সংবাদ শিরোনামঃ

গণতন্ত্র না উন্নয়ন? ** দেশ থেকে মানবতা কি বিদায় নিচ্ছে? ** গণতন্ত্রহীনতায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে ** মালয়েশিয়াগামী নিখোঁজদের জন্য আহাজারি ** প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ ** ৩ মাসে ধর্ষণ ১২৩, গতিহীন তদন্ত ** গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধীদল থাকা বাধ্যতামূলক ** জীবন দিতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের ** কবি নজরুলের ভুল! ** কমলগঞ্জে ধলাই নদীর তীরে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ** ধানের দরপতনে ঋণের টাকা পরিশোধে দিশেহারা কৃষক ** নায়ক শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের প্রস্থান **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২, ১০ শাবান ১৪৩৬, ২৯ মে ২০১৫

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ

॥ গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী॥
স্বাগতম। বাংলাদেশ সফরে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে সু-স্বাগতম। নরেন্দ্র মোদি ৬ জুন ঢাকা আসছেন এবং জনসম্মুখে বক্তব্যও রাখবেন বলে জানা গেছে। প্রতিবেশীর প্রতি প্রতিবেশীর আস্থা বিশ^াস আর ভালোবাসা এটাই সকলের কাম্য। প্রতিবেশীর কাছ থেকে যদি বিশ^াসের জায়গায় অবিশ^াস আর আস্থায় জায়গায় সংশয় দেখা দেয় তাতে হতাশই হতে হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭৪ সালে। এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সাথে সাথেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে তা পাস হয়। আর সেই চুক্তি ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় পাস হতে সময় লাগলো মাত্র ৪১ বছর। তারপরও বাকী থাকছে ভারতের বিধানসভায় এই চুক্তির বিল পাস হওয়ার ব্যাপার। অতঃপর রাষ্ট্রপতির সাক্ষর তো আছেই। সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন এই বিল ভারতের বিধানসভায় পাস হতে আরো কত বছর লাগবে? সেই ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর বাংলাদেশ আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে যাওয়ার জন্য ভারতের কাছ থেকে তিনবিঘা কড়িডোরের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে গোটা বেরুবাড়ী ইউনিয়ন ভারতের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু আজ ৪১ বছর পর্যন্ত প্রতিশ্রুত সেই তিনবিঘা কড়িডোরের কোনো ফয়সালা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। পানির ন্যায্য হিস্যা আর সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে ভারতের অনেক প্রতিশ্রুতির পরও তার কোনো প্রতিফলন নেই। প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফ এর গুলিতে বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিক মারা যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের জনগণের মনে হতাশা আর সংশয় বৃদ্ধি পাছে।

করুণা নয় অধিকার চাই

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারত আমাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে, এজন্য ধন্যবাদ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ভারত বেরুবাড়ী নিয়েছে; কিন্তু তিনবিঘা কড়িডোর এখনো বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও ভারত একতরফাভাবে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করছে। ফেনী নদী থেকে শুষ্ক মওসুমে জোরপূর্বক পানি তুলে নিচ্ছে। তিস্তার পানির হিস্যা নিয়ে ভারত কোনো যুক্তিই মানছে না। বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরায় ভারতীয় পণ্য নিতে নৌ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ঠিকই দেয়া হয়েছে। ভারত এবার চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি চাচ্ছে। তাছাড়াও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে গ্যাস পাইপ লাইন নেয়ার প্রসঙ্গও আছে। একই সাথে রেলপথের কানেকটিভিটিও চাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে মংলা বন্দরের ব্যাপারে গোপন চুক্তির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এধরনের সংবাদে বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিয়ে শঙ্কিত।  অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থও জলাঞ্জলি দিতে পারে। 

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডাক্তার এ,কিউ,এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দাবি করেছেন, আমাদের অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা আমাদেরকে দিতে হবে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, চুক্তির ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ভারত আমাদের কাছ থেকে সব ধরনের সুবিধা হাতিয়ে নিতে চায়। তিনি আরো দাবি করেছেন, ভারতের সাথে পানি বন্টন চুক্তি হতে হবে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত। যা সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের কাছে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদুত মি. পঙ্কজ শরন বলেছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সকল সমস্যার সমাধান হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন ঐতিহাসিক মুহূর্তে। আমাদের প্রত্যাশাও তাই। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে প্রত্যাশার কোনো কথা এখনো জানা যায়নি ! জনগণের প্রত্যাশা সীমান্ত হত্যা বন্ধ হউক, পানির ন্যায্য হিস্যাসহ আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক।

চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে জনগণের সংশয়

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় আছে। কামিনী রায়ের কবিতার মতো ‘করিতে পারিনি কাজ, সদা ভয় সদা লাজ, সংশয় সঙ্কল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে’ এমন সংশয় পোষণ করা হচ্ছে বিষয়টি তা কিন্তু নয়। বাস্তবতার নিরিখেই এমন সংশয় দেখা দিয়েছে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। ঐ বছরই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে তা পাস হয়েছে। দীর্ঘ ৪১ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় পাস হয়েছে, এটা অবশ্যই ভালো খবর। তারপরও বিধানসভায় এ বিল পাস হতে হবে। ভারতে মোট ২৯টি প্রদেশ আছে। এই ২৯টি প্রদেশের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ টি প্রদেশের বিধানসভায় এ বিল অবশ্যই পাস হতে হবে। অতঃপর রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের জন্য অপেক্ষা। তারপর শুরু হবে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড। এ যেন লঙ্কা বহু দুর হে। অতএব এনিয়ে জনগণের সংশয় কাটছে না। ভারতের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আজও আমরা ফারাক্কার পানি পাচ্ছি না, তিনবিঘা কড়িডোর পাইনি; একতরফাভাবেই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে; সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না, এখনো বাণিজ্য বৈষম্য আছে।

ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব

পাক-ভারত স্বাধীনতাত্তোর ১৯৫০ এর দশকে ভারত ফারাক্কা বাঁধের পরিকল্পনা করলেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করে । ভাটির দেশ সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই অভিন্ন নদীর ওপর আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে ভারত পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানার নিকটবর্তী তিলডাঙ্গা নামক স্থানে গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মৌখিক আলাপের ভিত্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে। সেই থেকে ফারাক্কার প্রভাবে শুস্ক মওসুমে বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিমের ৮টি জেলার প্রায় ২ হাজার নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়-পুকুর পানি শূন্য হয়ে এলাকা মরুভূমির রূপ ধারণ করেছে। তাতে প্রায় ৬২ হাজার একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়াও ভারত বাংলাদেশের আরো ৫৪টি অভিন্ন নদীর মোহনায় বাঁধ নির্মাণ করে ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে।

পরিবেশবিদদের মতে ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের ওপর তাদের আধিপত্যবাদ ও পানিসম্পদকে মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাতে বাংলাদেশের ৮টি জেলা মরুভূমি ও প্রায় ৬ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে বর্ষা মওসুমে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারছে। ১৯৯৬ সালে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ৩০ সালা পানি চুক্তি সম্পাদিত হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন বাংলার জনগণ এখনো দেখতে পাচ্ছে না।

সীমান্ত চুক্তি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর পরই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে তা পাস হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ অঙ্গরপোতা-দহগ্রামে যাওয়ার জন্য তিনবিঘা কড়িডোরের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে গোটা বেরুবাড়ী ইউনিয়ন ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রতিশ্রুত এই তিনবিঘা কড়িডোরের কোনো ফয়সালা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তির আওতায় ১৬২টি ছিটমহল আছে। তার মধ্যে ভারতের আছে ১১১টি আর বাংলাদেশের আছে ৫১টি। আরো আছে ৬ কিলোমিটার অনির্ধারিত সীমান্তরেখা। সীমান্ত চুক্তিতে লাভের বেশির ভাগ অংশই ভারতের। যেমন সিলেট-আসাম সীমান্তে বাংলাদেশ হারাবে ৬৮৫ দশমিক ৬ একর জমির মালিকানা, যার মধ্যে অধিকাংশই খনিজ সম্পদে ভরপুর। আশার কথা বর্তমান ভারতের নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষম স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে এসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘ভারত প্রতিবেশীদের সাথে দাদাগিরি দেখাতে চায় না, ভাই হিসেবে থাকতে চায়’। এটা অবশ্যই আশার কথা, যা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায়ও এর প্রতিফলন ঘটেছে। দেখা যাক এবার বিধানসভায় কি হয় !

