সংবাদ শিরোনামঃ

অনিশ্চিত তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি ** স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি বিজয় অর্জনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ** সিআইএ’র বর্বর নির্যাতন সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিয়েছে ** শেখ মুজিব বাংলাদেশের অন্যতম রাজাকার : তারেক ** নির্বাচনের চতুর্মুখী চাপে সরকার ** শাহাদাতের প্রেরণায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আহ্বান ** বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ মানেই রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা ** জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই ** মুসলিম ব্রাদারহুড কি ব্যর্থ? ** দেশব্যাপী আলোচনা সভা দোয়া মাহফিল এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ** রায়ের জন্য বিচারকদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে ** আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৫ পৌষ ১৪২১, ২৫ সফর ১৪৩৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

সোনার বাংলা রিপোর্ট : সরকারের গাফিলতি আর ভুল নীতির কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবন। গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের ভিতর শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির পর দেশে-বিদেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার বিশ্বের সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বনকে হুমকিতে ঠেলে দিয়েছে। সুন্দরবন কেবল বাংলাদেশের নয় পুরো বিশ্বের সম্পদ।  দুর্ঘটনা কখন ঘটে তা কেউ বলতে পারে না- তবে এর জন্য প্রস্তুত থাকা যেতে পারে। তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুরো জাতি সরকারে দেউলিয়াত্ব দেখেছে। ‘বড় কোনো ক্ষতি হবে না’ বলে মন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন তা ফাঁপা বক্তব্য। তার ফাঁপা কথায় কারো মন ভরেনি। এর পরিবর্তে তিনি যদি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাওয়া নদীগুলোর পরিবেশের দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করতেন কিংবা বিআইডব্লিউটি’এর কাজটা হাতে নিতেন তবে জাতি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। পরিবেশবিদ ড. আইনুন নিশাত বলেন, “শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কোনো ত্বড়িৎ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারেনি। সরকার এখনো সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে। তেল পরিষ্কারের জন্য নৌবাহিনীকে খুব দ্রুত কাজে লাগাতে পারে।” বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ট্যাঙ্কার ডুবির পরদিন সংগঠন দুটির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ট্যাঙ্কারডুবির পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা তো নয়ই, এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও সরকারের পক্ষ থেকে তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ মানেনি। বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অবিলম্বে সুন্দরবনকে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা এবং সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

পরিববেশবাদী সংগঠনগুলোর মনে করে সরকার সুন্দরবনের গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারলে এর ভিতর দিয়ে রাসায়নিক পণ্যবাহী নৌ চলাচল বন্ধ করে দিতো। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রসঙ্গে তাদের মতামতকে বিবেচনায় নিতো।

নামে ট্যাঙ্কার আসলে বালি পরিবহনের কার্গো : দুর্ঘটনা কবলিত তেলের ট্যাঙ্কার সাউদার্ন স্টার-৭ আসলে ছিল বালি পরিবহনকারী কার্গো। সূত্রে প্রকাশ, মালিক অবৈধভাবে, চলাচল অযোগ্য কার্গোটিকে তেল পরিবহনের ট্যংকারে পরিণত করেছে। ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ ‘এমটি সাউদার্ন স্টার ৭ গোপালগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ট্যাঙ্কারে করে তেল নিয়ে যাচ্ছিল। এতে সাতজন নাবিক ছিলেন। ডুবে যেতে  দেখে তাঁরা নদীতে লাফ দেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও চালক (মাস্টার) মোখলেসুর রহমান নিহত হয়েছেন। জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপক গিয়াসউদ্দিন বলেন,  ‘কার্গো জাহাজটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসে। খুলনার পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েলবোঝাই ট্যাঙ্কার নিয়ে জাহাজটি গোপালগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিল। ঘন কুয়াশার কারণে জাহাজটি শ্যালা নদীতে  নোঙর করে। গত ৯ ডিসেম্বর ভোর ৪টার দিকে বিপরীত দিক থেকে আসা এমটি টোটাল নামের আরেকটি খালি কার্গো জাহাজ আমাদের জাহাজটিকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে জাহাজটির মাথার অংশ ডুবে যায়, আর তেল বের হতে শুরু করে।’

দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কা : সুন্দরবনের মধ্যে ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কার থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার বিষাক্ত পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচএফও) বা ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরবন এলাকার নদী-খালসহ ৭০ কিলোমিটার এলাকায়। জোয়ারের সঙ্গে এই তেল চলে এসেছে খুলনা নগরীসংলগ্ন রূপসা নদীতেও। এভাবে  তেল ছড়িয়ে পড়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এ পর্যন্ত তেল অপসারণের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেনি সরকারি সংস্থাগুলো। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দীর্ঘ মেয়াদে এ অঞ্চলের বেশির ভাগ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী অক্সিজেন ও খাদ্যসঙ্কটে পড়ে মৃত্যুর মুখে পড়বে। এ সময়টি মাছ, ডলফিন প্রভৃতির প্রজননের সময় হওয়ার কারণে ক্ষতির পরিমাণ হবে আরও বেশি। অধিকাংশ জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাবে। বন বিভাগ ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মংলা থানায় মামলা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ক্ষতির প্রভাব আইলার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ফার্নেস অয়েল যে কোনো জ্বালানি  তেলের চেয়ে ভারী। তেলের কারণে সুন্দরবনে দুই ধরনের প্রজাতির প্রভাব পড়বে। প্রথমত, তেলের স্তরের কারণে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না। এতে নদীতে থাকা মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর অক্সিজেন সঙ্কট  তৈরি হয়। তারা খাদ্য তৈরি করতে পারে না। তিনি বলেন, এ সময়টা মাছের ডিম দেয়ার সময়। তেলের কারণে মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া শ্যালা নদী ডলফিনের অভয়ারণ্য ও কুমিরের প্রজনন স্থান। জ্বালানি তেলের কারণে এদের শারীরিক সমস্যা হবে, এমনকি প্রজনন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাবিউল ইসলাম খান বলেন, সুন্দরবনসহ ম্যানগ্রোভের বড় বৈশিষ্ট্য শ্বাসমূলের সাহায্যে অক্সিজেন গ্রহণ। তেলের স্তরের কারণে গাছের শ্বাসমূলের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে অক্সিজেন সঙ্কটে গাছগুলো একসময় মারা যাবে। তিনি বলেন, নিয়মিত জোয়ার-ভাটা ও দ্রুত তেল অপসারণ করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

অবৈধ রুট, আগেও ডুবেছে নৌযান : সুন্দবনের ভেতর দিয়ে শ্যালা নদীর এ নৌরুট অবৈধ। বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ রুট দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান না চালানোর জন্য গত তিন বছরে বহুবার সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রভাবশালী মালিকরা গায়ের জোরে এ রুট ব্যবহার করে বিপজ্জনক নৌযান চালিয়েছেন। এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম খোকন ও পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ জানান, বন বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে তিন বছরের বেশি সময় ধরে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ও পণ্যবাহী কার্গো চলাচল করছে। অবিলম্বে এই নৌরুটে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করা জরুরি। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ভোরে এই শ্যালা নদীতেই ডুবে যায় নৌযান এমভি শাহীদূত। ঘন কুয়াশায় লঞ্চটি শ্যালা নদীর একটি ডুবোচরে আটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে এর ডেকের তলা ছিদ্র হয়ে যায়। একপর্যায়ে ভেতরে পানি ঢুকে কাত হয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। ওই নৌযান এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে এই নৌপথ বন্ধ করে মংলা ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেলটি চালূ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রথম অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ পলি জমে ভরাট হওয়া আন্তর্জাতিক এই নৌ-রুট এর প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় খনন কাছ শুরু হলেও গত চার মাসে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব ৫টি ড্রেজার দিয়ে খনন করেছে মাত্র চার কিলোমিটার এলাকা।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক এই নৌরুটে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী অংশে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ চালিয়ে এক পর্যায়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল বিআইডাব্লিউটিএ। আবার কাজ শুরু হলেও চলছে ধীর গতিতেই। এ অবস্থার অবসান না হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।