সংবাদ শিরোনামঃ

অনিশ্চিত তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি ** স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি বিজয় অর্জনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ** সিআইএ’র বর্বর নির্যাতন সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিয়েছে ** শেখ মুজিব বাংলাদেশের অন্যতম রাজাকার : তারেক ** নির্বাচনের চতুর্মুখী চাপে সরকার ** শাহাদাতের প্রেরণায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আহ্বান ** বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ মানেই রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা ** জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই ** মুসলিম ব্রাদারহুড কি ব্যর্থ? ** দেশব্যাপী আলোচনা সভা দোয়া মাহফিল এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ** রায়ের জন্য বিচারকদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে ** আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৫ পৌষ ১৪২১, ২৫ সফর ১৪৩৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

রুদাবাহ সিমরাহ, অনইসলামডটনেট : সম্প্রতি ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী আরএসএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মুসলমানদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার। অভিযোগে বলা হয়, ভারতের আগ্রায় মুসলমানদের দারিদ্র্যতাকে পুঁজি করে আরএসএস তাদেরকে জোর করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য চাপ দিচ্ছে। মুসলমান হলে তাদেরকে রেশন ও আর্থিক সুবিধাসহ আরও নানা সুযোগ দেয়ার প্রলোভনও দিচ্ছে তারা। আরএসএসের এই কৌশলে বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী গ্রুপ ‘দ্য শাং পরিবার দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের অভিযোগ করে আসছে। শাং পরিবারের দাবি, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা দরিদ্র হিন্দুদেরকে অর্থের বিনিময়ে খ্রিস্টধর্মে ও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। যদিও তাদের সেই অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে অনইসলাম ডট নেটকে জানিয়েছেন চেন্নাই ভিত্তিক রাজনীতিবীদ ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর নেতা অধ্যাপক এম এইচ জাওয়াহিরুল্লাহ। তিনি আরও বলেন, “আগ্রায় দরিদ্র মুসলমানদের যে লোভনীয় প্রলোভন দেখানো হচ্ছে তা খুবই ষড়যন্ত্রমূলক। আর এছাড়া সেখানে এই অপকর্ম করতে গিয়ে শাং পরিবারের সদস্যরা হাতে নাতে ধরা পড়েছে।”

এই বিষয়টা আবার নতুন করে আলোচনায় আসে গত ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে যখন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক পৃষ্ঠপোষক আরএসএস দাবি করে যে, আগ্রার বস্তিবাসী ৬০টি মুসলিম পরিবারের ৩০০ জন মুসলিম সদস্য হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে।   

আরএসএসের দুটি অঙ্গ সংগঠন ‘ধর্ম জাগরণ সমন্বয় বিভাগ (ডিজেএসভি) এবং বজরং দল এই ধর্মান্তরিতকরণ নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ধর্মান্তরের এই সংবাদটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অনেক মুসলমানই ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

বিক্ষুব্ধ মুসলমানরা জানায় তাদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে হিন্দুদের ঐ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা আরও জানান, তারা সবাই এখনও মুসলমানই আছেন।

এরকমই একজন মুসলমান এবিপি নিউজ চ্যানেলের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানান, “আমাদের কোনো রেশন দেয়া হয় না। আমাদের বিপিএল (বিলো পোভার্টি লাইন) কার্ডও দেয়া হয়নি। এই দুই সুবিধা দেয়ার কথা বলে একটি হিন্দু গ্রুপের সদস্যরা আমাদেরকে ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলেছিল। যখন আমরা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাই, তখন তারা আমাদেরকে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ব্যাপক চাপ দেয়। আমরা খুবই আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে চারপাশে অসংখ্য হিন্দু লোক থাকায় আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।”

ঐ অনুষ্ঠানটি আরএসএসের কিছু কর্মীরা আয়োজন করে। ঐ অনুষ্ঠানের আগে আরএসএস কর্মীরা আগ্রার ভেদ নগরের এক বস্তিতে দরিদ্র মুসলমানদের কাছে যায় এবং তাদেরকে রেশন কার্ড, বিপিএল কার্ড এবং আরও কিছু আর্থিক সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এ্ই মুসলিমরা ১০-২০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাইগ্রেট করে আগ্রায় এসেছিল এবং বর্তমানে তারা ছোট বা ছেড়া কাপড় টুকিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এই এলাকার মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রেশন ও বিপিএল কার্ড পাওয়ার জন্য খুব আগ্রহী। তাই তারা হিন্দু নেতাদের প্রস্তাবকে সরলভাবে গ্রহণ করেছিল। 

