সংবাদ শিরোনামঃ

গণতন্ত্র না উন্নয়ন? ** দেশ থেকে মানবতা কি বিদায় নিচ্ছে? ** গণতন্ত্রহীনতায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে ** মালয়েশিয়াগামী নিখোঁজদের জন্য আহাজারি ** প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ ** ৩ মাসে ধর্ষণ ১২৩, গতিহীন তদন্ত ** গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধীদল থাকা বাধ্যতামূলক ** জীবন দিতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের ** কবি নজরুলের ভুল! ** কমলগঞ্জে ধলাই নদীর তীরে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ** ধানের দরপতনে ঋণের টাকা পরিশোধে দিশেহারা কৃষক ** নায়ক শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের প্রস্থান **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২, ১০ শাবান ১৪৩৬, ২৯ মে ২০১৫

নায়ক শেখ আবু্ল কাসেম মিঠুন

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ
চলে গেলেন শেখ আবুল কাসেম মিঠুন। কবি মতিউর রহমান মল্লিক চলে যাবার পরে তিনিই বুকে আগলে রেখেছিলেন বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঝাণ্ডা। বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত তিনি সফর করে বেড়িয়েছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সিপাহসালার কবি মতিউর রহমান মল্লিকের রেখে যাওয়া কাজ আঞ্জাম দেবার জন্যে। বৈরী বাতাসেও লাগাম টেনে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সারাদেশের সংস্কৃতি কেন্দ্রসমূহের কর্মকাণ্ড। কিন্তু আমরা বড়ই দুর্ভাগা। মল্লিকের কাফেলাকে সঠিকভাবে গুছিয়ে নেবার আগেই তাঁকেও হারালাম। মহান আল্লাহ তাঁকেও নিয়ে নিলেন তাঁর সান্নিধ্যে। গত ২৪ মে দিবাগত রাত্রি দুটার সময় তিনি প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। তিনি চলে গেলেন চিরদিনের জন্যে আর মাহরুম করে রেখে গেলেন আমাদের। ঘোর অন্ধকারে এ সংকীর্ণ গলিপথে সাহসের সাথে পথ দেখানোর একজন সাচ্চাদিলের সিপাহসালারকে হারিয়ে ফেললাম আমরা। জানিনা মহান আল্লাহ এর মধ্যে আমাদের জন্যে কী কল্যাণ রেখেছেন। কেননা তিনি যাই করেন তা আমাদের কল্যাণের জন্যই করে থাকেন। 

শেখ আবুল কাসেম মিঠুন জন্মেছিলেন ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলাধীন আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামে। সেখানকার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারেই তাঁর জন্ম। পিতা শেখ আবুল  হোসেন এবং মা হাফেজা খাতুন অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ ছিলেন। অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক থাকলেও পারিবারিক রক্ষণশীলতার কারণে সহসা এ পথে পা বাড়াতে পারেননি তিনি। তবে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। খুলনাতেই তাঁর লেখালেখির হাতে খড়ি। ছড়া-কবিতা, গান, নাটক প্রভৃতি লিখেছেন তিনি ছাত্র জীবন থেকেই। সাংবাদিকতার প্রতিও ছিল অন্য রকম ঝোঁক। খুলনা শহর থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক কালান্তর’ পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। পরবর্তিতে ‘সাপ্তাহিক কালান্তর’-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক আবর্ত’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তিনি লিখতেন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক নানা ধরনের কলাম। ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির নেতৃত্ব : সঙ্কট ও সংঘাত’ নামে তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থটি পাঠক মহলে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। গ্রন্থটি মূলত দুটি প্রবন্ধের সমন্বয়ে প্রণীত। প্রথম প্রবন্ধটির শিরোনামেই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রবন্ধটির শিরোনাম হচ্ছে ‘আমাদের সংস্কৃতির শত্রু-মিত্র’। চার ফর্মা অর্থাৎ ৬৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটিতে তাঁর বিশুদ্ধ সংস্কৃতিচিন্তার এক পরিচ্ছন্ন প্রকাশ ঘটেছে। সেইসাথে তাঁকে একজন গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য যথেষ্ট উপাদান হিসেবেও কাজ করেছে গ্রন্থটি। শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের একটি উপন্যাসও প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ১৯৭২ থেকে ’৭৪-এ খুলনার দক্ষিণাঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রকাশকাল ১৯৮৯ সাল। ‘আমরাই’ নামের এই উপন্যাসটি সে সময় দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