স্বাধীনতাত্তোর ভারতের ইতিহাস

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনে ভারতের প্রদেশ ও দেশীয় মিত্র করদ রাজ্যগুলো নিয়ে একটা সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল মি. নেহেরুর পক্ষ থেকে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রস্তাব অনুযায়ী পাক-ভারত স্বাধীনতা আইন বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মি. নেহেরু তার সে আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তিনি তার কংগ্রেস দলীয় নেতাদের দ্বারা দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারতভুক্তির চেষ্টা শুরু করে দেন, যার প্রধান নায়ক ছিলেন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, তার সেক্রেটারি ছিলেন তুখোর কূটনীতিক ভিপি মেনন। এদিকে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের সাথে মি. নেহেরু শর্ত সাপেক্ষে এক গোপন চুক্তি করেন যে, ভারত স্বাধীন হলেও তাকে (ব্যাটেনকে) ভারতের গভর্নর জেনারেল করা হবে। মি. নেহেরু ও প্যাটেলের পরামর্শে ও আশ্ব^াসে ১৯৪৭ সালের ২৫ জুলাই দিল্লিতে মাউন্ট ব্যাটেন ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হিসেবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান ব্যতীত সকল দেশীয় ও করদ রাজ্যের রাজাদের বৈঠক ডাকেন। সেখানে ব্রিটিশ ঘোষিত পাক-ভারত স্বাধীনতা চুক্তি বা আইনকে তোয়াক্কা না করে নির্লজ্জভাবে মাউন্ট ব্যাটেন সভায় আগত রাজ্যের রাজাদেরকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন যাতে তারা সকলে ভারতের সাথে যোগ দেয়। আর তাদের মিথ্যা অশ্বাস ও দেয়া হয় যে, তারা ভারতের সাথে যোগ দিলে তাদের পদবী ও সম্মান অক্ষুণœ থাকবে, অন্যথায় তাদের কোনো বিপদ হলে কিছুই করার থাকবে না। ব্যাটেনের মিথ্যা আশ্বাসে ও চাপের মুখে সেদিন জুনাগর, হায়দারাবাদ, পাঞ্জাব, ত্রিবাংকুর, যোধপুর, ভুপাল, সিকিম ও কাশ্মীর ব্যতীত সকলেই ভারতভুক্তি দলিলে সাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

ভারতের রাষ্ট্রনীতি ও ভাববার বিষয়

বাংলাদেশের তিন দিক থেকে ভারত বেষ্টিত। এখন ভারত আমাদের কাছে গ্যাস চায়, বিদ্যুৎ চায়, কড়িডোর চায়, বন্দর ব্যবহার করতে চায়। আমরা দিতেও রাজি। কিন্তু সংশয়ের বিষয় হচ্ছে, ভারতের এক সময়কার রাষ্ট্রগুরু কৌটিল্য বা চাণক্য যার বিধান বা আদেশ এখনও রাষ্ট্রীয় কর্ম কৌশল হিসেবে ভারত মেনে চলে। তার কথার সাথে কবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর, মি. নেহেরু, মি. গাদ্ধী, ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল ও ভারতের এক সময়ের কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপালনীর কথাগুলো যদি আমরা মিলাই তা হলে কি দাঁড়ায় দেখা যাক।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, সকল জাতি, ধর্ম ও বর্ণের লোকদেরকে একই দেহে লীন করতে হবে। মি. নেহেরু প্রশান্ত মহাসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত ভারতের অধীন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তিনি ছোট খাটো কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন। মি. গান্ধী উপমহাদেশে অভিন্ন সংস্কৃতি চালু করতে চেয়েছিলেন। ‘দি স্টেটসম্যান অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে মি. রবার্ট বায়রন লিখেছেন যে, হিন্দু মহাসভায় বাল গঙ্গাধর তিলক বলেছেন, মুসলমানরা বিদেশী দখলদার, অতএব, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্মূল করতে হবে। ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেছেন, আজ হোক কাল হোক সকল রাষ্ট্র ভারতের প্রতি আনুগত্য দেখাবে। কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপালনী বলেছিলেন, ভারতীয় জাতি বা কংগ্রেস কখনোই অখণ্ড ভারতের দাবি ত্যাগ করবে না।