ইসলমাইল খান নামে একজন মুসলমান নেতা এই প্রসঙ্গে অনইসলাম ডট নেটকে জানান, “আমি এরকম প্রায় ৫৭টি মুসলিম পরিবারকে জড়ো করেছিলাম যাদের রেশন বা বিপিএল কার্ড নেই। হিন্দু নেতারা আমাদের কাছে গিয়ে ওয়াদা করেছে যে, এই কার্ডগুলো পাওয়ার ব্যপারে তারা সহযোগিতা করবে। এই কার্ডগুলোর ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহের কারণ হচ্ছে, এগুলো থাকলে সরকারের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেতে, বাচ্চাদের ভালো স্কুলে পড়াতে, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেতে এবং বিনামূল্যে আবাসন সুবিধা পেতে সুবিধা হয়। দরিদ্র মুসলমানেরা হিন্দুদের সেই আশ্বাসে বিশ্বাস করেছিল। তারা ভেবেছিল আল্লাহ তাদের উপর দয়া করেছেন বলেই সাহায্যকারী হিসেবে সেই হিন্দুদেরকে পাঠিয়েছেন।”

ভেদ নগরের অধিকাংশ মুসলমানের বিপিএল কার্ড না থাকায় তারা এই সব লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে যায়। শাং পরিবারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৮ ডিসেম্বর ইসমাইল খান ঐ বস্তির নিকটেই একটি জায়গায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানকে জড়ো করেছিল। খান আরও জানায়, হিন্দু নেতারা চেয়েছিল যাতে আমাদের অধিকাংশ মাথায় মুসলিম টুপি ও মহিলারা বোরখা পড়ে সেই অনুষ্ঠানে যায়। অনুষ্ঠানটি ধারণ করার জন্য ক্যামেরা আনা হয়েছিল এবং আরও কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী হিন্দু ব্যক্তিও সেখানে ছিল। 

খান বলেন, “আমরা ধর্মান্তরিতকরণের বিষয়টি জানতাম না। আমরা জানতাম, আমাদেরকে সংখ্যালঘু দরিদ্র মুসলমান হিসেবে সেখানে নেয়া হয়েছে। আমাদেরকে বিপিএল কার্ডপ্রাথী হিসেবেই সেখানে দেখানো হবে।

কিন্তু যখন কিছু হিন্দু ব্রাহ্মণকে সেখানে নিয়ে আসা হয় এবং যখন হিন্দু নেতারা সেখানে হাভান (হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের আগুন) সেখানে প্রজ্বলিত করেন এবং আমাদেরকে আগুনের কাছে গিয়ে আমাদের চাওয়াগুলো বলতে বলে, তখনই আমরা শঙ্কিত হয়ে যাই। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ দিকে গিয়ে তারা জানায়, আমরা নাকি আর মুসলমান নেই, হিন্দু হয়ে গিয়েছি। তারা আমাদেরকে একটি কালীমূর্তি দেয় এবং আমাদের বস্তিতে গিয়ে তা স্থাপন করতে আদেশ দেয়। ” কেন তারা ঐসব কাজের প্রতিবাদ করেনি, সেটা জিজ্ঞেস করা হলে ইসমাইল জানান, তারা ভয়েই কিছু করার সাহস পায়নি।

ঐ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া মুরশিদা বিবি জানান, “যখন আমাদেরকে আগুনে ঘি এবং মাখন ঢালতে বলা হয় তখন আমার মতো সব মুসলমানেরাই শংকিত হয়ে পড়ে। আমরা বুঝতে পারি যে আমরা অন্যায় কিছু করতে যাচ্ছি। কেননা আমাদের কেউই হিন্দু ধর্মীয় রীতি মানতে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু আগ্রাসী চেহারা নিয়ে অসংখ্য হিন্দু আমাদের চারপাশে থাকায় আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।”

অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার পর বজরং দলের স্থানীয় নেতা আজ্জু চৌহান বলেন, দীর্ঘ দিনের চেষ্টার পর আমরা পুনরায় তাদের নিজ ধর্মে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এ্ই মুসলমানরা মাত্র তিন-চার দশক আগেও হিন্দু ছিল। এখন তারা তাদের নিজেদের ঘরে অর্থাৎ হিন্দু ধর্মে ফিরে এসেছে। তারা স্বেচ্ছায় এই ধর্মান্তকরণ অনুষ্ঠানে এসেছে এবং তারা আনন্দের সাথেই হিন্দুত্বকে গ্রহণ করেছে। তাদেরকে কোনো প্রলোভন দেখানো হয়নি। তারা আমাদের দরিদ্র ভাইবোন। আমরা তাদেরকে বিপিএল ও রেশন কার্ড পেতে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবো।”

চৌহানের এই দাবি অস্বীকার করেন সাজু নামে আকেজন মুসলমান। তিনি বলেন কোনো মুসলিম সেই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় যায়নি।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের অংশগ্রহণকারীদের দুইজন হিন্দু নেতাদের প্রশ্ন করেছিল যে, বিপিএল পাওয়ার জন্য কেন হিন্দু আচারাদি পালন করতে হবে? কিছু গণ্যমান্য হিন্দু লোক তখন তাদের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলেছে, যা বলা হয়েছে, করো। পাল্টা প্রশ্ন করোনা। আমরা তখন নীরবে ব্রাহ্মণের নির্দেশিকা অনুসরণ করেছি। আমাদের ভয় ছিল যদি আমরা প্রতিবাদ করি, উগ্র হিন্দুরা ক্রুদ্ধ হবে এবং আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে বা বস্তি থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদ করে দেবে। তাছাড়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে দাঙ্গা বা হিন্দু নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আমাদের অন্য মুসলমান ভাইদের উপর তীব্র অত্যাচারও নেমে আসতে পারে। এই সব ভেবে আমরা তাদের কথা নীরবে মেনে নিয়েছি।” ভারতের সব মুসলিম সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম, নয়া দিল্লি ভিত্তিক অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিসে মুশাওয়ারাত (এআইএমএমএম) এর সভাপতি জাফারুল ইসলাম খান বলেন,“ভারত ক্রমশ একটি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে এবং এখানে হিন্দু ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্ম পালনের স¦à¦¾à¦§à§€à¦¨à¦¤à¦¾ ক্রমশই খর্ব করে দেয়া হচ্ছে। যদি কেউ ইসলাম বা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং বলা হয় অনেক প্রলোভন দেখিয়ে তাকে হিন্দু ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু আরএসএস বা ভিএইচপিরা যখন মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করে তখন তাদের কোনো সমস্যা হয় না। যদিও এত সব চক্রান্ত আর প্রলোভন দেখানোর পরও এই সব উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্য সাধন হয় না। তারা তাদের কাক্সিক্ষত সফলতা পায় না।”

তিনি আরও বলেন, “হিন্দু সংগঠনগুলো সব সময় নানা ছবি ও ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, এই সব মুসলমানেরা ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে হিন্দু ছিল। আগ্রার ধর্মান্তর ঘটনার ক্ষেত্রেও তারা একই কৌশল নিয়েছে। তবে এবার তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সব প্রমাণাদি যে মিথ্যা ও বানোয়াট তা এখন দিবালোকের মতোই সত্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, প্রশাসন এই সব মৌলবাদী সংগঠনগুলোর ব্যাপারে বরাবরই নীরব ভুমিকা পালন করে।” দারুল উলুমের উপাচার্য ও মুহতামিম মাওলানা মুফতি আবুল কাশিম নোমানী এই প্রসঙ্গে বলেন, মুসলমানদের কারও উপরই ধর্মান্তরিত হওয়ার ব্যপারে কোনো বিধি নিষেধ নেই। তবে যদি সরকার যদি বুঝতে পারে যে কোনো কৌশলে, বা চাপ দিয়ে বা প্রলোভন দেখিয়ে মুসলমানদের ধর্মান্তর করা হচ্ছে তাহলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকেই তারা শাস্তি দিতে পারে।”

অনুবাদ : আলী আহমাদ মাবরুর

www.onislam.net

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।