সংবাদ শিরোনামঃ

সরকারের শেষ রক্ষা হবে না ** চাণক্যদের নোংরা খেলা ** ১০০ বছরের জ্বালানি সম্পদ হারিয়েছে বাংলাদেশ ** আফগানিস্তানে মতৈক্যের সরকার এবং শান্তির প্রত্যাশা ** সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণে মানুষ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ** কুরবানির পশুর চামড়া ক্রয় বিক্রয়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন ** লতিফ সিদ্দিকী বনাম কাদের সিদ্দিকী ** জিতেছে চাঁদ দেখে পক্ষ ** ঝিনাইদহে সরকারি বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ নেতার মার্কেট ** কবি ফররুখ আহমদের শিশু কবিতায় বিচিত্র পাখি **

ঢাকা, শুক্রবার, ২ কার্তিক ১৪২১, ২১ জিলহজ ১৪৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৪

কবি র্ফরুখ আহমদের শিশু কবিতায় বিচিত্র পাখি

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর রচনায় নতুন আমেজ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সমাজ বিনির্মাণের নির্দেশনা। তিনি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের সব পথকে তুলে এনেছেন তাঁর সাহিত্য কর্মে। যদিও তিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন কারণে-অকারণে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি প্রবাহমান নদীর মতোই বয়ে চলেছেন মানুষের হৃদয়ে। বর্তমান অস্থির ও নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজে উত্তরণের জন্য ফররুখ আহমদকে পাঠ করা হয় ব্যাপকভাবে। ফলে মানুষের মাঝে ভুল তথ্য দিয়ে যারা তাঁকে সমালোচিত করে তুলেছিলেন তারাই আজ অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে।

ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর রচনায় নতুন আমেজ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সমাজ বিনির্মাণের নির্দেশনা। তিনি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের সব পথকে তুলে এনেছেন তাঁর সাহিত্য কর্মে। যদিও তিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন কারণে-অকারণে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি প্রবাহমান নদীর মতোই বয়ে চলেছেন মানুষের হৃদয়ে। বর্তমান অস্থির ও নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজে উত্তরণের জন্য ফররুখ আহমদকে পাঠ করা হয় ব্যাপকভাবে। ফলে মানুষের মাঝে ভুল তথ্য দিয়ে যারা তাঁকে সমালোচিত করে তুলেছিলেন তারাই আজ অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে।

ফররুখ আহমদ একজন কবি হলেও সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ যেমন ছিল তেমনি সফলতাও অবিশ্বাস্য রকমের। তিনি ইসলাম ও বাংলার ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে যেভাবে জাগরণ তৈরি করেছেন সেভাবে আর কোনো কবি বা সাহিত্যিক পেরেছেন কিনা ভবিষ্যৎ তা হয়তো বলে দিবে। বিশেষ করে সনেট লেখায় তিনি নব দিগন্তের সূচনা করেছেন বিশ্ব সাহিত্যে তা নির্দ্বিধায় অতুলনীয়। তাঁর ব্যঙ্গ সনেট আজও একক স্থানে দাঁড়িয়ে বলে চলেছে তিনি সনেটকে নতুন মাত্রায় সাহিত্যে স্থান দিয়ে হোরেস, সেক্সপিয়র ও স্পেনসারের সনেটিয় ধারণাকে প্রসারিত করেছেন।  উল্লিখিত বিষয়টি যেমন অনুচ্চারিত তেমনি তাঁর শিশু সাহিত্যও খুব একটা আলোচিত হয়না। এ বড় পরিতাপের বিষয়। কেননা, তিনি স্বার্থকতার সাথে একুশটি শিশু কাব্য রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘পাখির বাসা’, ‘হরফের ছড়া’, ‘নতুন লেখা’, ‘ছড়ার আসর’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘ফুলের জলসা’, ‘কিসসা কাহিনী’, ‘আলোক লতা’, ‘পোকামাকড়’, ‘হিবিজিবি’ ।

এমনিতেই শিশু সাহিত্য বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। কারণ শিশুদের মনজগতের গভীরে প্রবেশ না করে ও তাদের সময়োপযোগী চাহিদাকে শব্দের গাঁথুনি দিয়ে নির্মাণ করা সত্যি দুরহের কাজ। আর এ কাজটি করেছেন ফররুখ আহমদ। প্রকৃতির রূপকে ও বন-জঙ্গল, পশু-পাখি, গাছ-গাছালি, নদী-পাহাড়-সাগর এবং কল্পনার জগতের সব তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর শিশু সাহিত্যে। তিনি বিচিত্র পাখির বর্ণনার মধ্যদিয়ে যেভাবে শিশুদের সমাজের নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতি ও প্রকৃতির বর্ণনা দিয়েছেন তা তুলে ধরার প্রয়াস পাব। আর এ প্রয়াসের জন্য ফররুখ আহমদের প্রথম শিশু কাব্যগ্রন্থ ‘পাখির বাসা’র নির্বাচিত কবিতার আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।

