাসে মৃত্যুবরণ করছে।

দেশ যে উন্নতির হিমালয় স্পর্শ করছে, তা প্রতিদিন মানুষ শুনছে। বিভিন্ন প্রজন্মের সন্তানের প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা দিয়ে হল ভাড়া করে গোলটেবিল করছেন। নৌকা, বইঠা সমর্থকগোষ্ঠীও গোলটেবিল ও মানববন্ধন করছেন। তাতে বড় নেতারা গিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। অথচ প্রশিণের অভাবে যারা অদ, তাদেরও বাঁচার মতো জীবিকার ব্যবস্থাটা করে দিতে পারেন না। যে দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ পাচার হয়, আন্তর্জাতিক েেত্র সে দেশের ভাবমর্যাদা বলে কিছু থাকে না। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট বলে অভিহিত করেছে। মানব পাচারের কোনো দায় নিতে রাজি নয় পররাষ্ট্র কিংবা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই তিন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ডিপ্লোমা শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশী বিদেশী বিনিয়োগ সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান করা গেলে এই দুঃসহ পরিণতি হতো না। শিক্ষার প্রশিণের দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

পৃথিবী নামক গ্রহে মানব সৃষ্ট যুদ্ধ, দাঙ্গা, পারমাণবিক ধ্বংসলীলায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়- বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, মহামারীতে নিরাপদে আশ্রয়গ্রহণকালে অনেক বেশি মানব সন্তান নিহত ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান বিশ্বে শুধুমাত্র খাদ্যের অন্বেষণে এমন বিপর্যয় ঘটেনি। পশ্চিমারা এর একটি নামও দিয়ে ফেলেছেন। সংঘতভাবেই তারা বলছেন অর্থনৈতিক অভিবাসী। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশের তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করতে হলে অথবা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে এই বিপর্যয়ের উৎপত্তিস্থল চিরতরে নির্মূল করতে হবে।

আমরা মানবপাচার রোধকল্পে সরকারের নিকট সৃজনশীল দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি। সাগরের ভাসমান তরুণদের দ্রুত সমতটে এনে কর্মমুখী ডিপ্লোমা শিক্ষায় শিক্ষিতি করে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার দাবি জানাই। পাশাপাশি এদেশের বেকার তৈরির উৎপত্তিস্থল হলো এসএসসি পরীক্ষা। প্রতি বছর ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এর অর্ধেক তরুণকে পেশা ও পণ্যভিত্তিক ডিপ্লোমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেয়ার জন্য, যেখানে হাইস্কুল আছে তারই পার্শ্বে নির্মাণ করতে হবে ডিপ্লোমা শিক্ষা ইন্সস্টিটিউট।

ডিপ্লোমা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সমস্ত কার্যক্রম শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে এনে তাকে জাতীয়ভাবে এক কেন্দ্রিক ডিপ্লোমা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে জনপ্রিয় করতে হবে। কর্মসংস্থানভিত্তিক শিক্ষা লাভ করে তরুণ যুবরা দেশগঠনে মনোযোগী হবে। সোনার বাংলায় সোনার ছেলেদের ভূমিকা হবে কর্মকেন্দ্রিক। রোধ হবে মানব পাচার। পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ প্রশান্ত মহাসাগরীয় গণকবর নিশ্চিহ্ন হয়ে শান্তির বাড়তায় প্রতিষ্ঠা পাবে ডিজিটাল বাংলা।

লেখক : মো. আবুল হাসান, সভাপতি, খনরঞ্জন রায়, মহাসচিব

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।