প্রত্যেক রাষ্ট্রের বা সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু কর্মকৌশল থাকে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত যে কর্মকৌশল নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তা তারা ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই এ কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে। যেমন ভারত এক সময় তাদের রাষ্ট্রগুরু কৌটিল্যের বিধান ও উপদেশ মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করতো। যার অপর নাম ছিল, চাণক্য। তিনি ভারতের শাসকদের বলে গেছেন যে, ‘ক্ষমতা ও অন্য দেশ বিজয়ের আকাক্সক্ষা মন থেকে কখনো বাদ দেবে না’। সীমান্তবর্তী সকল রাজ্য বা রাজাকে শত্রু ভাবতে হবে। প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্ব না করে দূরবর্তীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। কারণ সারা পৃথিবী চাইলেও তুমি শান্তির কথা চিন্তা করতে পারবে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বাহ্যিক শান্তি ও সৎ প্রতিবেশী সম্পর্কের ভান করতে হবে। আর আসল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে প্রতিবেশীসুলভ আচরণকে ঢাল হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। ভারত আজও সে কৌটিল্যের বা চাণক্যের বিধান বা উপদেশ মতে কর্মকৌশল অবলম্বনেই তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। যার প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যেই ভারতের কাছ থেকে পেয়েছি।

ছিটমহল সৃষ্টি

পৃথিবীতে বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো এমন কিম্ভ^ুতকিমাকার, অদ্ভুত আর উদ্ভট মানচিত্র আর একটিও কি কেউ দেখেছেন? মি. নেহেরু ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেননি বলেই এমন অদ্ভুত মানচিত্র তৈরি করিয়েছিলেন বলে বিজ্ঞজনেরা বলছেন। মি. নেহেরু ও ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটনের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী র‌্যাডক্লিফ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তে ১৬২টিরও বেশি ছিটমহল বিশিষ্ট এক অদ্ভুত ও কিম্ভুতকিমাকার মানচিত্র তৈরি করে। যার মধ্যে অধিকাংশ রাজ্যেরই প্রায় তিন দিক ভারত দ্বারা বেষ্টিত। যাতে করে প্রয়োজনে ঐসকল ছিটমহল দখলে নিতে তেমন কোনো বেগ পেতে না হয়। ইতোমধ্যে গত (১৯৯৬-২০০০) আওয়ামী লীগ শাসনামলে পার্বত্য শান্তি চুক্তি নামে যে চুক্তি সাক্ষরিত হয় তা মূলতঃ ভারতেরই যুক্তি। ভারত এখন চাচ্ছে কড়িডোর, আশুগঞ্জ আর আখাউড়া থেকে আসাম ও আগরতলা পর্যন্ত। কোলকাতা থেকে ঢাকা-কুমিল্লা হয়ে ত্রিপুরা ও ঢাকা-সিলেট হয়ে আসাম পর্যন্ত। চায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি। ইতোমধ্যে মংলা বন্দর নিয়ে গোপন চুক্তির কথাও শোনা যাচ্ছে।

আমাদের উদারতা

ভারত আমাদের কাছে গ্যাস চায়, বিদ্যুৎ চায়, কড়িডোর চায়, বন্দর ব্যবহার করতে চায়, আর আমরা সবই দিতে রাজি ! কিন্তু আমাদের ন্যায্য হিস্যা পানির অধিকার, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, সীমান্তবর্তী জমি চাষা-বাদ, সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার, ভারত একটাও দিতে রাজি নয়। আমারা বন্ধুর দাবি পূরণ করবো, বন্ধু আমাদের ন্যায্য অধিকারটুকু দেবে না এটা কেমন বন্ধুত্ব ?  ভারতের অতীত ইতিহাস তারই সাক্ষী। স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল মাউন্ট ব্যাটেন, যিনি ব্রিটিশের ভাইসরয় লর্ড ও ছিলেন, তিনিই সর্বপ্রথম মি. নেহেরুর চাহিদা মাফিক প্রতারণার মাধ্যমে তৎকালীন সময়ে ভারতের পক্ষে অনেক রাজ্য দখল করেছেন। আর যে সকল রাজ্যকে ধমক দিয়ে কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে দখল করা সম্ভব হয়নি সে সকল রাজ্যে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে দখলে নিয়েছে।

আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র উজানের দেশ থেকে আমাদের ন্যায়সঙ্গত পানি প্রাপ্তির অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করে। প্রায় প্রতিদিন সীমান্তে চলছে হত্যা আর নির্যাতন।

আমাদের প্রত্যাশা

আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করছি, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ বাণিজ্য বৈষম্য দূর করে সৎ প্রতিবেশীমূলক আচরণ। আমাদের দাবি, করুণা নয় অধিকার চাই।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।