‘পাখির বাসা’ গ্রন্থে সাতটি অনুচ্ছেদে মোট পয়ত্রিশটি ছড়া-কবিতা সংকলিত হয়েছে। অনুচ্ছেদগুলি যথাক্রমে এরূপ : পাখির বাসা, মজার ব্যাপার, পাখ-পাখালি, পাঁচ মিশালী, রূপ-কাহিনী, সিতারা ও চলার গান।

বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত কবিতার শিরোনাম : পাখির বাসা (পাখির বাসা, ঘুঘুর বাসা, বকের বাসা, প্যাঁচার বাসা, গাঙ শালিকের বাসা, বাবুই পাখির বাসা, চড়–ই পাখির বাসা), মজার ব্যাপার (মজার ব্যাপার, মজার কোরাস, মেলায় যাওয়ার ফ্যাঁকড়া, নরম গরম আলাপ, দুড়ের কীর্তি, দাদুর কিস্সা), পাখ-পাখালি (পাখ-পাখালি, টুনটুনি, কাঠ-ঠোকড়া কুটুম পাখি, টিয়ে পাখি, ফিঙে পাখি, মাছ রাঙা, শীতের পাখি), পাঁচ-মিশালী (ঝড়ের গান, বৃষ্টির গান, বর্ষা শেষের গান, শরতের গান, শীতের গান, ফাল্গুনের গান, চৈত্রের গান), রূপ-কাহিনী (শাহজাদী, শাহজাদা), সিতারা (সিতারা, জঙ্গীপীর, তিতুমীর), চলার গান (আশা উঁচু রাখ্, তোরা চাসনে কিছু, তোরা চলরে ছুটে)।

ফররুখ আহমদ শিশুদের ঝিমিয়ে পড়া মনকে জাগিয়ে তোলার জন্য জিজ্ঞাস করছেন কোথায় তিনি মজা পাবেন। ‘মজার ব্যাপার’ কবিতার শুরুতেই বলছেন,

মজার ব্যাপার! মজার ব্যাপার!

কোথায় পাব মজার ব্যাপার?

চলছে-সব-ই সোজাসুজি

তাইতো মিছে খোঁজাখুঁজি

ভেবে ভেবে হদ্দ সবাই,

মজার ব্যাপার পাই কোথায় ভাই?

অবশেষে তিনি যে মজার ব্যাপর খুঁজছিলেন তা পেয়ে গেছেন। আর মজার ব্যাপরটি হলো পাখির বাসা খোঁজা। কখন কোথায় কিভাবে খুঁজতে হবে সবই তিনি বিভিন্ন কবিতায় বলেছেন। একই কবিতায় তিনি সব বলেননি, কারণ সব পাখির বৈশিষ্ট্য এক নয়। ‘পাখির বাসা’ কবিতায় তিনি শিশুদের আহ্বান জানিয়ে বলেন,

আয় গো তোরা ঝিমিয়ে পড়া

                        দিনটাতে,

পাখির বাসা খুঁজতে যাব

                        এক সাথে॥

কেন তিনি অন্যদিনের কথা না বলে কেবল ঝিমিয়ে পড়া দিনের কথা বলেছেন? কারণ, এ সময়ে পড়াশোনর ঝামেলা নেই এবং আলস্যে দিন কাটিয়েও কোনো লাভ নেই। অর্থাৎ তিনি যখন তখন পাখির বাসা খুঁজে সময়কে অপচয় করার পক্ষপাতি নন।

কোন পাখি কোথায় বাসা বাঁধে এবং কখন বাসায় থাকে তাও তিনি নিপুণভাবে বলেছেন তাঁর কবিতায়। যেমন, ‘ঝিঙে মাচায়’ ‘ফিঙে’ পাখির বাসা, ‘ঝিলের ধারে, ঝোপের মাঝে’ ‘বাবুই পাখির বাসা’, নদীর ধারে নির্জন নিরালায় গাঙ শালিকের বাসা, ‘ঘুঘুর বাসা মগ ডালে’ তবে সে মগডাল সাধারণত কোনো মঝা দীঘির পাড়ে হয়ে থাকে, ‘বকের বাসা বাঁশ বনে’, প্যাঁচা বাসা বাঁধে কোনো পুরানো গাছের কোটরে, আর চড়–ই পাখি নিজের কোনো বাসা নাই। ফলে তারা অন্যের চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাত্রি যাপন করে। এভাবে প্রতিটি পাখির বাসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায় ফররুখ আহমদের কবিতায়।

