সংবাদ শিরোনামঃ

গাজায় ইসরাইলি হামলা : বিপন্ন মানবতা ** ঈদের পর আন্দোলন ** ঈদবাজারের সিংহভাগই বিদেশী পণ্যের দখলে ** দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও দেশ গড়তে হলে রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে হবে : মাওলানা আব্দুল হালিম ** রাজনীতিতে বদ্ধ ও গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে ** ঈদের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে ** এ যেন সেই ‘ভাতে মারবো, পানিতে মারবো’র মতো ব্যাপার-স্যাপার! ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল ** ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ ** ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ** সেকালের ঈদ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ শ্রাবণ ১৪২১, ২৬ রমজান ১৪৩৫, ২৫ জুলাই ২০১৪

দেশীয় শিল্প বিকাশের জন্য হুমকি
॥ জামান বিন হাবিব॥
মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবাদে দেশের ঈদবাজারের সিংহভাগই বিদেশী পণ্যের দখলে। ঈদ-উল ফিতরের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন পোশাক থেকে শুরু করে শাড়ি, জুতো, মোজা, কসমেটিকস্, পারফিউম, গহনা-জুয়েলারি সামগ্রী, ব্যাগ, জায়নামাজ, টুপি, তসবিহ, আতর, মসলাসহ সবকিছুই বিদেশী। ঈদ বাজারের বিনিয়োগ ও লেনদেন নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও অর্থনীতি গবেষকদের মতে বাংলাদেশের ঈদবাজারের আকার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। আর এর ৮০ শতাংশই অর্থাৎ ২৪ হাজার কোটি টাকার ঈদ বাজার বিদেশী পণ্যের দখলে। এর মধ্যে ভারতের দখলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য বাজার এবং বাকিটা পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন, তুরস্ক ও ফ্রান্সসহ ১২টি দেশের। আর এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। অথচ, পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে বিশাল এ ঈদবাজারের বড় অংশে দেশী পণ্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দেশের বাজারে বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় পণ্যের আগ্রাসন প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিল্পের েেত্র বাংলাদেশ আত্মঘাতী নীতি অনুসরণ করে চলেছে। আর এভাবে ভারতের প্রভাব বাড়তে থাকলে বছর কয়েকের মধ্যেই দেশ থেকে দেশী সব পণ্য হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। প্রতিটি জিনিসের জন্যই মানুষকে ভারতের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে। ভারতীয়রা তখন কিন্তু আর এখনকার মতো কম দামে জিনিস দেবে না। যেহেতু উপায় নেই, সেহেতু ভারতীয়দের ইচ্ছামত দাম গুণতে হবে।

দেশে কি পরিমাণে ঈদের বাজার আছে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ডক্টর মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ  বলেন, এর প্রকৃত হিসেব পাওয়া দূরূহ ব্যাপার। তবে, এর আকার মোটামুটি ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে।  দেশের জনসংখ্যার হিসেব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের মোট সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ৯০ শতাংশ মুসলমান হিসেবে মোট ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবে এদের সবার জন্য কম বেশি কেনা কাটা করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, মাথা পিছু গড়ে ৫০০ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটা করে থাকে। এছাড়া, উচ্চবিত্তরা ঈদ উপলক্ষে গাড়ি ও গহনা ও কিনে থাকেন।

একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে উচ্চবিত্ত বা ধনীর সংখ্যা অর্ধ কোটির কাছাকাছি। ঈদ বাজারে মোট কেনাকাটার অর্ধেকই সম্পন্ন হয় উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কেনাকাটায়। এ ছাড়া, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের সংখা প্রায় ৪ কোটি। ঈদ বাজারে এরাও গড়ে দেড় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার কেনা কাটা করে থাকেন।  বাকি প্রায় ১০ কোটিই মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করলেও এরা সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটা করে থাকেন।  দেশের ঈদবাজার বিদেশি পণ্যের দখলে জানিয়ে এনবিআর-এর সাবেক এ প্রধান বলেন, একেবারের নিম্নবিত্তের ঈদবাজারের বেশী অংশ সম্পাদিত হয় দেশী পণ্যের মাধ্যমে। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের ঈদবাজার সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিদেশী পণ্যের ওপর। বিশেষ করে ভারতের উপর।

