সংবাদ শিরোনামঃ

খুনিদের বিচার করতে হবে ** দেশে সঙ্কট আরো বাড়বে ** লাগামহীন লুটপাটের যোগান দিতেই সরকার দাম বাড়াচ্ছে ** ব্যাংকিং খাতে সীমাহীন লুটপাট ** গাজায় গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিচার দাবিতে বিশ্ব জনমত গঠন করতে হবে ** বাংলাদেশে অদ্ভুত কাণ্ড শুরু হয়েছে ** প্রতি বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে ** গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া জনগণের জানমাল নিরাপদ নয় ** এ এক অসহায়ত্বের যুগ ** বাংলাদেশ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ ** নাটোরে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪ ** পুলিশের গুলিতে পা হারাল সাজু ** তেঁতুলিয়ার টুপি কারখানার শ্রমিকরা মহাব্যস্ত ** ২৮ অক্টোবর : ইতিহাসের কালো অধ্যায় ** মানবতার কান্না ** ২৮ অক্টোবর ও তার বেনিফিশিয়ারি ** ২৮ আক্টোবর যেন ফিরে না আসে বার বার ** রক্তের তৃষ্ণা প্রবলতর হয়েছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৯ কার্তিক ১৪২১, ২৮ জিলহজ ১৪৩৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৪

গত ২০ অক্টোবর সোমবার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গুরুদাসপুর উপজেলার শিধুলী গ্রামের ১৪ সারিবদ্ধ লাশের নামাজে জানজা ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় শিধুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

সোনার বাংলা ডেস্ক : দেশের ৩৪৯২ কিলোমিটার মহাসড়ক ও ৪২৬৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক চলাচলের জন্য সম্পূর্ণরূপে অরক্ষিত। প্রতিদিনই এই পৌনে ৮ হাজার কিলোমিটার সড়কের কোথাও না কোথাও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। মুখোমুখি সংঘর্ষ অথবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যানবাহন খাদে পড়ে গেলে প্রাণহানি হচ্ছে অনেক লোকের। সড়ক অতিক্রম করার সময় অথবা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারীদের চাপা দিলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সড়ক নিরাপদ করার জন্য গত ১০ বছর ধরে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন আন্দোলন করছে। কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে শুধু শোক বাণী দেয়া এবং আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়া ছাড়া কিছুই করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিহত ও আহতদের পরিবারকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা লাইসেন্স বিহীন চালক অথবা ভূয়া লাইসেন্সধারী চালক দিয়ে গাড়ি চালনার প্রতিবাদ করেন। লাইন্সেধারী চালক দিয়ে গাড়ি চালনা এবং দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত চালককে শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়; কিন্তু এতে দুর্ঘটনা কমছে না। প্রতি বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে।

সোমবার নাটোরের বড়াইগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। এর আগে গত ১২ আক্টোবর সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- চলতি বছরে প্রায় ২০ হাজার ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ। এদের প্রায় ১০ হাজার পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার উপরে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গত ৬ মাসে দেশে ৩ হাজার ২৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনা সঙ্ঘটিত হয়েছে। এ সব দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৭৭০ যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক নিহত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৩ হাজার ২৫৬টি। আহত হয়েছেন ১০ হাজার ২৭৮ জন। এর মধ্যে হাত-পা বা অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন ৯২৩ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় ৮১২টি বাস, ১ হাজার ২২টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৩৪২টি হিউম্যান হলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ১৩৫টি প্রাইভেটকার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৫১৪টি অটোরিকশা, ৮৪৯টি মোটর সাইকেল, ৩১৫টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৫১৩টি নসিমন-করিমন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৩৬১ ছাত্র, ৭০ শিক্ষক, ২৬ সাংবাদিক, ২৭ ডাক্তার, ১৭ আইনজীবী, ১৭ ইঞ্জিনিয়ার ও ১৪৮ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া ১০৮ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ৭৭ সরকারি কর্মকর্তা, ১ হাজার ১৫৯ নারী ও ৬৯৮ শিশু এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ পরিবারই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। আর মামলা হয়েছে মোট এক হাজারটি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীতে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কা বা চাপায় মানুষ নিহত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২ জন করে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। পথচারী ও গাড়ি চালকরা সচেতন হলেই এই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ‘বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি : বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক  গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের দুর্ঘটনাপ্রবণ জেলা হিসেবে উঠে এসেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানের মোট দৈর্ঘ্য ৫৭ কি.মি.। মোট দুর্ঘটনার ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ ঘটে বাসস্ট্যান্ডে, তারপরেই ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে সড়কের পাশের বাজার এলাকা। ২৮ দশমিক ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বাজারে। আর দায়ী যানবাহনের তালিকায় সবার আগে উঠে এসেছে বাস। মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৮ শতাংশ হয় বাসের কারণে। এ ব্যাপারে ব্র্যাকের  পরিচালক (স্ট্রাটেজি, কমিউনিকেশন এ্যান্ড ইমপাওয়ারমেন্ট) আসিফ সালেহ বলেন, রোড মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তুলতে হবে। চালকরা প্রতিদিন ১৬/২০ ঘণ্টা পরিশ্রম করে। তাদের কোনো বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। তারা ট্রিপ ভিত্তিক গাড়ি চালায়। ফলে সময় ও ট্রিপ ধরার জন্য তারা তাড়াহুড়ো করে গাড়ি চালাতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে চালকদের দিকে বাস মালিকদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকের দক্ষতার অভাব, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, ট্রাফিক আইন না মানা, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, চালকের গতিসীমা না মানা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, যেখানে সেখানে রাস্তা পার হওয়া, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং রোড ডিভাইডারের অভাবও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। অভিযোগ রয়েছে ৬১ শতাংশ গাড়িচালক পরীক্ষা না দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিচ্ছেন। বর্তমানে বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন বহু চালক। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে।

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান ইত্তেফাককে বলেন, চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, পথচারীদের অসতর্কতা এবং ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ও লক্কর ঝক্কর গাড়ির কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য প্রতি বছরই সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। দুর্ঘটনার জন্য শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে চালকই দায়ী। বড় বড় দুর্ঘটনার পরপরই সবাই সোচ্চার হলেও পরবর্তীতে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পান না। ফলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, শুধু আইন করেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না-চাই জনসচেতনতাও। ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও উন্নত করা দরকার এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

অন্যদিকে, দেশের মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-মেঘনাঘাট (দাউদকান্দি), ঢাকা-নবীনগর এবং ঢাকা-জয়দেবপুর এই একশ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেন এবং ডিভাইডার রয়েছে বলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কম। বিশেষ করে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অন্যান্য মহাসড়কগুলোতে এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে বলে সড়ক বিশেষজ্ঞগণ মত দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে। ২০১২ সালে এই হাসপাতালে ২১ হাজার নয়জন ভর্তি রোগীর মধ্যে ৪৬ শতাংশ অর্থাৎ নয় হাজার ৬৬৪ জন ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।