কিন্তু বাসা যেখানেই থাক সব পাখি একই সময়ে বাসার বাইরে যায় না। কেউ বা দিনে কেউ বা রাতে। আর কেউ সারাদিন কর্মব্যস্ত হয়ে বিকালে বাসায় ফিরে আসে। যেমন ফিঙে ফিরে আসে ‘সাঁঝ রাতে’, গাঙ শালিক সারা রাত বাসায় থেকে সকাল না হতেই শিকারের নেশায় ছুটে চলে তবে বর্ষা এলে গাঙ-শালিকদের আর দেখা যায় না এবং এরা সে সময়ে কোথায় যায় কেউ জানে না, ঘুঘু সারাদিন ব্যস্ত থেকে বিকাল হলেই বাসায় চলে আসে, বক ভোর না হতে অর্থাৎ কাকডাকা ভোরেই সুর্য ওঠার আগেই বিলে চলে আসে এবং মাঝে মাঝে কনকনে শীতের গভীর রাত পর্যন্ত বিলে ঘুরে বেড়ায় শিকারের নেশায়, প্যাঁচা গভীর রাতে রক্তচক্ষু করে ডাল থেকে ডালে ঘুরে বেড়ায়। 

পাখি কি দিয়ে তাদের বাসা বানায় তাও উঠে এসছে ফররুখ আহমদের কবিতায়। যেমন, ঘুঘুর বাসা মগডালে এবং সে বাসা শুকনো খড়কুটো দিয়ে, কিন্তু বক বাঁশ ঝাড়ে বাসা বানালেও খড়কুটো, লতা-পাতা বা গাছ ঠুকরে বাসা বানায় না। সোজাসুজি বাঁশের ডালকেই তারা নিজেদের বাসা হিসাবে ব্যবহার করে। আর বাবুই পাখির বাসা তৈরির যে নিপুণতা তা কবিকে বিষ্মিত করেছে রীতিমত। বাবুই পাখির বাসা দেখে তাই কবি গেয়ে ওঠেন,

বাবুই পাখি শিল্পী বড়

পাতার সূতো করে জড়ো,

মগজে তার খেলে যখন

                        কল্পনা রংগিন॥

সবাই বলে: বাবুই পাখির বাসা,

তারিফ করার পাইনে খুঁজে ভাষা॥

পাখিদের কুঞ্জন শিশুসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে সুর মূর্ছনার সৃষ্টি করে। যেমনটি জন কীটস্রে Ode to Autumn’ এ দেখি। ফররুখ আহমদের ‘গাঙ শালিকের বাসা’ কবিতায় গাঙ শালিকের যে সুর রয়েছে তা উঠে আসে এভাবে,

পলি মাটির গর্ত খুঁড়ে

নদীর দু’তীর ভরায় সুরে,

কেউ জানে না; বোঝে না কেউ                       

                        কী যে তাদের ভাষা॥

‘টুনটুনি’ কবিতায় বলেন,

টুনটুনির মিষ্টি আওয়াজ

কাজের ভিতর ভোলায় সে কাজ,

আসলে ফিরে আমাকে সে

                        যায় জানিয়ে॥

এর বাইরে পাখির কাজ কর্মের বর্ণনার মধ্য দিয়ে ফররুখ আহমদ শিশুদের দায়িত্ববান হবার অনুপ্রেরণা যেমন জুগিয়েছেন তেমনি তিনি নিজেদের অভিষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থাকার শিক্ষাও দিয়েছেন। যেমন তাঁর ‘টিয়ে পাখি’ কবিতায় টিয়ে পাখির ছুটে চলার পথে শিশু তাকে ডেকে কপালে টিপ দেবার কথা বললে তা সে প্রত্যাখ্যান করে। কেননা তার সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। তাই খোকার আহ্বানকে বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিয়ে বলে,

‘অনেক দূরে যাব এবার

থামিয়ে পথে ডেক না আর,

থামে যারা তারাই তো ভাই

খায় যে বিষম চোট॥

এখানে স্পষ্ট কাজের সময়ে অন্যরা যদি আনন্দ উল্লাসের আহ্বান জানায় তারা বন্ধু হতে পারে না। আর সময় অপচয়ের ফলে জীবনে চোট খেতে হয়। আর এ শিক্ষা ছাড়াও ফররুখ আহমদ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটিও তুলো ধরেছেন তাঁর নানা কবিতায়। স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর এ স্বাধীনতা কেউ কাউকে দেয় না। এটি অর্জন করতে হয় যোগ্যতা ও আত্মসচেতনতার মধ্য দিয়ে। স্বকীয় বৈশিষ্ট্য না থাকার মানেই যে পরাধীনতা তা ফররুখ আহমদ জোরালোভাবেই তুলে ধরেছেন। কেন তিনি শিশুদের মধ্যে স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন?  কারণ, শিশু বয়সে যদি কেউ স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী না হয় তবে পরাধীনতাকে স্বাধীনতা বলে অন্যের দাস হয়ে থাকবে এ শিশুরা প্রাপ্ত বয়সে। 

বাবুই পাখি নিজে নিপুণতায় দক্ষ হাতে অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে  বাসা তৈরি করে। আর সে বাসা ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাবুই তাতে থেকে সুখ পায়। কেননা, স্বাধীনতা অনুভবের যে আনন্দ তা অন্যের বাসায় থেকে পাওয়া সম্ভব নয। তাই কবি বলেন,

বাবুই পাখি যে সৌখিন,

মনটা স্বাধীন; দিন এনে খায় দিন॥

. . .