লেখক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করলেও শেখ আবুল কাসেম মিঠুন মূলত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তাঁর চিত্রজগতের অভিনয়ের মাধ্যমেই। পারিবারিক হাজারো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তিনি ১৯৮০ সালে ‘তরুলতা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় পদার্পণ করেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবে মা বাবা কেউই মেনে নেননি। তা সত্ত্বেও শিল্পিত মনের আকুতি এবং খ্যাতির স্বপ্ন তাঁকে এ পথে চলতে শেখায়। তিনি অসংখ্য ছবিতে নায়ক, খলনায়ক, পার্শ্বনায়ক, নায়কের ছোটভাইসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার ঈর্ষণীয় সফলতা ঘরে তোলেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে: ঈদ  মোবারক, আয়না বিবির পালা, ভেজা চোখ, নিকাহ, কুসুমকলি, প্রেম প্রতিজ্ঞা, বেদের মেয়ে জোছনা, নিঃস্বার্থ, সাক্ষাৎ, স্বর্গ-নরক, ত্যাগ, বাবা কেন চাকর, জিদ, চাঁদের হাসি, নরম গরম, গৃহলক্ষ্মী, এ জীবন তোমার আমার, খোঁজ-খবর, ছোবল, কসম, দিদার, পরিচয়, মাসুম, দস্যু ফুলন, জেলহাজত, ত্যাজ্যপুত্র, সর্দার, অন্ধ বধূ, বিধাতা, কসম, তুমি যে আমার’ প্রভৃতি চলচ্চিত্র বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সম্প্রতি তিনি একটি ইসলামী চলচ্চিত্র রচনা ও পরিচালনা করেছেন যার নাম ‘আহ্বান’। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লেখক সমিতির সভাপতি ছিলেন। সেইসাথে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। শেখ আবুল কাসেম মিঠুন চলচ্চিত্র নায়ক হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিত হলেও তিনি চলচ্চিত্রের লেখক হিসেবেও অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। চলচ্চিত্রের জন্য তিনি প্রায় আড়াই শত কাহিনী চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন যার অধিকাশংই মুক্তি পেয়ে সুপার-ডুপার হিট হয়। তবে পারিবারিক পিছুটান তাঁকে চলচ্চিত্রে খ্যাতির নেশা থেকে সরে আনতে না পারলেও পরবর্তীতে ইসলামী শরীয়তের উপর নিবিড় পাঠ তাঁকে অন্যভাবে আলোড়িত করে। চলচ্চিত্রের রমরমা ক্যারিয়ারে তিনি হঠাৎ করেই ইতি টানেন। নিজেকে সঁপে দেন মহান আল্লাহর কাছে। প্রায় কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে থাকলেও অর্থনৈতিক মোহ ও খ্যাতির মায়া ত্যাগ করে তিনি সরে আসেন সে রাস্তা থেকে। ঈমানী দায়িত্ব মনে করে তিনি নিজেকে বিনিয়োগ করেন ইসলামী আর্দর্শের ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক বলয় বিনির্মাণে। বিশুদ্ধতার আলোয় নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে তিনি মায়ের কাছে ফিরে যান। দীর্ঘদিন পরে তাঁর মা তাঁর দিকে দৃষ্টি ফিরান। চলচ্চিত্রের কারণে তিনি মায়ের আর্শিবাদ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলেন। মাকে পেয়ে তিনি জান্নাতি সুখ অনুভব করেন। এ ধরনের অভিব্যক্তি তিনি প্রায়ই প্রকাশ করতেন।

শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের সাথে আমার সরাসরি সাক্ষাৎ হবার সুযোগ ঘটে ১৯৯৭ সালে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে পলাশীর অনুষ্ঠানে নবাব সিরাজউদদৌলা নাটক মঞ্চায়নের সময়। শ্রদ্ধেয় নাট্যকার আরিফুল হক, প্রবীণ অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকারসহ গুণিশিল্পীদের সংস্পর্শ পাবার সুযোগ হয়েছিল সে সময়। শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের বিনয়ী চেহারাটি তখন থেকেই মনে রেখাপাত করেছিল। চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতিমান নায়কের আচরণ এতোটা বিনয়মাখা হতে পারে এটা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। তারপর প্রেক্ষণ সম্পাদক খন্দকার আবদুল মোমেন এর নিকট থেকে তাঁর পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাই। ভীষণভাবে আলোড়িত হয়েছিলাম আমি। সেই থেকে ক্রমশ তাঁর সাথে আমার সখ্যতা। অবশেষে তিনি বিশুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চায় নিজেকে পুরোপুরিভাবে সমর্পিত করলেন। এমনকি বাংলাদেশ সংস্কৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালকের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। এরপর থেকে সম্পর্কটা একেবারে আপন ভাইয়ের মতো হয়ে গেল।

কবি মতিউর রহমান মল্লিক আমাদের ছেড়ে চলে গেলে সাংস্কৃতিককর্মীরা ভীষণ অসহায় হয়ে পড়লাম। শেখ আবুল কাসেম মিঠুন সে জায়গাটি পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। মল্লিকের অনুকরণে তিনি সারাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি সংগঠনসমূহ গুছিয়ে নিতে সচেষ্ট হন এবং সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করতেন। আমার সাথে প্রায়ই তাঁর কথা হতো। যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমি তাঁর সাথে শেয়ার করতাম। তিনিও তাঁর যে কোনো পরিকল্পনার কথা আমার সাথে আলাপ করতেন, পরামর্শ করতেন বিনাদ্বিধায়। তিনি আমাকে অনেকটা নিদের্শনা দিয়েই রাখতেন, ঢাকা এলে অবশ্যই প্রত্যাশা প্রাঙ্গণে উঠবেন এবং একটু সময় হলেও আমাদের জন্য বরাদ্দ করবেন। আমিও তাঁর সে আদেশ পালনের চেষ্টা করতাম সব সময়।

চলচ্চিত্র জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে তিনি আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল ছিলেন না। কিন্তু মনের দিক থেকে তিনি ভীষণ তৃপ্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র জীবনের স্মৃতিকে তিনি দুঃসহ বলেই বর্ণনা করতেন। তিনি খুব তৃপ্তির সাথে বলতেন, এখন মা আমার কাছে; মানে আমি জান্নাত ফিরে পেয়েছি। চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান ও বিলাসী জীবনকে তিনি নিজের জীবনের ‘জাহিলী সময়’ বলে আখ্যা দিতেন। সেই সময়গুলোর জন্যে তিনি ভীষণ অনুশোচনা করতেন। প্রায়ই তাঁর কণ্ঠে ‘তাওবার’ সুর খুঁজে পাওয়া যেত। সে সময়ের অনুশোচনায় তিনি কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যের অধ্যয়ন বাড়িয়েছিলেন ব্যাপকভাবে। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়সহ ইতিহাস-ঐহিত্যের উপর এতো বেশি লেখাপড়া করেছিলেন যে, তিনি যখন বক্তৃতা করতেন তখন তাঁকে একজন প্রাজ্ঞ মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং ইতিহাসের দক্ষ পণ্ডিত মনে হতো। সাহিত্য সংস্কৃতির চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত স্বচ্ছ ধারণার অধিকারী ছিলেন।

ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে একসাথে সফর করার সুযোগ হয়েছে আমার। তাঁর সাথে সফরে কোনো ক্লান্তি ঠাঁই পেতো না। ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নানা বিষয়ের আলাপ আলোচনায় সময় যে কোনো দিক দিয়ে ফুরিয়ে যেত টেরই পাওয়া যেতনা। অনেক মঞ্চেই তাঁর সাথে বক্তৃতা করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তিনি যে একজন তুখোর বক্তা ছিলেন তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। সাধারণত অল্প সময়ে তাঁর বক্তৃতায় তৃপ্তি মিটতো না। না কোনো শ্রোতার না তাঁর নিজের। তিনি দীর্ঘ সময় বক্তৃতা করলেও কখনো তা দীর্ঘ মনে হতো না। অসাধরণ আকর্ষণে মুগ্ধ করে রাখতেন শ্রোতামণ্ডলীকে। সত্যি মনে হতো তাঁর বক্তৃতায় যাদুর পরশ আছে।

