সংবাদ শিরোনামঃ

নির্বাচনী বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে ** ত্রুটিপূর্ণ আইনে জামায়াত নেতাদের বিচার করা হচ্ছে ** রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিন ** সরকার দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ** দেশ আজ গভীর সঙ্কটে॥ প্রয়োজন দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ** জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নয় উৎপাদন বাড়ান ** আরো এক কাপুরুষ জেনারেলের কাহিনী ** দুঃস্থ সাংবাদিকতা ** নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ** সিলেট বগুড়া ও রাজশাহীতে শিবিরের মিছিলে পুলিশের গুলি ** কবি ফররুখ আহমদ এক দুঃসাহসী সিন্দাবাদ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪২১, ২৭ মহররম ১৪৩৬, ২১ নভেম্বর ২০১৪

॥ খন্দকার মহিউদ্দীন আহমদ॥
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামার মিয়ানমার সফর এবং আসিয়ান ও ইস্ট এশিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে জাতিসংঘের নতুন এক খসড়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমতাভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের খসড়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ইস্যুতে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এর ‘রাখাইন অ্যাকশন প্লান’ থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাখাইন অ্যাকশন প্লানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অযোগ্যই ঘোষণা করা হয়নি উপরন্তু তাদের গ্রেফতার ও দেশ থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে  সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পরিকল্পনা তৈরি করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা বেন রোডস মিয়ানমারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা দেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা নতুন একটি পরিকল্পনা চাই, যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পাবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কেউ বাঙ্গালি বলে স্বীকার না করলে তাকে বন্দী শিবিরে পাঠানোর যে নীতি মিয়ানমার সরকার নিয়েছে তা থেকে সরে আসতে হবে, এই নীতি সার্বজনীন মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন বেন রোডস। মিয়ানমারের গণতন্ত্রীপন্থী নেত্রী অং সন সুচিকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তাকে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখজনক হলেও সত্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচির ভূমিকা বাস্তবধর্মী নয়, তিনি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে চলেছেন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাজনৈতিক ধারায় ফিরিয়ে আনা ও নাগরিকত্বের ইস্যুতে তার কোনো ভূমিকাই লক্ষ্য করা যায়নি। তার নিরবতা প্রকারান্তরে দাঙ্গা সৃষ্টিকারী বৌদ্ধদের সমর্থন দেয়ারই নামান্তর। অন্যদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যে বৈষম্য ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে তাতে আমি উদ্বিগ্ন। রাখাইন রাজ্যের জনগণের মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার প্রতি সবার সম্মানে প্রদর্শন করতে হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতা জোট আসিয়ান ও পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর জোট ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সরকারের ওপর রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের পক্ষ থেকে সরাসরি একটি জোড়ালো বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের এই উদ্যোগ সফল হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার ফিরে পাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

বহু দশক ধরে চলা নিবর্তনমূলক আইন ও সেনা শাসনে রোহিঙ্গাদের বৈধ নাগরিকত্ব শুধু কেড়েই নেয়া হয়নি বরং তাদের বাঙ্গালি বলে বিতাড়িত করা হয়েছে। শত শত বছর ধরে বসবাসকারী এই মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাখাইন এ্যাকশন প্লান এর নামে সরকারিভাবে রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। মিয়ানমার সরকার তাদের বাঙালি পরিচিতি গ্রহণে বাধ্য করছে অথচ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তারা এই দেশটিতে বসবাস করে আসছেন। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের চিরতরে নির্মূল করার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ জনপদ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আরাকান বা রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে বলে তাদের বাঙালি চিত্রায়িত করে ‘পুশব্যাক’ নীতি গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। বর্তমান প্রেসিডেন্টের বর্ণবাদী নীতির আওতায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি গ্রেফতার ও দেশ থেকে বহিষ্কারের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিগত পরিচয়ের জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর যেসব শর্তারোপ করা হয়েছে সেসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে মুসলমানরা। সমতাভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। রোহিঙ্গাদের কেউ নিজেকে বাঙালি বলে স্বীকার না করলে তাকে বন্দী শিবিরে পাঠানোর অবৈধ নীতি থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা।

গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমার সরকারের সংস্কার কার্যক্রম কার্যত আবারো পিছনের দিকে হাঁটছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পরিকল্পনা তৈরি করার পরিবর্তে তাদের বন্দী শিবিরে পাঠানোর পশ্চাৎপদ নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গারা যে বৈষম্য ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে তার কারণ সরকারের বর্ণবাদী নীতি। সরকার আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে। বর্ণবাদী বৌদ্ধরা এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি করে রেখেছে যাতে করে রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগ করতে ও ভিটাবাড়ি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত হয়। অথচ এটা সর্বজনীন মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০১২ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উস্কে দেয়া দাঙ্গায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং কয়েক হাজার মৃত্যুবরণ করেছে। ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্বের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের ভূমিকা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিবর্তনমূলক আইন হয়রানি ও রোহিঙ্গা বিরোধী নীতি থেকে সরে আসতে ও সংস্কারের দ্রুত প্রক্রিয়া হাতে নিতে চাপ প্রয়োগের চলমান কৌশলকে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলোকে গ্রহণ করতে হবে। বিকল্প পথে চলার সুযোগ সৃষ্টি হলে মিয়ানমারের বর্ণবাদী সরকার সে পথেই হাঁটবে, ফলে দেশটিতে শান্তি আসবে না। সংস্কারের বিষয়ে সরকারের মন্থর গতির ফলে দেশটি আবারও পিছনের দিকে হাঁটছে বলে যে মন্তব্য প্রেসিডেন্ট ওবামা করেছেন, তা যুক্তিসঙ্গত বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কমিটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে বিপুল ভোট মিয়ানমার সরকারের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে যাবে। আন্তর্জাতিক জনমত তাদের বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক নীতির পক্ষে নয়। এমন অবস্থানের প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার সরকারের নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।  রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ফলে তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়  মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ফিরে পাবে এবং রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। Email : mohi_ahmad15@yahoo.com

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।