সত্যি কথা বলতে কি ভাই

অমন বাসার তুলনা নাই,

যে বাসাতে মন কখনো

            হয় না পরাধীন॥

অন্যদিকে চড়–ই নিজে কোনো বাসা বানায় না। তারা অন্যের পরিত্যক্ত বাসায় বা মানুষের চিলেকোঠায় লুকিয়ে লুকিয়ে রাত্রি যাপন করে। ফলে ধরা খাওয়ার ভয় সবসময় তাদের মধ্যে কাজ করে। এতে সুখ-শান্তি থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবুও চড়–ই নিজেকে কেবল চালাক মনে করে। কিন্তু চালাকি আর বুদ্ধিমান যে এক নয় তা এখানে স্পষ্ট। কবির ভাষায়,

চড়–ই পাখি চালাক তবু ভাই,

নিজের বাসার ঠিক ঠিকানা নাই॥

. . .

পরের কোঠায় চড়–ই পাখি

নিজেরে হায় দিল ফাঁকি,

পরের দয়ায় চড়–ই পাখি

            গোলাম হলো তাই॥

স্বাধীনতার এমন ধারণা শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার যৌক্তিকতা সময়োপযোগী। কেননা, সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের সব জনগণ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে। কবি এ কবিতা দু’টিতে স্বাধীনতার  ধারণাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। অহেতুক সম্পদের পিছনে ছুটাছুটিকেও বারণ করেছেন। কারণ ইসলাম অহেতুক সম্পদের পিছনের ছুটাছুটিকে উৎসাহিত করে না।

ফররুখ আহমদ প্রতিটি কবিতাই অক্ষরাবৃত্ত ছন্দে লিখেছেন। কেননা অক্ষরাবৃত্ত ছন্দ শিশুদের মধ্যে সুর দ্যোৎনার সৃষ্টি করে। উপমা-উৎপ্রেক্ষা ও শিল্পের প্রতিটি অলঙ্কার তিনি শিশুদের কবিতায় ব্যবহার করেছেন। যেমন, ‘বকের বাসা’ কবিতায় লিখেন, ‘ভোর না হতে খাল বিলে/ পাখায় পাখায় যায় মিলে॥’ যেখানে ‘বিলে’ ও ‘মিলে’ শব্দ দুটি ছন্দের অন্তমিল প্রকাশ করে এবং ‘পাখায় পাখায় যায় মিলে’ বাক্যে ‘প’ অক্ষরটি দু’বার ও ‘য়’ শব্দটি তিনবার ব্যবহার করে Aliteration গানের সুর সৃষ্টি করেছেন যাতে শিশুদের হৃদয়কে আকৃষ্ট করে।  দৃশ্যগ্রাহ্য চিত্রেরও (Visual Image) অবতারণা তিনি করেছেন তাঁর কবিতাগুলোতে। যেমন, ‘প্যাঁচার বাসা’ কবিতায় যখন কবি বলেন, ‘ঘন বনের আঁধারে / মজা দীঘির বাঁ ধারে/ প্যাঁচা থাকে যেখানে/ সেখানে আজ জোট রে॥’ এ লাইনগুলো উচ্ছারণের মাধ্যমে ঘন জঙ্গল, বিশাল মজা দীঘি ও প্যাঁচার ছবি যে কারো মানসপটে ভেসে ওঠবে। এখানেই ফররুখ আহমদের কাব্য প্রতিভার স্বার্থকতা নিহিত।

পরিশেষে এ কথা বলা যায়, একজন কবি কোন বিষয়কে নিয়ে ধারাবাহিক কাব্য রচনা করতে হলে সে বিষয়ের গভীরে প্রবেশের যেমন আবশ্যকতা রয়েছে, তেমনি যাদের উদ্দেশ্যে রচনা করছে তাদের মানসপটে অকপটে প্রবেশ বিহীন স্বার্থক কাব্য রচনা অসম্ভব। আর এক্ষেত্রে কবি ফররুখ আহমদ পুরোপুরি সফল। তিনি একজন স্বার্থক প্রেমিক হিসেবেই পাখির বাসার প্রতিটি কবিতা রচনা করেছেন।

 à¦‡-মেইল: jashimnub@yahoo.com

লেখক : প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।