অহংকারবোধ, বিলাসী দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থ-বিত্তের স্বপ্ন এবং খ্যাতির আকাক্সক্ষাকে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জমা দিয়ে এসেছিলেন বলেই অনুমিত হয়েছে সব সময়। তাঁর কথা-বার্তা এবং আচরণে কখনো মনে হতো না তিনি একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র তারকা ছিলেন। সাদা মাটা জীবনের অধিকারী এ মানুষটিও কবি মল্লিকের মতোই জীবনের প্রতি ভীষণ বেখেয়ালী ছিলেন। সংস্কৃতির মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই তাঁর শরীরে যে বিশাল রোগ বাসা বেধেছে এটা তিনি আমলেই আনেননি। অবশেষে গত ১৮ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভায় তাঁকে দেখে আঁৎকে উঠি। সেই নায়কোচিত চেহারাটি কেমন বিধ্বস্থ হয়ে পড়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি খুব সাবলিলভাবে স্বভাবগত হাসিমাখা মুখে বললেন, শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছেনা।’ ভীষণ অবাক হলাম। এতো অসুস্থতা নিয়ে আপনি অনুষ্ঠানে এসেছেন? তিনি মৃদু হেসে বললেন, দাওয়াতটা মিস করতে চাইনি। তাছাড়া এখানে এলে অনেকের সাথে দেখা হবে এ লোভটাও সামলাতে পারিনি।’ তাঁকে বাসায় চলে যাবার অনুরোধ করলেও দীর্ঘ সময় তিনি সে অনুষ্ঠানে অবস্থান করেছিলেন। মানুষের সাথে মোয়ামেলাত পেলে তিনি তাঁর অসুস্থতার কষ্টের কথাও ভুলে যেতেন।

শেখ আবুল কাসেম মিঠুন আজ আমাদের মাঝে নেই। হতাশার পাহাড় বুকের উপর ভেঙে পড়ছে। কলিজার মধ্যে আঁছড়ে পড়ছে কষ্টসাগরের নীল জলের ঢেউ। মাঝে মধ্যেই হৃদয়টা গুমরে উঠছে বোবা কান্নায়। আমরা কেন যেন খুব তাড়াতাড়ি অবিভাবক শূন্য হয়ে যাচ্ছি। কবি গোলাম মোহাম্মদ চলে গেলেন। চলে গেলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সিপাহসালার কবি মতিউর রহমান মল্লিক। তাঁর স্বপ্নকে বুকে ধরে যিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাদের ভালোবাসার অবিভাবক হিসেবে যিনি নিজেকে বিনিয়োগ করেছিলেন, তিনিও এতো তাড়াতাড়ি আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে চলে যাবেন এমনটি কখনো কল্পনাতেও আসেনি। এজন্য মাঝে মাঝে অজানা আতঙ্কে মনে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়। আর কতোটা পরীক্ষার মাঠ পার করাবেন মহান রাব্বুল আলাআমিন! হে আল্লাহ তুমিই ভালো পরিকল্পনাকারী। আমাদের এ শূন্যতা পূরণে তৈরি করে দাও হাজারো মতিউর রহমান মল্লিক, লাখো আবুল কাসেম মিঠুন। সাহিত্য সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাত থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য আমাদের মাঝে লক্ষকোটি যোগ্য নিবেদিত প্রাণের উদ্ভব ঘটাও। আমরা শুধু বিশুদ্ধ সংস্কৃতির আবহে জীবন পরিচালনা করে তোমার প্রিয় বান্দা হিসেবে তোমার দরবারে হাজির হতে চাই। দেখতে চাই কুরআনিক সংস্কৃতির বিশুদ্ধ প্রবাহ। হে প্রভু তুমি আমাদের সহায় হও; আমাদের কবুল করো।

লেখক : কবি ও গবেষক, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।