ঢাকা মহানগরী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এবং এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন জানান, ঈদ উপলক্ষে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই রয়েছে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঈদ বাজার। এর মধ্যে পোশাকের বাজার ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে।  তিনি জাানান, এ বিশাল বাজারের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশী এবং বাকি দুই-তৃতীয়াংশই ভারতীয় পণ্য। পুরুষদের পোশাক ও জুতা-স্যান্ডেলের মধ্যে কিছু আছে চীনা। বাচ্চাদের পোশাক ও জুতোর বড় একটা অংশ আসে থাইল্যান্ড থেকে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য বাজারেরও একই অবস্থা বলে জানান তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের ঈদের এই পোশাক বাজারের প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে ভারত। গত বেশ কিছুদিন ধরে কাপড়ের অন্যতম পাইকারী বাজার রাজধানীর ইসলামপুরসহ বিভিন্ন মার্কেট, বড় বড় শপিংমল, ওয়ানস্টপ মল ও অভিজাত এলাকার বুটিক শপগুলো ঘুরে এ অবস্থার বাস্তব চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর বসুন্ধরা মার্কেট, গুলশানের শপার্স ওয়াল্ডসহ বেশ কিছু বিপণী বিতানের অনেক দোকানী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তাদের দোকান কিংবা শোরুমে দেশীয় কোনো পোশাক নেই। সবটাই বিদেশী।  বলতে গেলে প্রায় সবই ভারতীয়।  ব্যবসায়ী ও দোকানীরা জানালেন, ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি হওয়ারও কারণ রয়েছে। ভারতের নায়িকা, গায়িকা ও অভিনেত্রীদের অনুকরণের জন্য তরুণীদের উথালপাথাল হয়ে ওঠা একটি বড় কারণ। ভারতীয় হিন্দি টিভি সিরিয়ালগুলো এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী মহিলা ক্রেতাদের ওপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলছে।

গাউছিয়া মার্কেটের ফিক্সড প্রাইসের শাড়ি দোকান সেঞ্চুরির মালিক জানান, এখানে ৯০ শতাংশ শাড়ির বাজার ভারতীয় পণ্যের দখলে। অল্প কিছু দেশীয় সুতি শাড়ি রয়েছে তার দোকানে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুণগত মানে ততোটা ভালো না হলেও ভারতীয় শাড়ির ফিনিশিং ভালো। বিভিন্ন রঙের পাথরের কাজ করা। আমাদের দেশের ডিজাইনার তেমন নেই এবং ভালোমানের শাড়িও খুব একটা তৈরি করা হয় না। যা তৈরি হয় তাও বেশিরভাগ ভারতীয় শাড়িকে নকল করে। এজন্য তিনি নৈতিকতা ও ব্যবসায়ী জ্ঞানের অভাবকে দায়ী করেন। তার দোকানে বাহারী ডিজাইনের সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা দামের শাড়ি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দামের সিল্ক, জামদানি, কাতান, মসলিন, শিফন, জর্জেট, নেট, জুট কাতান এবং লেহেঙ্গাও রয়েছে। যার প্রায় সবই ভারতীয়।

এদিকে বিদেশী বস্ত্রসম্ভারের বিরাট আধিপত্য দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের ভাবিয়ে তুলছে। পাশাপাশি দেশী পণ্যের বিক্রেতারা ব্যবসায়িকভাবে মার খাচ্ছে। শুধু বিদেশী পোশাক সামগ্রীতেই দেশীয় বাজারের আধিপত্য থেমে নেই। এর পাশাপাশি জুতো, কসমেটিক, বিভিন্ন ইমিটেশন গহনা, হস্তশিল্প, গৃহস্থালী আইটেম সবই দখল করেছে বিদেশী পণ্য। ঈদকে সামনে রেখে এর দাপট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।

সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি অভিজাত শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো দোকানী পোশাকের গায়েই বোম্বে, কাশ্মীরী, ইরানী, জাপানী, চায়না, থাই এ জাতীয় বিদেশী ব্রান্ডের নাম লিখে রেখেছেন। এসব পোশাকে রয়েছে ঝলমলে ভাব ও আকর্ষণীয় ডিজাইন। তবে কোথাও এসব পোশাকের মূল্যস্থিরতা নেই। ক্রেতাদের আকর্ষণকে পুঁজি করে যে যার মতো পারছেন নিচ্ছেন গলাকাটা দাম। শুধু বিদেশী পোশাক বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ নেই ব্যবসায়ীরা। আমদানিকৃত জাপানী, ইতালিয়ান, ইন্ডিয়ান ও চায়না কাপড়ের ব্র্যান্ডের থান কাপড়েও দোকানগুলো ছেয়ে গেছে। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে গ্যাসিম, অরবিন্দ, বিমল, টবিন, স্টারলিক, মিকাডো, মাইকেল, ওকিও, সুপার ফাইভ, নিসিডো, লারচি ব্র্যান্ডের কাপড়েই ক্রেতা আকৃষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীরাই সাধারণত দেশে বিদেশী পণ্যের আমদানি করেন। কেউ আমদানি করে বৈধভাবে নিয়মরীতি মেনে। আর কেউ আমদানি করে কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে অবৈধ পথে। এরা মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে এবং সরকারের উদার আমদানি নীতির অপব্যবহার করে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতে এই আমদানি প্রথায় ঝুঁকে পড়ছে।

এ বিষয়ে আব্দুল মজিদ জানান, আমাদের নিজস্ব কোনো নীতিমালা কিংবা বাজার দখলের চিন্তা নেই। এ সুযোগে ভারতসহ অন্যান্য দেশ মুক্তবাজার অর্থনীতি সুযোগ নিয়ে এ দেশের বিশাল বাজার দখল করে নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভারত থেকে যতটা না বৈধভাবে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য আমদানী হয় অবৈধ পন্থায় তার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি সূত্র জানা গেছে গত ১ মাসে তারা কয়েক শত কোটি টাকার অবৈধ ভাবে আসা ভারতীয় পণ্য আটক করেছেন। আব্দুল মজিদ বলেন, বিজিবির কাছে ধরা পড়ে অবৈধভাবে আসা অতি সামান্য পণ্য। সমঝোতার মাধ্যমে আসে এর চেয়ে শতগুণ বেশি পণ্য। এছাড়া, স্থল বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে কাস্টমস এর সহায়তায় দেশে প্রবেশ করে আরো শত শত কোটি টাকার পণ্য। আর সরকার এগুলোর রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হয়।

আব্দুল মজিদ বলেন, এদেশে মুক্তবাজার ও বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে দেশী পণ্যের বিকাশ ঠেকানো হয়েছে। অথচ ভারত নিজেও কিন্তু আগে দেশী পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। দেশী পণ্য বিক্রি হওয়ার পর যদি বিশেষ কারণে কোনো পণ্য আমদানির প্রয়োজন দেখা দেয় কেবল তখনই ভারত অন্য দেশ থেকে সীমিত পরিমাণে এবং সাময়িকভাবে ওই বিশেষ পণ্যটি আমদানি করতে দেয়। এর প্রক্রিয়াও সরকার এত জটিল, কঠিন ও সময়সাপে করে রেখেছে যে নিতান্ত দায়ে না পড়লে ভারতের কোনো ব্যবসায়ী সহজে কোনো পণ্য আমদানির কথা চিন্তা পর্যন্ত করেন না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। পণ্যের বাজার শুধু নয়, ভারতের জন্য সীমান্তও উন্মুক্ত রেখেছে বাংলাদেশ।

সাবেক এ সরকারী কর্মকর্তা আরো বলেন, শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য সহায়তা না পাওয়া গেলেও ভারতীয় পণ্য আমদানির জন্য অনেক কম সুদেও ঋণ পাওয়া যায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে! এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের বাজার একসময় পুরোটাই ভারতের দখলে চলে যাবে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।